দিন কয়েক ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক সরগরম কন্টেন্ট ক্রিয়েটর রিপন মিয়াকে ঘিরে। প্রতিটি ভিডিওরে শেষে তাঁর হাসিমুখের বলা, ‘এটাই বাস্তব, কি কেমন দিলাম’—তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। একজন খেটে খাওয়া মানুষের সহজ আবেগ দিয়ে মানুষকে ছুঁতে পেরেছেন তিনি। কিন্তু সেই বয়ানে এখন যেন ফাটল ধরতে শুরু করেছে।
নাজিয়া আফরিন
সকালে ঘুম ভাঙার পর সবার আগে মোবাইল ফোনের পর্দায় চোখ বোলানোটা আজকাল স্বভাবে দাঁড়িয়ে গেছে। বিছানা ছাড়ার আগেই উদ্দেশ্যবিহীন স্ক্রলিং অনেক সময় ঘণ্টা পেরোয়। এই স্ক্রলিং করতে গিয়েই চোখ আটকে যায় ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল আর্টস অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের এক অধ্যাপক আর শিক্ষার্থীর কথোপকথনে। ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথার এক পর্যায়ে সোয়াসের এই অধ্যাপক কেনীয় চলচ্চিত্রনির্মাতা জুডি কিবেঙ্গেকে উদ্ধৃত করে বলছিলেন, ‘তুমি যা দেখ তুমি তাই’। তাঁদের এই কথপোকথন পড়ার পর মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন এল, অন্তহীন স্ক্রলিংয়ের মাধ্যমে ক্রমাগত কন্টেন্ট গেলার এই সময়ে আমি তাহলে কী?
দিন কয়েক ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক সরগরম কন্টেন্ট ক্রিয়েটর রিপন মিয়াকে ঘিরে। ফেসবুকে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা এখন অব্দি ১৯ লাখ। ইউটিউবে তাঁর ‘রিপন মিয়া ভ্লগস’ নামে একটি চ্যানেলে রয়েছে। এখানে সাবস্ক্রাইবার ১ লাখ ৩৮ হাজার। নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাঠমিস্ত্রি রিপন মিয়া ২০১৬ সাল থেকে নিজের দৈনন্দিন জীবনের নানা ভিডিও বানিয়ে আসছেন। ভিডিওর শেষে তার হাসিমুখের উক্তি, ‘এটাই বাস্তব, কি কেমন দিলাম’—বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একজন খেটে খাওয়া মানুষের সহজ আবেগ দিয়ে মানুষকে ছুঁতে পেরেছেন তিনি। কিন্তু সেই বয়ানে এখন যেন ফাটল ধরতে শুরু করেছে।
১৩ অক্টোবর সোমবার দুপুরে নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে রিপন মিয়া দাবি করেন, কয়েকজন টেলিভিশন সাংবাদিক অনুমতি ছাড়াই তাঁর বাড়িতে ঢুকে পড়ে। ঘরে নারী সদস্য থাকার পরও ভিডিও করে এবং তাঁদের হেনস্তা করে। তবে রিপন তাঁর পোস্টে টেলিভিশন চ্যানেলের নামোল্লেখ করেননি। তো একজন নাগরিকের ব্যক্তিগত পরিসরের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের এহেন অভিযোগে ফুঁসে ওঠেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বাসিন্দরা। পোস্টের নিচে মন্তব্যর ঘরে অনেকেই অভিযুক্ত টেলিভিশন চ্যানেল ও সাংবাদিকের নাম-পরিচয় প্রকাশের দাবি জানাতে থাকেন। এর মধ্যে ১৪ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে একটি টেলিভিশন চ্যানেল এবং একাধিক অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত হয় একটি প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদনে রিপনের মা তাঁর ছেলের কথা উল্লেখ করে অভিযোগের সুরে বলেন, ‘খুব কষ্ট করে মানুষ করছি। কিন্তু এখন পরিচয় দেয় না। আমরা গরিব। পরিচয় দিলে যদি ওর মানসম্মান না থাকে…।’ প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, রিপনের মা নিজে থেকেই ওই সাংবাদিকদের বাড়িতে নিয়ে যান।
ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। ক্লাইম্যাক্সের যেন আরও খানিকটা বাকি ছিল। এর মধ্যেই মঙ্গলবার রাতেই ফেসবুকে ভাইরাল হলো আরেক ভিডিও। এতে দেখা যায় রিপন মিয়া তাঁর মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন আর বলছেন, ‘তোমারে দেহি না আমি? আব্বারে দেহি না আমি? তুমি ইড্ডা কী করলা? আমার জীবনডা শেষ করলা?’
