জাকসু হালচাল–০১
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গেল বছরের ২৯ অক্টোবর তিন সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির প্রকাশ্যে আসে। এর আগে থেকেই আলোচনা ছিল— বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে আধিপত্য বিস্তার ও সংগঠিত হয়েছে ছাত্রশিবির।
স্ট্রিম প্রতিবেদক
এক বছর আগেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি দেখা যায়নি। তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থাণের পর সংগঠনটি একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে ক্যাম্পাসে আলোচনায় থেকেছে। গত বছরের ২৯ অক্টোবর তিন সদস্যের আংশিক কমিটি প্রকাশ করে সংগঠনটি। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রশিবির।
এর ৩৫ বছর আগে ১৯৮৯ সালের ২৬ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক হাবীবুর রহমান কবির নিহত হন। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সামাজিকভাবে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো। এরপর আর শিবিরকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে প্রথম সংগঠন হিসেবে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে ছাত্রশিবির। এত বছর ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকার পর কিভাবে ছাত্রসংগঠনটি সবার আগে প্যানেল ঘোষণা করলো সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মহিবুর রহমান মুহিব স্ট্রিমকে বলেন, আগে প্রকাশ্যে কার্যক্রম না চালাতে পারলেও তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে যারা শিবির করতো তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখতো।
জাকসুতে ছাত্রশিবির ঘোষিত প্যানেলের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’। ২৫ সদস্যের এ প্যানেলের সবাই অবশ্য ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। প্যানেলের ১০ জন শিবিরের রাজনীতিতে জড়িত। বাকি ১৫ জন বিভিন্ন ‘সামাজিক সংগঠনের’ ও ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ বলে জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন সংগঠনে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা ছিল, সেটি আমরা জানি। কিন্তু এখনও তাঁদের পরিচয় প্রকাশ না করাটা সমস্যার। এজন্যই তাঁদের প্রতি আমাদের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। তাঁদের উচিত আগের সব কমিটি ও বর্তমানে থাকা জনবল প্রকাশ্যে নিয়ে আসা। আবু তৌহিদ মো. সিয়াম, বাগছাস সমর্থিত জিএস প্রার্থী, জাকসু
তবে ছাত্রশিবিরের কমিটি প্রকাশ্যে আসা ও জাকসুর প্যানেল ঘোষণার মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে ‘গুপ্ত রাজনীতি’র আলোচনাটি ফের সামনে এসেছে। অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ছাত্রশিবিরের সব নেতাকর্মী এখনও প্রকাশ্যে আসেননি। অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে তাঁরা প্রভাব বিস্তার করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের দাবি, আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে আধিপত্য বিস্তার ও সংগঠিত হয়েছে ছাত্রশিবির। তাঁদের এই গুপ্ত রাজনীতির কারণেই এত দ্রুত প্যানেল ঘোষণা করতে পেরেছে, যা অনেকটাই এখন স্পষ্ট বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ। তাঁরা বলছেন, ছাত্রশিবিরের কমিটিতে যাঁরা আছেন এবং নতুন করে যাঁরা জাকসুর প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হলেন তাঁদের অধিকাংশই সেসব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে ছিলেন বা আছেন।
বৈধ শিক্ষার্থী হিসেবে একজন শিক্ষার্থী যে কোনো সংগঠনে যেতে পারে। এসব সংগঠনে গিয়ে যদি সে ভালো কাজ করতে পারে, তাহলে তো যাবেই। মহিবুর রহমান মুহিব, সভাপতি, ইসলামী ছাত্রশিবির, জাবি
গণঅভ্যুত্থানের পর প্রথম ঘোষিত ছাত্রশিবিরের কমিটির সভাপতি ছিলেন হারুনুর রশিদ রাফি। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাবেক এই শিক্ষার্থী বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) ক্যাডেট ছিলেন। তার র্যাংক ছিল করপোরাল। ওই কমিটির সেক্রেটারি (বর্তমানে সভাপতি) মহিবুর রহমান মুহিব রোভার স্কাউট গ্রুপের সিনিয়র রোভার মেট ছিলেন। আর প্রচার সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন সাকি রোভার স্কাউটের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন।
জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দীন বাবর স্ট্রিমকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ছিল। তাঁরা ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনে কাজ করেছে। জাকসুতে তাঁরা যে নামেই প্যানেল দিক, তাঁরা শিবিরের লোক বলেই বিবেচিত হবে। কারণ শিবির এখনও পুরোপুরি খোলস ছেড়ে বের হয়নি। তাঁরা সবার পরিচয় প্রকাশ করেনি।’ এটি এক ধরনের ‘হিপোক্রেসি’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ আমলে ছাত্রশিবিরের প্রকাশ্যে রাজনীতির সুযোগ ছিল না। তাই তাঁদের ‘গুপ্ত রাজনীতি’ মেনে নেওয়া যায়, তবে এখনও যে তাঁরা পুরোপুরি প্রকাশ্যে আসছে না বিষয়টি সারা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য সমস্যার বলে উল্লেখ করেছেন জাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী আবু তৌহিদ মো. সিয়াম।
তিনি স্ট্রিমকে বলেন, বিভিন্ন সংগঠনে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা ছিল, সেটি আমরা জানি। কিন্তু এখনও তাঁদের পরিচয় প্রকাশ না করাটা সমস্যার। এজন্যই তাঁদের প্রতি আমাদের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। তাঁদের উচিত আগের সব কমিটি ও বর্তমানে থাকা জনবল প্রকাশ্যে নিয়ে আসা।
জাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি অদ্রি অংকুর স্ট্রিমকে বলেন, ছাত্রশিবিরের ভাষ্যমতে দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে গুপ্ত রাজনীতি করছে। ফলে নানা সামাজিক সংগঠন থেকে শুরু করে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগেও ছাত্রশিবিরের উপস্থিতি দেখতে পেয়েছি। ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতি বদলেছে। কিন্তু এখনও ছাত্রশিবিরকে গুপ্ত রাজনীতির আশ্রয় নিতে দেখতে পাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের সর্বশেষ কমিটির অনেকের ক্ষেত্রেই আমরা নানা সামাজিক সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা দেখতে পেয়েছি। ফলে সামাজিক সংগঠনগুলোতে ছাত্রশিবিরের প্রভাব এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে।
যদিও ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। সভাপতি মহিবুর রহমান মুহিব স্ট্রিমকে বলেন, ‘বৈধ শিক্ষার্থী হিসেবে একজন শিক্ষার্থী যে কোনো সংগঠনে যেতে পারে। এসব সংগঠনে গিয়ে যদি সে ভালো কাজ করতে পারে, তাহলে তো যাবেই।’
‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে জাকসুর শীর্ষ দুই পদে ছাত্রশিবির নেতারাই লড়বেন। সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন ফার্মেসি বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফুল্লাহ আদিব। গত বছরের জানুয়ারিতে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে জাবি ছাত্রশিবির। সেই কমিটিতে নাম ছিল না আদিবের। তবে তিনি শিবিরের কর্মী বলে জানানো হয়েছে।
বাগছাসের সদস্যসচিব সিয়াম বলছেন, আরিফুল্লাহ আদিব যে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সেটি তাদের প্যানেল ঘোষণার আগেও জানা ছিল না। সিয়াম আরও বলেন, এর মানে ভিপি পদপ্রার্থীর বাইরে সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয় দেওয়া প্রার্থীদের মধ্যেও শিবিরের কেউ থাকতে পারে।
জাবি ছাত্রশিবিরের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক দর্শন বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান। মোস্তাফিজ আগে ছাত্রদল করতেন বলে অভিযোগ আছে। জাবি ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম সৈকতের ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের নিয়ে তোলা ছবিতেও মোস্তাফিজকে দেখা গেছে।
ওই ছবিতে ছাত্রশিবিরের সদস্য ও জাকসুর এজিএস পদপ্রার্থী ফিরদৌস আল হাসানকেও দেখা গেছে। ফিরদৌস জাবি রোভার স্কাউটের সাবেক সভাপতি ও স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধনের মীর মশাররফ হোসেন হলের সহসভাপতি ছিলেন। এছাড়া ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ) ও এক্সপ্লোরার জাবির সঙ্গেও ছিলেন ফিরদৌস।
