ফাহমিদুল হক
আওয়ামী লীগের রুদ্ধ শাসনামলে দেশের ভেতর কথা বলা যেত না, রাজনীতি করা যেত না বলেই বিদেশে বসে বা বিদেশে গিয়ে অ্যাক্টিভিজম হয়েছে, রাজনীতি হয়েছে, কূটনীতি হয়েছে, এমনকি সাংবাদিকতা হয়েছে। শেখ হাসিনা বিদেশে সফরে গেলে বিশেষত লন্ডন ও নিউইয়র্কে বিএনপিপন্থী প্রবাসীরা প্রতিবাদ জানাতেন। তেমনই হয়েছে সোমবার নিউইয়র্কে। হয়তো অসভ্যতার মাত্রা বাড়িয়ে তুলে প্রতিবাদকারীরা ডিমকাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগদান উপলক্ষে সফরসঙ্গী হওয়ার আমন্ত্রণ পেয়ে তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদরা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন বিএনপির মির্জা ফখরুল, জামায়াতে ইসলামীর সৈয়দ তাহের এবং এনসিপির আখতার হোসেন।
অধ্যাপক ইউনূস ও সরকারের সদস্যরা প্রটোকলসহ নিরাপদে এয়ারপোর্ট থেকে বেরুতে পারলেও রাজনীতিবিদরা আমেরিকান আওয়ামী লীগের সদস্যদের রোষের মুখে পড়েন। বিশেষত আখতারকে লক্ষ করে ডিম ছোড়া হয়। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে বেশ আলোড়ন তৈরি হয়।
শেখ হাসিনার সময়ে তবুও দেশের ভেতরে রাজনৈতিক দলগুলোর অস্তিত্ব ছিল, কার্যক্রম সীমিত হলেও ছিল। এখন তো আওয়ামী লীগের দেশে কার্যক্রমই নিষিদ্ধ। রাজনীতি, অ্যাক্টিভিজম, ষড়যন্ত্র বা স্বপ্ন দেখা—যা হওয়ার সব বিদেশেই হবে বা হচ্ছে। স্বয়ং শেখা হাসিনা ও দলের বেশিরভাগ নেতৃবৃন্দ ভারত-নেপাল-ইউরোপ-আমেরিকায় পালিয়ে আছেন। এদিকে নিউইয়র্কের ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে ইউনূস-এসসিপির ওপর লীগারদের ক্ষোভ সবচেয়ে বেশি, বিএনপি-জামাতের চেয়েও বেশি।
একবার উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সুইজারল্যান্ডে লীগারদের রোষের মুখে পড়েছিলেন। কিন্তু ডিম নিক্ষেপ করার মতো ঘটনা ঘটেনি। ডিম নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে আখতারের সহযোদ্ধা ও ইউনূস সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর—লন্ডনে ও নিউইয়র্কে। এই ঘটনাগুলো সামনের দিনগুলোতে বাড়বে, কমবে না।
নিউইয়র্ক-লন্ডনে প্রতিবাদ বা হইচই, লীগাররা করবেনই। এটা তাদের অধিকারের মধ্যেই পড়ে। ডিম নিক্ষেপ করলে তো আর ওখানে কেউ হত্যামামলা দিচ্ছে না। তবে পাবলিক নুইসেন্সের কারণে এক-দুজন গ্রেফতারও হচ্ছেন। এক্ষেত্রে সামনের দিনগুলোতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আর সহিংস হয়ে ওঠার কারণে গ্রেফতারের সম্ভাবনা—এর মধ্যবর্তী সীমাতেই লীগাররা থাকবেন।
সোমবারের ঘটনায় একজন গ্রেফতার হয়েছেন। পরে অবশ্য তাকে ছেড়েও দেয়া হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তাকাতে হবে বাংলাদেশে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি যাঁরা করছেন আর যাঁরা সরকারের রয়েছেন, তাঁদের চিন্তা ও কার্যক্রমের দিকে। অধ্যাপক ইউনূস কি রাজনীতিবিদদের ঢাল হিসেবে এনেছিলেন? যেন ডিমটা এদের গায়েই নিক্ষেপ করা হয়।
সরকার আর রাজনীতিবিদ—এই দুই বর্গের লোকজনের মধ্যে প্রতিবাদের মুখে পড়েছেন রাজনীতিবিদরা। সরকারি লোকজন কোথায় নিরাপদে সটকে পড়লেন? তাঁরা যে উপায়ে বা প্রটোকলে ঝামেলা এড়াতে পারলেন, অতিথি বা সফরসঙ্গী রাজনীতিবদরা কেন পারলেন না? কিংবা সেই প্রটোকল তাঁর পান নি কেন? এর দায় কি সরকার বর্গের লোকেরা এড়াতে পারেন? এক্ষেত্রে নিউইয়র্কের কনসুলেটের ভূমিকাই-বা কী?
