মারুফ ইসলাম
কুমিল্লার মুরাদনগরের আলোচিত ঘটনা নিয়ে ফেসবুক তোলপাড়। অবশ্য ফেসবুকে না এলে ঘটনাটি আদৌ ‘আলোচিত’ হতো কিনা এবং ‘তোলপাড়’ পড়ত কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। কারণ ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন), আর ফেসবুকে আলোচনা শুরু হয়েছে গতকাল শনিবার রাত থেকে। মাঝখানে পেরিয়ে গেছে দুই দিন—মতান্তরে ৪৮ ঘণ্টা!
আমরা তো কোনো ঘটনা ফেসবুকে না এলে গুরুত্ব দেই না। ফলে ফেসবুকে যখন একটি ভিডিও এল এবং পুরো দেশবাসী দেখল একজন নারীকে বিবস্ত্র করে কথাসাহিত্যিক আবু ইসহাকের ‘মহাপতঙ্গ’ গল্পের ‘দোপেয়ে জন্তু’রা উল্লাস করছিল, তখন সবাই নড়েচড়ে বসলাম।
নড়েচড়ে বসল সত্যমিথ্যার চৌকিদার গণমাধ্যমগুলোও। তারা খবর প্রকাশ করতে শুরু করল। অথচ ঘটনার পরদিন শুক্রবার দুপুরেই ভুক্তভোগী নারী মুরাদনগর থানায় মামলা করেছিলেন। গণমাধ্যমকর্মীরা ওই মামলার সূত্র ধরেই খবর প্রকাশ করতে পারতেন। কিন্তু তারা যেন অপেক্ষায় ছিলেন, কখন ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হবে, তারপর ‘নিউজ’ করবেন তাঁরা!
পরম করুণাময়কে ধন্যবাদ, তাঁরা অবশেষে খবরটি প্রকাশ করেছেন। গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যাচ্ছে, হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভুক্তভোগী ওই নারী প্রায় ১৫ দিন আগে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে বাবার বাড়ির পাশে পূজা হচ্ছিল। পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়েছিলেন; তিনি বাড়িতে একা ছিলেন। আনুমানিক রাত ১০টার দিকে ফজর আলী (৩৮) নামের এক ব্যক্তি তাঁর বাবার বাড়ি গিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। এ সময় তিনি দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাঁকে ‘ধর্ষণ’ করেন।
দৈনিক প্রথম আলো বলছে, ভুক্তভোগী নারীর পাশের বাড়ির এক বাসিন্দা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ওই বাড়িতে অনেক শব্দ হচ্ছিল। তিনি ভয়ে দৌড়ে গিয়ে লোকজন ডেকে নিয়ে আসেন। লোকজন গিয়ে দেখেন দরজা ভাঙা। পরে তাঁরা ওই নারীকে উদ্ধার করেন। এ সময় কিছু লোক তাঁকে মারধর ও ভিডিও করেন। পরে তাঁরা বুঝতে পারেন ওই নারীর ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। তখন লোকজন ফজর আলীকে মারধর করেন। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই হাসপাতাল থেকে ফজর আলী পালিয়ে যান। পরে আজ রোববার তাঁকে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
কিন্তু ঘটনা এখানেই থেমে থাকল না। গণমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যম যৌথ প্রযোজনায় শুরু করল ভিন্ন ভিন্ন বয়ান উৎপাদন। কেউ লিখল, ওই নারীর সঙ্গে ফজর আলীর ‘পরকীয়া’ সম্পর্ক ছিল। তারা নীরবে-নিভৃতে-একান্তে কিছু ‘ব্যক্তিগত সময়’ কাটাচ্ছিলেন। ওই একান্ত মুহূর্তে কয়েকজন মানুষ তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলে এবং উত্তম-মধ্যম দেয়। আর ওই সময়েই অতি-উৎসাহী কেউ কেউ দৃশ্যটি ধারণ করে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
আবার কেউ কেউ লিখল, একজন অসহায় সংখ্যালঘু নারীর ঘরের দরজা ভেঙে ‘ধর্ষণ’ করা হয়েছে। ধর্ষণ এ দেশে এতটাই সস্তা, নারী এ দেশে এতটাই সস্তা, সেই নারী যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হন তাহলে তো আরও সস্তা। তাকে নিজ বাড়িতে দরজা ভেঙে ধর্ষণ করা যায়।
কোনো কোনো মূল ধারার গণমাধ্যম লিখল, ‘ধর্ষণকারী একজন বিএনপি নেতা।’ অর্থাৎ বিএনপি নেতাদের এমন কাজ করাই স্বাভাবিক। তারা ধর্ষণ করবে, মারামারি করবে, চাঁদাবাজি করবে—এতে অবাক হওয়ার কি আছে?
