সালেহ ফুয়াদ
জামায়াত কোনো ইসলামী দল তো নয়ই বরং দলটি ইসলামের জন্য ক্ষতিকর—সম্প্রতি এমন মন্তব্য করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। এরপর পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এর মধ্য দিয়ে হেফাজত আমিরকে নিয়ে জামায়াতের ভেতরে বিরাজমান অস্বস্তি প্রকাশ্যে চলে এসেছে। ফলে বছরখানেক ধরে ইসলামী দলগুলোর জোট গঠনের যে চেষ্টা তা চূড়ান্ত হবে কি না তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। যদিও সংশয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব।
গত বছরের গণঅভ্যূত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর নতুন করে দল গোছানোর কাজে নামেন রাজনৈতিক নেতারা। দীর্ঘদিন আলোচনার বাইরে থাকা জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়। তারা দেশের অন্যসব রাজনৈতিক–অরাজনৈতিক ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠনের কাজে নামে। জামায়াতে ইসলামী সূত্রে জানা গেছে, জোট গঠনের কাজ এগিয়েছে অনেকটাই, তবে হেফাজতে ইসলামীর আমিরকে নিয়ে দলটি অস্বস্তিতে আছে।
রাজনীতিবিদেরা বলছেন, জামায়াতে ইসলামী দেশের বৃহৎ ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে বৃহৎ ও প্রভাবশালী অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এই সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই বিভিন্ন ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলেরও নেতৃত্বে আছেন। ফলে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হলেও বাংলাদেশের ইসলামপন্থী রাজনীতিতে হেফাজতের প্রভাব যথেষ্ট।
২০১৩ সালে হেফাজতের উত্থানের পর থেকে বিভিন্ন সময় নির্বাচনের আগে হেফাজতকে কাছে টানার চেষ্টা করেছে বৃহৎ রাজনৈতিকদলগুলো। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে হেফাজতের সমর্থন পেতে আবারও রাজনৈতিক দলগুলো তৎপর রয়েছে।
‘হেফাজতের আমির মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী অসত্য, মনগড়া ও অশোভন বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁর ওই বক্তব্য নিঃসন্দেহে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও ‘উসকানিমূলক।’ এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, জামায়াতে ইসলামী
গত ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় ফটিকছড়ির নাজিরহাট পৌরসভার একটি কমিউনিটি সেন্টারে ‘বৃহত্তর ফটিকছড়ির ওলামা মাশায়েখগণ’ ব্যানারে আলোচনা সভা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা শাহ সালাউদ্দিন নানুপুরী। বক্তব্য দেন সংগঠনটির আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।
সভায় বাবুনগরী বলেন, ‘জামায়াত ভণ্ড ইসলামি দল। প্রকৃত ইসলামি দল নয়। প্রকৃত ইসলামকে তারা ধারণ করে না। তারা মদিনার ইসলাম নয়, মওদূদীর ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’ এ সময় উর্দু ভাষায় তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামি কো বদতর সমঝতা হোঁ, হাত্তাকে কাদিয়ানি সে বদতর সমঝতা হোঁ।’ অর্থাৎ, জামায়াতে ইসলামিকে নিকৃষ্ট (দল) মনে করি, এমনকি কাদিয়ানির চেয়েও নিকৃষ্ট মনে করি।
বাবুনগরী আরও বলেন, ‘ইসলিয়ে কে, কাদিয়ানি সে জো নুকসান ইসলামকা নেহি হুয়া উসসে বহুত জিয়াদাহ জামায়াতে ইসলামি সে নুকসান হুয়া।’ অর্থাৎ কাদিয়ানিদের দিয়ে ইসলামের যে ক্ষতি হয়নি, জামায়াতে ইসলামীর দ্বারা এরচেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে। হেফাজত আমির বলেন, ইসলামের গোড়া কেটে ফেলেছে জামায়াত। এ কারণে দলটি অন্য সব ভ্রান্ত দল থেকেও নিকৃষ্ট।
