বাংলাদেশের ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা আজ গ্লোবাল সাউথের জন্যও এক বড় শিক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জুলাই আন্দোলন কেবল একটি বিক্ষোভ ছিল না, ছিল ন্যায়ের দাবি, মর্যাদার প্রশ্ন ও ক্ষমতার স্থিতিশীলতার পরীক্ষা। ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত পরিবর্তন তখনই টেকসই হয়, যখন তা অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কার ও প্রকৃত সংহতির পথে এগোয়। গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে লিখেছেন নুরুল ইজ্জাহ আনোয়ার।
স্ট্রিম ডেস্ক
২০২৪-এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা যে স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়েছিল তা মুহূর্তেই দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করছিল এমন এক কর্তৃত্ববাদী শাসকের বিরুদ্ধে, যিনি জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেখালেও জেঁকে বসা বৈষম্য, দুর্নীতি ও কর্মসংস্থানের অভাবের প্রশ্নে কোনো সমাধান দিতে পারেননি। এ আন্দোলন শুধু একটি বিক্ষোভ ছিল না, ছিল মর্যাদার দাবি। মনে করিয়ে দিয়েছিল, একটি দেশের ভবিষ্যৎ শেষ পর্যন্ত তার জনগণের হাতেই থাকে।
চলতি বছরের ২৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে’ বক্তৃতা দিতে গিয়ে যে অনুভূতি আমার হয়েছিল, তা একাধিকবার আমার নিজের দেশ মালয়েশিয়াতেও হয়েছে। ১৯৭৪ সালে, যখন ছাত্ররা বালিংয়ে অনাহারে কৃষকের মৃত্যুর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল, আবার ১৯৯৮ সালে আমরা যখন রাজনৈতিক দমন-পীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম, সেই চেতনাই আমি দেখেছি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
তরুণরা যখন অন্যায় ব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলে তখন এক সহজ সত্য উন্মোচিত হয়, ‘ভয়কে ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে থাকা রাজনৈতিক শৃঙ্খল সাহসের কাছে ভেঙে পড়বেই’। অন্যদিকে ন্যায়ের ওপর দাঁড়ানো ব্যবস্থা কখনোই এত ভঙ্গুর নয়। তবে কেবল সাহস দিয়েই অন্যায়কে সংশোধন করা যায় না। স্লোগান আর মিছিল ফুরোবার পর চাই কার্যকর সংস্কার। চাই সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার যা মানুষের অসন্তোষের মূল কারণগুলো—বৈষম্য, দুর্নীতি ও বেকারত্বের সমাধান করবে।
বাংলাদেশ এখন সেই চ্যালেঞ্জের মুখে। বিপ্লবের উন্মাদ দিনগুলো কেটে যাওয়ার এক বছর পর, সংস্কারের নেতৃত্ব দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি শক্তি; শ্রমিকদের সুরক্ষা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়ায় অনেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশংসা করছেন। অন্যদিকে, শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়নে এখনও নানা বাধা রয়ে গেছে – এমন অভিযোগও উঠছে। ফলে প্রায়শই শ্রমিকদের আন্দোলনে মুখোমুখি হতে হচ্ছে এই সরকারকে।
বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আশা করছে, ছাত্র-আন্দোলনের পর আসন্ন নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রদের সমর্থনে গড়ে ওঠা নতুন দল ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টিকে (এনসিপি) পরাজিত করে ক্ষমতায় বসবে। যদি জামায়াত ও এনসিপি একত্রিত হয়ে ভোটারদের সংগঠিত করতে না পারে, তবে সবচেয়ে সম্ভাব্য ফল হলো বিএনপির জয়।
কিন্তু নতুন শাসক দল আসা মানেই গণতান্ত্রিক পরিবর্তন হবে, বিষয়টা ততটা সহজ নয়। আসল প্রশ্ন হলো, সত্যিই রাজনৈতিক স্থিতি আসবে, নাকি কেবল এক পঙ্গু চক্রের পুনরাবৃত্তি ঘটবে? আগের শাসনামলের পৃষ্ঠপোষক নেটওয়ার্ক ও বৈষম্যমূলক শাসন থেকে বিচ্ছেদ না ঘটলে, বিএনপির বিজয় হয়তো আবারও সেই দ্বিদলীয় পালাবদলের রাজনীতি ফিরিয়ে আনবে। যে রাজনীতি কখনোই মৌলিক সমস্যাগুলোর কাঠামোগত সমাধান করতে পারবে না।
