.png)

স্ট্রিম প্রতিবেদক

জুলাই জাতীয় সনদে কী কী থাকবে সে বিষয়ে গত মাসের ২৮ অক্টোবর একাধিক প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এটি কার্যকরে তিনটি প্রক্রিয়ার ওপর দিকনির্দেশনাও দিয়েছে কমিশন। সেখানে বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদে সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া বিল গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। গণভোটে অনুমোদন পাওয়া সংবিধান সংস্কার বিল পরিষদের সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হবে এবং পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে।
আরেকটি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সরকার জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫–এ সন্নিবেশিত সংবিধান সংশোধনের বিষয়গুলো কার্যকরের জন্য ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫’ জারি করবে। আদেশ এবং এর তফশিলে উল্লিখিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবসমূহ গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। আদেশ জারির পর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে, যা সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে গাঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। যেখানে একটি প্রস্তাবে জাতীয় সংসদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণের সমন্বয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার পাশাপাশি একইসঙ্গে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে।
তৃতীয় আরেকটি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সংবিধান সংস্কার পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন করবে এবং সংস্কার কার্যক্রম শেষ হলে পরিষদের কার্যক্রম সমাপ্ত হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সুপারিশ করার পর ওইদিনই গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সুপারিশে বলা হয়েছে নিম্ন কক্ষের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে উচ্চ কক্ষ গঠিত হবে। আমাদের আলোচনায় এরকম কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হয়েছিল উচ্চ কক্ষ গঠিত হবে ১০০ সদস্য নিয়ে। এই ১০০ সদস্য কীভাবে কোন পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবে তার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। কেউ ভোটের অনুপাতে চেয়েছে কেউ চেয়েছে নিম্ন কক্ষের আসনের অনুপাতে। আমরা চেয়েছিলাম আসনের অনুপাতে। এছাড়া সুপারিশে পিআরের ভিত্তিতে সরাসরি প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে কোনো নোট অব ডিসেন্টেরও উল্লেখ নাই।’
সালাহউদ্দীন আরও বলেন, ‘সুপারিশের খসড়ায় সংসদকে একইসঙ্গে আইনসভা ও সংবিধান সংশোধনের দায়িত্ব দেওয়ার যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, সেটি গণতান্ত্রিক ভারসাম্যের পরিপন্থী। এটি আগেই আলোচনায় প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।’
৩০ অক্টোবর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বলেছি, সংস্কার বাস্তবায়নের যে প্রক্রিয়া সেটি দলগুলোর মধ্যে আলোচনা ও সম্মতির ভিত্তিতে হতে হবে। কিন্তু কমিশনের সুপারিশে দেখা যাচ্ছে ভিন্নমত উপেক্ষা করে কিছু ধারা জোর করে বসানো হয়েছে। এটি জনগণের ঐক্য নয়, সরকারের একচ্ছত্র ইচ্ছার প্রতিফলন। জুলাই সনদ এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন এটি গণভোটের ছলে সরকারের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার কৌশল। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সনদ বা সংস্কার দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সুপারিশ একপেশে এবং তা জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অযৌক্তিক, অবিবেচনাপ্রসূত।’
জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করেও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ কমিশন জমা দেওয়ার পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘এনসিপির আপসহীন অবস্থানের ধারাবাহিকতায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা সংবলিত সুপারিশপত্র জমা দিয়েছে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এনসিপির অনড় অবস্থানের ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি আমরা ঐকমত্য কমিশনের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে দেরি না করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