আবার কিছু গণমাধ্যমে জানা গেল, ‘ধর্ষক’ ফজর আলী একজন আওয়ামী লীগ নেতা। প্রমাণ হিসেবে তারা বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ফজর আলীর ছবিও প্রকাশ করতে শুরু করল।
এক পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতারাও বক্তব্য দেওয়া শুরু করলেন। বিএনপির অন্যতম শীর্ষ নেতা রুহুল কবির রিজভী বললেন, ‘মুরাদনগরে জঘন্য অপকর্ম করেছে আওয়ামী লীগের একজন নেতা। অথচ সেটা আমাদের দলের নামে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। যে অপকর্মটি করা হয়েছে, আমার বলতেও সেটা ঘৃণা লাগছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, কিন্তু তাদের দোসররা বসে নেই। তারা নানাভাবে অপকর্ম করে যাচ্ছে।’
বক্তব্য দেওয়া শুরু করলেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ফেসবুক পোস্টে লিখলেন, ‘মুরাদনগরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন, পুনর্বাসন এবং ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, ধর্ষণের উদ্দেশ্যে ছেড়ে দিয়েছেন। আজকের পরিস্থিতির জন্য তারাই দায়ী।’
নানাজনের নানা মত। মুরাদনগর আটকে গেল পরকীয়া-ধর্ষণ-আওয়ামী লীগ-বিএনপির বৃত্তে। এর মধ্যে শীতের সূর্যের মতো টুপ করে আড়াল হয়ে গেল ‘ন্যায়বিচার’। কেউ বলছে না, কারও সঙ্গে কারও যদি পরকীয়া সম্পর্ক থেকেও থাকে, তবুও ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ছেড়ে দেওয়া যায় না।
কেউ বলছে না, কাউকে ধর্ষণ করলেও এভাবে ভুক্তভোগী নারীর ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়া যায় না। সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে বিচার বসানো যায় না। বিচারের জন্য আইন আছে, আদালত আছে, প্রশাসন আছে।
কেউ বলছে না, অপরাধীর একমাত্র পরিচয় সে অপরাধী। কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি, তা দিয়ে অপরাধ বিচার করা যায় না। আর অপরাধীর শাস্তি চাওয়া বাদ দিয়ে অপরাধী আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি, তা নিয়ে সোচ্চার হওয়ার চেয়ে অপরাধীর শাস্তির জন্য সোচ্চার হওয়া জরুরি।
কিন্তু জরুরি কাজ তো আমরা করব না। আমরা নিজেদের পছন্দমতো ‘চেরি পিকিং’ করব এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের পক্ষে সম্মতি উৎপাদন করব। এর জন্য কেউ বেছে নেব ‘পরকীয়া’ নামের চেরি, কেউ বেছে নেব ‘ধর্ষণ’ নামের চেরি, কারো চেরির নাম ‘আওয়ামী লীগ’, আবার অন্য কারো চেরির নাম ‘বিএনপি’।
অথচ আমাদের সবার আগে উচিত ছিল ‘ন্যায়বিচার’ নামের চেরি পিক করা। কুমিল্লায় একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে, সেটি যেভাবেই ঘটুক না কেন, একজন নারী সেখানে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ভুক্তভোগী সংখ্যালঘু নাকি সংখ্যাগুরু, তাঁর স্বামী দেশি নাকি প্রবাসী—এসব প্রশ্ন তোলার আগে, সেই ভুক্তভোগী নারীর জন্য ন্যায়বিচার চেয়ে সবার আগে সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল।
কিন্তু, আমরা যে দোপেয়ে জন্তু! আমরা উচিত কাজটি করব না।
মারুফ ইসলাম: কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
কুমিল্লার মুরাদনগরের আলোচিত ঘটনা নিয়ে ফেসবুক তোলপাড়। অবশ্য ফেসবুকে না এলে ঘটনাটি আদৌ ‘আলোচিত’ হতো কিনা এবং ‘তোলপাড়’ পড়ত কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। কারণ ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন), আর ফেসবুকে আলোচনা শুরু হয়েছে গতকাল শনিবার রাত থেকে। মাঝখানে পেরিয়ে গেছে দুই দিন—মতান্তরে ৪৮ ঘণ্টা!