কেবল নির্বাচনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে প্রকৃত ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে না। বরং শোষণ ও বৈষম্যের পুরোনো সব বন্দোবস্ত বর্জনের পাশাপাশি এমন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে যা কোনো একক দলের মনমর্জি মাফিক চলবে না।
দেশীয় ও বৈশ্বিক উভয় স্তরেই বাংলাদেশের সামনের পথ কণ্টকাকীর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি বাংলাদেশ প্রধানত রপ্তানি করে শ্রম, টেক্সটাইল ও পোশাক। যার বড় অংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে। অথচ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন। ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতি ভাগ হয়ে গেছে বিভিন্ন শিবিরে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো দেশের হাতে দরকষাকষির ক্ষমতা খুবই সীমিত।
গ্লোবাল সাউথ (বৈশ্বিক দক্ষিণ) কোনো ভৌগোলিক অঞ্চল নয়। গ্লোবাল সাউথ হলো উন্নয়নশীল ও কম উন্নত দেশগুলোর একটি সমষ্টিগত ধারণা, যা মূলত এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোকে বোঝায়।
আমরা যারা এইসব দেশের নাগরিক, তাঁরা যদি নিজেদের অর্থনৈতিক ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ না করি তবে অন্যরা আমাদের হয়ে সেটি নির্ধারণ করবে। কিন্তু নিজেদের ভবিষ্যতের স্থপতি হতে হলে সন্দেহ নেই, চাই সংহতি। এর মানে ঘরে বৈষম্যের মোকাবিলা করতে হবে, একই সঙ্গে বাইরে গড়ে তুলতে হবে প্রকৃত জোট। জাতীয় সম্পদকে এমনভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হবে, যাতে তা কয়েকজন সুবিধাভোগীর পকেটে না গিয়ে সামগ্রিক কল্যাণে কাজে লাগে। মালয়েশিয়ার সরকারি বিনিয়োগ তহবিল, যেমন এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড ও পারমোডালান ন্যাশনাল বেরহাদ দেখিয়েছে কিভাবে বিদেশি ঋণ নির্ভরতা কমানো যায় এবং প্রাকৃতিক সম্পদের আয়কে জনকল্যাণমূলক কাজে লাগানো যায়।
সমাজের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তন বা অপুষ্টি মোকাবিলা করেও অর্থনৈতিকভাবে নিজেকেও টিকিয়ে রাখে এমন সামাজিক ব্যবসার (‘সোশ্যাল বিজনেস’)-এর ধারণাটিও গ্লোবাল সাউথে শিকড় গেড়েছে। মালয়েশিয়ায় সার্বভৌম তহবিলের অধীনে থাকা ইয়ায়াসান হাসানাহ সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনে এমন উদ্যোগকে কৃষি থেকে শিক্ষা পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে সমর্থন দেয়।
শিল্পনীতি কেবল ক্ষমতাশালীদের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং হতে হবে গণমুখী। এই লক্ষ্য পূরণে চাই অবিরাম পর্যালোচনা, স্বচ্ছতা ও উদ্ভাবন।
গাজা থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত আজকের সংকটগুলো আমাদের দেখায় যে সার্বভৌমত্ব ও সংহতি একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। মুনাফা কখনোই ন্যায়ের জায়গা নিতে পারে না। বিদেশি মতাদর্শ নয়, দেশজ প্রজ্ঞাই হতে হবে রাষ্ট্র পরিচালনার পথনির্দেশক। পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সবার মধ্যে ভাগাভাগি হতে হবে।
বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লব দেখিয়েছে, সম্পদ যখন কেবল কজনের হাতে জমা হয় তখন রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে বাধ্য। বাংলাদেশকে সামনে এগোতে হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নকে গুরুত্ব দিতেই হবে। যদি দেশের নেতারা পরিবর্তনের ডাককে বাস্তব, ন্যায্য অর্জনে রূপান্তর করতে ব্যর্থ হন তবে সামাজিক বিভাজন আরও গভীর হবে, প্রকৃত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অধরা থাকবে এবং অপূর্ণ প্রতিশ্রুতির দুষ্টচক্র ঘুরতেই থাকবে।
