leadT1ad

ডিজিটাল অর্থনীতি: সম্ভাবনা আছে, প্রস্তুতি কই

বাংলাদেশে ডিজিটাল অর্থনীতির সম্ভাবনা আছে, প্রস্তুতি নেই। স্ট্রিম গ্রাফিক

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি কেবল পোশাকশিল্প বা প্রবাসী আয়েই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল খাতই হতে যাচ্ছে এর মূল চালিকা শক্তি। সারা বিশ্ব এখন প্রযুক্তি দিয়ে প্রতিযোগিতা করছে। যেসব দেশ সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দক্ষ জনশক্তি তৈরি করেছে এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়েছে, তারা ইতিমধ্যেই বহুদূর এগিয়ে গেছে। আমাদের দেশেও সম্ভাবনা অপরিসীম, কিন্তু সেই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে দেরি করে আমরা বারবার পিছিয়ে যাচ্ছি। তরুণ প্রজন্মের উচ্ছ্বাস, ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের বিস্তার, নতুন নতুন স্টার্টআপ উদ্যোগ—সব মিলিয়ে এখনই বাংলাদেশের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ। প্রশ্ন হলো, এত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন আমরা নেতৃত্ব নিতে পারছি না?

আজ লাখো তরুণ ঘরে বসে আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করছেন। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম বড় ফ্রিল্যান্সিং দেশ, যেখানে প্রতিবছর শত শত মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। কিন্তু এখানেও এক গভীর সংকট আছে। বেশির ভাগ কাজ কম দক্ষতার; যেমন সাধারণ ডেটা এন্ট্রি বা বেসিক ডিজাইন। এসব ক্ষেত্রে আয় সীমিত, প্রতিযোগিতা তীব্র এবং টেকসই উন্নয়ন কঠিন। অথচ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ক্লাউড কম্পিউটিং কিংবা সাইবার নিরাপত্তার মতো খাতে দক্ষতা অর্জন করলে তরুণেরা বহুগুণ বেশি আয়ের সুযোগ পেতেন। এই জায়গাতেই আমাদের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। তরুণদের প্রতিভা আছে, পরিশ্রম আছে; কিন্তু সঠিক প্রশিক্ষণ আর পথনির্দেশনার অভাবে তাঁরা উচ্চমূল্যের কাজের বাজারে প্রবেশ করতে পারছেন না।

বাংলাদেশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো ই-কমার্স। কয়েক বছরের মধ্যেই এটি মানুষের জীবনযাত্রার অংশ হয়ে গেছে। অনলাইনে বাজার করা, বই কেনা কিংবা নানা ধরনের সেবা পাওয়া এখন সাধারণ বিষয়। এই খাতের আকার দ্রুত বাড়ছে; অচিরেই এটি ট্রিলিয়ন টাকার বাজারে পরিণত হবে। কিন্তু মানুষের আস্থা পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। অনেকেই এখনো অনলাইনে কেনাকাটা করতে দ্বিধা করেন। কারণ, ডেলিভারির দেরি, মানহীন পণ্য কিংবা পেমেন্ট ঝুঁকি নিয়ে অভিযোগ প্রচুর। আস্থা ছাড়া কোনো বাজার বড় হতে পারে না, তাই টেকসই উন্নয়নের জন্য ভোক্তা সুরক্ষায় এখনই বড় পদক্ষেপ নিতে হবে।

তরুণদের নিয়ে যতই আমরা গর্ব করি, তবুও বাস্তবতা হলো শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে তাঁরা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো পুরোনো সিলেবাসে আটকে আছে। যেখানে বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীরা এআই, ব্লকচেইন বা কোয়ান্টাম কম্পিউটিং শিখছেন, সেখানে আমাদের তরুণদের বড় অংশ মৌলিক প্রোগ্রামিংয়ের বাইরে বের হতে পারছে না। ফলে তাঁরা আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতার ঘাটতিতে ভুগছেন।

