leadT1ad

সংশোধিত আরপিওর প্রতীক বিতর্ক থেকে পিছিয়ে আসতে পারে জামায়াত

প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৫: ১০
জামায়াতের মনোগ্রাম

গত এক সপ্তাহ ধরে জোটের প্রতীকে ভোট হওয়া না হওয়া নিয়ে বিতর্ক চলছে। এই বিতর্ক থেকে পিছিয়ে আসতে পারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জোটগত নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা চায় না বিএনপি। অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চায় নির্বাচন যেভাবেই হোক, ভোট হতে হবে নিজ নিজ দলীয় প্রতীকে। তবে গতকাল রোববার জামায়াতের একজন শীর্ষ নীতিনির্ধারক স্ট্রিমকে জানিয়েছেন তাঁরা এই বিতর্ক থেকে পিছিয়ে আসবেন।

ওই নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে বিরোধ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সংকটজনক অবস্থায় ফেলেছে। মানুষ নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চিয়তায় পড়েছে। এর ভেতর প্রতীক নিয়ে বিতর্ক আরও উত্তেজনা তৈরি করছে। জামায়াত এই বিতর্ককে আর বেশি টানতে চায় না। তবে দলটি চায়, এবার আগের পদ্ধতিতে নির্বাচন হলেও পরেরবার থেকে যেন নিজ নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখা হয়।

গত ২৮ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়-সম্পর্কিত সুপারিশ পেশ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ওই দিন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সুপারিশ তুলে দেওয়ার পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গন। এর মধ্যে নতুন বিতর্ক তৈরি হয় নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) ২০ ধারার সংশোধনী নিয়ে।

জোটগত নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আনা হয়েছে এই ধারায়। কিন্তু বিএনপি জোটের শরিকদের ধানের শীষ প্রতীক দিতে চায়। আরপিওর সর্বশেষ সংশোধনীতে এ সুযোগ না রাখায় সিইসিকে চিঠি দিয়ে আপত্তি জানিয়েছে তারা। বিষয়টি নিয়ে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকও করেছে। অন্যদিকে সর্বশেষ সংশোধনী বহাল রাখতে সিইসিকে পাল্টা চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

বিএনপি ও জামায়াতের পাল্টাপাল্টি অবস্থান

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতিতে চলছে নানামুখী মেরুকরণ। বিএনপি বৃহত্তর জোট তৈরি করতে চাইছে। ইসলামপন্থী ও সমমনা দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচনী সমঝোতায় পৌঁছতে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াত। সম্ভবত আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে দলগুলোর জোটবদ্ধ অংশগ্রহণ।

জোটগত নির্বাচন করার ক্ষেত্রে এতদিন নিজ নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল না। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। আরপিওর ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বলা হয়েছে, জোট করলেও ভোট করতে হবে নিজ দলীয় প্রতীকে। গত ২৩ অক্টোবর সংশোধিত অধ্যাদেশটি উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনও পায়। এর পরেই বিএনপি এই সংশোধনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানায়।

গত ২৬ অক্টোবর সকালে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয়। বৈঠক শেষে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো. ইসমাঈল জবিউল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, জোটের প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান নিয়ে ইসিতে তাঁরা আপত্তি জানিয়েছেন।

এর পরে ২৮ অক্টোবর সিইসির সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বৈঠক শেষে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, আরপিওর সর্বশেষ সংশোধনী কোনোভাবেই পরিবর্তন করা যাবে না বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে তাঁরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘এ বিধান বহাল রাখতে হবে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের জোটগতভাবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করার বিধান অন্তর্ভুক্তির জন্য নির্বাচনব্যবস্থা-সংক্রান্ত সংস্কার কমিশনই সুপারিশ করেছে। ফলে এই বিধান কোনোক্রমেই পরিবর্তন করা যাবে না। সংশোধিত বিধানই বহাল রাখতে হবে।’

ওই দিনই আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এ বিষয়ে বৈঠক করেন দ্রুত আগের অবস্থায় ফেরত যাওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। সংশোধনী থেকে সরে এসে আরপিওর আগের বিধান বহাল রাখার জোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সংশোধিত অধ্যাদেশটি এখন রাষ্ট্রপতির সইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে সরকার বিএনপির দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে আরপিওর বিতর্কিত বিধানটি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত দিতে পারে বলে আলোচনা আছে।

প্রতীক নিয়ে বিতর্ক জিঁইয়ে রাখতে চায় না জামায়াত

আজ সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার আর কোনো উদ্যোগ নেবে না। এখন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে মতৈক্যে পৌঁছাতে বলা হয়েছে। সে জন্য সম্ভাব্য সময় দেওয়া হয়েছে এক সপ্তাহ।

আজকের বৈঠকে আরপিওর সর্বশেষ সংশোধনী বাতিল করে জোট শরিকের প্রতীকে নির্বাচনের সুযোগ পুনর্বহাল বিষয়ও এজেন্ডায় ছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।

জামায়াত মনে করে, নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করলে ছোট দলগুলোর সাংগঠনিক সক্ষমতা, নিজস্ব পরিচিতি তৈরি হবে। নয়তো বিগত বছরগুলোর মতোই দুটি বলয়ে ঘুরপাক খেয়ে যেতে হবে ছোট ও নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে।

জামায়াতের শীর্ষ নেতা স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, এবার যেহেতু নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাস বাকি, এই সময়ে কে কার সঙ্গে জোট করেছে, কার কোন প্রতীক—তা ভোটারদের বোঝানো কিছুটা কঠিন। তাঁর মতে, এবার না হলেও পরের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে দলের প্রতীকে ভোটের ব্যবস্থা রেখে আরপিওর সর্বশেষ সংশোধনীতে পরিবর্তন আনা যেতে পারে। আর, আরপিওর সর্বশেষ সংশোধনী বহাল রাখতে অনড় অবস্থানে থাকার কোনো সিদ্ধান্ত দলটির শীর্ষ নীতিনির্ধারকেরা নেননি।

Ad 300x250

সম্পর্কিত