এ ব্যাপারে মোস্তাফিজের বক্তব্য পায়নি স্ট্রিম। তবে ফিরদৌস বলেন, ‘ছবিটা প্রথম বর্ষের ছিল। আমরা ফ্যাসিবাদী আমলে কথা বলতে পারিনি। কিন্তু ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমরা সবসময়ই সক্রিয় ছিলাম। ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল পক্ষের সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ ছিল। এটিও তারই অংশ। এটা ছাত্রদলের কোন মিটিং ছিল না। আমি তখন শিবির করতাম ভাইয়েরা জানতেন।’
এ ব্যাপারে জানতে আব্দুর রহিম সৈকতকে ফোন দেওয়া হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। জাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিব অবশ্য বলছেন, ‘একই বিশ্ববিদ্যালয়ের হওয়ার কারণে সৌজন্যতার খাতিরে তারা ছবি তুলে থাকতে পারেন।’
তবে জাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিব বলেন, জোর করে চাপিয়ে দিলেই কেউ শিবির হয়ে যায় না। কেউ ধারণা করলেও তো হবে না। ছাত্রীরা যেমন শিবির করতে পারে না। এসব অভিযোগ সত্য নয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়েই প্যানেল দেওয়া হয়েছে, এখানে গুপ্ত রাজনীতি বলে কিছুর আশ্রয় নেওয়া হয়নি।
শিবিরের প্যানেলে কারা আছেন
ছাত্রশিবিরের বর্তমান কমিটির দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক এবং জাকসুর জিএস পদপ্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বিএনসিসির বিশ্ববিদ্যালয় প্লাটুনের সার্জেন্ট, ক্যাডেট আন্ডার অফিসার (সিইউও) এবং ইনচার্জ ছিলেন। পাশাপাশি তিনি বিতর্ক সংগঠন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেট অর্গানাইজেশন (জেইউডিও) ও জাবি প্রেসক্লাবের সদস্য ছিলেন।
এজিএস (পুরুষ) পদে ফিরদৌসের পাশাপাশি এজিএস (নারী) পদে লড়বেন আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা। তিনি দর্শন বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের এই শিক্ষার্থী জাবি প্রেস ক্লাবের সাবেক সহসভাপতি ও ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ নামে একটি প্লাটফর্মের সদস্য।
শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন আবু উবায়দা উসামা। ফার্মেসি বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের এই শিক্ষার্থীর কোনো সাংগঠনিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।
পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছাত্রশিবিরের প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক সাফায়েত মীর। তিনি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুল তরী’র সভাপতি ও জাবি সায়েন্স ক্লাবের কো হেড অব রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট।
সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে লড়বেন জাবি রোভার স্কাউটের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহসমন্বয়কও ছিলেন বাপ্পি।
ছাত্রশিবিরের প্যানেল থেকে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী হলেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার। তিনি বিপ্লবী সাংস্কৃতিক মঞ্চ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের সংগঠক এবং স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধন, সায়েন্স ক্লাব ও বিএনসিসির সঙ্গে যুক্ত। সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী রায়হান উদ্দিন অবশ্য ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত। তিনি সংগঠনটির জাবি শাখার মানবাধিকার সম্পাদক। পাশাপাশি জুলাই অভ্যুত্থানে আহত এই শিক্ষার্থী তরীর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুরআন অ্যান্ড কালচারাল ক্লাবের সাবেক কোষাধ্যক্ষ।
ছাত্রশিবিরের প্যানেলে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে শিবিরের সকল নেতা-কর্মীর পরিচয় প্রকাশিত হয়নি। কারণ জাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী কমিটিতে নেই। অদ্রি অংকুর, সভাপতি, ছাত্র ইউনিয়নের জাবি সংসদ