এখনই সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার সময়। যদি আমরা অবকাঠামো উন্নয়ন, নীতি সংস্কার ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই, তবে কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, পুরো এশিয়ার প্রযুক্তি মানচিত্রে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশে স্টার্টআপ সংস্কৃতি একধরনের আশার আলো হয়ে উঠেছে। বিকাশ, পাঠাও, চালডালের মতো উদ্যোগ দেখিয়েছে যে আমাদেরও সক্ষমতা আছে বৈশ্বিক মানের কিছু করার। কিন্তু বিনিয়োগের ঘাটতি এই ইকোসিস্টেমকে বড় হতে দিচ্ছে না। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা জটিল নিয়ম, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে প্রতিবন্ধকতা এবং নীতিগত অস্থিরতার কারণে দ্বিধায় ভোগেন। ফলে সম্ভাবনা থাকলেও উদ্যোক্তাদের পথচলা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর একটি হলো শহর আর গ্রামের মধ্যে ডিজিটাল বিভাজন। শহরে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পাওয়া গেলেও গ্রামে অনেকেই এখনো স্থিতিশীল সংযোগ পান না। অথচ দেশের অর্থনীতি সমানভাবে এগিয়ে নিতে হলে গ্রামের মানুষকেও এই সুবিধার আওতায় আনতে হবে। বিদ্যুৎ-বিভ্রাট আর লোডশেডিংও বড় বাধা। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট ছাড়া কোনো সফটওয়্যার কোম্পানি কিংবা স্টার্টআপ কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে না।

আমাদের চারপাশের দেশগুলো প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতিতে দ্রুত অগ্রগতি করছে। ভিয়েতনাম, ভারত বা ইন্দোনেশিয়া বিপুল হারে শিক্ষা সংস্কার করেছে, দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করেছে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা জাগাতে নিয়ম সহজ করেছে। অথচ আমরা এখনো প্রশাসনিক জটিলতা, হঠাৎ নীতি পরিবর্তন আর অবকাঠামোগত দুর্বলতায় পিছিয়ে আছি। এ কারণেই প্রশ্ন উঠছে—আমরা আসলে কতটা প্রস্তুত?

বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির উত্থান বারবার থমকে যায় মূলত নীতি ও অবকাঠামোর অস্থিরতার কারণে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যখন কোনো দেশে আসেন, তাঁরা প্রথমেই খোঁজেন নিরাপদ বিনিয়োগ পরিবেশ। অথচ আমাদের দেশে হঠাৎ হঠাৎ নীতি পরিবর্তন, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের জটিলতা এবং ডেটা সুরক্ষা আইনের ঘাটতি তাঁদের নিরুৎসাহিত করছে। বিনিয়োগকারীর আস্থা না থাকলে তাঁরা পুঁজি আনবেন না, আর পুঁজি ছাড়া কোনো স্টার্টআপ বা প্রযুক্তি খাতই বড় হতে পারে না। পাশাপাশি বিদ্যুৎ-বিভ্রাট আর ইন্টারনেট বিভাজন সমস্যাকে আরও গভীর করছে। যদি একটি কোম্পানি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না পায়, তবে তাদের পক্ষে বৈশ্বিক মানের সফটওয়্যার বা ডিজিটাল সেবা চালু রাখা প্রায় অসম্ভব।

তবে সবকিছুই হতাশার নয়। বাংলাদেশের তরুণেরা প্রতিদিনই প্রমাণ করছেন তাঁদের সম্ভাবনা। প্রতিবছর হাজার হাজার তরুণ আইটি খাতে প্রবেশ করছেন। তাঁরা শেখার চেষ্টা করছেন, দক্ষতা অর্জন করছেন; কিন্তু উচ্চমূল্যের দক্ষতা অর্জনের সুযোগ সীমিত বলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন। আন্তর্জাতিক বাজার এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন, ক্লাউড সলিউশন বা সাইবার নিরাপত্তার মতো উন্নত খাতে দ্রুত বাড়ছে। যদি আমরা কেবল কম মূল্যের ফ্রিল্যান্সিংয়ে আটকে থাকি, তবে বিশ্বের মানচিত্রে আমাদের স্থান নিচেই থেকে যাবে। তাই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