জামায়াতকে নিয়ে বিভিন্ন সময় হেফাজত ও অন্য ইসলামপন্থী দলের নেতারা নেতিবাচক বক্তব্য দিলেও জামায়াত সব সময় ‘উপেক্ষার নীতি’ মেনে চলেছে। সাধারণত এসব মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানায় না দলটি। কিন্তু ৪ আগস্ট হেফাজত আমির যে বক্তব্য দিয়েছেন এর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। ৬ আগস্ট বিবৃতি দিয়ে হেফাজত আমিরের বক্তব্যকে ‘কটূক্তিপূর্ণ ও অসত্য মন্তব্য’ বলেছে তারা।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, হেফাজতের আমির মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী অসত্য, মনগড়া ও অশোভন বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁর ওই বক্তব্য নিঃসন্দেহে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও ‘উসকানিমূলক’।
জামায়াতের মতে, দেশের ইসলামী দলগুলোর মধ্যে যখন ঐক্যের প্রয়োজন সর্বাধিক, তখন এমন মন্তব্য ইসলামী ঐক্য বিনষ্ট করার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ ধরনের বক্তব্যকে ইসলামী মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক শালীনতার পরিপন্থী একই সঙ্গে ইসলাম ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের হাতকে শক্তিশালী করার শামিল বলে মনে করে জামায়াত।
জামায়াত মওদুদীর ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়—হেফাজত আমিরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইসলামের প্রকৃত উৎস হলো কুরআন ও সুন্নাহ। জামায়াতে ইসলামী সেই ইসলামেরই অনুসারী। মওদূদীর ইসলাম বলে কোনো স্বতন্ত্র ইসলাম নেই। এই ধরনের মনগড়া বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করেছেন, যা তাঁর দায়িত্বশীলতার পরিপন্থী।’
বিবৃতিতে মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর মতো প্রবীণ দায়িত্বশীল আলেমের কাছে এমন বক্তব্য প্রত্যাশিত নয় বলেও উল্লেখ করা হয়।
হেফাজাতে ইসলামের আমির গত মাসেও জামায়াতকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। গত ১১ জুলাই হেফাজত আমিরের অসুস্থতার খবরে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার আলমগীর তাঁকে দেখতে যান। ফটিকছড়ির বাবুনগর মাদ্রাসাসংলগ্ন তাঁর বাসভবনে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনেই ‘জামায়াতে ইসলামী মদিনার ইসলাম নয়’ বলে মন্তব্য করেন মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। এ সময় তিনি বলেন, মদিনার ইসলাম আর জামায়াতে ইসলামী এক নয়।
এর আগে গত ২৫ অক্টোবর ফেনীর মিজান ময়দানে দেওয়া এক বক্তৃতায় মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ‘আমরা জামায়াতে ইসলামকে ইসলামী দল মনে করি না। জামায়াতে ইসলাম মদিনার ইসলাম চায় না, তারা মওদুদীর ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’
‘জামায়াত ভণ্ড ইসলামি দল। প্রকৃত ইসলামি দল নয়। প্রকৃত ইসলামকে তারা ধারণ করে না। তারা মদিনার ইসলাম নয়, মওদূদীর ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়। জামায়াতে ইসলামি কো বদতর সমঝতা হোঁ, হাত্তাকে কাদিয়ানি সে বদতর সমঝতা হোঁ।’ আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, আমির, হেফজতে ইসলাম
২০২১ সালের আগস্টে হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় (দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম) একটি জরুরি বৈঠক হয়। বৈঠকে জুনায়েদ বাবুনগরীর জানাজার আগেই তাঁর মামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীকে হেফাজতের নতুন আমির হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাবুনগর মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এর আগে হেফাজতের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।
চরমোনাইয়ের প্রয়াত পীর সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করিমের জীবদ্দশায় ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের (বর্তমানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। আমির নির্বাচিত হওয়ার পর ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে ফটিকছড়ির বাবুনগরের নিজ বাসভবনে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপ করেন তিনি। ওই সময় জামায়াতের সঙ্গে হেফাজতের আদর্শিক কোনো সম্পর্ক নেই বলেও জানান মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।
মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছিলেন যে, কওমি আলেমরা জামায়াতের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে সব সময়। দেওবন্দের অন্যতম ব্যক্তিত্ব আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানি জামায়াতের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। হেফাজত তাদের অনুসারী হিসেবে এখনো জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা বলে। সেই সূত্র ধরে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, জামায়াতের সঙ্গে কওমিদের কোনো ঐক্য হতে পারে না। কারণ, তাঁর মতে—আদর্শিক কারণেই কওমিদের সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। রাজনৈতিক স্বার্থে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করেছে। কিন্তু হেফাজতের সঙ্গে জামায়াতের এখনো কোনো জোট হয়নি।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি হেফাজতের অনেক নেতাকে জামায়াতে ইসলামীর সভা-সমাবেশে দেখা যাচ্ছে। জামায়াতের তরফেও জোর দিয়ে ইসলামপন্থী শক্তির ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে।
গত ১৯ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সমাবেশের আগে দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বলেছিলেন, এটি হবে জামায়াতের রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট।
সমাবেশে জামায়াত নেতাদের মুখে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়েছে ইসলামপন্থী দলগুলোকে নিয়ে ঐক্যের আহ্বান। আর ছিল আকারে-ইঙ্গিতে বিএনপির নিন্দা। একটি বাক্সে ইসলামপন্থীদের ভোট পড়লে জয় নিশ্চিত, এমন কথাও দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারণ করেছেন জামায়াত নেতারা।
জামায়াতের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুস আহমদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আব্দুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন এজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আবু জাফর প্রমুখ।
সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের পক্ষে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির নায়েবে আমির মহিউদ্দিন রাব্বানি।
হেফাজতে ইসলাম নিজেদের অরাজনৈতিক দাবি করলেও রাজনীতির ময়দানে তারা বেশ আলোচিত সংগঠন। এর নেতৃত্বে রয়েছেন কওমি ঘরানার বিভিন্ন রাজনৈতিক ইসলামি দলের নেতারা। ৫ আগস্টের পরপরই কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করে জামায়াতে ইসলামী। চলতি বছরের শুরুতে তাদের এ তৎপরতা বেশ বৃদ্ধি পায়। এসময় দীর্ঘদিনের আদর্শিক দ্বন্দ্বকে পাশ কাটিয়ে কওমি মাদরাসাভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে জামায়াত।
এই চেষ্টার উপায় হিসেবে তারা বেছে নেয় হেফাজতের রাজনৈতিক নেতাদের। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (মামুনল হক), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস (আহমদ আবদুল কাদের), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট ও নেজামে ইসলাম পার্টি কওমি ধারার রাজনৈতিক দল। এসব দলের নেতাদের অনেকেই হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতৃত্বে রয়েছেন। তাদের মাধ্যমে হেফাজতে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে জামায়াত।
জামায়াতের নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমরা কাউকে গালি দিই না, সকলকে ইনসাফের দৃষ্টিতে দেখি। এ জাতীয় বক্তব্যের আমরা কোনো জবাব দিই না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের গায়ের চামড়া অনেক মোটা। অল্প কথাতেই উত্তেজিত হই না। আমরা সবর করি। আস্তে আস্তে সম্পর্কটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করি।’