আমরা তো কোনো ঘটনা ফেসবুকে না এলে গুরুত্ব দেই না। ফলে ফেসবুকে যখন একটি ভিডিও এল এবং পুরো দেশবাসী দেখল একজন নারীকে বিবস্ত্র করে কথাসাহিত্যিক আবু ইসহাকের ‘মহাপতঙ্গ’ গল্পের ‘দোপেয়ে জন্তু’রা উল্লাস করছিল, তখন সবাই নড়েচড়ে বসলাম।
নড়েচড়ে বসল সত্যমিথ্যার চৌকিদার গণমাধ্যমগুলোও। তারা খবর প্রকাশ করতে শুরু করল। অথচ ঘটনার পরদিন শুক্রবার দুপুরেই ভুক্তভোগী নারী মুরাদনগর থানায় মামলা করেছিলেন। গণমাধ্যমকর্মীরা ওই মামলার সূত্র ধরেই খবর প্রকাশ করতে পারতেন। কিন্তু তারা যেন অপেক্ষায় ছিলেন, কখন ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হবে, তারপর ‘নিউজ’ করবেন তাঁরা!
পরম করুণাময়কে ধন্যবাদ, তাঁরা অবশেষে খবরটি প্রকাশ করেছেন। গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যাচ্ছে, হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভুক্তভোগী ওই নারী প্রায় ১৫ দিন আগে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে বাবার বাড়ির পাশে পূজা হচ্ছিল। পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়েছিলেন; তিনি বাড়িতে একা ছিলেন। আনুমানিক রাত ১০টার দিকে ফজর আলী (৩৮) নামের এক ব্যক্তি তাঁর বাবার বাড়ি গিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। এ সময় তিনি দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাঁকে ‘ধর্ষণ’ করেন।
দৈনিক প্রথম আলো বলছে, ভুক্তভোগী নারীর পাশের বাড়ির এক বাসিন্দা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ওই বাড়িতে অনেক শব্দ হচ্ছিল। তিনি ভয়ে দৌড়ে গিয়ে লোকজন ডেকে নিয়ে আসেন। লোকজন গিয়ে দেখেন দরজা ভাঙা। পরে তাঁরা ওই নারীকে উদ্ধার করেন। এ সময় কিছু লোক তাঁকে মারধর ও ভিডিও করেন। পরে তাঁরা বুঝতে পারেন ওই নারীর ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। তখন লোকজন ফজর আলীকে মারধর করেন। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই হাসপাতাল থেকে ফজর আলী পালিয়ে যান। পরে আজ রোববার তাঁকে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
কিন্তু ঘটনা এখানেই থেমে থাকল না। গণমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যম যৌথ প্রযোজনায় শুরু করল ভিন্ন ভিন্ন বয়ান উৎপাদন। কেউ লিখল, ওই নারীর সঙ্গে ফজর আলীর ‘পরকীয়া’ সম্পর্ক ছিল। তারা নীরবে-নিভৃতে-একান্তে কিছু ‘ব্যক্তিগত সময়’ কাটাচ্ছিলেন। ওই একান্ত মুহূর্তে কয়েকজন মানুষ তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলে এবং উত্তম-মধ্যম দেয়। আর ওই সময়েই অতি-উৎসাহী কেউ কেউ দৃশ্যটি ধারণ করে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
আবার কেউ কেউ লিখল, একজন অসহায় সংখ্যালঘু নারীর ঘরের দরজা ভেঙে ‘ধর্ষণ’ করা হয়েছে। ধর্ষণ এ দেশে এতটাই সস্তা, নারী এ দেশে এতটাই সস্তা, সেই নারী যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হন তাহলে তো আরও সস্তা। তাকে নিজ বাড়িতে দরজা ভেঙে ধর্ষণ করা যায়।
কোনো কোনো মূল ধারার গণমাধ্যম লিখল, ‘ধর্ষণকারী একজন বিএনপি নেতা।’ অর্থাৎ বিএনপি নেতাদের এমন কাজ করাই স্বাভাবিক। তারা ধর্ষণ করবে, মারামারি করবে, চাঁদাবাজি করবে—এতে অবাক হওয়ার কি আছে?
