leadT1ad

ডাকসু ইশতেহার ০১

কার ইশতেহারে কী আছে, নির্বাচিত হলে কী বাস্তবায়ন করবে প্রার্থীরা

আগামীকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন। এ নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়েছে সারাদেশে। এবারের ভোটযুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্যানেলের নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে স্ট্রিম-এর বিশেষ আয়োজন। প্রতিনিধিত্বশীল প্যানেলগুলোর ইশতেহার পর্যালোচনা করে এখানে থাকছে কী আছে কোন প্যানেলের ইশতেহারে।

ফারিহা নওশীনঢাকা
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৩
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৩
ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা ইশতেহার প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। স্ট্রিম গ্রাফিক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সমর্থিত প্যানেলগুলোর অংশগ্রহনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ছাত্রনেতারা। রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্যানেল। একাধিক ইশতেহারকে সামনে রেখে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়েছেন তাঁরা। গতকাল রাত ১১ টা পর্যন্ত ছিল প্রচারণার শেষ সময়। সব মিলিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসের বিদ্যমান সমস্যাগুলো সকলে চিহ্নিত করলেও, প্রত্যেকের রয়েছে ভিন্ন কৌশল। প্রধান কিছু ইশতেহারে একে অন্যের থেকে ভিন্নতা এনেছেন ছাত্ররা।

কোন প্যানেলের বিশেষত্ব কী

প্রতিরোধ পর্ষদ: প্রতিরোধ পর্ষদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইশতেহার ডাকসু গঠনতন্ত্র। তাঁরা বলছেন, ডাকসু গঠনতন্ত্রে এখনও পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। অর্থাৎ যেকোনো পরামর্শ এবং সুপারিশ বাতিল বা গ্রহণের ক্ষেত্রে উপাচার্যের অনুমতির প্রয়োজন।

পাশাপাশি ডাকসুর কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেন একজন শিক্ষক। ফলে শিক্ষার্থীদের কোনো দাবি এবং পরামর্শ স্বতন্ত্রভাবে উপস্থাপিত হয় না। প্রতিরোধ পর্ষদ গঠনতন্ত্রের পরিবর্তনে বদ্ধপরিকর। তবে তাঁরা নতুনত্ব এনেছেন ডাকসুতে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের বিভাগভিত্তিক অংশগ্রহনকে কেন্দ্র করে। পাশাপাশি প্রশাসনের ব্যয় সংকোচন নীতির বিরুদ্ধেও তাদের প্রচারণা চোখে পড়ার মতো।

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ: শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা এবং হলভিত্তিক দলীয় রাজনীতি দূরীকরণ তাদের মূল এজেন্ডা। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষনাভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর করার জন্য শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি পরিবর্তন ও শিক্ষক রিভিউ নিয়ে কাজ করতে চান তারা। ‘ওয়ান স্টপ সল্যুশন’ নামে অ্যাপ চালু করার ঘোষনা দিয়েছে এই প্যানেল। যেখানে ভর্তির ফলাফল, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফি ও বেতন এক অ্যাপের মাধ্যমে পরিশোধের ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।

প্রতিরোধ পর্ষদ গঠনতন্ত্রের পরিবর্তনে বদ্ধপরিকর। তবে তাঁরা নতুনত্ব এনেছেন ডাকসুতে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের বিভাগভিত্তিক অংশগ্রহনকে কেন্দ্র করে। পাশাপাশি প্রশাসনের ব্যয় সংকোচন নীতির বিরুদ্ধেও তাদের প্রচারণা চোখে পড়ার মতো।

চাকরির প্রস্তুতির জন্য স্বতন্ত্র পড়াশোনার জায়গার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে তাদের ইশতেহারে। একটি নতুন ধরনের উদ্যোগের কথা তারা বলেছেন, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনকে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত করতে চান তারা। উপাচার্য, উপ–উপাচার্য, প্রাধ্যক্ষসহ বাকি প্রশাসনিক পদে স্বচ্ছ নিয়োগনীতি প্রণয়ন করার কথা তাদের ইশতেহারে তুলে ধরা হয়েছে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেল: এই প্যানেলের মূল ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে ডাকসুর অধীনে শিক্ষার্থী সুরক্ষা সেল গঠন করা। শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্যে তাঁরা স্নাতকোত্তরের পরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসন বাতিলের ব্যবস্থা চালু করতে চান তারা। যাতে প্রথম বর্ষেই শিক্ষার্থীরা আবাসনের নিশ্চয়তা পায়।