এক সূত্রে জানা গেছে, রাজনীতিবিদরা যে ভিসায় এসেছেন, তাঁদের সেই বিশেষ প্রটোকল দিতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। তাঁদের সাধারণ ভিজিটরের মতোই লাইনে দাঁড়িয়ে নিয়মিত এক্সিট গেইট দিয়ে বেরুতে হয়েছে।
রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রেও দেখা গেল, সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ আখতার, এনসিপি, জুলাই নেতৃত্বের প্রতি। তাসনিম জারাকে একরকম রেহাই দেওয়ার চেষ্টা স্পষ্ট ছিল—কৌশল হিসেবে। বিএনপির মির্জা ফখরুলকে আওয়ামী দঙ্গলের মধ্যে বিপন্ন দেখা গেছে। আর জামায়াতের জনাব তাহেরকে তেমন কোনো কনটেস্টে পড়তে হয় নি।
বিষয়টা খেয়াল করার মতো। অন্যদিকে জনাব তাহেরকে নিরাপত্তা দিতে জামায়াতের লোকজন হাজির থাকলেও বিএনপির লোকজন উপস্থিত ছিলেন না। বরং জামায়াতপক্ষ দাবি করেছে, মির্জা ফখরুলকেও তারাই রক্ষা করেছেন। তবে রহস্যজনকভাবে বিএনপির লোকজন নেতাকে বরণ করার জন্য ভুল এক্সিট গেটে দাঁড়িয়েছিলেন, জামায়াতের লোকজন সঠিক গেইটে ছিলেন।
ব্যাপারটা কেবল রহস্যজনকই নয়, প্রতীকীও। ৫ই আগস্টের পর জামায়াত ঠিকঠাক জায়গায় হাজির আছে, বিএনপি যেন সঠিক জায়গায় উপস্থিত না থেকে কিছুটা বিভ্রান্তির মধ্যেই রয়েছে। দেখতে হবে সঠিক বা ভুল গেটসংক্রান্ত তথ্যের জোগানদার কারা ছিল?
আওয়ামী লীগারদের ক্ষোভ সবচেয়ে বেশি এনসিপির নেতৃবৃন্দের ওপরে কেন, তা কিছুটা বোঝা যায়। তাদের আন্দোলনের কারণেই শেখা হাসিনাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। আর তাই আওয়ামী লীগের সবাই আজ বিপদগ্রস্ত। তবে আজ এনসিপি কেবল আওয়ামী লীগারদেরই টার্গেট নয়, তারা রাজনৈতিকভাবে যেন কিছুটা একলা হয়েও পড়েছে। যাদের পেছনে জনতা দাঁড়িয়েছিল, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারকে তাড়িয়েছিলেন যে নেতৃবৃন্দ, তাঁরা আজ একলা হলেন কেন? এমনকি যাঁকে তাঁরা চাকরি দিয়েছিলেন, সেই অধ্যাপক ইউনূস/সরকারও যেন বিপদে তাদের পাশে নেই।
এক বছরের মধ্যেই এরকম কেন হলো? এনসিপির নেতৃবৃন্দকে তা ভাবতে হবে। মাহফুজ-নাহিদ একাধিকবার বলেছেন, জুলাই আন্দোলনের সময় তাঁরা বিএনপি, ডানপন্থী, বামপন্থী—সবার সঙ্গেই পরামর্শ করতেন, সবার অংশগ্রহণেই আন্দোলন সফল হয়েছিল। কিন্তু ৫ই আগস্টের পরে এনসিপি নেতৃবৃন্দকে দেখা গেছে সযতনে বামপন্থীদের এড়িয়ে চলতে, বিএনপিকে লাগাতার সমালোচনা/গালাগালি করতে এবং ডানপন্থীদের (জামাত-শিবির) সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠতে। একইসঙ্গে তাদের ব্যাপকভাবে ক্ষমতায়িত করতে।
এদিকে জামাত পোষক ছাড়া বাঁচে না। জুলাইয়ের আগে বিএনপিকে শুষেছে, গোপনে গোপনে লীগকেও, আগস্ট থেকে এনসিপিকে। তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় এনসিপি আছে কিনা, কিছু খড়কুটো এনসিপি পায় কিনা, সেটাই দেখার বিষয়। কারণ আজ প্রথমবারের মতো জামাত এককভাবে ক্ষমতায় যাবার কথা ভাবছে। পোষকের প্রয়োজন হয়তো ফুরিয়েছে।