হেফাজত আমির আগেও একাধিকবার জামায়াতের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু এবারই জামায়াত কেন কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে জানতে চাইলে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা সব ইসলামি দলের সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক মেইনটেইন করছি এবং আলাপ-আলোচনা করছি, যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামি জনতার সমর্থনটা একটা বাকসের মধ্যে আসতে পারে। এই প্রস্তাবটা প্রায় সকলেরই এবং আমাদেরও দলের কথা। যিনি আমাদের বিরুদ্ধে বক্তব্যটা দিয়েছেন উনাদের দলের লোকেরাও এটাই চায়। কিন্তু হঠাৎ করে এই ধরনের বক্তব্য আসায় আশ্চর্য হয়েছি। এই মুহূর্তে এই বক্তব্য আসাটা উচিত ছিল না। উনার জাতীয়ভাবে সব খবরাখবর রাখার কথা।’
হেফাজতের সঙ্গে জামায়াতের ঐক্য প্রচেষ্টা এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জামায়াতের নায়েবে আমির। হেফাজত আমিরের কাছে তাদের যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি। বাবুনগরীকে প্ররোচিত করে কেউ বক্তব্য দেওয়াচ্ছে কি না সেই সন্দেহও প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘আমরা এই জিনিসগুলাকে সমাধান করার জন্য আপসে চেষ্টা করার লাইনে আছি, চেষ্টা চলছে। এটা ঠিকঠাক হয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বৃহত্তর যে ইসলামি ঐক্য বা সমঝোতা হচ্ছে, তা কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র বা এই ধরনের বক্তব্য বিনষ্ট করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।’
প্রায় একই রকম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। শনিবার তিনি স্ট্রিমকে জানান, তাঁরা সব ইসলামী শক্তির ঐক্য চান। সবাইকে নিয়ে ঐক্য করার চেষ্টাও করেছেন তাঁরা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে উলামায়ে কেরামের কিছু আকিদাগত দূরত্ব আছে। কিন্তু দেশের কল্যাণ ও উম্মাহর স্বার্থে দূরত্ব কমিয়ে সামনে এক হওয়ার চিন্তা সবার জন্য কল্যাণকর।’
ভিন্নমত জানিয়েছেন হেফাজতের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব। তিনি স্ট্রিমকে জানান যে, হেফাজতের আমির কোনো অসত্য, মনগড়া ও অশোভন বক্তব্য দিতে পারেন বলে তিনি মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বাংলাদেশের একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম ও বাংলাদেশের সমস্ত উলামায়ে কেরামের মুরব্বি। উনার মতো একজন বুজুর্গ ব্যক্তির বক্তব্যকে ‘‘উসকানিমূলক’’ ও ‘‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’’ বলা কোনোভাবেই সমীচীন না।’
ইসলামপন্থী শক্তির ঐক্যচেষ্টায় জামায়াতকে হেফাজত সমর্থন দেবে কি না জানতে চাইলে জুনায়েদ আল হাবীব স্ট্রিমকে বলেন, ‘সেটা তো আলোচনা-পর্যালোচনার বিষয়। জামায়াত রাজনৈতিক দল, হেফাজত একটা অরাজনৈতিক সংগঠন। অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইয়ে (ঐক্য) হবে না।’
সামগ্রিকভাবে ইসলামপন্থী দলগুলোর নির্বাচনি ঐক্য নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। ঐক্যের সম্ভাবনা মাঝে মাঝে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে বলে মনে হয়। আবার কোনো পক্ষই সরাসরি সেই ঐক্যের সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণ নাকচও করে দিচ্ছেন না।
জামায়াত কোনো ইসলামী দল তো নয়ই বরং দলটি ইসলামের জন্য ক্ষতিকর—সম্প্রতি এমন মন্তব্য করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। এরপর পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এর মধ্য দিয়ে হেফাজত আমিরকে নিয়ে জামায়াতের ভেতরে বিরাজমান অস্বস্তি প্রকাশ্যে চলে এসেছে। ফলে বছরখানেক ধরে ইসলামী দলগুলোর জোট গঠনের যে চেষ্টা তা চূড়ান্ত হবে কি না তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। যদিও সংশয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব।
গত বছরের গণঅভ্যূত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর নতুন করে দল গোছানোর কাজে নামেন রাজনৈতিক নেতারা। দীর্ঘদিন আলোচনার বাইরে থাকা জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়। তারা দেশের অন্যসব রাজনৈতিক–অরাজনৈতিক ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠনের কাজে নামে। জামায়াতে ইসলামী সূত্রে জানা গেছে, জোট গঠনের কাজ এগিয়েছে অনেকটাই, তবে হেফাজতে ইসলামীর আমিরকে নিয়ে দলটি অস্বস্তিতে আছে।
