ডাকসু নির্বাচনের শেষ সময়ে ভোটারদের কাছে তাঁদের এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ফোন করে ভোট চাইছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি কারো কারো পরিবারের সদস্যদের কাছেও ভোট চাওয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তাঁদের নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বরের মতো ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হলো কীভাবে? এ নিয়ে নিরাপত্তাহীতার কথা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ফারিহা নওশীন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন আগামী মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর)। চলছে নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণা। কিন্তু এরই মধ্যে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে দলীয় ক্ষমতা অপব্যবহারের। নির্দিষ্ট প্যানেলে ভোট দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের থেকে ‘ফোন ও বার্তা’ পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি তাঁরা বলছেন, তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য যেভাবে বাইরে চলে যাচ্ছে, এতে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এমন অভিযোগ করলেও নিরাপত্তার শঙ্কায় পরিচয় প্রকাশ করতে চাইছেন না অভিযোগকারীরা।
প্রার্থীর কাছেও শিক্ষার্থীদের ‘ব্যক্তিগত তথ্য’
শামসুন্নাহার হলের ২০১৯-২০ সেশনের একজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ছাত্র শিবিরের প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ এর কেন্দ্রীয় সদস্য পদপ্রার্থী মো. বেলাল হোসেন অপু (অপু খান) হোয়াটসঅ্যাপে তাঁর কাছে ভোট চেয়েছেন, কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর কীভাবে একজন পদপ্রার্থীর কাছে পৌঁছালো তা নিয়ে চিন্তিত তিনি।
পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেন , বেলাল হোসেন বর্তমানে ফোকাস বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের নির্বাহী পরিচালক, তাঁর টেক্সটে সেটাও উল্লেখ ছিল। তিনি ধারণা করছেন, কোচিংয়ে দেওয়া তথ্য ভোটের প্রচারণায় ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে।
নিজের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে এই শিক্ষার্থী আরও জানান, তাঁর রুমমেট এবং ছোটবোনকেও একই টেক্সট করেছেন এই প্রার্থী। নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কথা বলায় অনেক আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে আমার রুমমেটকে।’ সেজন্য নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে চান না তিনি।
এ বিষয়ে বেলাল হোসেন অপুর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। আর ফোকাস কোচিংয়ের তথ্য ডাকসু নির্বাচনে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় কোচিং সেন্টারটির কার্যালয়ে। সেখান থেকে একজন কর্মকর্তার নম্বর দেওয়া হয়। সেই নম্বরে পরবর্তী সময়ে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কল রিসিভ করেননি। একইসঙ্গে এ বিষয়ে জানতে ঐক্যবদ্ধ জোটের প্যানেলের নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এলাকা থেকে ফোন করে ভোট চাইছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা
এছাড়া ভোটারদের তাঁদের এলাকা থেকেও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাও ফোন করে ভোট চাইছেন বলে একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন। নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী স্ট্রিমকে বলেন, তাঁর এলাকার স্থানীয় জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতারা ফোন করে ইলেকশনের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। সেইসঙ্গে তাঁদের পক্ষে প্রচারণার জন্য সহায়তা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি আমার এলাকার আর কারা কারা আছে (বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী), তাঁদের খোঁজ-খবরও নিচ্ছেন। যাতে ওদের সঙ্গে একটু যোগাযোগ করিয়ে দেই।’
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ২০২০-২১ সেশনের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁর প্রতিবেশী উপজেলার জামায়াতের একজন নেতা তাঁকে কল করে নির্বাচনের অবস্থা জিজ্ঞাসা করেন এবং একইসঙ্গে সাদিক কায়েমকে (শিবির সমর্থিত ভিপি প্রার্থী) ভোট দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করতে থাকেন এবং বলেন— মুসলিম হিসেবে তাঁর (ছাত্রের) দায়িত্ব শিবিরকে সমর্থন করা।