কাহিনির কি এখানেই ইতি? এরপর বিভিন্ন ইনফ্লুয়েন্সার ক্যামেরা তাক করেছে রিপন মিয়ার বাড়ির দিকে। তাঁরা রিপনের বাবা-মা, এমনকি পড়াপড়শিকেও ক্যামেরার মুখোমুখি করতে কসুর করেনি।
অ্যালগরিদমের ভীষণ খবরদারির এই দুনিয়ায় আজ গণপরিসর আর ব্যক্তিগত পরিসরের ভেদ ঘুঁচে গেছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে আমরা সবাই এখন মানুষের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ড লুকিয়ে দেখে যেন সুখ অনুভব করি। নানান যন্ত্রের পর্দায় হাজার জানালার ভেতর দিয়ে ক্রমশ উঁকি দিতে থাকি অন্য মানুষের জীবনে। আবার অন্যেরা উঁকি দেবে ভেবে নিজের জীবনকেও নানা রঙে-ঢঙে সাজিয়ে উপস্থাপন করি। অর্থাৎ নিজেকে আমি যেভাবে দেখাতে চাই, সেভাবেই উপস্থাপন করি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রদর্শনকামিতার এই পালা ক্রমাগত চলমান। চলছে তো চলছেই।
এ প্রসঙ্গে মনে পড়ল, গেল শতকের নব্বইয়ের দশকে আমাদের বেড়ে ওঠার কালকে। তখন কি আমরা এত প্রদর্শনবাদীতায় আচ্ছন্ন ছিলাম? আমরা তো জীবনকে এভাবে দেখতে শিখিনি। যদি ‘আমি যা দেখি, আমি তা-ই’, হাল জামানায় এই মন্ত্রই প্রধান হয়ে ওঠে, যদি এটিই এখন নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের সর্বস্ব, তবে স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, যখন আমরা বেড়ে উঠছিলাম, সে সময় আমরা কী দেখেছি বা কীভাবে তথ্য পেয়েছিলাম?
উত্তর হলো, তখন বই পড়া, রেডিও শোনা বা বিটিভি দেখা ছাড়া আর কি কোনো উপায় ছিল তথ্য পাওয়ার! নব্বই দশক পেরোনোর পর আমাদের জীবনে আবির্ভাব ঘটল একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলের। আকাশ সংস্কৃতির। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন চ্যানেল থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে যোগ ছিল জ্ঞানের, নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলারও অবসর ছিল। নৈতিকতার নিক্তিতে মেপে আদর্শিক অবস্থান গ্রহণের তাগিদ ছিল হয়তো।
কিন্তু অঢেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই কালে সেগুলো সাবক্রাইব করতে করতে এখন আমরা যেন আদতেই গলা পর্যন্ত তথ্য আর ছবিতে ডুবে আছি। এর মধ্যে বুঁদ হয়ে আছি। কবি জীবনানন্দ দাশের চরণ ধার করে বলা যাবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় এখন ‘কেবলি দৃশ্যের জন্ম হয়’। আর সেখান থেকে প্রত্যেকেই আমরা চেতনে-অবচেতনে ব্লটিং পেপারের মতো শুষে নিতে বাধ্য হচ্ছি নানা ধরনের বয়ান। এগুলো কখনো আমাদের প্রলুব্ধ করে, ফাঁদে ফেলে, কখনোবা উসকানি দেয়।
আদতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমময় এই সময়ে ক্ষমতাশালী এক অ্যালগরিদমিক ঈশ্বরই আড়াল থেকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। যেন আমরা সবাই পুতুল, তিনিই নাচাচ্ছেন আমাদের। এই অ্যালগরিদমের ঈশ্বরই আমাদের সত্যকে খণ্ডিত করে রেখেছেন। তাই মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এলাকার কারখানার আগুনে ১৬ জন মানুষ যখন ঝলসে যায়, আমরা তখনও রিপন মিয়ার বাড়িতে কে গেল, কেন গেল, তাঁর সম্পদের পরিমাণ কত—মেতে থাকি এসব আলোচনায়। পোস্ট-আইডোলজি তথা আদর্শ উত্তর বা সত্য উত্তর এই বাস্তবতায় এখন আর আমরা প্রশ্ন করি না।