রাজনীতিবিদেরা বলছেন, জামায়াতে ইসলামী দেশের বৃহৎ ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে বৃহৎ ও প্রভাবশালী অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এই সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই বিভিন্ন ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলেরও নেতৃত্বে আছেন। ফলে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হলেও বাংলাদেশের ইসলামপন্থী রাজনীতিতে হেফাজতের প্রভাব যথেষ্ট।
২০১৩ সালে হেফাজতের উত্থানের পর থেকে বিভিন্ন সময় নির্বাচনের আগে হেফাজতকে কাছে টানার চেষ্টা করেছে বৃহৎ রাজনৈতিকদলগুলো। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে হেফাজতের সমর্থন পেতে আবারও রাজনৈতিক দলগুলো তৎপর রয়েছে।
‘হেফাজতের আমির মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী অসত্য, মনগড়া ও অশোভন বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁর ওই বক্তব্য নিঃসন্দেহে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও ‘উসকানিমূলক।’ এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, জামায়াতে ইসলামী
গত ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় ফটিকছড়ির নাজিরহাট পৌরসভার একটি কমিউনিটি সেন্টারে ‘বৃহত্তর ফটিকছড়ির ওলামা মাশায়েখগণ’ ব্যানারে আলোচনা সভা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা শাহ সালাউদ্দিন নানুপুরী। বক্তব্য দেন সংগঠনটির আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।
সভায় বাবুনগরী বলেন, ‘জামায়াত ভণ্ড ইসলামি দল। প্রকৃত ইসলামি দল নয়। প্রকৃত ইসলামকে তারা ধারণ করে না। তারা মদিনার ইসলাম নয়, মওদূদীর ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’ এ সময় উর্দু ভাষায় তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামি কো বদতর সমঝতা হোঁ, হাত্তাকে কাদিয়ানি সে বদতর সমঝতা হোঁ।’ অর্থাৎ, জামায়াতে ইসলামিকে নিকৃষ্ট (দল) মনে করি, এমনকি কাদিয়ানির চেয়েও নিকৃষ্ট মনে করি।
বাবুনগরী আরও বলেন, ‘ইসলিয়ে কে, কাদিয়ানি সে জো নুকসান ইসলামকা নেহি হুয়া উসসে বহুত জিয়াদাহ জামায়াতে ইসলামি সে নুকসান হুয়া।’ অর্থাৎ কাদিয়ানিদের দিয়ে ইসলামের যে ক্ষতি হয়নি, জামায়াতে ইসলামীর দ্বারা এরচেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে। হেফাজত আমির বলেন, ইসলামের গোড়া কেটে ফেলেছে জামায়াত। এ কারণে দলটি অন্য সব ভ্রান্ত দল থেকেও নিকৃষ্ট।
জামায়াতকে নিয়ে বিভিন্ন সময় হেফাজত ও অন্য ইসলামপন্থী দলের নেতারা নেতিবাচক বক্তব্য দিলেও জামায়াত সব সময় ‘উপেক্ষার নীতি’ মেনে চলেছে। সাধারণত এসব মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানায় না দলটি। কিন্তু ৪ আগস্ট হেফাজত আমির যে বক্তব্য দিয়েছেন এর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। ৬ আগস্ট বিবৃতি দিয়ে হেফাজত আমিরের বক্তব্যকে ‘কটূক্তিপূর্ণ ও অসত্য মন্তব্য’ বলেছে তারা।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, হেফাজতের আমির মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী অসত্য, মনগড়া ও অশোভন বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁর ওই বক্তব্য নিঃসন্দেহে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও ‘উসকানিমূলক’।
জামায়াতের মতে, দেশের ইসলামী দলগুলোর মধ্যে যখন ঐক্যের প্রয়োজন সর্বাধিক, তখন এমন মন্তব্য ইসলামী ঐক্য বিনষ্ট করার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ ধরনের বক্তব্যকে ইসলামী মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক শালীনতার পরিপন্থী একই সঙ্গে ইসলাম ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের হাতকে শক্তিশালী করার শামিল বলে মনে করে জামায়াত।