একই হলের মার্কেটিং বিভাগের একজন শিক্ষার্থী ও তাঁর পরিবারকে কল করে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার জামায়াত নেতা শিবিরের প্যানেলে ভোট দেওয়ার জন্য একাধিকবার অনুরোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের হল সংসদের একজন প্রার্থী জানিয়েছেন, বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা-মাকে স্থানীয় উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি বলেছেন, ছাত্রদলের প্রার্থীদের ভোট দিতে। তাঁরা বলেছেন—সামনে নির্বাচিত সরকার আসবে। তাঁর ছেলের চাকরির জন্য ছাত্রদলের সহায়তার প্রয়োজন পড়বে তখন। সেসব বিবেচনা করে ভোটটা অবশ্যই ছাত্রদলের প্যানেলে দিতে হবে।
ওই শিক্ষার্থী আরও জানান, জেলা ছাত্রদলের নেতারাও তাকে সরাসরি ফোন দিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলে ভোট দিতে বলছেন।
শামসুন্নাহার হলের এজিএস পদপ্রার্থী নিয়ন মনি জানান, তাঁকে আজ সকালে একটি নম্বর থেকে কল করা হয়। কলে ছাত্রদলের প্যানেলে ভোট দেওয়ার জন্য প্রেশারাইজ করা হয়। পাশাপাশি ৯ তারিখের আগে তাঁর উপজেলার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে ওই ব্যক্তি দেখা করবেন বলে জানান।
নিয়ন তাঁর ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁর নাম, নম্বর ও ঠিকানা কীভাবে কলদাতাদের কাছে গেল, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এই শিক্ষার্থী। তিনি ধারণা করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিং থেকে শিক্ষার্থীদের এসব তথ্য ফাঁস হয়ে থাকতে পারে।
শুধু যে প্রার্থীদের পক্ষ থেকেই কল পাচ্ছেন এমন নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁর গ্রামের বাড়ি এলাকার এক বন্ধুও ছাত্রদলকে ভোট দেওয়ার জন্য অনেক অনুনয় করেছেন। বলেছেন— ছাত্রদলের প্যানেলের ভিপিকে যেন একটা ভোট হলেও অবশ্যই দেই।
ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির তাঁদের প্যানেলের প্রচারণার জন্য এমন দলীয় সমর্থন পাচ্ছেন অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই ধরনের ফোনকল ভোটারদের যেমন বিব্রত করছে, একইভাবে তাঁদের পরিবারকেও দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের ডাকসু নির্বাচনের জিএস পদপ্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম শনিবার তাঁর ভেরিফায়েড আইডি থেকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘সারা বাংলাদেশের আপামর জনতা এবং বিএনপি নেতাকর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী যারা আমাকে কিংবা আমার প্যানেলকে সমর্থন করছেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ, কোনো শিক্ষার্থীকে কল করে আমাদের জন্য ভোট চেয়ে তাঁদের বিব্রত করবেন না, প্লিজ। আমি আপনাদের আবেগ-অনুভূতি-সমর্থনের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা দেখিয়ে আপনাদের অনুৎসাহিত করছি। আমি জানি, দেশের আপামর জনতার দোয়া-সমর্থন ও ভালোবাসা আমাদের সঙ্গে রয়েছে। এ সময়ে আপনাদের দোয়াই আমার ও আমাদের কাছে মুখ্য।’
একইসঙ্গে পোস্টে ভোটারদের এ ধরনের ফোনকলের তথ্য যাচাই করে নেওয়ার জন্যও অনুরোধ করেন তিনি। এটা ‘বিরোধীপক্ষের ষড়যন্ত্র’ হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
আচরণ বিধিমালায় কী আছে
ডাকসুর নির্বাচন বিধিমালার ৪ এর ‘গ’ তে বলা হয়েছে, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটার বা প্রার্থী ছাড়া অন্য কেউ কোনোভাবেই কোনো প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচার চালাতে পারবেন না।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাইরে কেউ চাইলে প্রচারণা চালাতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। তবে বাইরের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের তথ্য বিশেষ করে ফোন নম্বর কীভাবে গেলো, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
যা বলছে কর্তৃপক্ষ
এই বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জসীম উদ্দীন বলেন, তাঁরা কাউকে কোনো তথ্য দেননি এবং এই বিষয়ে কেউ তাদের কাছে কোনো অভিযোগ ও করেনি।
এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমি এই কথাটা শুনেছি। আমি প্রার্থীদের বলবো, আমাদের নির্বাচন কমিশনের একটা টাস্কফোর্স করেছে। তাঁদের লিখিতভাবে বিষয়টি জানাক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কয়েকটি দফতরে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য থাকে, সেখান থেকে ফাঁস হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যে সন্দেহ (তথ্য বেহাত হওয়া)– সেটাও আমিও শুনেছি। তাঁরা বলছে, যাঁদের কাছে ডাটাবেজ আছে, বিশেষ করে অনলাইন ভর্তি কমিটি কিংবা অন্য কোনো পক্ষের; তাঁদের যদি হাত থাকে, এটা উল্লেখ করে তাঁরা (প্রার্থীরা) অভিযোগ করুক। আমরা তাঁদের বলব, ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন আগামী মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর)। চলছে নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণা। কিন্তু এরই মধ্যে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে দলীয় ক্ষমতা অপব্যবহারের। নির্দিষ্ট প্যানেলে ভোট দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের থেকে ‘ফোন ও বার্তা’ পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি তাঁরা বলছেন, তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য যেভাবে বাইরে চলে যাচ্ছে, এতে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এমন অভিযোগ করলেও নিরাপত্তার শঙ্কায় পরিচয় প্রকাশ করতে চাইছেন না অভিযোগকারীরা।