পাটওয়ারি আরও বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ করা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রথম খসড়াটি (প্রস্তাব–১) গ্রহণ করার মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধান সংস্কার বিলের খসড়া প্রণয়ন ও উন্মুক্তকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তিসম্পন্ন আদেশের খসড়া সরকার গ্রহণ করলে সনদ সইয়ের বিষয়ে অগ্রগতি তৈরি হবে বলে এনসিপি মনে করে।’
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে এনসিপি। নোট অব ডিসেন্ট তুলে নেওয়া, গণঅভ্যুত্থানের ম্যান্ডেটের বাস্তবায়ন আদেশ জারি, পুরো সনদ হ্যাঁ-না প্রশ্ন আকারে গণভোটে যাওয়া। এগুলোকে সবারই মেনে নেওয়া উচিত। তবে গণভোট নির্বাচনের আগে হওয়াই যুক্তিযুক্ত।’
২৯ অক্টোবর সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশের এক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা কমিশনের সুপারিশকে ইতিবাচকভাবে দেখছি। অবিলম্বে সনদ বাস্তবায়নের আদেশ দেওয়ার দাবি করছি। সেই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বরের মধ্যে গণভোটের মাধ্যমে আইনি ভিত্তি দেওয়ার দাবি করছি।’
কমিশনের সুপারিশের মাধ্যমে জুলাই সনদ কার্যকর প্রক্রিয়া ইতিবাচক ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তিন ধাপে সনদ বাস্তবায়নে কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছে, তা ভালো দিক। সংবিধান সংস্কার পরিষদকে গাঠনিক ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষে আমাদের সমর্থন রয়েছে। তবে গণভোট নভেম্বরই করার পক্ষে আমরা। জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোটের আয়োজন কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এতে নির্বাচনি প্রচারণার ঢেউয়ে গণভোট গুরুত্ব হারাতে পারে।’
এদিকে সংবিধানের চার মূলনীতি প্রশ্নে গত ১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেনি চার বাম দল। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ)।
২৮ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার কাছে কমিশনের দেওয়া সুপারিশকেও তারা একপেশে হিসেবে দেখছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের ৯ মাসের কার্যক্রম পণ্ডশ্রমে পরিণত হয়েছে। তারা সব সময় নিজেদের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিয়ে আসছে। সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক যে আদেশের কথা বলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আদালতে গেলে টিকবে না। কারণ, একটি সংবিধান বিদ্যমান থাকতে এ ধরনের আদেশের বৈধতা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সমাধান না করতে পারলে, প্যানেল ভেঙে দেওয়ার বিধান থাকা উচিত ছিল। আর ঐকমত্য না হওয়া বিষয়গুলো না রাখার সিদ্ধান্তও সঠিক হয়নি।’
এদিকে সনদে স্বাক্ষর করা বামপন্থী একটি দল বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করে তাদের কনস্টিটিউশন পাওয়ার বা গাঠনিক ক্ষমতা দেওয়ার কথা আমরা কেউ কেউ বলেছিলাম। তবে তারা ২৭০ দিনে কার্যকর করতে না পারলে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইনে পরিণত হয়ে যাবে, এমন প্রস্তাব পৃথিবীর কোনো দেশে আছে কিনা জানা নেই। আমি মনে করি, এটি পরবর্তী সংসদের ওপরই ছেড়ে দিলে ভালো হতো। আর সময়সীমা ৯ মাসের পরিবর্তে ৬ মাস হওয়ার দরকার ছিল।’
এদিকে ২৯ অক্টোবর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নিয়মিত বৈঠকে দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘খসড়ায় আদেশ কে দেবে, তা স্পষ্ট করা হয়নি। আদেশ জারির কারণ হিসেবে ‘‘জনগণের জ্ঞাতার্থে ও সাংবিধানিক পরিষদের দায়িত্ব সম্পাদনের সুবিধার্থে’’ উল্লেখ করা হয়েছে। এর অর্থ হলো এই আদেশের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকছে না। অবশ্য এই খসড়ার শুরুতেই গণ–অভ্যুত্থানের সার্বভৌম ক্ষমতা আছে বলে স্বীকার করা হয়েছে, কিন্তু জনতার অভিপ্রায়ের কোনো প্রয়োগ এই খসড়ায় দেখা যাচ্ছে না।’
মাওলানা ইউনুছ আহমাদ আরও বলেন, ‘সমঝোতার স্বার্থে এই আদেশকে সাংবিধানিক আদেশের মর্যাদা থেকে নামিয়ে আনুষ্ঠানিক আদেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, যা এই আদেশকে জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো একটি অকার্যকর কাগুজে আদেশে পরিণত করার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

জুলাই জাতীয় সনদে কী কী থাকবে সে বিষয়ে গত মাসের ২৮ অক্টোবর একাধিক প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এটি কার্যকরে তিনটি প্রক্রিয়ার ওপর দিকনির্দেশনাও দিয়েছে কমিশন। সেখানে বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদে সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া বিল গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। গণভোটে অনুমোদন পাওয়া সংবিধান সংস্কার বিল পরিষদের সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হবে এবং পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে।