আমরা শুধু দেখি আর দেখাই। তাই চলচ্চিত্রনির্মাতা জুডি কিবেঙ্গে কথাটি খানিকটা নিজের মতো করে নিয়ে আমরাও বলতে পারি, আমরা যা দেখি, আমরা তাই।
রিপন মিয়া নিঃসন্দেহে একজন সাবল্টার্ন, নিম্নবর্গের প্রতিনিধি। তবে এখন হয়তো শ্রেণি উত্তরণ ঘটেছে। তাতে কি, প্রদর্শনবাদিতার খেলায় তিনিও তো খেলোয়াড় হয়ে হয়ে ওঠেন আমাদের ‘আইডিওলজিকাল স্টেট অ্যাপারেটাস’, বাংলা অনুবাদে যাকে বলা যায় ‘আদর্শিক রাষ্ট্রীয় হাতিয়ার’।
সংগত কারণেই এখন শুধু রিপন মিয়া নন, তাঁর বাবা-মা পরিবার, এমনকি পড়শিরাও এই খেলায় ঘুঁটি হয়ে গেছেন। কেননা, অ্যালগরিদমের দুনিয়ায় এটাই নিদারুণ বাস্তব।
লেখক: শিক্ষক, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস; সাংবাদিক
সকালে ঘুম ভাঙার পর সবার আগে মোবাইল ফোনের পর্দায় চোখ বোলানোটা আজকাল স্বভাবে দাঁড়িয়ে গেছে। বিছানা ছাড়ার আগেই উদ্দেশ্যবিহীন স্ক্রলিং অনেক সময় ঘণ্টা পেরোয়। এই স্ক্রলিং করতে গিয়েই চোখ আটকে যায় ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল আর্টস অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের এক অধ্যাপক আর শিক্ষার্থীর কথোপকথনে। ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথার এক পর্যায়ে সোয়াসের এই অধ্যাপক কেনীয় চলচ্চিত্রনির্মাতা জুডি কিবেঙ্গেকে উদ্ধৃত করে বলছিলেন, ‘তুমি যা দেখ তুমি তাই’। তাঁদের এই কথপোকথন পড়ার পর মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন এল, অন্তহীন স্ক্রলিংয়ের মাধ্যমে ক্রমাগত কন্টেন্ট গেলার এই সময়ে আমি তাহলে কী?
দিন কয়েক ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক সরগরম কন্টেন্ট ক্রিয়েটর রিপন মিয়াকে ঘিরে। ফেসবুকে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা এখন অব্দি ১৯ লাখ। ইউটিউবে তাঁর ‘রিপন মিয়া ভ্লগস’ নামে একটি চ্যানেলে রয়েছে। এখানে সাবস্ক্রাইবার ১ লাখ ৩৮ হাজার। নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাঠমিস্ত্রি রিপন মিয়া ২০১৬ সাল থেকে নিজের দৈনন্দিন জীবনের নানা ভিডিও বানিয়ে আসছেন। ভিডিওর শেষে তার হাসিমুখের উক্তি, ‘এটাই বাস্তব, কি কেমন দিলাম’—বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একজন খেটে খাওয়া মানুষের সহজ আবেগ দিয়ে মানুষকে ছুঁতে পেরেছেন তিনি। কিন্তু সেই বয়ানে এখন যেন ফাটল ধরতে শুরু করেছে।