প্রার্থীর কাছেও শিক্ষার্থীদের ‘ব্যক্তিগত তথ্য’
শামসুন্নাহার হলের ২০১৯-২০ সেশনের একজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ছাত্র শিবিরের প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ এর কেন্দ্রীয় সদস্য পদপ্রার্থী মো. বেলাল হোসেন অপু (অপু খান) হোয়াটসঅ্যাপে তাঁর কাছে ভোট চেয়েছেন, কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর কীভাবে একজন পদপ্রার্থীর কাছে পৌঁছালো তা নিয়ে চিন্তিত তিনি।
পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেন , বেলাল হোসেন বর্তমানে ফোকাস বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের নির্বাহী পরিচালক, তাঁর টেক্সটে সেটাও উল্লেখ ছিল। তিনি ধারণা করছেন, কোচিংয়ে দেওয়া তথ্য ভোটের প্রচারণায় ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে।
নিজের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে এই শিক্ষার্থী আরও জানান, তাঁর রুমমেট এবং ছোটবোনকেও একই টেক্সট করেছেন এই প্রার্থী। নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কথা বলায় অনেক আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে আমার রুমমেটকে।’ সেজন্য নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে চান না তিনি।
এ বিষয়ে বেলাল হোসেন অপুর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। আর ফোকাস কোচিংয়ের তথ্য ডাকসু নির্বাচনে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় কোচিং সেন্টারটির কার্যালয়ে। সেখান থেকে একজন কর্মকর্তার নম্বর দেওয়া হয়। সেই নম্বরে পরবর্তী সময়ে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কল রিসিভ করেননি। একইসঙ্গে এ বিষয়ে জানতে ঐক্যবদ্ধ জোটের প্যানেলের নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এলাকা থেকে ফোন করে ভোট চাইছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা
এছাড়া ভোটারদের তাঁদের এলাকা থেকেও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাও ফোন করে ভোট চাইছেন বলে একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন। নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী স্ট্রিমকে বলেন, তাঁর এলাকার স্থানীয় জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতারা ফোন করে ইলেকশনের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। সেইসঙ্গে তাঁদের পক্ষে প্রচারণার জন্য সহায়তা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি আমার এলাকার আর কারা কারা আছে (বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী), তাঁদের খোঁজ-খবরও নিচ্ছেন। যাতে ওদের সঙ্গে একটু যোগাযোগ করিয়ে দেই।’
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ২০২০-২১ সেশনের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁর প্রতিবেশী উপজেলার জামায়াতের একজন নেতা তাঁকে কল করে নির্বাচনের অবস্থা জিজ্ঞাসা করেন এবং একইসঙ্গে সাদিক কায়েমকে (শিবির সমর্থিত ভিপি প্রার্থী) ভোট দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করতে থাকেন এবং বলেন— মুসলিম হিসেবে তাঁর (ছাত্রের) দায়িত্ব শিবিরকে সমর্থন করা।
একই হলের মার্কেটিং বিভাগের একজন শিক্ষার্থী ও তাঁর পরিবারকে কল করে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার জামায়াত নেতা শিবিরের প্যানেলে ভোট দেওয়ার জন্য একাধিকবার অনুরোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের হল সংসদের একজন প্রার্থী জানিয়েছেন, বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা-মাকে স্থানীয় উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি বলেছেন, ছাত্রদলের প্রার্থীদের ভোট দিতে। তাঁরা বলেছেন—সামনে নির্বাচিত সরকার আসবে। তাঁর ছেলের চাকরির জন্য ছাত্রদলের সহায়তার প্রয়োজন পড়বে তখন। সেসব বিবেচনা করে ভোটটা অবশ্যই ছাত্রদলের প্যানেলে দিতে হবে।
ওই শিক্ষার্থী আরও জানান, জেলা ছাত্রদলের নেতারাও তাকে সরাসরি ফোন দিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলে ভোট দিতে বলছেন।