নাট্য সম্পাদক পদে লড়বেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রুহুল ইসলাম। যদিও তাঁর কোনো সাংগঠনিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এ প্যানেল থেকে ক্রীড়া সম্পাদক পদপ্রার্থী শফিউজ্জামান শাহীন শাখা ছাত্রশিবিরের সদস্য। তিনি বিএনসিসি জাবি প্লাটুনের সাবেক ইনচার্জও। কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সভাপতি শাহীন সায়েন্স ক্লাব ও বাঁধনের সঙ্গেও যুক্ত। সহ-ক্রীড়া (ছেলে) সম্পাদক পদপ্রার্থী মাহাদী হাসান জাবি ছাত্রশিবিরের সাহিত্য ও ক্রীড়া সম্পাদক। সহ-ক্রীড়া (মেয়ে) সম্পাদক পদপ্রার্থী লুবনা বিএনসিসির সাবেক কো-ইনচার্জ।
আইটি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক পদে শাখা ছাত্রশিবিরের ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম লিখন এবং সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে শাখা ছাত্রশিবিরের মানবাধিকার সম্পাদক রায়হান উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক পদপ্রার্থী আরিফুল ইসলাম জাবি ছাত্রশিবিরের গবেষণা সম্পাদক। তিনি রোটার্যাক্ট ক্লাবের সাবেক সহ সভাপতি। এছাড়া তরী, সায়েন্স ক্লাব ও পিডিএফের সঙ্গেও যুক্ত আরিফ। সহ-সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক পদে লড়বেন জাবি ছাত্রশিবিরের ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক মো. তৌহিদ হাসান। রোভার স্কাউটের সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও সায়েন্স ক্লাবের প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন তিনি।
প্যানেলটি থেকে স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন হোসনে মোবারক। তিনি কনজিউমার ইয়ুথ বাংলাদেশের (সিওয়াইবি) জাবি শাখার সেক্রেটারি।
এছাড়া পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক পদপ্রার্থী তানভীর জাবি রোভার স্কাউটের সেক্রেটারি। পাশাপাশি নিরাপদ সড়ক চাই জাবি শাখার আহ্বায়ক, পরিবেশ ফোরাম জাবি ও ঢাকা জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সহসভাপতি তিনি।
কার্যকরী সদস্য পদপ্রার্থী ফাবলিহা জাহান কুরআন ক্লাবের প্রচার সম্পাদক, তিনি ফিন্যান্স বিভাগের ছাত্র সংসদেরও প্রতিনিধি। একই পদে লড়বেন নাবিলা বিনতে হারুন; তিনিও কুরআন ক্লাবের সদস্য এবং এইচডিসির সদস্য। আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান, আবু তালহা, তরিকুল এবং মহসিন সদস্য পদে লড়বেন। পাশাপাশি শাখা ছাত্রশিবিরের মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক রাকিবুল ইসলামও সদস্য পদে লড়বেন।
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি অদ্রি অংকুর অবশ্য বলছেন, ছাত্রশিবিরের প্যানেলে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে শিবিরের সকল নেতা-কর্মীর পরিচয় প্রকাশিত হয়নি। কারণ জাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী কমিটিতে নেই। শিবির যেহেতু অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও গুপ্ত রাজনীতি সচল রেখেছে, আমরা ধারণা করছি তাদের নেতা-কর্মীদের সবার পরিচয় এখনও প্রকাশিত নয়।
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের জাবি শাখার সদস্যসচিব ও জাকসুর জিএস পদপ্রার্থী তৌহিদ মো. সিয়াম বলছেন, এটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আমি যাকে ভোট দিচ্ছি তার পলিটিক্যাল আইডিওলজি কী। কেউ যদি শিবির করেও সেই পরিচয় লুকিয়ে ভোটে লড়ে, তবে এটি স্পষ্ট প্রতারণা। ছাত্রশিবির জাকসুতে এমনটি করে থাকতে পারে।
ছাত্রদল আহ্বায়ক জহির উদ্দীন বাবর বলেন, ছাত্রশিবিরের প্যানেল সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে হলেও তাদের আমরা শিবির হিসেবেই ধরছি। কারণ তারা এখনও পুরোপুরি প্রকাশ্যে আসেনি। ছাত্রশিবিরের এই ছলচাতুরিকে পাত্তা না দিয়ে শিক্ষার্থীরা জাকসু নির্বাচনে শিবিরকে বেছে নেবে না বলে বিশ্বাস করি।
এক বছর আগেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি দেখা যায়নি। তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থাণের পর সংগঠনটি একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে ক্যাম্পাসে আলোচনায় থেকেছে। গত বছরের ২৯ অক্টোবর তিন সদস্যের আংশিক কমিটি প্রকাশ করে সংগঠনটি। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রশিবির।
এর ৩৫ বছর আগে ১৯৮৯ সালের ২৬ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক হাবীবুর রহমান কবির নিহত হন। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সামাজিকভাবে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো। এরপর আর শিবিরকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে প্রথম সংগঠন হিসেবে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে ছাত্রশিবির। এত বছর ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকার পর কিভাবে ছাত্রসংগঠনটি সবার আগে প্যানেল ঘোষণা করলো সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মহিবুর রহমান মুহিব স্ট্রিমকে বলেন, আগে প্রকাশ্যে কার্যক্রম না চালাতে পারলেও তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে যারা শিবির করতো তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখতো।
জাকসুতে ছাত্রশিবির ঘোষিত প্যানেলের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’। ২৫ সদস্যের এ প্যানেলের সবাই অবশ্য ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। প্যানেলের ১০ জন শিবিরের রাজনীতিতে জড়িত। বাকি ১৫ জন বিভিন্ন ‘সামাজিক সংগঠনের’ ও ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ বলে জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন সংগঠনে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা ছিল, সেটি আমরা জানি। কিন্তু এখনও তাঁদের পরিচয় প্রকাশ না করাটা সমস্যার। এজন্যই তাঁদের প্রতি আমাদের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। তাঁদের উচিত আগের সব কমিটি ও বর্তমানে থাকা জনবল প্রকাশ্যে নিয়ে আসা। আবু তৌহিদ মো. সিয়াম, বাগছাস সমর্থিত জিএস প্রার্থী, জাকসু
তবে ছাত্রশিবিরের কমিটি প্রকাশ্যে আসা ও জাকসুর প্যানেল ঘোষণার মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে ‘গুপ্ত রাজনীতি’র আলোচনাটি ফের সামনে এসেছে। অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ছাত্রশিবিরের সব নেতাকর্মী এখনও প্রকাশ্যে আসেননি। অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে তাঁরা প্রভাব বিস্তার করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের দাবি, আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে আধিপত্য বিস্তার ও সংগঠিত হয়েছে ছাত্রশিবির। তাঁদের এই গুপ্ত রাজনীতির কারণেই এত দ্রুত প্যানেল ঘোষণা করতে পেরেছে, যা অনেকটাই এখন স্পষ্ট বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ। তাঁরা বলছেন, ছাত্রশিবিরের কমিটিতে যাঁরা আছেন এবং নতুন করে যাঁরা জাকসুর প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হলেন তাঁদের অধিকাংশই সেসব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে ছিলেন বা আছেন।
বৈধ শিক্ষার্থী হিসেবে একজন শিক্ষার্থী যে কোনো সংগঠনে যেতে পারে। এসব সংগঠনে গিয়ে যদি সে ভালো কাজ করতে পারে, তাহলে তো যাবেই। মহিবুর রহমান মুহিব, সভাপতি, ইসলামী ছাত্রশিবির, জাবি
গণঅভ্যুত্থানের পর প্রথম ঘোষিত ছাত্রশিবিরের কমিটির সভাপতি ছিলেন হারুনুর রশিদ রাফি। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাবেক এই শিক্ষার্থী বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) ক্যাডেট ছিলেন। তার র্যাংক ছিল করপোরাল। ওই কমিটির সেক্রেটারি (বর্তমানে সভাপতি) মহিবুর রহমান মুহিব রোভার স্কাউট গ্রুপের সিনিয়র রোভার মেট ছিলেন। আর প্রচার সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন সাকি রোভার স্কাউটের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন।
জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দীন বাবর স্ট্রিমকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ছিল। তাঁরা ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনে কাজ করেছে। জাকসুতে তাঁরা যে নামেই প্যানেল দিক, তাঁরা শিবিরের লোক বলেই বিবেচিত হবে। কারণ শিবির এখনও পুরোপুরি খোলস ছেড়ে বের হয়নি। তাঁরা সবার পরিচয় প্রকাশ করেনি।’ এটি এক ধরনের ‘হিপোক্রেসি’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ আমলে ছাত্রশিবিরের প্রকাশ্যে রাজনীতির সুযোগ ছিল না। তাই তাঁদের ‘গুপ্ত রাজনীতি’ মেনে নেওয়া যায়, তবে এখনও যে তাঁরা পুরোপুরি প্রকাশ্যে আসছে না বিষয়টি সারা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য সমস্যার বলে উল্লেখ করেছেন জাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী আবু তৌহিদ মো. সিয়াম।
তিনি স্ট্রিমকে বলেন, বিভিন্ন সংগঠনে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা ছিল, সেটি আমরা জানি। কিন্তু এখনও তাঁদের পরিচয় প্রকাশ না করাটা সমস্যার। এজন্যই তাঁদের প্রতি আমাদের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। তাঁদের উচিত আগের সব কমিটি ও বর্তমানে থাকা জনবল প্রকাশ্যে নিয়ে আসা।
জাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি অদ্রি অংকুর স্ট্রিমকে বলেন, ছাত্রশিবিরের ভাষ্যমতে দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে গুপ্ত রাজনীতি করছে। ফলে নানা সামাজিক সংগঠন থেকে শুরু করে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগেও ছাত্রশিবিরের উপস্থিতি দেখতে পেয়েছি। ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতি বদলেছে। কিন্তু এখনও ছাত্রশিবিরকে গুপ্ত রাজনীতির আশ্রয় নিতে দেখতে পাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের সর্বশেষ কমিটির অনেকের ক্ষেত্রেই আমরা নানা সামাজিক সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা দেখতে পেয়েছি। ফলে সামাজিক সংগঠনগুলোতে ছাত্রশিবিরের প্রভাব এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে।
যদিও ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। সভাপতি মহিবুর রহমান মুহিব স্ট্রিমকে বলেন, ‘বৈধ শিক্ষার্থী হিসেবে একজন শিক্ষার্থী যে কোনো সংগঠনে যেতে পারে। এসব সংগঠনে গিয়ে যদি সে ভালো কাজ করতে পারে, তাহলে তো যাবেই।’
‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে জাকসুর শীর্ষ দুই পদে ছাত্রশিবির নেতারাই লড়বেন। সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন ফার্মেসি বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফুল্লাহ আদিব। গত বছরের জানুয়ারিতে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে জাবি ছাত্রশিবির। সেই কমিটিতে নাম ছিল না আদিবের। তবে তিনি শিবিরের কর্মী বলে জানানো হয়েছে।
বাগছাসের সদস্যসচিব সিয়াম বলছেন, আরিফুল্লাহ আদিব যে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সেটি তাদের প্যানেল ঘোষণার আগেও জানা ছিল না। সিয়াম আরও বলেন, এর মানে ভিপি পদপ্রার্থীর বাইরে সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয় দেওয়া প্রার্থীদের মধ্যেও শিবিরের কেউ থাকতে পারে।
জাবি ছাত্রশিবিরের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক দর্শন বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান। মোস্তাফিজ আগে ছাত্রদল করতেন বলে অভিযোগ আছে। জাবি ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম সৈকতের ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের নিয়ে তোলা ছবিতেও মোস্তাফিজকে দেখা গেছে।
ওই ছবিতে ছাত্রশিবিরের সদস্য ও জাকসুর এজিএস পদপ্রার্থী ফিরদৌস আল হাসানকেও দেখা গেছে। ফিরদৌস জাবি রোভার স্কাউটের সাবেক সভাপতি ও স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধনের মীর মশাররফ হোসেন হলের সহসভাপতি ছিলেন। এছাড়া ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ) ও এক্সপ্লোরার জাবির সঙ্গেও ছিলেন ফিরদৌস।
এ ব্যাপারে মোস্তাফিজের বক্তব্য পায়নি স্ট্রিম। তবে ফিরদৌস বলেন, ‘ছবিটা প্রথম বর্ষের ছিল। আমরা ফ্যাসিবাদী আমলে কথা বলতে পারিনি। কিন্তু ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমরা সবসময়ই সক্রিয় ছিলাম। ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল পক্ষের সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ ছিল। এটিও তারই অংশ। এটা ছাত্রদলের কোন মিটিং ছিল না। আমি তখন শিবির করতাম ভাইয়েরা জানতেন।’