জামায়াত মওদুদীর ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়—হেফাজত আমিরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইসলামের প্রকৃত উৎস হলো কুরআন ও সুন্নাহ। জামায়াতে ইসলামী সেই ইসলামেরই অনুসারী। মওদূদীর ইসলাম বলে কোনো স্বতন্ত্র ইসলাম নেই। এই ধরনের মনগড়া বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করেছেন, যা তাঁর দায়িত্বশীলতার পরিপন্থী।’
বিবৃতিতে মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর মতো প্রবীণ দায়িত্বশীল আলেমের কাছে এমন বক্তব্য প্রত্যাশিত নয় বলেও উল্লেখ করা হয়।
হেফাজাতে ইসলামের আমির গত মাসেও জামায়াতকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। গত ১১ জুলাই হেফাজত আমিরের অসুস্থতার খবরে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার আলমগীর তাঁকে দেখতে যান। ফটিকছড়ির বাবুনগর মাদ্রাসাসংলগ্ন তাঁর বাসভবনে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনেই ‘জামায়াতে ইসলামী মদিনার ইসলাম নয়’ বলে মন্তব্য করেন মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। এ সময় তিনি বলেন, মদিনার ইসলাম আর জামায়াতে ইসলামী এক নয়।
এর আগে গত ২৫ অক্টোবর ফেনীর মিজান ময়দানে দেওয়া এক বক্তৃতায় মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ‘আমরা জামায়াতে ইসলামকে ইসলামী দল মনে করি না। জামায়াতে ইসলাম মদিনার ইসলাম চায় না, তারা মওদুদীর ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’
‘জামায়াত ভণ্ড ইসলামি দল। প্রকৃত ইসলামি দল নয়। প্রকৃত ইসলামকে তারা ধারণ করে না। তারা মদিনার ইসলাম নয়, মওদূদীর ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়। জামায়াতে ইসলামি কো বদতর সমঝতা হোঁ, হাত্তাকে কাদিয়ানি সে বদতর সমঝতা হোঁ।’ আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, আমির, হেফজতে ইসলাম
২০২১ সালের আগস্টে হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় (দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম) একটি জরুরি বৈঠক হয়। বৈঠকে জুনায়েদ বাবুনগরীর জানাজার আগেই তাঁর মামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীকে হেফাজতের নতুন আমির হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাবুনগর মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এর আগে হেফাজতের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।
চরমোনাইয়ের প্রয়াত পীর সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করিমের জীবদ্দশায় ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের (বর্তমানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। আমির নির্বাচিত হওয়ার পর ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে ফটিকছড়ির বাবুনগরের নিজ বাসভবনে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপ করেন তিনি। ওই সময় জামায়াতের সঙ্গে হেফাজতের আদর্শিক কোনো সম্পর্ক নেই বলেও জানান মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।
মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছিলেন যে, কওমি আলেমরা জামায়াতের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে সব সময়। দেওবন্দের অন্যতম ব্যক্তিত্ব আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানি জামায়াতের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। হেফাজত তাদের অনুসারী হিসেবে এখনো জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা বলে। সেই সূত্র ধরে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, জামায়াতের সঙ্গে কওমিদের কোনো ঐক্য হতে পারে না। কারণ, তাঁর মতে—আদর্শিক কারণেই কওমিদের সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। রাজনৈতিক স্বার্থে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করেছে। কিন্তু হেফাজতের সঙ্গে জামায়াতের এখনো কোনো জোট হয়নি।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি হেফাজতের অনেক নেতাকে জামায়াতে ইসলামীর সভা-সমাবেশে দেখা যাচ্ছে। জামায়াতের তরফেও জোর দিয়ে ইসলামপন্থী শক্তির ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে।
