leadT1ad

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাকসুর ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স নিয়ে কী ঘটল

স্ট্রিম প্রতিবেদকজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩: ৫০
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ভবন। সংগৃহীত ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স স্থানান্তর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়েছে।

ফেসবুকে কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা ব্যালট বাক্স নিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি ছাত্রদলের সাবেক নেতা-কর্মীদের নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে প্রবেশ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অন্যদিকে এক নেতা নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে বসে আছেন ছাত্রশিবিরের নেতা, এমন ভিডিও নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা কমিশন কার্যালয় থেকে কেন্দ্রগুলোতে ব্যালট বাক্স নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁদের পেছন পেছন সিঁড়ি দিয়ে নামছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দীন বাবর ও যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান রোজেন। ওই সময় ঘটনাস্থলে সংবাদকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। একজন সাংবাদিক সিঁড়ি দিয়ে নামার ভিডিও করছিলেন। এ সময় এক সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ফুটেজ মুছে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদল নেত রোজেনের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনার একটি ভিডিও প্রচার করে বলা হচ্ছে, ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা ব্যালট বাক্স নিয়ে যাচ্ছেন। এই ভিডিও ছাত্রশিবির ও জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকদের প্রচার করতে দেখা গেছে।

ওই সময় একুশে টিভির সাভার প্রতিনিধি মো. জুয়েল ঘটনাস্থলে ছিলেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি; বরং হলগুলো থেকে কর্মকর্তারা নিজ নিজ হলে ব্যালট বাক্স নিয়ে যাচ্ছিলেন। এছাড়া কাউকে সাংবাদিককে ভিডিও করতে বাধা দেওয়া বা জোরপূর্বক ভিডিও ডিলিট করতেও আমি দেখিনি।

শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মশিউর রহমান রোজেন বলেন, আমি ছাত্রদল ঘোষিত প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সঙ্গে কাজ করছি। সেই কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনের দিনের পর্যবেক্ষকপত্র আনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফেরার সময় গোপনে আমার ভিডিও করা হয়, যা আমার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ভঙ্গ করেছে। আমি এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাই এবং জানতে চাই কেন এটি করা হচ্ছে। সেখানে সিসি ক্যামেরা রয়েছে, সেটি দেখলেই সত্য বের হয়ে আসবে।

ফেসবুকে প্রচারিত আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, শাখা ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারুফ মল্লিক এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা জেলার আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান অভি নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে প্রবেশ করেছেন৷

ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হয়, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করার জন্য এসেছেন তাঁরা৷ তবে মারুফ মল্লিক বলেন, ‘আমরা পর্যবেক্ষক কার্ড নিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একটা গোষ্ঠী মিথ্যাচার করে নানা ধরনের প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে। এই গোষ্ঠী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে৷’

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, ‘ছাত্রদলের পক্ষে থেকে কয়েকজন এসেছিলেন পর্যবেক্ষক কার্ড নেওয়ার জন্য। আবার ব্যালট বাক্স চুরির এরকম কোন ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাইবাছাই না করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আমাদের মনে হয় একটা গোষ্ঠী নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে।’

এদিকে রাত সাড়ে ১২টার দিকে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিব ও শিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের সদস্যরা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হন৷ এসময় তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়৷

তাঁদের অভিযোগ, নির্বাচনে পুরো ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে বহিরাগত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সমাগম, যাদের নিয়ে আমরা নিরাপত্তার কথা বলে গিয়েছিলেন তাঁরা।

ছাত্রশিবির নেতাকর্মীরা বলছেন, প্রশাসন স্পষ্ট কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত বহিরাগতদের ক্যাম্পাস থেকে ত্যাগ করার নির্দেশ ও প্রয়োজনে ফৌজদারী আইনের কথা প্রশাসন আমাদের জানিয়েছেন। প্রশাসন বলেছে, প্রত্যেকজন প্রার্থী চাইলে দুইজন পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দিতে পারবেন, একজন ভোট গণনার সময় এবং ভোট দেওয়ার সময়। সকালে এপ্লিকেশনের প্রেক্ষিতে তাদের নিয়োগের কথা বলেছেন।

জানতে চাইলে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিব বলেন, ‘নির্বাচনের আগের রাতে সাবেক শিক্ষার্থীদের দেখা গেছে৷ যদি তারা পর্যবেক্ষক হতে চায় সেক্ষেত্রে সংখ্যাটা সীমিত ও নির্ধারিত হওয়া উচিত৷’

তবে শিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আমাদের জানিয়েছে, মেয়াদোত্তীর্ণ কিংবা সাবেক শিক্ষার্থীরা কেউই নির্বাচনে কোনো দায়িত্বে থাকতে পারবে না৷’

শিবির সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিব মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী হয়েও কেন উপস্থিত ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংগঠনের একজন প্রতিনিধি হিসেবে তিনি আলোচনা করতে এসেছেন৷’

Ad 300x250

সম্পর্কিত