এ ব্যাপারে জানতে আব্দুর রহিম সৈকতকে ফোন দেওয়া হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। জাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিব অবশ্য বলছেন, ‘একই বিশ্ববিদ্যালয়ের হওয়ার কারণে সৌজন্যতার খাতিরে তারা ছবি তুলে থাকতে পারেন।’
তবে জাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিব বলেন, জোর করে চাপিয়ে দিলেই কেউ শিবির হয়ে যায় না। কেউ ধারণা করলেও তো হবে না। ছাত্রীরা যেমন শিবির করতে পারে না। এসব অভিযোগ সত্য নয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়েই প্যানেল দেওয়া হয়েছে, এখানে গুপ্ত রাজনীতি বলে কিছুর আশ্রয় নেওয়া হয়নি।
শিবিরের প্যানেলে কারা আছেন
ছাত্রশিবিরের বর্তমান কমিটির দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক এবং জাকসুর জিএস পদপ্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বিএনসিসির বিশ্ববিদ্যালয় প্লাটুনের সার্জেন্ট, ক্যাডেট আন্ডার অফিসার (সিইউও) এবং ইনচার্জ ছিলেন। পাশাপাশি তিনি বিতর্ক সংগঠন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেট অর্গানাইজেশন (জেইউডিও) ও জাবি প্রেসক্লাবের সদস্য ছিলেন।
এজিএস (পুরুষ) পদে ফিরদৌসের পাশাপাশি এজিএস (নারী) পদে লড়বেন আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা। তিনি দর্শন বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের এই শিক্ষার্থী জাবি প্রেস ক্লাবের সাবেক সহসভাপতি ও ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ নামে একটি প্লাটফর্মের সদস্য।
শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন আবু উবায়দা উসামা। ফার্মেসি বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের এই শিক্ষার্থীর কোনো সাংগঠনিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।
পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছাত্রশিবিরের প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক সাফায়েত মীর। তিনি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুল তরী’র সভাপতি ও জাবি সায়েন্স ক্লাবের কো হেড অব রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট।
সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে লড়বেন জাবি রোভার স্কাউটের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহসমন্বয়কও ছিলেন বাপ্পি।
ছাত্রশিবিরের প্যানেল থেকে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী হলেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার। তিনি বিপ্লবী সাংস্কৃতিক মঞ্চ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের সংগঠক এবং স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধন, সায়েন্স ক্লাব ও বিএনসিসির সঙ্গে যুক্ত। সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী রায়হান উদ্দিন অবশ্য ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত। তিনি সংগঠনটির জাবি শাখার মানবাধিকার সম্পাদক। পাশাপাশি জুলাই অভ্যুত্থানে আহত এই শিক্ষার্থী তরীর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুরআন অ্যান্ড কালচারাল ক্লাবের সাবেক কোষাধ্যক্ষ।
ছাত্রশিবিরের প্যানেলে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে শিবিরের সকল নেতা-কর্মীর পরিচয় প্রকাশিত হয়নি। কারণ জাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী কমিটিতে নেই। অদ্রি অংকুর, সভাপতি, ছাত্র ইউনিয়নের জাবি সংসদ
নাট্য সম্পাদক পদে লড়বেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রুহুল ইসলাম। যদিও তাঁর কোনো সাংগঠনিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এ প্যানেল থেকে ক্রীড়া সম্পাদক পদপ্রার্থী শফিউজ্জামান শাহীন শাখা ছাত্রশিবিরের সদস্য। তিনি বিএনসিসি জাবি প্লাটুনের সাবেক ইনচার্জও। কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সভাপতি শাহীন সায়েন্স ক্লাব ও বাঁধনের সঙ্গেও যুক্ত। সহ-ক্রীড়া (ছেলে) সম্পাদক পদপ্রার্থী মাহাদী হাসান জাবি ছাত্রশিবিরের সাহিত্য ও ক্রীড়া সম্পাদক। সহ-ক্রীড়া (মেয়ে) সম্পাদক পদপ্রার্থী লুবনা বিএনসিসির সাবেক কো-ইনচার্জ।