যখন অন্য দেশগুলো সময়মতো শিক্ষা সংস্কার করে তরুণদের দক্ষ করে তুলেছে, আমরা এখনো কাগজে-কলমে পরিকল্পনা আর ভিশনের মধ্যেই আটকে আছি। মাঠপর্যায়ে সেগুলো বাস্তবায়ন হয় না বা অনেক ধীরগতিতে এগোয়। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় ধীরগতি মানেই পিছিয়ে পড়া। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশকে সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও নীতি, অবকাঠামো আর মানবসম্পদ বিবেচনায় তাঁরা দ্বিধায় ভোগেন। ফলে সম্ভাবনা থাকলেও আস্থা তৈরি হয় না। অথচ ভারত কিংবা ভিয়েতনাম ছোট ছোট দৃশ্যমান সাফল্য দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করেছে।

আমাদের এখানেও এখন দরকার অল্প সময়ে দৃশ্যমান সাফল্য দেখানো। যেমন নির্দিষ্ট কিছু ইউনিয়নে কয়েক মাসের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন ব্রডব্যান্ড চালু করা, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ছোট পরিসরে নিয়ম সহজ করা বা কয়েক হাজার তরুণকে দ্রুত প্রশিক্ষণ দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পাঠানো—এসব পদক্ষেপ হয়তো ছোট মনে হবে, কিন্তু এর প্রভাব হবে ব্যাপক। কারণ, বিনিয়োগকারীরা কেবল সম্ভাবনার গল্প শুনে আস্থা পান না, তাঁরা বাস্তব উদাহরণ চান। আর তরুণেরাও তখন বুঝতে পারেন যে দেশ সত্যিই তাঁদের পাশে আছে।

এখানে আরেকটি বড় সম্পদ হলো আমাদের প্রবাসী বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বিদেশে প্রযুক্তি খাতে কাজ করছেন, অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন; কিন্তু দেশে ফিরে খুব কম সুযোগ পান। অথচ যদি তাঁদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা, ট্যাক্স সুবিধা বা আকর্ষণীয় ভিসা প্যাকেজ দেওয়া হয়, তবে তাঁরা দেশে ফিরে এসে জ্ঞান ভাগাভাগি করতে পারবেন। এতে করে দক্ষতা উন্নয়নের কাজ বহুগুণ দ্রুত হবে। বিশ্বের অনেক দেশই প্রবাসী মেধাবীদের কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তি খাতে বিশাল অগ্রগতি করেছে। বাংলাদেশও একইভাবে এগোতে পারে।

সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আত্মবিশ্বাস। তরুণেরা যদি বুঝতে পারেন যে ডিজিটাল অর্থনীতির উত্থান কেবল বিদেশি কোম্পানির জন্য নয়, বরং তাঁদের নিজেদের ভবিষ্যতের জন্যও বিশাল সুযোগ, তবে তাঁরা আরও উদ্যমী হবেন। এ জন্য স্থানীয় স্টার্টআপগুলোকে সহায়তা দিতে হবে এবং সরকারকে ক্রেতা হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে। অনেক দেশেই দেখা যায় সরকার নিজেই স্টার্টআপদের প্রাথমিক ক্রেতা হয়, যাতে তারা টিকে থাকার সুযোগ পায়। আমাদের দেশেও যদি সরকারি ক্রয়ের একটি অংশ স্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্য সংরক্ষিত হয়, তবে দ্রুতই এক শক্তিশালী ডিজিটাল শিল্প গড়ে উঠতে পারে।

ডিজিটাল অর্থনীতির ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদও হতে পারে, আবার প্রস্তুতি না থাকলে অভিশাপও হতে পারে। আমরা যদি এখনই সাহসী পদক্ষেপ নিই, তবে কয়েক বছরের মধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার প্রযুক্তি মানচিত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করতে পারবে। কিন্তু দেরি করলে সম্ভাবনা হাতছাড়া হয়ে অন্যদের হাতে চলে যাবে।

প্রথমত, আমাদের অবকাঠামোতে বড় ধরনের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। শুধু শহর নয়, প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা ছাড়া বিকল্প নেই। কারণ, একটি স্টার্টআপ বা সফটওয়্যার কোম্পানি কখনো এগোতে পারবে না, যদি প্রতিদিন লোডশেডিংয়ের সঙ্গে লড়াই করতে হয়। দ্বিতীয়ত, নীতি সংস্কার অপরিহার্য। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যদি নিশ্চিত না হন যে তাঁদের টাকা নিরাপদ, তবে তাঁরা কখনো আসবেন না। তাই প্রশাসনিক জটিলতা কমাতে হবে, হঠাৎ নীতি পরিবর্তন বন্ধ করতে হবে এবং ডেটা সুরক্ষা আইন কার্যকর করতে হবে। তৃতীয়ত, শিক্ষাব্যবস্থাকে শিল্পের চাহিদার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া তরুণেরা যেন চাকরির বাজারের জন্য প্রস্তুত থাকেন, সেটাই হবে সবচেয়ে বড় সংস্কার।

