leadT1ad

শহিদুল আলমকে ইসরায়েলি বাহিনীর অপহরণ: কী বলছে রাজনৈতিক দলগুলো

বাংলাদেশি আলোকচিত্রী ও লেখক শহিদুল আলমের মুক্তির দাবিতে বিবৃতি দিয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতারা।

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ২২: ৪৮
কনশানস জাহাজে বাংলাদেশের পতাকা হাতে শহীদুল আলম। ছবি: সংগৃহীত।

বাংলাদেশি আলোকচিত্রী ও লেখক শহিদুল আলমের মুক্তির দাবিতে বিবৃতি দিয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতারা। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-সহ বিভিন্ন দল।

বিবৃতিগুলোতে বলা হয়, শহিদুল আলমকে দ্রুত ও নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকে অবিলম্বে উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বিশ্ববাসীর কাছে তাঁর মুক্তির দাবিতে কার্যকর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানানো হয়েছে।

ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙতে গাজা অভিমুখী ১১টি জাহাজের একটি ‘কনশানস’ থেকে আটক হয়েছেন শহিদুল আলম। বুধবার (৮ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টার কিছুক্ষণ পরে তিনি তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে আটক হওয়ার একটি ভিডিও পোস্ট করেন।

নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান বিএনপির

বুধবার দুপুরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে শহিদুল আলমের মুক্তির দাবি জানান। এ সময় তিনি সরকারকে আহ্বান জানিয়ে লেখেন, শহিদুলকে যাতে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন: এনসিপি

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও শ্রমিক উইংয়ের প্রধান সমন্বয়কারী মাজহারুল ইসলাম ফকির এক বিবৃতিতে এ ঘটনার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘মানবিক সহায়তা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে অবস্থান নেওয়া একজন বিশিষ্ট নাগরিককে আটক করা মানবতার পরিপন্থী ও আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’

শহিদুল আলমসহ আটক সব মানবাধিকার কর্মীর নিরাপদ মুক্তির দাবি করা হয় বিবৃতিতে। সেই সঙ্গে, বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি এ বিষয়ে দ্রুত কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলছে জামায়াত

শহিদুল আলমকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানান।

বিবৃতিতে গোলাম পরওয়ার বলেন বলেন, নৌবহরটি গাজাবাসীর জন্য খাদ্য, ঔষধ ও বিশুদ্ধ পানি নিয়ে যাচ্ছিল। মানবিক এই অভিযানে বাধা দেওয়া আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, গাজার নিরীহ জনগণের প্রতি এই আক্রমণ মানবতার ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। দখলদার ইসরায়েল নৌযান ও মানবাধিকারকর্মীদের আটক করে মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ করেছে।

সাংবাদিকতা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত: উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ

শহিদুল আলমের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। সেখানে দলটির সভাপতি শায়খুল হাদিস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেছেন, তাঁকে অন্যায়ভাবে অপহরণ করেছে ইসরায়েল। এটি শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, বরং সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপরও সরাসরি আঘাত। শহিদুল আলম কোনো রাজনৈতিক চরিত্র নন, বরং একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী ও মানবতার কণ্ঠস্বর।

মুসলিম দেশগুলোকে হস্তক্ষেপের আহ্বান খেলাফত মজলিসের

শহিদুল আলমের মুক্তি ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ যৌথ বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, শহিদুল আলম সত্য, ন্যায় ও মানবতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, বাংলাদেশ সরকার অবিলম্বে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে শহিদুল আলমের মুক্তি ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবে—এটি জাতির প্রত্যাশা।

বিবৃতিতে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, সাংবাদিক সংগঠন ও মুসলিম দেশগুলোকে আহ্বান জানানো হয় যেন তারা এই অবৈধ আটক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।

সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও শহিদুল আলমের নিরাপত্তা ও মুক্তির ব্যাপারে সরকারকে সর্বোচ্চ জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে দলের যুগ্মমহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে ইসরায়েলি বর্বর হানাদাররা ধরে নিয়ে গেছে। এটা আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতি আঘাত, আমাদের নাগরিকদের মর্যাদা ও সম্মানের প্রশ্ন। তাই তাঁর নিরাপত্তা ও মুক্তির ব্যাপারে সরকারকে জরুরি ও সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিতে হবে।

মাওলানা গাজী আতাউর রহমান আরো বলেন, ‘শহিদুল আলম ফিলিস্তিনিদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার প্রতীকরূপে হাজির হয়েছেন। তিনি গাজার জনগণের প্রতি আমাদের সম্মিলিত ভালোবাসা বহন করেছেন। ফলে তার নিরাপত্তা ও মুক্তি আমাদের জাতীয় সম্মান ও মর্যাদার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

গণসংহতি আন্দোলনের বিক্ষোভ

শহিদুল আলমকে আটকের ঘটনায় বুধবার বিকেলে রাজধানীর ইস্কাটনে প্রতিবাদ ও সংহতি সমাবেশের আয়োজন করেছে গণসংহতি আন্দোলন। সেখানে তাঁর মুক্তির জন্য সরকারকে ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানায় দলটি। এ ছাড়া বাকি বন্দিদের মুক্তির দাবিও তোলা হয় সেখানে।

সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, ফিলিস্তিনের মানুষের স্বাধীনতার জন্য আওয়াজ তোলা সকলের দায়িত্ব।

কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ চেয়েছে বাগছাস

শহিদুল আলমের আটকের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)। সংগঠনটির সদস্য সচিব জাহিদ আহসান স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই নিন্দা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে শহিদুল আলমের মুক্তি ও কূটনৈতিক হস্তক্ষেপও চাওয়া হয়েছে।

শহিদুল আলম বাংলাদেশে ন্যায়বিচার, মর্যাদা এবং মানবাধিকারের জন্য একজন সাহসী কণ্ঠস্বর উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গাজায় মানবিক মিশনে শহিদুল আলমের অংশগ্রহণ বাংলাদেশি জনগণের নৈতিক অবস্থানকে প্রতিফলিত করে, যা ঐতিহাসিকভাবে ন্যায়বিচার, শান্তি এবং নিপীড়িত জনগণের প্রতিরক্ষার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একটি বেসামরিক সহায়তা মিশনে সহিংস বাধা এবং একজন বাংলাদেশি নাগরিকসহ নিরস্ত্র অংশগ্রহণকারীদের আটক আন্তর্জাতিক নিয়মের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, শহিদুল আলমের নিরাপত্তা, আইনি অধিকার এবং দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অবিলম্বে কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, স্বাধীনতা ও মানবিক মর্যাদার মূল্য দেয় এমন সকল রাষ্ট্রকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছ সকল ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানাই।

Ad 300x250

সম্পর্কিত