১৩ অক্টোবর সোমবার দুপুরে নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে রিপন মিয়া দাবি করেন, কয়েকজন টেলিভিশন সাংবাদিক অনুমতি ছাড়াই তাঁর বাড়িতে ঢুকে পড়ে। ঘরে নারী সদস্য থাকার পরও ভিডিও করে এবং তাঁদের হেনস্তা করে। তবে রিপন তাঁর পোস্টে টেলিভিশন চ্যানেলের নামোল্লেখ করেননি। তো একজন নাগরিকের ব্যক্তিগত পরিসরের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের এহেন অভিযোগে ফুঁসে ওঠেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বাসিন্দরা। পোস্টের নিচে মন্তব্যর ঘরে অনেকেই অভিযুক্ত টেলিভিশন চ্যানেল ও সাংবাদিকের নাম-পরিচয় প্রকাশের দাবি জানাতে থাকেন। এর মধ্যে ১৪ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে একটি টেলিভিশন চ্যানেল এবং একাধিক অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত হয় একটি প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদনে রিপনের মা তাঁর ছেলের কথা উল্লেখ করে অভিযোগের সুরে বলেন, ‘খুব কষ্ট করে মানুষ করছি। কিন্তু এখন পরিচয় দেয় না। আমরা গরিব। পরিচয় দিলে যদি ওর মানসম্মান না থাকে…।’ প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, রিপনের মা নিজে থেকেই ওই সাংবাদিকদের বাড়িতে নিয়ে যান।
ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। ক্লাইম্যাক্সের যেন আরও খানিকটা বাকি ছিল। এর মধ্যেই মঙ্গলবার রাতেই ফেসবুকে ভাইরাল হলো আরেক ভিডিও। এতে দেখা যায় রিপন মিয়া তাঁর মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন আর বলছেন, ‘তোমারে দেহি না আমি? আব্বারে দেহি না আমি? তুমি ইড্ডা কী করলা? আমার জীবনডা শেষ করলা?’
কাহিনির কি এখানেই ইতি? এরপর বিভিন্ন ইনফ্লুয়েন্সার ক্যামেরা তাক করেছে রিপন মিয়ার বাড়ির দিকে। তাঁরা রিপনের বাবা-মা, এমনকি পড়াপড়শিকেও ক্যামেরার মুখোমুখি করতে কসুর করেনি।
অ্যালগরিদমের ভীষণ খবরদারির এই দুনিয়ায় আজ গণপরিসর আর ব্যক্তিগত পরিসরের ভেদ ঘুঁচে গেছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে আমরা সবাই এখন মানুষের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ড লুকিয়ে দেখে যেন সুখ অনুভব করি। নানান যন্ত্রের পর্দায় হাজার জানালার ভেতর দিয়ে ক্রমশ উঁকি দিতে থাকি অন্য মানুষের জীবনে। আবার অন্যেরা উঁকি দেবে ভেবে নিজের জীবনকেও নানা রঙে-ঢঙে সাজিয়ে উপস্থাপন করি। অর্থাৎ নিজেকে আমি যেভাবে দেখাতে চাই, সেভাবেই উপস্থাপন করি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রদর্শনকামিতার এই পালা ক্রমাগত চলমান। চলছে তো চলছেই।
এ প্রসঙ্গে মনে পড়ল, গেল শতকের নব্বইয়ের দশকে আমাদের বেড়ে ওঠার কালকে। তখন কি আমরা এত প্রদর্শনবাদীতায় আচ্ছন্ন ছিলাম? আমরা তো জীবনকে এভাবে দেখতে শিখিনি। যদি ‘আমি যা দেখি, আমি তা-ই’, হাল জামানায় এই মন্ত্রই প্রধান হয়ে ওঠে, যদি এটিই এখন নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের সর্বস্ব, তবে স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, যখন আমরা বেড়ে উঠছিলাম, সে সময় আমরা কী দেখেছি বা কীভাবে তথ্য পেয়েছিলাম?
