বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দিয়ে কোনো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ব্যাপারে আমাদের ভেতরে যথেষ্ট শঙ্কা তৈরি হয়েছে।’
আজ শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে প্রধান উপদেষ্টার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনরত আটটি দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তাহের বলেন, ‘আরেকটি পরিকল্পিত এবং পূর্বনির্ধারিত রায়ের ভিত্তিতে নির্বাচন শুরু হচ্ছে কিনা, এ ব্যাপারে আমাদের মনে এবং জনগণের মনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সরকারের আচরণ আমাদেরকে এসব কথা বিশ্বাস করতে বাধ্য করছে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই সরকার বুঝে হোক বা না বুঝে, ইচ্ছাকৃত হোক অথবা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে হোক, তারা একটি দলের ফাঁদে পা দিয়েছে। সংস্কারকে প্রায় গুরুত্বহীন করে ফেলেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর আগেও আমরা দেখেছি যে এই সরকার দলটির প্রতি নানাভাবে আনুগত্য এবং দুর্বলতা প্রকাশ করছে। সেটা শুরু হয়েছিল লন্ডনে গিয়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে।’
সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে সরকারের আচরণে একটি দলের দাবিকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি দেখা গেছে। আজ জাতির কাছে এটা প্রতিভাত হয় যে, এ সরকার এখন আর নিরপেক্ষ সরকার নয়, এই সরকার একটি দলের প্রতি অনুগত। এই সরকার একটি দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য যেনতেন একটি নির্বাচন আয়োজনের প্রচেষ্টায় আছে।’
প্রধান উপদেষ্টাকে তিনজন উপদেষ্টা বিভ্রান্ত করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, প্রধান উপদেষ্টাকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করছেন তিনজন উপদেষ্টা। এই তিনজন প্রধান উপদেষ্টাকে ভুল তথ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন যেন না হয়, সেই চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা একটি দলের হয়ে কাজ করছে।’
তাহের আরও অভিযোগ করেন, ‘এই সরকার আসার পর থেকে আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলে আসছি, কিন্তু সরকার সে ব্যাপারে মনোযোগী নয়। বরং সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার সহযোগিতায় একটি বিশেষ দলের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে দলীয়করণের চেষ্টা চলছে। একটি বিশেষ দলের লোকদেরকে নিয়োগ দেওয়ার এবং প্রশাসনের ভালো কর্মকর্তাদের ট্যাগ লাগিয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যদি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত পরিস্থিতি এভাবেই একপেশে থাকে, তাহলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। আর এই নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে দেশের জন্য আরও বেশি বিপর্যয় এবং অন্ধকার ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।’
আন্দোলনরত আট দলের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিতে চাই, আমরা আট দল এবং আমাদের সঙ্গে আরও কিছু দল, যারা আনুষ্ঠানিকভাবে না এলেও আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখছে, আমরা সকলেই আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে রোজার আগেই জাতীয় নির্বাচন চাই। এ জন্য আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার জন্য আমরা কাজ করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব শেখ ফজলে বারী মাসউদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির ইউসুফ আশরাফ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইযহার, জাগপার মুখপাত্র রাশেদ প্রধান এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির মহাসচিব কাজী নিজামুল হক প্রমুখ।