উপযাচক হয়ে এনসিপি নেতৃবৃন্দকে কিছু পরামর্শ দিতে চাই। যেকোনো বিদেশ সফর বাদ দিন। দেশে থেকে দলটাকে গোছান। মানুষের কাছে যান। জুলাইয়ে আপনাদের অবদান মনে করিয়ে দিন। নতুন করে শুরু করুন। বামপন্থীদের থেকে তো বহু দূরে সরে গেছেন, আর কেবল বিএনপি নয়, জামাতের সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি করেন। পিনাকী ভট্টাচার্যের মতো যেসব ইনফ্লুয়েন্সার নিজস্ব গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলতে দেশকে অস্থির করে রাখেন, তাঁদের সঙ্গ পুরোপুরি ত্যাগ করুন। নিজস্ব একটা রাজনৈতিক পরিচয় তৈরি করুন। এত দ্রুত হারিয়ে যান--আমরা তা চাই না।
লেখক: যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি অধ্যাপক, গবেষক ও বিশ্লেষক
আওয়ামী লীগের রুদ্ধ শাসনামলে দেশের ভেতর কথা বলা যেত না, রাজনীতি করা যেত না বলেই বিদেশে বসে বা বিদেশে গিয়ে অ্যাক্টিভিজম হয়েছে, রাজনীতি হয়েছে, কূটনীতি হয়েছে, এমনকি সাংবাদিকতা হয়েছে। শেখ হাসিনা বিদেশে সফরে গেলে বিশেষত লন্ডন ও নিউইয়র্কে বিএনপিপন্থী প্রবাসীরা প্রতিবাদ জানাতেন। তেমনই হয়েছে সোমবার নিউইয়র্কে। হয়তো অসভ্যতার মাত্রা বাড়িয়ে তুলে প্রতিবাদকারীরা ডিমকাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগদান উপলক্ষে সফরসঙ্গী হওয়ার আমন্ত্রণ পেয়ে তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদরা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন বিএনপির মির্জা ফখরুল, জামায়াতে ইসলামীর সৈয়দ তাহের এবং এনসিপির আখতার হোসেন।
অধ্যাপক ইউনূস ও সরকারের সদস্যরা প্রটোকলসহ নিরাপদে এয়ারপোর্ট থেকে বেরুতে পারলেও রাজনীতিবিদরা আমেরিকান আওয়ামী লীগের সদস্যদের রোষের মুখে পড়েন। বিশেষত আখতারকে লক্ষ করে ডিম ছোড়া হয়। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে বেশ আলোড়ন তৈরি হয়।
শেখ হাসিনার সময়ে তবুও দেশের ভেতরে রাজনৈতিক দলগুলোর অস্তিত্ব ছিল, কার্যক্রম সীমিত হলেও ছিল। এখন তো আওয়ামী লীগের দেশে কার্যক্রমই নিষিদ্ধ। রাজনীতি, অ্যাক্টিভিজম, ষড়যন্ত্র বা স্বপ্ন দেখা—যা হওয়ার সব বিদেশেই হবে বা হচ্ছে। স্বয়ং শেখা হাসিনা ও দলের বেশিরভাগ নেতৃবৃন্দ ভারত-নেপাল-ইউরোপ-আমেরিকায় পালিয়ে আছেন। এদিকে নিউইয়র্কের ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে ইউনূস-এসসিপির ওপর লীগারদের ক্ষোভ সবচেয়ে বেশি, বিএনপি-জামাতের চেয়েও বেশি।
একবার উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সুইজারল্যান্ডে লীগারদের রোষের মুখে পড়েছিলেন। কিন্তু ডিম নিক্ষেপ করার মতো ঘটনা ঘটেনি। ডিম নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে আখতারের সহযোদ্ধা ও ইউনূস সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর—লন্ডনে ও নিউইয়র্কে। এই ঘটনাগুলো সামনের দিনগুলোতে বাড়বে, কমবে না।