গত ১৯ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সমাবেশের আগে দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বলেছিলেন, এটি হবে জামায়াতের রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট।
সমাবেশে জামায়াত নেতাদের মুখে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়েছে ইসলামপন্থী দলগুলোকে নিয়ে ঐক্যের আহ্বান। আর ছিল আকারে-ইঙ্গিতে বিএনপির নিন্দা। একটি বাক্সে ইসলামপন্থীদের ভোট পড়লে জয় নিশ্চিত, এমন কথাও দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারণ করেছেন জামায়াত নেতারা।
জামায়াতের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুস আহমদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আব্দুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন এজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আবু জাফর প্রমুখ।
সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের পক্ষে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির নায়েবে আমির মহিউদ্দিন রাব্বানি।
হেফাজতে ইসলাম নিজেদের অরাজনৈতিক দাবি করলেও রাজনীতির ময়দানে তারা বেশ আলোচিত সংগঠন। এর নেতৃত্বে রয়েছেন কওমি ঘরানার বিভিন্ন রাজনৈতিক ইসলামি দলের নেতারা। ৫ আগস্টের পরপরই কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করে জামায়াতে ইসলামী। চলতি বছরের শুরুতে তাদের এ তৎপরতা বেশ বৃদ্ধি পায়। এসময় দীর্ঘদিনের আদর্শিক দ্বন্দ্বকে পাশ কাটিয়ে কওমি মাদরাসাভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে জামায়াত।
এই চেষ্টার উপায় হিসেবে তারা বেছে নেয় হেফাজতের রাজনৈতিক নেতাদের। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (মামুনল হক), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস (আহমদ আবদুল কাদের), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট ও নেজামে ইসলাম পার্টি কওমি ধারার রাজনৈতিক দল। এসব দলের নেতাদের অনেকেই হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতৃত্বে রয়েছেন। তাদের মাধ্যমে হেফাজতে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে জামায়াত।
জামায়াতের নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমরা কাউকে গালি দিই না, সকলকে ইনসাফের দৃষ্টিতে দেখি। এ জাতীয় বক্তব্যের আমরা কোনো জবাব দিই না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের গায়ের চামড়া অনেক মোটা। অল্প কথাতেই উত্তেজিত হই না। আমরা সবর করি। আস্তে আস্তে সম্পর্কটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করি।’
হেফাজত আমির আগেও একাধিকবার জামায়াতের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু এবারই জামায়াত কেন কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে জানতে চাইলে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা সব ইসলামি দলের সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক মেইনটেইন করছি এবং আলাপ-আলোচনা করছি, যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামি জনতার সমর্থনটা একটা বাকসের মধ্যে আসতে পারে। এই প্রস্তাবটা প্রায় সকলেরই এবং আমাদেরও দলের কথা। যিনি আমাদের বিরুদ্ধে বক্তব্যটা দিয়েছেন উনাদের দলের লোকেরাও এটাই চায়। কিন্তু হঠাৎ করে এই ধরনের বক্তব্য আসায় আশ্চর্য হয়েছি। এই মুহূর্তে এই বক্তব্য আসাটা উচিত ছিল না। উনার জাতীয়ভাবে সব খবরাখবর রাখার কথা।’