উত্তর হলো, তখন বই পড়া, রেডিও শোনা বা বিটিভি দেখা ছাড়া আর কি কোনো উপায় ছিল তথ্য পাওয়ার! নব্বই দশক পেরোনোর পর আমাদের জীবনে আবির্ভাব ঘটল একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলের। আকাশ সংস্কৃতির। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন চ্যানেল থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে যোগ ছিল জ্ঞানের, নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলারও অবসর ছিল। নৈতিকতার নিক্তিতে মেপে আদর্শিক অবস্থান গ্রহণের তাগিদ ছিল হয়তো।
কিন্তু অঢেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই কালে সেগুলো সাবক্রাইব করতে করতে এখন আমরা যেন আদতেই গলা পর্যন্ত তথ্য আর ছবিতে ডুবে আছি। এর মধ্যে বুঁদ হয়ে আছি। কবি জীবনানন্দ দাশের চরণ ধার করে বলা যাবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় এখন ‘কেবলি দৃশ্যের জন্ম হয়’। আর সেখান থেকে প্রত্যেকেই আমরা চেতনে-অবচেতনে ব্লটিং পেপারের মতো শুষে নিতে বাধ্য হচ্ছি নানা ধরনের বয়ান। এগুলো কখনো আমাদের প্রলুব্ধ করে, ফাঁদে ফেলে, কখনোবা উসকানি দেয়।
আদতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমময় এই সময়ে ক্ষমতাশালী এক অ্যালগরিদমিক ঈশ্বরই আড়াল থেকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। যেন আমরা সবাই পুতুল, তিনিই নাচাচ্ছেন আমাদের। এই অ্যালগরিদমের ঈশ্বরই আমাদের সত্যকে খণ্ডিত করে রেখেছেন। তাই মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এলাকার কারখানার আগুনে ১৬ জন মানুষ যখন ঝলসে যায়, আমরা তখনও রিপন মিয়ার বাড়িতে কে গেল, কেন গেল, তাঁর সম্পদের পরিমাণ কত—মেতে থাকি এসব আলোচনায়। পোস্ট-আইডোলজি তথা আদর্শ উত্তর বা সত্য উত্তর এই বাস্তবতায় এখন আর আমরা প্রশ্ন করি না।
আমরা শুধু দেখি আর দেখাই। তাই চলচ্চিত্রনির্মাতা জুডি কিবেঙ্গে কথাটি খানিকটা নিজের মতো করে নিয়ে আমরাও বলতে পারি, আমরা যা দেখি, আমরা তাই।
রিপন মিয়া নিঃসন্দেহে একজন সাবল্টার্ন, নিম্নবর্গের প্রতিনিধি। তবে এখন হয়তো শ্রেণি উত্তরণ ঘটেছে। তাতে কি, প্রদর্শনবাদিতার খেলায় তিনিও তো খেলোয়াড় হয়ে হয়ে ওঠেন আমাদের ‘আইডিওলজিকাল স্টেট অ্যাপারেটাস’, বাংলা অনুবাদে যাকে বলা যায় ‘আদর্শিক রাষ্ট্রীয় হাতিয়ার’।
সংগত কারণেই এখন শুধু রিপন মিয়া নন, তাঁর বাবা-মা পরিবার, এমনকি পড়শিরাও এই খেলায় ঘুঁটি হয়ে গেছেন। কেননা, অ্যালগরিদমের দুনিয়ায় এটাই নিদারুণ বাস্তব।
লেখক: শিক্ষক, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস; সাংবাদিক
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অনেকটা জায়গাজুড়ে আছে দেশের ছাত্রসমাজ। ইতিহাস সাক্ষী, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান পেরিয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, এরপর ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন—সবই এসেছে এই ছাত্রসমাজের হাত ধরে। সাম্প্রতিক জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বও দিয়েছে ছাত্রছাত্রী
৬ ঘণ্টা আগেকবি নবারুণ ভট্টাচার্যের ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়’-এর অনেক বছর পরে কবি তুহিন খান যখন তাঁর কবিতায় বলেন, ‘এই মৃত্যু উপত্যকাই আমার দেশ’, তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি মিলিয়ে আমাদের তা মানতে বাধ্য হতে হয়।
৮ ঘণ্টা আগেআগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। অর্থাৎ হাতে আছে মাত্র চার মাস। এই সময়টুকু নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য খুব বেশি নয়—এ কথা বলাই যায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ধরনের আলাপ-আলোচনা, প্রস্তুতি কিংবা কর্মতৎপরতা দেখার কথা ছিল, তা দৃশ্যমান নয়।
১ দিন আগেসম্প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কিছু অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এঁদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত কিছু সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন। কর্মরত সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার-বিচার সম্পর্কে সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্ত
২ দিন আগে