আরেকটি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সরকার জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫–এ সন্নিবেশিত সংবিধান সংশোধনের বিষয়গুলো কার্যকরের জন্য ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫’ জারি করবে। আদেশ এবং এর তফশিলে উল্লিখিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবসমূহ গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। আদেশ জারির পর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে, যা সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে গাঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। যেখানে একটি প্রস্তাবে জাতীয় সংসদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণের সমন্বয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার পাশাপাশি একইসঙ্গে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে।
তৃতীয় আরেকটি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সংবিধান সংস্কার পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন করবে এবং সংস্কার কার্যক্রম শেষ হলে পরিষদের কার্যক্রম সমাপ্ত হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সুপারিশ করার পর ওইদিনই গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সুপারিশে বলা হয়েছে নিম্ন কক্ষের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে উচ্চ কক্ষ গঠিত হবে। আমাদের আলোচনায় এরকম কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হয়েছিল উচ্চ কক্ষ গঠিত হবে ১০০ সদস্য নিয়ে। এই ১০০ সদস্য কীভাবে কোন পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবে তার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। কেউ ভোটের অনুপাতে চেয়েছে কেউ চেয়েছে নিম্ন কক্ষের আসনের অনুপাতে। আমরা চেয়েছিলাম আসনের অনুপাতে। এছাড়া সুপারিশে পিআরের ভিত্তিতে সরাসরি প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে কোনো নোট অব ডিসেন্টেরও উল্লেখ নাই।’
সালাহউদ্দীন আরও বলেন, ‘সুপারিশের খসড়ায় সংসদকে একইসঙ্গে আইনসভা ও সংবিধান সংশোধনের দায়িত্ব দেওয়ার যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, সেটি গণতান্ত্রিক ভারসাম্যের পরিপন্থী। এটি আগেই আলোচনায় প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।’
৩০ অক্টোবর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বলেছি, সংস্কার বাস্তবায়নের যে প্রক্রিয়া সেটি দলগুলোর মধ্যে আলোচনা ও সম্মতির ভিত্তিতে হতে হবে। কিন্তু কমিশনের সুপারিশে দেখা যাচ্ছে ভিন্নমত উপেক্ষা করে কিছু ধারা জোর করে বসানো হয়েছে। এটি জনগণের ঐক্য নয়, সরকারের একচ্ছত্র ইচ্ছার প্রতিফলন। জুলাই সনদ এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন এটি গণভোটের ছলে সরকারের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার কৌশল। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সনদ বা সংস্কার দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সুপারিশ একপেশে এবং তা জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অযৌক্তিক, অবিবেচনাপ্রসূত।’
জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করেও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ কমিশন জমা দেওয়ার পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘এনসিপির আপসহীন অবস্থানের ধারাবাহিকতায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা সংবলিত সুপারিশপত্র জমা দিয়েছে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এনসিপির অনড় অবস্থানের ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি আমরা ঐকমত্য কমিশনের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে দেরি না করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
পাটওয়ারি আরও বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ করা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রথম খসড়াটি (প্রস্তাব–১) গ্রহণ করার মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধান সংস্কার বিলের খসড়া প্রণয়ন ও উন্মুক্তকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তিসম্পন্ন আদেশের খসড়া সরকার গ্রহণ করলে সনদ সইয়ের বিষয়ে অগ্রগতি তৈরি হবে বলে এনসিপি মনে করে।’
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে এনসিপি। নোট অব ডিসেন্ট তুলে নেওয়া, গণঅভ্যুত্থানের ম্যান্ডেটের বাস্তবায়ন আদেশ জারি, পুরো সনদ হ্যাঁ-না প্রশ্ন আকারে গণভোটে যাওয়া। এগুলোকে সবারই মেনে নেওয়া উচিত। তবে গণভোট নির্বাচনের আগে হওয়াই যুক্তিযুক্ত।’