আবার কিছু গণমাধ্যমে জানা গেল, ‘ধর্ষক’ ফজর আলী একজন আওয়ামী লীগ নেতা। প্রমাণ হিসেবে তারা বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ফজর আলীর ছবিও প্রকাশ করতে শুরু করল।
এক পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতারাও বক্তব্য দেওয়া শুরু করলেন। বিএনপির অন্যতম শীর্ষ নেতা রুহুল কবির রিজভী বললেন, ‘মুরাদনগরে জঘন্য অপকর্ম করেছে আওয়ামী লীগের একজন নেতা। অথচ সেটা আমাদের দলের নামে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। যে অপকর্মটি করা হয়েছে, আমার বলতেও সেটা ঘৃণা লাগছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, কিন্তু তাদের দোসররা বসে নেই। তারা নানাভাবে অপকর্ম করে যাচ্ছে।’
বক্তব্য দেওয়া শুরু করলেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ফেসবুক পোস্টে লিখলেন, ‘মুরাদনগরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন, পুনর্বাসন এবং ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, ধর্ষণের উদ্দেশ্যে ছেড়ে দিয়েছেন। আজকের পরিস্থিতির জন্য তারাই দায়ী।’
নানাজনের নানা মত। মুরাদনগর আটকে গেল পরকীয়া-ধর্ষণ-আওয়ামী লীগ-বিএনপির বৃত্তে। এর মধ্যে শীতের সূর্যের মতো টুপ করে আড়াল হয়ে গেল ‘ন্যায়বিচার’। কেউ বলছে না, কারও সঙ্গে কারও যদি পরকীয়া সম্পর্ক থেকেও থাকে, তবুও ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ছেড়ে দেওয়া যায় না।
কেউ বলছে না, কাউকে ধর্ষণ করলেও এভাবে ভুক্তভোগী নারীর ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়া যায় না। সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে বিচার বসানো যায় না। বিচারের জন্য আইন আছে, আদালত আছে, প্রশাসন আছে।
কেউ বলছে না, অপরাধীর একমাত্র পরিচয় সে অপরাধী। কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি, তা দিয়ে অপরাধ বিচার করা যায় না। আর অপরাধীর শাস্তি চাওয়া বাদ দিয়ে অপরাধী আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি, তা নিয়ে সোচ্চার হওয়ার চেয়ে অপরাধীর শাস্তির জন্য সোচ্চার হওয়া জরুরি।
কিন্তু জরুরি কাজ তো আমরা করব না। আমরা নিজেদের পছন্দমতো ‘চেরি পিকিং’ করব এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের পক্ষে সম্মতি উৎপাদন করব। এর জন্য কেউ বেছে নেব ‘পরকীয়া’ নামের চেরি, কেউ বেছে নেব ‘ধর্ষণ’ নামের চেরি, কারো চেরির নাম ‘আওয়ামী লীগ’, আবার অন্য কারো চেরির নাম ‘বিএনপি’।
অথচ আমাদের সবার আগে উচিত ছিল ‘ন্যায়বিচার’ নামের চেরি পিক করা। কুমিল্লায় একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে, সেটি যেভাবেই ঘটুক না কেন, একজন নারী সেখানে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ভুক্তভোগী সংখ্যালঘু নাকি সংখ্যাগুরু, তাঁর স্বামী দেশি নাকি প্রবাসী—এসব প্রশ্ন তোলার আগে, সেই ভুক্তভোগী নারীর জন্য ন্যায়বিচার চেয়ে সবার আগে সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল।
কিন্তু, আমরা যে দোপেয়ে জন্তু! আমরা উচিত কাজটি করব না।
মারুফ ইসলাম: কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
জোহরান মামদানির জয়পরবর্তী ইসলামোফোবিয়ার মাত্রা উদ্বেগজনক। মার্কিন নেতারা ও মিডিয়া তাঁকে ইসলামি সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছে। এই ঘটনা কি আমেরিকার ধর্মীয় ও জাতিগত বিদ্বেষের প্রকৃত ছবি তুলে ধরে?
১ দিন আগেএক সময়ের ‘হিন্দি-চীনি ভাই ভাই’ থেকে আজকের ‘চিরকালের বন্ধু’ চীন-পাকিস্তান! আকসাই চীন নিয়ে সংঘাত আর কাশ্মীর ইস্যুকে ঘিরে বদলে যায় দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক সমীকরণ। ১৯৬৩ সালের এক মধ্যরাতের চুক্তিতেই ভারতের বদলে চীনের ভাই হয়ে ওঠে পাকিস্তান—যে চুক্তি ইতিহাস ঘুরিয়ে দেয় এ অঞ্চলের। কী ছিল সেই চুক্তি?
৬ দিন আগেআত্মহত্যাকে এত ছি ছি চোখে দেখার কিছু নেই। যেকোনো আত্মহত্যার পেছনে অন্তত তিনটি কারণ থাকে। ১. জৈবিক ২. মনস্তাত্ত্বিক ও ৩. ভৌগলিক। কেউ একজন আত্মহত্যা করলেই আমরা ধরে নিই, সে মানসিক সমস্যায় ছিল। এমন ভাবনা সত্যিই হাস্যকর।মানসিক সমস্যা ছাড়াও মানুষের জীবনে আরও বহুবিধ সমস্যা থাকে। সেসব কারণেও
২২ দিন আগেমো. তৌফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে আলু একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য ও নগদ অর্থকরী ফসল। প্রতি বছর দেশের আলু উৎপাদনের একটি বড় অংশ আসে উত্তরাঞ্চলের বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলা থেকে। কিন্তু ২০২৫ সালের শুরু থেকে এই অঞ্চলের কৃষকরা নজিরবিহীন দামের পতনে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
২২ দিন আগে