শামসুন্নাহার হলের এজিএস পদপ্রার্থী নিয়ন মনি জানান, তাঁকে আজ সকালে একটি নম্বর থেকে কল করা হয়। কলে ছাত্রদলের প্যানেলে ভোট দেওয়ার জন্য প্রেশারাইজ করা হয়। পাশাপাশি ৯ তারিখের আগে তাঁর উপজেলার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে ওই ব্যক্তি দেখা করবেন বলে জানান।
নিয়ন তাঁর ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁর নাম, নম্বর ও ঠিকানা কীভাবে কলদাতাদের কাছে গেল, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এই শিক্ষার্থী। তিনি ধারণা করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিং থেকে শিক্ষার্থীদের এসব তথ্য ফাঁস হয়ে থাকতে পারে।
শুধু যে প্রার্থীদের পক্ষ থেকেই কল পাচ্ছেন এমন নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁর গ্রামের বাড়ি এলাকার এক বন্ধুও ছাত্রদলকে ভোট দেওয়ার জন্য অনেক অনুনয় করেছেন। বলেছেন— ছাত্রদলের প্যানেলের ভিপিকে যেন একটা ভোট হলেও অবশ্যই দেই।
ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির তাঁদের প্যানেলের প্রচারণার জন্য এমন দলীয় সমর্থন পাচ্ছেন অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই ধরনের ফোনকল ভোটারদের যেমন বিব্রত করছে, একইভাবে তাঁদের পরিবারকেও দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের ডাকসু নির্বাচনের জিএস পদপ্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম শনিবার তাঁর ভেরিফায়েড আইডি থেকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘সারা বাংলাদেশের আপামর জনতা এবং বিএনপি নেতাকর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী যারা আমাকে কিংবা আমার প্যানেলকে সমর্থন করছেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ, কোনো শিক্ষার্থীকে কল করে আমাদের জন্য ভোট চেয়ে তাঁদের বিব্রত করবেন না, প্লিজ। আমি আপনাদের আবেগ-অনুভূতি-সমর্থনের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা দেখিয়ে আপনাদের অনুৎসাহিত করছি। আমি জানি, দেশের আপামর জনতার দোয়া-সমর্থন ও ভালোবাসা আমাদের সঙ্গে রয়েছে। এ সময়ে আপনাদের দোয়াই আমার ও আমাদের কাছে মুখ্য।’
একইসঙ্গে পোস্টে ভোটারদের এ ধরনের ফোনকলের তথ্য যাচাই করে নেওয়ার জন্যও অনুরোধ করেন তিনি। এটা ‘বিরোধীপক্ষের ষড়যন্ত্র’ হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
আচরণ বিধিমালায় কী আছে
ডাকসুর নির্বাচন বিধিমালার ৪ এর ‘গ’ তে বলা হয়েছে, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটার বা প্রার্থী ছাড়া অন্য কেউ কোনোভাবেই কোনো প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচার চালাতে পারবেন না।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাইরে কেউ চাইলে প্রচারণা চালাতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। তবে বাইরের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের তথ্য বিশেষ করে ফোন নম্বর কীভাবে গেলো, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
যা বলছে কর্তৃপক্ষ
এই বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জসীম উদ্দীন বলেন, তাঁরা কাউকে কোনো তথ্য দেননি এবং এই বিষয়ে কেউ তাদের কাছে কোনো অভিযোগ ও করেনি।
এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমি এই কথাটা শুনেছি। আমি প্রার্থীদের বলবো, আমাদের নির্বাচন কমিশনের একটা টাস্কফোর্স করেছে। তাঁদের লিখিতভাবে বিষয়টি জানাক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কয়েকটি দফতরে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য থাকে, সেখান থেকে ফাঁস হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যে সন্দেহ (তথ্য বেহাত হওয়া)– সেটাও আমিও শুনেছি। তাঁরা বলছে, যাঁদের কাছে ডাটাবেজ আছে, বিশেষ করে অনলাইন ভর্তি কমিটি কিংবা অন্য কোনো পক্ষের; তাঁদের যদি হাত থাকে, এটা উল্লেখ করে তাঁরা (প্রার্থীরা) অভিযোগ করুক। আমরা তাঁদের বলব, ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’
বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
১৪ ঘণ্টা আগেছাত্রদলের প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন শেখ নূর উদ্দিন আবির, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে নাফিউল ইসলাম জীবন ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) জাহিন বিশ্বাস এষা।
১ দিন আগেচট্টগ্রামের হাটহাজারীতে দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।
১ দিন আগেছাত্রদলের প্রার্থীরা এই শপথ ধারণ করে বলে শপথে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে প্রত্যেকের জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ কর্মকান্ডের মাধ্যমে শপথ বাস্তবায়ন করা হবে।
১ দিন আগে