২৯ অক্টোবর সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশের এক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা কমিশনের সুপারিশকে ইতিবাচকভাবে দেখছি। অবিলম্বে সনদ বাস্তবায়নের আদেশ দেওয়ার দাবি করছি। সেই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বরের মধ্যে গণভোটের মাধ্যমে আইনি ভিত্তি দেওয়ার দাবি করছি।’
কমিশনের সুপারিশের মাধ্যমে জুলাই সনদ কার্যকর প্রক্রিয়া ইতিবাচক ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তিন ধাপে সনদ বাস্তবায়নে কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছে, তা ভালো দিক। সংবিধান সংস্কার পরিষদকে গাঠনিক ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষে আমাদের সমর্থন রয়েছে। তবে গণভোট নভেম্বরই করার পক্ষে আমরা। জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোটের আয়োজন কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এতে নির্বাচনি প্রচারণার ঢেউয়ে গণভোট গুরুত্ব হারাতে পারে।’
এদিকে সংবিধানের চার মূলনীতি প্রশ্নে গত ১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেনি চার বাম দল। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ)।
২৮ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার কাছে কমিশনের দেওয়া সুপারিশকেও তারা একপেশে হিসেবে দেখছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের ৯ মাসের কার্যক্রম পণ্ডশ্রমে পরিণত হয়েছে। তারা সব সময় নিজেদের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিয়ে আসছে। সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক যে আদেশের কথা বলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আদালতে গেলে টিকবে না। কারণ, একটি সংবিধান বিদ্যমান থাকতে এ ধরনের আদেশের বৈধতা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সমাধান না করতে পারলে, প্যানেল ভেঙে দেওয়ার বিধান থাকা উচিত ছিল। আর ঐকমত্য না হওয়া বিষয়গুলো না রাখার সিদ্ধান্তও সঠিক হয়নি।’
এদিকে সনদে স্বাক্ষর করা বামপন্থী একটি দল বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করে তাদের কনস্টিটিউশন পাওয়ার বা গাঠনিক ক্ষমতা দেওয়ার কথা আমরা কেউ কেউ বলেছিলাম। তবে তারা ২৭০ দিনে কার্যকর করতে না পারলে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইনে পরিণত হয়ে যাবে, এমন প্রস্তাব পৃথিবীর কোনো দেশে আছে কিনা জানা নেই। আমি মনে করি, এটি পরবর্তী সংসদের ওপরই ছেড়ে দিলে ভালো হতো। আর সময়সীমা ৯ মাসের পরিবর্তে ৬ মাস হওয়ার দরকার ছিল।’
এদিকে ২৯ অক্টোবর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নিয়মিত বৈঠকে দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘খসড়ায় আদেশ কে দেবে, তা স্পষ্ট করা হয়নি। আদেশ জারির কারণ হিসেবে ‘‘জনগণের জ্ঞাতার্থে ও সাংবিধানিক পরিষদের দায়িত্ব সম্পাদনের সুবিধার্থে’’ উল্লেখ করা হয়েছে। এর অর্থ হলো এই আদেশের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকছে না। অবশ্য এই খসড়ার শুরুতেই গণ–অভ্যুত্থানের সার্বভৌম ক্ষমতা আছে বলে স্বীকার করা হয়েছে, কিন্তু জনতার অভিপ্রায়ের কোনো প্রয়োগ এই খসড়ায় দেখা যাচ্ছে না।’
মাওলানা ইউনুছ আহমাদ আরও বলেন, ‘সমঝোতার স্বার্থে এই আদেশকে সাংবিধানিক আদেশের মর্যাদা থেকে নামিয়ে আনুষ্ঠানিক আদেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, যা এই আদেশকে জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো একটি অকার্যকর কাগুজে আদেশে পরিণত করার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
.png)

তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন দলের স্থায়ী কমিটি ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের বেশ কয়েকজন আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ নেতা। অবশ্য সোমবার সন্ধ্যায় তালিকা ঘোষণার সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন—এটা কেবল প্রাথমিক তালিকা।
১ ঘণ্টা আগে
সিলেটে গণতান্ত্রিক অধিকারের লড়াইয়ে যুক্ত ব্যক্তিদের ওপর হামলা ও গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানির কাছে অস্বচ্ছ উপায়ে ইজারা দেওয়ার ‘অপতৎপরতা এখনও অব্যাহত’ থাকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কমিটি।
৩ ঘণ্টা আগে
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফাঁকা রাখা আসনগুলোতে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।
৪ ঘণ্টা আগে
এর আগে এই জেলা থেকে কখনোই নির্বাচন করেননি তিনি। এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দিনাজপুর-৩ আসনে বেগম খালেদা জিয়ার নাম ঘোষণা করেন।
৫ ঘণ্টা আগে