বিএনপি চেয়াপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দলটির নেতারা তাঁর অবস্থা ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’ জানানোর পর হাসপাতালে ভিড় করছেন অনেকে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ছুটে যান হাসপাতালে। সারা দেশে খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা করা হয়।
রবিবার (৩০ নভেম্বর) দলের পক্ষ থেকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের কাছ থেকেই আমি শুনেছি, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়নি। তাই বলে খুব উন্নতি হয়েছে, এ রকম খবর পাইনি। তাঁকে বিদেশ নেওয়ার বিষয়ে মেডিকেল বোর্ড কোনো পরামর্শ দেয়নি।’
এর আগে গতকাল শনিবার রাতে হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেএড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, গত তিন দিন (২৮ থেকে ২৯ নভেম্বর) ধরে খালেদা জিয়ার শারিরীক অবস্থা একই অবস্থায় রয়েছে। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা, চিকিৎসকরা যে চিকিৎসা দিচ্ছেন, তাঁর শরীর তা নিতে পারছে।
প্রায় ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন হৃদরোগ ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। গত ২৩ নভেম্বর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসকরা হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে জানান।
যেভাবে চলছে চিকিৎসা
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। গত ২৪ নভেম্বর তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে বলা হলেও, তথ্যটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন তাঁর প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ম্যাডাম আইসিইউতে ছিলেন না। কেবিনে ছিলেন। কেবিনটি অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামে পূর্ণ। গত ২৭ নভেম্বর তাঁকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
গত চার দিনই খালেদা জিয়ার ডায়লাইসিস করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, চীন, মাউন্ট সিনাইসহ বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকদের যৌথ আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা কার্যক্রমে যুক্ত আছেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানও।
বিভিন্নভাবে চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, ডা. এফ এম সিদ্দিকী, ডা. নুরুদ্দিন আহমেদ, ডা. জিয়াউল হক, ডা. জাফর ইকবাল, ডা. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ, ডা. মাসুম কামাল, ডা. এ কিউ এম মহসিন, ডা. শামসুল আরেফিন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডা. হাবিবুর রহমান, ডা. রফিকউদ্দিন আহমেদ, ডা. হামিদ রব, ডা. হ্যামিল্টন, যুক্তরাজ্য থেকে ডা. পেট্রিক কেনেডি ও ডা. জেনিফার ক্রস। সার্বক্ষণিক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চিকিৎসার বিষয় তদারক করছেন বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি চিকিৎসকদের পরামর্শে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডন যান খালেদা জিয়া। লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে টানা ১৭ দিন চিকিৎসা নেন তিনি। এরপর একই বছরের ২৪ জানুয়ারি থেকে খালেদা জিয়া লন্ডনে তাঁর ছেলে তারেক রহমান বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন।
এর আগে ২০২৩ সালের অক্টোবরে দেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার রক্তনালিতে সফল অস্ত্রোপচার হয়। তখন তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে লিভার প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন।
হাসপাতালে পাশে কারা
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালে খালেদা জিয়ার পাশে সার্বক্ষণিক রয়েছেন ছোট ছেলে প্রায়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান এবং ছোট ভাই শামীম ইসকান্দার। রবিবার সকালের দিকে সিসিইউতে শয্যাপাশে থাকা শামিলা রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়া সামান্য কথা বলেছেন। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে তাঁকে লন্ডন অথবা সিঙ্গাপুর নেওয়া হতে পারে।
বিদেশে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভিসা, যেসব দেশে নেওয়া হতে পারে, সেখানকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।