হেফাজতের সঙ্গে জামায়াতের ঐক্য প্রচেষ্টা এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জামায়াতের নায়েবে আমির। হেফাজত আমিরের কাছে তাদের যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি। বাবুনগরীকে প্ররোচিত করে কেউ বক্তব্য দেওয়াচ্ছে কি না সেই সন্দেহও প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘আমরা এই জিনিসগুলাকে সমাধান করার জন্য আপসে চেষ্টা করার লাইনে আছি, চেষ্টা চলছে। এটা ঠিকঠাক হয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বৃহত্তর যে ইসলামি ঐক্য বা সমঝোতা হচ্ছে, তা কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র বা এই ধরনের বক্তব্য বিনষ্ট করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।’
প্রায় একই রকম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। শনিবার তিনি স্ট্রিমকে জানান, তাঁরা সব ইসলামী শক্তির ঐক্য চান। সবাইকে নিয়ে ঐক্য করার চেষ্টাও করেছেন তাঁরা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে উলামায়ে কেরামের কিছু আকিদাগত দূরত্ব আছে। কিন্তু দেশের কল্যাণ ও উম্মাহর স্বার্থে দূরত্ব কমিয়ে সামনে এক হওয়ার চিন্তা সবার জন্য কল্যাণকর।’
ভিন্নমত জানিয়েছেন হেফাজতের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব। তিনি স্ট্রিমকে জানান যে, হেফাজতের আমির কোনো অসত্য, মনগড়া ও অশোভন বক্তব্য দিতে পারেন বলে তিনি মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বাংলাদেশের একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম ও বাংলাদেশের সমস্ত উলামায়ে কেরামের মুরব্বি। উনার মতো একজন বুজুর্গ ব্যক্তির বক্তব্যকে ‘‘উসকানিমূলক’’ ও ‘‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’’ বলা কোনোভাবেই সমীচীন না।’
ইসলামপন্থী শক্তির ঐক্যচেষ্টায় জামায়াতকে হেফাজত সমর্থন দেবে কি না জানতে চাইলে জুনায়েদ আল হাবীব স্ট্রিমকে বলেন, ‘সেটা তো আলোচনা-পর্যালোচনার বিষয়। জামায়াত রাজনৈতিক দল, হেফাজত একটা অরাজনৈতিক সংগঠন। অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইয়ে (ঐক্য) হবে না।’
সামগ্রিকভাবে ইসলামপন্থী দলগুলোর নির্বাচনি ঐক্য নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। ঐক্যের সম্ভাবনা মাঝে মাঝে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে বলে মনে হয়। আবার কোনো পক্ষই সরাসরি সেই ঐক্যের সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণ নাকচও করে দিচ্ছেন না।
‘এই ইশতেহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের যুবশক্তি এগিয়ে যাবে, যুবকরা এগিয়ে যাবে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব যুবককে একত্রিত করবে। দেশে নতুন যুব নেতৃত্ব তৈরি করবে’, কথাগুলো বলছিলেন গাজীপুর থেকে আসা মামুন হাসান। তাঁর মতো আরও অনেকেই এসেছেন জাতীয় যুবশক্তির সম্মেলনে।
১ ঘণ্টা আগেবিবৃতিতে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি সব রাজনৈতিক দলকে ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানিয়েছেন এবং একটি গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ইস্যুতে সকল রাজনৈতিকদল ও জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
২ ঘণ্টা আগেনাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘নির্বাচনের ডেট ঘোষণা হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে; ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না। যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়, আমার যে ভাইয়েরা শহীদ হয়েছিল, রক্ত দিয়েছিল সংস্কারের জন্য, তাহলে কবরে গিয়ে তার লাশটা ফেরত দিতে হবে এই সরকারকে। ‘
৩ ঘণ্টা আগেতরুণ যুবশক্তিকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার জন্য বিএনপি পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। আমার আহ্বান নিজেদের প্রযুক্তির শিক্ষায় দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তুলুন। বিএনপির পরিকল্পনা যাতে বাস্তবায়ন করা যায়, এজন্য বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করছে। স্কুল পর্যায়ে বাধ্যতামূলকভাবে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করতে কাজ চলছে।
৪ ঘণ্টা আগে