আইটি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক পদে শাখা ছাত্রশিবিরের ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম লিখন এবং সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে শাখা ছাত্রশিবিরের মানবাধিকার সম্পাদক রায়হান উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক পদপ্রার্থী আরিফুল ইসলাম জাবি ছাত্রশিবিরের গবেষণা সম্পাদক। তিনি রোটার্যাক্ট ক্লাবের সাবেক সহ সভাপতি। এছাড়া তরী, সায়েন্স ক্লাব ও পিডিএফের সঙ্গেও যুক্ত আরিফ। সহ-সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক পদে লড়বেন জাবি ছাত্রশিবিরের ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক মো. তৌহিদ হাসান। রোভার স্কাউটের সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও সায়েন্স ক্লাবের প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন তিনি।
প্যানেলটি থেকে স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন হোসনে মোবারক। তিনি কনজিউমার ইয়ুথ বাংলাদেশের (সিওয়াইবি) জাবি শাখার সেক্রেটারি।
এছাড়া পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক পদপ্রার্থী তানভীর জাবি রোভার স্কাউটের সেক্রেটারি। পাশাপাশি নিরাপদ সড়ক চাই জাবি শাখার আহ্বায়ক, পরিবেশ ফোরাম জাবি ও ঢাকা জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সহসভাপতি তিনি।
কার্যকরী সদস্য পদপ্রার্থী ফাবলিহা জাহান কুরআন ক্লাবের প্রচার সম্পাদক, তিনি ফিন্যান্স বিভাগের ছাত্র সংসদেরও প্রতিনিধি। একই পদে লড়বেন নাবিলা বিনতে হারুন; তিনিও কুরআন ক্লাবের সদস্য এবং এইচডিসির সদস্য। আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান, আবু তালহা, তরিকুল এবং মহসিন সদস্য পদে লড়বেন। পাশাপাশি শাখা ছাত্রশিবিরের মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক রাকিবুল ইসলামও সদস্য পদে লড়বেন।
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি অদ্রি অংকুর অবশ্য বলছেন, ছাত্রশিবিরের প্যানেলে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে শিবিরের সকল নেতা-কর্মীর পরিচয় প্রকাশিত হয়নি। কারণ জাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী কমিটিতে নেই। শিবির যেহেতু অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও গুপ্ত রাজনীতি সচল রেখেছে, আমরা ধারণা করছি তাদের নেতা-কর্মীদের সবার পরিচয় এখনও প্রকাশিত নয়।
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের জাবি শাখার সদস্যসচিব ও জাকসুর জিএস পদপ্রার্থী তৌহিদ মো. সিয়াম বলছেন, এটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আমি যাকে ভোট দিচ্ছি তার পলিটিক্যাল আইডিওলজি কী। কেউ যদি শিবির করেও সেই পরিচয় লুকিয়ে ভোটে লড়ে, তবে এটি স্পষ্ট প্রতারণা। ছাত্রশিবির জাকসুতে এমনটি করে থাকতে পারে।
ছাত্রদল আহ্বায়ক জহির উদ্দীন বাবর বলেন, ছাত্রশিবিরের প্যানেল সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে হলেও তাদের আমরা শিবির হিসেবেই ধরছি। কারণ তারা এখনও পুরোপুরি প্রকাশ্যে আসেনি। ছাত্রশিবিরের এই ছলচাতুরিকে পাত্তা না দিয়ে শিক্ষার্থীরা জাকসু নির্বাচনে শিবিরকে বেছে নেবে না বলে বিশ্বাস করি।
‘কিছু ব্যক্তি’ বেসরকারি মাইটিভি দখলের পরিকল্পনা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি দখল করতেই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীন সাথী ও তার ছেলে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করানো হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
৪ ঘণ্টা আগেসাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে তার বাসভবনে গেছেন বাংলাদেশ সফররত পাকিস্তান উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।
২ দিন আগেসংস্কার নিয়ে চূড়ান্ত আলাপ না করেই অধ্যাপক ইউনূস নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
২ দিন আগেবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মাদ ইসহাক দার।
২ দিন আগে