কখনো কখনো একটি ছোট্ট স্ফুলিঙ্গ—হোক তা ছাত্রদের মিছিল অথবা শুধু একটি সৎ পরিবর্তন, তা শেষমেশ বড় রকমের রূপান্তরের দিকে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু তার জন্য দরকার একটি যৌথ উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্য যেন ন্যায় ও সমৃদ্ধির সুষম বণ্টনের পক্ষে স্পষ্টভাবে দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করাই হবে গ্লোবাল সাউথের কাজ।
সেই মনোভাব থেকেই আমি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার প্রস্তাবকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। লুলা বলেছেন, ব্রিকসের নেতারা যেন একসঙ্গে বৈশ্বিক সংঘাতের অবসান ঘটাতে সবার জন্য সমান সুবিধা দেয় এমন উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন। যদি এ প্রতিশ্রুতিটি আন্তরিকভাবে অনুসরণ করা যায়, তবে তা কেবল কূটনৈতিক অঙ্গীকার হয়েই থাকবে না, বরং রূপ নেবে ন্যায়, সংহতি ও পারস্পরিক সম্মানের এক বাস্তব প্রতীক হিসেবে। যা আজকের দিনে গ্লোবাল সাউথের জন্য জরুরি প্রয়োজন।
(প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত মালয়েশিয়ার পিপলস জাস্টিস পার্টির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সহ-সভাপতি নুরুল ইজ্জাহ আনোয়ারের মতামত। অনুবাদ করেছেন তুফায়েল আহমদ)
২০২৪-এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা যে স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়েছিল তা মুহূর্তেই দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করছিল এমন এক কর্তৃত্ববাদী শাসকের বিরুদ্ধে, যিনি জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেখালেও জেঁকে বসা বৈষম্য, দুর্নীতি ও কর্মসংস্থানের অভাবের প্রশ্নে কোনো সমাধান দিতে পারেননি। এ আন্দোলন শুধু একটি বিক্ষোভ ছিল না, ছিল মর্যাদার দাবি। মনে করিয়ে দিয়েছিল, একটি দেশের ভবিষ্যৎ শেষ পর্যন্ত তার জনগণের হাতেই থাকে।
চলতি বছরের ২৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে’ বক্তৃতা দিতে গিয়ে যে অনুভূতি আমার হয়েছিল, তা একাধিকবার আমার নিজের দেশ মালয়েশিয়াতেও হয়েছে। ১৯৭৪ সালে, যখন ছাত্ররা বালিংয়ে অনাহারে কৃষকের মৃত্যুর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল, আবার ১৯৯৮ সালে আমরা যখন রাজনৈতিক দমন-পীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম, সেই চেতনাই আমি দেখেছি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
তরুণরা যখন অন্যায় ব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলে তখন এক সহজ সত্য উন্মোচিত হয়, ‘ভয়কে ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে থাকা রাজনৈতিক শৃঙ্খল সাহসের কাছে ভেঙে পড়বেই’। অন্যদিকে ন্যায়ের ওপর দাঁড়ানো ব্যবস্থা কখনোই এত ভঙ্গুর নয়। তবে কেবল সাহস দিয়েই অন্যায়কে সংশোধন করা যায় না। স্লোগান আর মিছিল ফুরোবার পর চাই কার্যকর সংস্কার। চাই সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার যা মানুষের অসন্তোষের মূল কারণগুলো—বৈষম্য, দুর্নীতি ও বেকারত্বের সমাধান করবে।
বাংলাদেশ এখন সেই চ্যালেঞ্জের মুখে। বিপ্লবের উন্মাদ দিনগুলো কেটে যাওয়ার এক বছর পর, সংস্কারের নেতৃত্ব দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি শক্তি; শ্রমিকদের সুরক্ষা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়ায় অনেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশংসা করছেন। অন্যদিকে, শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়নে এখনও নানা বাধা রয়ে গেছে – এমন অভিযোগও উঠছে। ফলে প্রায়শই শ্রমিকদের আন্দোলনে মুখোমুখি হতে হচ্ছে এই সরকারকে।
বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আশা করছে, ছাত্র-আন্দোলনের পর আসন্ন নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রদের সমর্থনে গড়ে ওঠা নতুন দল ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টিকে (এনসিপি) পরাজিত করে ক্ষমতায় বসবে। যদি জামায়াত ও এনসিপি একত্রিত হয়ে ভোটারদের সংগঠিত করতে না পারে, তবে সবচেয়ে সম্ভাব্য ফল হলো বিএনপির জয়।
কিন্তু নতুন শাসক দল আসা মানেই গণতান্ত্রিক পরিবর্তন হবে, বিষয়টা ততটা সহজ নয়। আসল প্রশ্ন হলো, সত্যিই রাজনৈতিক স্থিতি আসবে, নাকি কেবল এক পঙ্গু চক্রের পুনরাবৃত্তি ঘটবে? আগের শাসনামলের পৃষ্ঠপোষক নেটওয়ার্ক ও বৈষম্যমূলক শাসন থেকে বিচ্ছেদ না ঘটলে, বিএনপির বিজয় হয়তো আবারও সেই দ্বিদলীয় পালাবদলের রাজনীতি ফিরিয়ে আনবে। যে রাজনীতি কখনোই মৌলিক সমস্যাগুলোর কাঠামোগত সমাধান করতে পারবে না।
কেবল নির্বাচনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে প্রকৃত ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে না। বরং শোষণ ও বৈষম্যের পুরোনো সব বন্দোবস্ত বর্জনের পাশাপাশি এমন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে যা কোনো একক দলের মনমর্জি মাফিক চলবে না।
দেশীয় ও বৈশ্বিক উভয় স্তরেই বাংলাদেশের সামনের পথ কণ্টকাকীর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি বাংলাদেশ প্রধানত রপ্তানি করে শ্রম, টেক্সটাইল ও পোশাক। যার বড় অংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে। অথচ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন। ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতি ভাগ হয়ে গেছে বিভিন্ন শিবিরে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো দেশের হাতে দরকষাকষির ক্ষমতা খুবই সীমিত।
গ্লোবাল সাউথ (বৈশ্বিক দক্ষিণ) কোনো ভৌগোলিক অঞ্চল নয়। গ্লোবাল সাউথ হলো উন্নয়নশীল ও কম উন্নত দেশগুলোর একটি সমষ্টিগত ধারণা, যা মূলত এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোকে বোঝায়।
আমরা যারা এইসব দেশের নাগরিক, তাঁরা যদি নিজেদের অর্থনৈতিক ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ না করি তবে অন্যরা আমাদের হয়ে সেটি নির্ধারণ করবে। কিন্তু নিজেদের ভবিষ্যতের স্থপতি হতে হলে সন্দেহ নেই, চাই সংহতি। এর মানে ঘরে বৈষম্যের মোকাবিলা করতে হবে, একই সঙ্গে বাইরে গড়ে তুলতে হবে প্রকৃত জোট। জাতীয় সম্পদকে এমনভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হবে, যাতে তা কয়েকজন সুবিধাভোগীর পকেটে না গিয়ে সামগ্রিক কল্যাণে কাজে লাগে। মালয়েশিয়ার সরকারি বিনিয়োগ তহবিল, যেমন এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড ও পারমোডালান ন্যাশনাল বেরহাদ দেখিয়েছে কিভাবে বিদেশি ঋণ নির্ভরতা কমানো যায় এবং প্রাকৃতিক সম্পদের আয়কে জনকল্যাণমূলক কাজে লাগানো যায়।
সমাজের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তন বা অপুষ্টি মোকাবিলা করেও অর্থনৈতিকভাবে নিজেকেও টিকিয়ে রাখে এমন সামাজিক ব্যবসার (‘সোশ্যাল বিজনেস’)-এর ধারণাটিও গ্লোবাল সাউথে শিকড় গেড়েছে। মালয়েশিয়ায় সার্বভৌম তহবিলের অধীনে থাকা ইয়ায়াসান হাসানাহ সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনে এমন উদ্যোগকে কৃষি থেকে শিক্ষা পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে সমর্থন দেয়।
শিল্পনীতি কেবল ক্ষমতাশালীদের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং হতে হবে গণমুখী। এই লক্ষ্য পূরণে চাই অবিরাম পর্যালোচনা, স্বচ্ছতা ও উদ্ভাবন।