এখনকার পৃথিবী সুযোগের পাশাপাশি প্রতিযোগিতায় ভরা। ভারত যখন বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি সেবা রপ্তানি করছে, ভিয়েতনাম যখন স্বল্প সময়ে ইলেকট্রনিকস হাবে পরিণত হচ্ছে, তখন বাংলাদেশ যদি পিছিয়ে থাকে তবে তার দায় কেবল নীতিনির্ধারকদেরই নয়, বরং পুরো জাতির হবে। কারণ, সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া না গেলে সম্ভাবনা আর সম্ভাবনা থাকে না, সেগুলো কেবল কাগজে-কলমে ভিশন হিসেবেই থেকে যায়।

তরুণদের নিয়ে যতই আমরা গর্ব করি, তবুও বাস্তবতা হলো শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে তাঁরা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো পুরোনো সিলেবাসে আটকে আছে। যেখানে বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীরা এআই, ব্লকচেইন বা কোয়ান্টাম কম্পিউটিং শিখছেন, সেখানে আমাদের তরুণদের বড় অংশ মৌলিক প্রোগ্রামিংয়ের বাইরে বের হতে পারছে না।

তবে বাস্তবতা হলো, সবকিছু একসঙ্গে করা সম্ভব নয়। তাই কয়েকটি অগ্রাধিকার খাত বেছে সাহসী বিনিয়োগ ও নীতি সহায়তা দিতে হবে। যেমন ডেটা সেন্টার স্থাপন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক স্টার্টআপ তৈরি, সাইবার নিরাপত্তা শিল্পের উন্নয়ন কিংবা টেকসই ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা। এসব খাতে যদি তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে দৃশ্যমান সাফল্য দেখানো যায়, তবে বাংলাদেশ দ্রুতই আঞ্চলিক নেতৃত্বের আসনে বসতে পারবে।

এ ছাড়া সরকারকেও বাজার তৈরির সক্রিয় ভূমিকায় আসতে হবে। শুধু নীতি সহায়তা নয়, সরকারি ক্রয়ের অংশ হিসেবে স্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দিলে তারা টিকে থাকতে পারবে। বাজার ছাড়া কোনো উদ্যোক্তা দীর্ঘদিন বাঁচেন না। তাই সরকার যদি কিছু ক্রয়াদেশ স্থানীয় স্টার্টআপদের হাতে তুলে দেয়, তবে তারা দ্রুত শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নামতে পারবে।

সবশেষে বলতে হয়, ডিজিটাল অর্থনীতির উত্থান বাংলাদেশের জন্য কোনো বিলাসিতা নয়, এটি টিকে থাকার অপরিহার্য শর্ত। এখনই সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার সময়। যদি আমরা অবকাঠামো উন্নয়ন, নীতি সংস্কার ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই, তবে কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, পুরো এশিয়ার প্রযুক্তি মানচিত্রে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। কিন্তু যদি দ্বিধায় ভুগি, তাহলে এই সুবর্ণ সুযোগ অন্যদের হাতে চলে যাবে।

বাংলাদেশের তরুণেরা প্রস্তুত। সম্ভাবনাও অপরিসীম। এখন দরকার কেবল রাজনৈতিক সদিচ্ছা আর দৃঢ় নেতৃত্বের। যদি আমরা আজ সাহস দেখাই, তবে আগামীকাল বিশ্ব প্রযুক্তি অর্থনীতিতে বাংলাদেশকে এক নতুন উচ্চতায় দেখতে পাব। আর যদি আবারও দেরি করি, তবে আমরা কেবল স্বপ্ন দেখেই থেমে থাকব।

লেখক: ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক

Ad 300x250

সম্পর্কিত