নিউইয়র্ক-লন্ডনে প্রতিবাদ বা হইচই, লীগাররা করবেনই। এটা তাদের অধিকারের মধ্যেই পড়ে। ডিম নিক্ষেপ করলে তো আর ওখানে কেউ হত্যামামলা দিচ্ছে না। তবে পাবলিক নুইসেন্সের কারণে এক-দুজন গ্রেফতারও হচ্ছেন। এক্ষেত্রে সামনের দিনগুলোতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আর সহিংস হয়ে ওঠার কারণে গ্রেফতারের সম্ভাবনা—এর মধ্যবর্তী সীমাতেই লীগাররা থাকবেন।
সোমবারের ঘটনায় একজন গ্রেফতার হয়েছেন। পরে অবশ্য তাকে ছেড়েও দেয়া হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তাকাতে হবে বাংলাদেশে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি যাঁরা করছেন আর যাঁরা সরকারের রয়েছেন, তাঁদের চিন্তা ও কার্যক্রমের দিকে। অধ্যাপক ইউনূস কি রাজনীতিবিদদের ঢাল হিসেবে এনেছিলেন? যেন ডিমটা এদের গায়েই নিক্ষেপ করা হয়।
সরকার আর রাজনীতিবিদ—এই দুই বর্গের লোকজনের মধ্যে প্রতিবাদের মুখে পড়েছেন রাজনীতিবিদরা। সরকারি লোকজন কোথায় নিরাপদে সটকে পড়লেন? তাঁরা যে উপায়ে বা প্রটোকলে ঝামেলা এড়াতে পারলেন, অতিথি বা সফরসঙ্গী রাজনীতিবদরা কেন পারলেন না? কিংবা সেই প্রটোকল তাঁর পান নি কেন? এর দায় কি সরকার বর্গের লোকেরা এড়াতে পারেন? এক্ষেত্রে নিউইয়র্কের কনসুলেটের ভূমিকাই-বা কী?
এক সূত্রে জানা গেছে, রাজনীতিবিদরা যে ভিসায় এসেছেন, তাঁদের সেই বিশেষ প্রটোকল দিতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। তাঁদের সাধারণ ভিজিটরের মতোই লাইনে দাঁড়িয়ে নিয়মিত এক্সিট গেইট দিয়ে বেরুতে হয়েছে।
রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রেও দেখা গেল, সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ আখতার, এনসিপি, জুলাই নেতৃত্বের প্রতি। তাসনিম জারাকে একরকম রেহাই দেওয়ার চেষ্টা স্পষ্ট ছিল—কৌশল হিসেবে। বিএনপির মির্জা ফখরুলকে আওয়ামী দঙ্গলের মধ্যে বিপন্ন দেখা গেছে। আর জামায়াতের জনাব তাহেরকে তেমন কোনো কনটেস্টে পড়তে হয় নি।
বিষয়টা খেয়াল করার মতো। অন্যদিকে জনাব তাহেরকে নিরাপত্তা দিতে জামায়াতের লোকজন হাজির থাকলেও বিএনপির লোকজন উপস্থিত ছিলেন না। বরং জামায়াতপক্ষ দাবি করেছে, মির্জা ফখরুলকেও তারাই রক্ষা করেছেন। তবে রহস্যজনকভাবে বিএনপির লোকজন নেতাকে বরণ করার জন্য ভুল এক্সিট গেটে দাঁড়িয়েছিলেন, জামায়াতের লোকজন সঠিক গেইটে ছিলেন।
ব্যাপারটা কেবল রহস্যজনকই নয়, প্রতীকীও। ৫ই আগস্টের পর জামায়াত ঠিকঠাক জায়গায় হাজির আছে, বিএনপি যেন সঠিক জায়গায় উপস্থিত না থেকে কিছুটা বিভ্রান্তির মধ্যেই রয়েছে। দেখতে হবে সঠিক বা ভুল গেটসংক্রান্ত তথ্যের জোগানদার কারা ছিল?
আওয়ামী লীগারদের ক্ষোভ সবচেয়ে বেশি এনসিপির নেতৃবৃন্দের ওপরে কেন, তা কিছুটা বোঝা যায়। তাদের আন্দোলনের কারণেই শেখা হাসিনাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। আর তাই আওয়ামী লীগের সবাই আজ বিপদগ্রস্ত। তবে আজ এনসিপি কেবল আওয়ামী লীগারদেরই টার্গেট নয়, তারা রাজনৈতিকভাবে যেন কিছুটা একলা হয়েও পড়েছে। যাদের পেছনে জনতা দাঁড়িয়েছিল, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারকে তাড়িয়েছিলেন যে নেতৃবৃন্দ, তাঁরা আজ একলা হলেন কেন? এমনকি যাঁকে তাঁরা চাকরি দিয়েছিলেন, সেই অধ্যাপক ইউনূস/সরকারও যেন বিপদে তাদের পাশে নেই।
এক বছরের মধ্যেই এরকম কেন হলো? এনসিপির নেতৃবৃন্দকে তা ভাবতে হবে। মাহফুজ-নাহিদ একাধিকবার বলেছেন, জুলাই আন্দোলনের সময় তাঁরা বিএনপি, ডানপন্থী, বামপন্থী—সবার সঙ্গেই পরামর্শ করতেন, সবার অংশগ্রহণেই আন্দোলন সফল হয়েছিল। কিন্তু ৫ই আগস্টের পরে এনসিপি নেতৃবৃন্দকে দেখা গেছে সযতনে বামপন্থীদের এড়িয়ে চলতে, বিএনপিকে লাগাতার সমালোচনা/গালাগালি করতে এবং ডানপন্থীদের (জামাত-শিবির) সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠতে। একইসঙ্গে তাদের ব্যাপকভাবে ক্ষমতায়িত করতে।
এদিকে জামাত পোষক ছাড়া বাঁচে না। জুলাইয়ের আগে বিএনপিকে শুষেছে, গোপনে গোপনে লীগকেও, আগস্ট থেকে এনসিপিকে। তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় এনসিপি আছে কিনা, কিছু খড়কুটো এনসিপি পায় কিনা, সেটাই দেখার বিষয়। কারণ আজ প্রথমবারের মতো জামাত এককভাবে ক্ষমতায় যাবার কথা ভাবছে। পোষকের প্রয়োজন হয়তো ফুরিয়েছে।
উপযাচক হয়ে এনসিপি নেতৃবৃন্দকে কিছু পরামর্শ দিতে চাই। যেকোনো বিদেশ সফর বাদ দিন। দেশে থেকে দলটাকে গোছান। মানুষের কাছে যান। জুলাইয়ে আপনাদের অবদান মনে করিয়ে দিন। নতুন করে শুরু করুন। বামপন্থীদের থেকে তো বহু দূরে সরে গেছেন, আর কেবল বিএনপি নয়, জামাতের সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি করেন। পিনাকী ভট্টাচার্যের মতো যেসব ইনফ্লুয়েন্সার নিজস্ব গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলতে দেশকে অস্থির করে রাখেন, তাঁদের সঙ্গ পুরোপুরি ত্যাগ করুন। নিজস্ব একটা রাজনৈতিক পরিচয় তৈরি করুন। এত দ্রুত হারিয়ে যান--আমরা তা চাই না।
লেখক: যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি অধ্যাপক, গবেষক ও বিশ্লেষক
বাংলাদেশে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থায় আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও ভেঙে পড়েছিল। কোনো কোনো শিক্ষক চেয়েছিলেন এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা, যেখানে প্রশ্ন করা যাবে না। একদম হীরক রাজার দেশের আদর্শ শিক্ষক।
৭ ঘণ্টা আগেকীভাবে সমাজ এক ধাপে ধাপে এমন সংকটে পৌঁছায়, যেখানে আর পুরনো ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয় না। আমেরিকা কি এখন সেই ধরনের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে? আমেরিকার কি তার শক্তির শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত পেরিয়ে গেছে? সে এখনো বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ। কিন্তু এর মানে এই নয় যে চিরকাল এই অবস্থায় থাকব। ইতিহাসের প্রতিটি সা
১ দিন আগেবাংলাদেশে বইমেলা নিছক কোনো বাণিজ্যিক আয়োজন নয়। অমর একুশে গ্রন্থমেলা জাতির রক্তের সঙ্গে মিশে থাকা এক ঐতিহাসিক উৎসব। একে ঘিরেই লেখক-পাঠক-প্রকাশকের মিলন ঘটে, নতুন চিন্তার সঞ্চার হয়, সাহিত্য-সংস্কৃতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
১ দিন আগেআনু মুহাম্মদ অর্থনীতির মৌলিক বিষয় ও রাজনৈতিক উন্নয়নের জটিল বিষয়গুলো সহজভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করে আসছেন, এখনো করছেন। একজন সংগঠক হিসাবে সর্বজনের জন্য রাজনীতিকে গতি দিয়েছেন, হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের প্রতিবাদী কণ্ঠের আইকন।
২ দিন আগে