গাজা থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত আজকের সংকটগুলো আমাদের দেখায় যে সার্বভৌমত্ব ও সংহতি একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। মুনাফা কখনোই ন্যায়ের জায়গা নিতে পারে না। বিদেশি মতাদর্শ নয়, দেশজ প্রজ্ঞাই হতে হবে রাষ্ট্র পরিচালনার পথনির্দেশক। পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সবার মধ্যে ভাগাভাগি হতে হবে।
বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লব দেখিয়েছে, সম্পদ যখন কেবল কজনের হাতে জমা হয় তখন রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে বাধ্য। বাংলাদেশকে সামনে এগোতে হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নকে গুরুত্ব দিতেই হবে। যদি দেশের নেতারা পরিবর্তনের ডাককে বাস্তব, ন্যায্য অর্জনে রূপান্তর করতে ব্যর্থ হন তবে সামাজিক বিভাজন আরও গভীর হবে, প্রকৃত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অধরা থাকবে এবং অপূর্ণ প্রতিশ্রুতির দুষ্টচক্র ঘুরতেই থাকবে।
কখনো কখনো একটি ছোট্ট স্ফুলিঙ্গ—হোক তা ছাত্রদের মিছিল অথবা শুধু একটি সৎ পরিবর্তন, তা শেষমেশ বড় রকমের রূপান্তরের দিকে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু তার জন্য দরকার একটি যৌথ উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্য যেন ন্যায় ও সমৃদ্ধির সুষম বণ্টনের পক্ষে স্পষ্টভাবে দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করাই হবে গ্লোবাল সাউথের কাজ।
সেই মনোভাব থেকেই আমি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার প্রস্তাবকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। লুলা বলেছেন, ব্রিকসের নেতারা যেন একসঙ্গে বৈশ্বিক সংঘাতের অবসান ঘটাতে সবার জন্য সমান সুবিধা দেয় এমন উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন। যদি এ প্রতিশ্রুতিটি আন্তরিকভাবে অনুসরণ করা যায়, তবে তা কেবল কূটনৈতিক অঙ্গীকার হয়েই থাকবে না, বরং রূপ নেবে ন্যায়, সংহতি ও পারস্পরিক সম্মানের এক বাস্তব প্রতীক হিসেবে। যা আজকের দিনে গ্লোবাল সাউথের জন্য জরুরি প্রয়োজন।
(প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত মালয়েশিয়ার পিপলস জাস্টিস পার্টির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সহ-সভাপতি নুরুল ইজ্জাহ আনোয়ারের মতামত। অনুবাদ করেছেন তুফায়েল আহমদ)
বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রগতিশীল চিন্তার ‘বাতিঘর’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ সেখানেই সম্প্রতি এক ছাত্রীকে দলবদ্ধধ র্ষণের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এক তিক্ত সত্যকে সামনে এনেছে।
১৯ ঘণ্টা আগেছাত্রসংসদ নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা বিশ্লেষণ করে যা দেখা যায় তা হলো, নারী প্রার্থীদের সংখ্যা খুবই নগন্য। আর এখন তারই প্রতিফলন ঘটছে দেশের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কভারেজেও।
১ দিন আগে‘মুসলমান’ ও ‘বাংলা’ ভাষা বিষয়ে হাল আমলের বাইনারি ছাপিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক চেতনাপরিস্থিতির কথা বলে তমদ্দুন মজলিস। ইতিহাসে ব্যক্তি বা সংগঠনের ভূমিকা একমাত্রিক থাকে না। তমদ্দুন মজলিসও তার সময় ও পরিস্থিতির বহুমাত্রিক বাস্তবতার মধ্যে তার ক্রিয়াশীলতাকে জারি রেখেছিল; হয়ে ওঠে বাংলাদেশের ইতিহাসের জরুরি অ
৩ দিন আগে১৯৭৫ সালের ১১ নভেম্বর বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ‘আমি একজন সৈনিক।’ ১৯৭৬ সালের মে মাসে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসভায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি একজন শ্রমিক।’ ১৯৭৭ সালের ২২ মে ‘আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে’ জিয়া ঘোষণা করেন ১৯ দফা কর্মসূচি।
৪ দিন আগে