যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী সাত দলের সঙ্গে ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াতে ইসলামী। আগামী রোববার (২১ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে বলে দলগুলোর একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এখন প্রতি আসনে আলাদা প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচনী প্রচার চলছে। প্রার্থী চূড়ান্ত হলে এক আসনে এক প্রার্থীর পক্ষে আট দলের নেতাকর্মীরা কাজ করবেন।
আগামী শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) আট দলের প্রধানদের বৈঠক রয়েছে। সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে চূড়ান্ত হবে কোন আসনে, কোন দলের প্রার্থী চূড়ান্ত মনোনয়ন পাবেন। বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল গত মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর)। কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় শীর্ষ নেতাদের বৈঠক পিছিয়ে শুক্রবার দেওয়া হয়েছে।
পাঁচ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন থেকে ইতোমধ্যে জামায়াত আট দলের ব্যানারে এক হয়েছে। অন্য দলগুলো হলো– ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।
গত ৯ ডিসেম্বর থেকে মিত্রদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছে জামায়াতের নেতারা। সূত্রের দাবি, শুক্রবারের বৈঠকে আসন নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারলে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে। যদিও মিত্র দলগুলোর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতারা বলছেন, রোববারই ৩০০ আসনে চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করা হবে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ স্ট্রিমকে বলেছেন, প্রার্থী বাছাই নিয়ে ৯ ডিসেম্বর থেকে কয়েকটি সভা হয়েছে। এসব সভায় কার, কোথায় শক্তিশালী প্রার্থী আছে, তা উঠে এসেছে। এখন তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
শনি বা রোববারে চূড়ান্ত প্রার্থীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন আট দলের অন্যতম মিত্র খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তথা চরমোনাই পীরের দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনূছ আহমাদ স্ট্রিমকে বলেছেন, ইতোমধ্যে আট দলের মহাসচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। যে আসনে, যে দলের প্রার্থীর সম্ভাবনা বেশি, তাঁকেই চূড়ান্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে একাধিক দলের প্রার্থীর সম্ভাবনা রয়েছে– এমন কিছু আসনে এখনো সমঝোতা হয়নি। দ্রুতই এটি হয়ে যাবে।
ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব ও দলীয় মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, আমরা প্রতিদিন আলোচনা করছি। মঙ্গলবারও আমাদের শীর্ষ নেতারা বসে নীতিগত কিছু বিষয়ে একমত হয়েছেন। ছোট হোক, বড় হোক আট দল থেকেই প্রার্থী থাকবে। তিনি বলেন, ‘আগামী শুক্রবার বৈঠকে সুনির্দিষ্ট আসন নিয়ে আলোচনা হবে।’ রোববার ৩০০ আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা হবে কিনা– প্রশ্নে গাজী আতাউর বলেন, ‘শুক্রবার থেকে প্রয়োজনে লাগাতার আলোচনা করে একটি ফয়সালা হবে। তাতে দু-তিন দিন লাগতেও পারে। আশা করছি, ১৯, ২০ ও ২১ ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব।’
হাতে সময় কম
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনে মনোনয়পত্র ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত জমা দেওয়া যাবে। ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত যাচাই-বাছাই হবে। আট দলের নেতারা বলছেন, মনোনয়পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনের আগে পর্যাপ্ত সময় দরকার। এজন্য চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা দ্রুত করা হবে।
এদিকে, মিত্রদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে দরকষাকষির মধ্যেই বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর কয়েকটি আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন জামায়াতের নেতারা। আরো দুদিন আগেই তারা সারাদেশে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন।
এ ব্যাপারে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের স্ট্রিমকে বলেন, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পরে এ নিয়ে অনেক কাজ করতে হয়। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অনেক তথ্য-উপাত্ত দিতে হয়, মামলা থাকলে তাও যুক্ত করতে হয়। এ কারণে পর্যাপ্ত সময় পাওয়ার জন্য আমরা প্রাথমিকভাবে মনোনীতদের ফরম তোলার নির্দেশনা দিয়েছি। আট দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা হলে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হবে বলেও জানান তিনি।
আসন সমঝোতার আলোচনা যেভাবে শুরু
শুরুতে প্রায় অভিন্ন কয়েকটি দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে একমত হয় আট দল। সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে ঐকমত্য কমিশনে আলোচনার পাশাপাশি পাঁচ দফা দাবিতে মাঠে নামে তারা। ভেতরে ভেতরে নির্বাচনী জোট তৈরির আলোচনা চলতে থাকে। তবে জামায়াতের সঙ্গে কওমিধারার দলগুলোর আদর্শিক বিরোধ থাকায়, জোটের চিন্তা বাদ দেন নেতারা।
এরই মধ্যে সরকার জাতীয় নির্বাচনের দিনে গণভোটের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। পরে রাজধানী ছাড়া দেশের বিভাগীয় শহরে যৌথ সমাবেশ করে আট দল। আলোচনার মাধ্যমে কাউকে জোট নেতা মনোনীত না করে স্ব স্ব দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। সমঝোতা অনুযায়ী একটি আসনে একটি দলের প্রার্থী থাকবেন। অন্য দলগুলো তাঁকে জয়ী করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। এক পর্যায়ে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা নিয়ে দলগুলোর ভেতর কয়েক দফা আলোচনা হয়। সর্বশেষ গত ৮ ডিসেম্বর খেলাফত মজলিসের কার্যালয়ে আট দলের সমন্বয় সভা হয়।
ওই সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, এখন ভোটকেন্দ্রিক ও আসন নিয়ে আলোচনা হবে। প্রার্থী বাছাই ও চূড়ান্তের কাজ শিগগির শুরু হবে। আশা করি, আমরা ঐকমত্যে পৌঁছে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে পারব। প্রত্যেক আসনে আট দলের পক্ষ থেকে একজন প্রার্থী থাকবেন। এটা আমাদের আগের ঘোষণা। কোনো জোটের নাম থাকবে না। দেশপ্রেমিক ও ঐক্যের প্রার্থী হবে।
এ সময় আট দলের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক ও জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আট দলের শীর্ষ নেতারা আগেই ঘোষণা দিয়েছেন– আট দল একটা আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু নির্বাচন হবে এক বক্স পদ্ধতিতে। অর্থাৎ এক আসনে একজনের বেশি প্রার্থী থাকবে না। শুধু প্রার্থী দেওয়া মূখ্য নয়, আট দলের সমঝোতার প্রার্থীকে বিজয়ী করার চেষ্টা থাকবে।