নতুন ইস্যুতে বিপরীতমুখী অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে দেশের বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াত। জোটগত নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা চায় না বিএনপি। অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চায় নির্বাচন যেভাবেই হোক, ভোট হবে নিজ নিজ দলীয় প্রতীকে।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতিতে চলছে নানামুখী মেরুকরণ। একদিকে বিএনপি বৃহত্তর জোট তৈরি করতে চাইছে, অন্যদিকে ইসলামপন্থী ও সমমনা দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচনী সমঝোতায় পৌঁছতে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াত। ফলে আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে দলগুলোর জোটবদ্ধ অংশগ্রহণ।
জোটগত নির্বাচন করার ক্ষেত্রে এতদিন নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল না। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের আরপিও সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। আরপিওর ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বলা হয়েছে, জোট করলেও ভোট করতে হবে নিজ দলীয় প্রতীকে। গত ২৩ অক্টোবর সংশোধিত অধ্যাদেশটি উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনও পায়। এর পরেই বিএনপি এই সংশোধনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানায়।
সংশোধিত অধ্যাদেশটি এখন রাষ্ট্রপতির সইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। এমনাবস্থায় গত ২৬ অক্টোবর সকালে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয়। বৈঠক শেষে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো. ইসমাঈল জবিউল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, জোটের প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান নিয়ে ইসিতে তাঁরা আপত্তি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে আজ (২৮ অক্টোবর) সিইসির সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বৈঠক শেষে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার জানিয়েছেন, এই বিধান কোনোভাবেই পরিবর্তন করা যাবে না বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে তাঁরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনে নভেম্বরে গণভোট আয়োজনসহ মোট ১৮ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেছে জামায়াত।
সুপারিশের দ্বিতীয় দফায় জামায়াত বলেছে, ‘উপদেষ্টা পরিষদে গৃহিত সর্বশেষ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ২০ নং অনুচ্ছেদের সর্বশেষ সংশোধনীর বিধান অনুযায়ী প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে তাঁর নিজস্ব দলীয় প্রতীক ব্যবহার করতে হবে। অন্য কোনো দলের প্রতীক ব্যবহার করতে পারবেন না। এ বিধান বহাল রাখতে হবে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের জোটগতভাবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করার বিধান অন্তর্ভুক্তির জন্য নির্বাচনব্যবস্থা সংক্রান্ত সংস্কার কমিশনই সুপারিশ করেছে। ফলে এই বিধান কোনোক্রমেই পরিবর্তন করা যাবে না। সংশোধিত বিধানই বহাল রাখতে হবে।’
অন্যদিকে আজ মঙ্গলবার আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের এ বিষয়ে বৈঠক করার কথা রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, সচিবালয়ে উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বিষয়ে নিজেদের দৃঢ় অবস্থান জানাবে বিএনপি।
যদিও সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে গত রোববার বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো. ইসমাঈল জবিউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘বিএনপি এই সংশোধনের সঙ্গে একমত নয়। এই সংশোধনী বা পরিবর্তন বিএনপির কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ সংশোধনী থেকে সরে এসে আরপিওর আগের বিধান বহাল রাখার অনুরোধ জানিয়ে আমরা সিইসির কাছে আনুষ্ঠানিক পত্র দিয়েছি।’
ইসমাইল জবিউল্লাহ আরও বলেন, এ বিষয়ে বর্তমান সরকারের উচ্চ পর্যায়ে, উপদেষ্টা পর্যায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের আলোচনাকালে আরপিওর ২০ নম্বর অনুচ্ছেদে কোনো পরিবর্তন আনা হবে না বলে আশ্বস্ত করা হয়েছিল।