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বেসিক কম্পিউটার স্কিল ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের আয়োজন এবং তাদের জন্য একটি অ্যাডভাইজিং টিম গঠন করতে চান তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে গ্রিন, ইয়োলো এবং রেড জোনে ভাগ করে যানবাহন ও বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ করার ঘোষণা আছে ছাত্রদলের ইশতেহারে। গ্রিন জোন বলতে ঢাকা মেডিকেল, বাংলা একাডেমি ইত্যাদি জনবহুল এলাকা। ইয়েলো জোন বলতে অডিটোরিয়ামের মত এলাকা যেখানে গেস্ট, অ্যালামনাই ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ যথাযথ পরিচয় প্রদানের মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারবে। রেড জোন বলতে আবাসিক ও অ্যাকাডেমিক এরিয়া গুলোতে বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণের বিষয়টি সামনে এনেছেন তারা।

স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য: তাঁরা দীর্ঘদিনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির কাঠামো মীমাংসা করার জন্য ছাত্র শিক্ষক রাজনীতি কেমন হবে সেই বিষয়ে সামাজিক চুক্তি গড়ে তুলতে চান। ডাকসুকে গঠনতান্ত্রিক সংস্কার করে অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারের আওতায় নিয়ে আসার পাশাপাশি ক্রস ডিপার্টমেন্টাল কোর্স বা পার্শিয়াল ওপেন ক্রেডিট সিস্টেম চালু করার উদ্যোগ নিবেন।

যে সুবিধার আওতায় এক বিভাগের শিক্ষার্থী অন্য বিভাগে কোর্স নিতে পারবেন। গবেষণা খাতের বাজেট দুই শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীতকরণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। পাশাপাশি ‘রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন ফান্ড’ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে গ্রিন, ইয়োলো এবং রেড জোনে ভাগ করে যানবাহন ও বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ করার ঘোষণা আছে ছাত্রদলের ইশতেহারে।

একটি কার্ড ব্যবহার করে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ফি পরিশোধ করা যায় সে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে তাঁদের ইশতেহারে। প্রতি বিভাগে মাসে ৩ দিন ঐচ্ছিক পিরিয়ড লিভ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার কথা ইশতেহারে এনেছেন তারা।

ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট: এই প্যানেলটি পেপারলেস রেজিস্ট্রার বিল্ডিং করার প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। অর্থাৎ দাপ্তরিক, প্রশাসনিক কাজগুলোকে ডিজিটালাইজ করার কথা ইশতেহারে তুলে এনেছেন। আবাসন সংকটের অস্থায়ী সমাধান হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে অস্থায়ী হোস্টেল বা মাসিক আবাসন ভাতার ব্যবস্থা করা তাদের অন্যতম একটি ইশতেহার।

সংস্কার প্রস্তাবে ছাত্রী হলে পুরুষ কর্মচারী যথাসম্ভব কমিয়ে আনা এবং প্রক্টরিয়াল টিমে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নারী সদস্য নিয়োগ, মা শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেস্টফিডিং রুম এবং চাইল্ড কেয়ার কর্নার স্থাপন করার কথা উঠে এসেছে তাদের ইশতেহারে।

রাত পেরোলেই ডাকসু

ছয় বছরের বিরতির পর আবার আয়োজিত হচ্ছে ডাকসু। নানা অভিনব কায়দায় প্রচারণা করেছেন নির্বাচনী ইশতেহারের। ক্যাম্পাসের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানের উপায় বের করছেন ছাত্রনেতারা। কেউ পাচ্ছেন দলীয় সহায়তা, কেউ বা পাচ্ছেন সাংগঠনিক আর্থিক সহায়তা। সব মিলিয়ে শেষ সময়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে ডাকসু নির্বাচন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত