সৈকত আমীন
গত তিন দশকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বারবার আলোচিত হয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর হামলা ও হত্যাচেষ্টার ঘটনা।
বর্তমানে প্রায় ২০০ হত্যা মামলার আসামি হয়ে ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনা তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে একাধিকবার হত্যাচেষ্টার মুখোমুখি হয়েছেন। ১৯৮৮ সালের চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে গুলি, ১৯৮৯ সালে ধানমন্ডি বাসভবনে হামলা, ১৯৯৪ সালের ঈশ্বরদী রেল হামলা থেকে শুরু করে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা—সব ক্ষেত্রেই তাঁকে লক্ষ্য করে সশস্ত্র আক্রমণ চালানো হয়েছিল।
বিভিন্ন সময়ে ফ্রিডম পার্টি, প্রতিদ্বন্দ্বী দলের স্থানীয় নেতাকর্মী, হুজি, জেএমবি ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ আছে। কোথাও সভাস্থলে বোমা পুঁতে রাখা হয়, কোথাও প্রকাশ্যে গুলি বা গ্রেনেড ছোড়া হয়।
গত তিন দশকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর চালানো একাধিক হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাগুলোর বিচারিক প্রক্রিয়া এক জটিল ও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে নিম্ন আদালতে শতাধিক ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও উচ্চ আদালতের রায়ে সেই চিত্র বহুলাংশে পাল্টে গেছে।
এসব হামলার ঘটনায় নিহত হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ, আহত হয়েছেন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মীরা।
আলাদা করে দেখা যাক এই ঘটনাগুলোর পটভূমি, হামলার ধরণ এবং পরবর্তী বিচারপ্রক্রিয়া।
এরশাদ শাসনামলে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে আট-দলীয় জোটের এক জনসভা হওয়ার কথা ছিল। সভায় যোগ দেওয়ার পথে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের কাছে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে ২৪ জন নিহত হন।
এ ঘটনায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের তৎকালীন কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদার বিরুদ্ধে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে একটি হত্যা মামলা করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের একটি আদালত ২৪ জনকে হত্যার মামলায় পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ (ভারপ্রাপ্ত) ইসমাইল হোসেন এ রায় দেন।
১৯৮৯: ধানমন্ডি বাসভবনে হামলা
১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট দুইজন সশস্ত্র ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তাঁর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে হামলা চালায়।
পরে শেখ হাসিনার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেন।
১৯৯৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০০৯ সালের ৫ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
২০১৪ সালে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। বর্তমানে মামলাটি ঢাকা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
১৯৯১: গ্রিন রোডে হামলা
১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চতুর্থ জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনের সময় শেখ হাসিনা ঢাকার ধানমন্ডির গ্রিন রোডে একটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে তাঁর ওপর গুলি চালানো হয়। গুলি তাঁর গাড়িতে লাগলেও তিনি প্রাণে রক্ষা পান।
এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলেও ৩৪ বছরেও এর নিষ্পত্তি হয়নি। মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে।
১৯৯৪: ঈশ্বরদী রেল হামলা
১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে শেখ হাসিনা যে রেলকোচে ছিলেন সেটিকে লক্ষ্য করে একাধিকবার গুলি চালানো হয়। তবে শেখ হাসিনা অক্ষত থাকেন।
ঘটনার পর ঈশ্বরদী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৯ সালের ৩ জুলাই পাবনার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৩–এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক ও অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. রুস্তম আলী ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন ও আরও ১৩ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। রায় ঘোষণার পর মৃত্যুদণ্ডের রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে পাঠানো হয় এবং আসামিরা খালাসের জন্য আপিল করেন।
পরে ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ওই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯জনসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছে হাইকোর্ট।
১৯৯৫: রাসেল স্কয়ার জনসভায় হামলা
১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর ঢাকার শেখ রাসেল স্কয়ারে এক জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় শেখ হাসিনার ওপর হামলা চালানো হয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দ্রুত তাঁকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন। এ নিয়ে দায়ের করা মামলার এখনো যুক্তিতর্ক চলছে।
১৯৯৬: বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে হামলা
১৯৯৬ সালের ৭ মার্চ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এক জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন। একটি মাইক্রোবাস থেকে তাঁর দিকে গুলি চালানো হয় এবং বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এই হামলায় অন্তত ২০ জন আহত হন। মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে।
২০০০: কোটালিপাড়ায় ৭৬ কেজি বোমা
২০০০ সালের ২০ জুলাই শেখ হাসিনার একটি জনসভা হওয়ার কথা ছিল গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার একটি কলেজ মাঠে। জনসভার দুই দিন আগে সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞেরা মাঠের পাশে থেকে একটি ৭৬ কেজি ও একটি ৪০ কেজি ওজনের বোমা উদ্ধার করেন। হত্যাচেষ্টা নিয়ে দায়ের হওয়া দুটি মামলায় ২০২১ সালের ২৩ মার্চ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
২০০১: রূপসা বোমা ষড়যন্ত্র
২০০১ সালের ৩০ মে খুলনায় রূপসা সেতু ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ওই অনুষ্ঠানস্থলে পুঁতে রাখা বোমা গোয়েন্দারা উদ্ধার করেন। এ বিষয়ে একটি মামলা এখনো চলমান আছে।
২০০১: সিলেটে হামলার আগে বিস্ফোরণ
২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা নির্বাচনি জনসভা করতে সিলেটে গেলে সেখানে বোমা পুঁতে রেখে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল হুজি। কিন্তু হামলার আগেই জনসভাস্থলের অদূরে বোমা বিস্ফোরণে জঙ্গিদের দুই সদস্য নিহত হলে ওই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
ওই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া হুজির আধ্যাত্মিক নেতা মাওলানা আবু সাইদ ওরফে আবু জাফর ২০০৬ সালের ৫ অক্টোবর সিলেট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দেন। তাতে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার কথা স্বীকার করেন তিনি।
এ মামলার বিচার কার্যক্রম এখনো চলমান।
২০০২: নওগাঁ হামলা
২০০২ সালের ৪ মার্চ নওগাঁর বিএমসি মহিলা কলেজের সামনে শেখ হাসিনার গাড়িবহরের ওপর হামলা হয়।
এ ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগ তখন বিএনপির যুব সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদলকে দায়ী করে মামলা দায়ের করে। তবে এখনো তদন্তে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
২০০২: সাতক্ষীরা হামলা
২০০২ সালের ৩০ আগস্ট শেখ হাসিনা খুলনা সফরের সময় কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরের ওপর গুলি ও বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৭০-৭৫ জনের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরার আদালতে মামলা করেন। মামলার বিচার শেষে গত বছর আদালত ২০২১ সালে সাবেক সংসদসদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবীবসহ ৪ জনকে যাবজ্জীবন, ৪৪ জন ৭ বছর ও সাড়ে ৩ বছর করে কারাদণ্ড দেন।
ওই মামলায় এই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিব ১০ বছরের কারাদণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন। ওই সাজার রায়ের বিরুদ্ধে করা এক আবেদনের (ক্রিমিনাল রিভিশন) শুনানি শেষে বিচারপতি মোহাম্মদ আলী ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
২০০৪: বরিশাল হামলা
২০০৪ সালের ২ এপ্রিল বরিশালের গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে গুলি চালানো হয়। এ ঘটনায় ২০০৯ সালের ১৯ জুলাই বরিশাল আদালতে একটি মামলা হয়। মামলাটি এখনো চলামান রয়েছে।
২০০৪: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা
২০০৪ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। ওই হামলায় ২৪ জন নিহত এবং ৩০০ জনের বেশি আহত হন। শেখ হাসিনা অল্পের জন্য হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যান, তবে তাঁর শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার এ ঘটনায় তখন মামলা হয়েছিল মতিঝিল থানায়। মামলার তদন্ত নিয়ে তখন নানা বিতর্ক উঠেছিল। ২০০৭ সালে এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলার তদন্ত নতুনভাবে শুরু করে সিআইডি। সংস্থাটি ২২ জনকে আসামি করে পরের বছর আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ–সংক্রান্ত মামলা দুটির (হত্যা ও বিস্ফোরক) আরও তদন্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। তাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জনকে আসামি করা হয়।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ মামলার রায় দেন। তাতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
রায়ের সময় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৩ জন পলাতক ছিলেন।
গত বছর হাইকোর্ট ওই রায় বাতিল করে দেন। এরপর হাইকোর্টে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল, জেল আপিল ও বিবিধ আবেদনের ওপর শুনানি হয়। পরে গত বছরের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। তাতে বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজার রায় বাতিল করা হয়। ফলে মামলা থেকে সবাই খালাস পান।
গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। চলতি বছরের ১ জুন লিভ টু আপিল (বিস্ফোরক মামলায়) মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) থেকে রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপনের মধ্যে দিয়ে চলতি বছরের ১৭ জুলাই আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ৩১ জুলাই, ১৯ আগস্ট ও গতকাল বুধবার (২০ আগস্ট) শুনানি হয়। শুনানি ছিল আজও। আজকের শুনানি শেষে জানানো হয়েছে, আগামী ৪ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করবেন আপিল বিভাগ।
গত তিন দশকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বারবার আলোচিত হয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর হামলা ও হত্যাচেষ্টার ঘটনা।
বর্তমানে প্রায় ২০০ হত্যা মামলার আসামি হয়ে ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনা তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে একাধিকবার হত্যাচেষ্টার মুখোমুখি হয়েছেন। ১৯৮৮ সালের চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে গুলি, ১৯৮৯ সালে ধানমন্ডি বাসভবনে হামলা, ১৯৯৪ সালের ঈশ্বরদী রেল হামলা থেকে শুরু করে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা—সব ক্ষেত্রেই তাঁকে লক্ষ্য করে সশস্ত্র আক্রমণ চালানো হয়েছিল।
বিভিন্ন সময়ে ফ্রিডম পার্টি, প্রতিদ্বন্দ্বী দলের স্থানীয় নেতাকর্মী, হুজি, জেএমবি ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ আছে। কোথাও সভাস্থলে বোমা পুঁতে রাখা হয়, কোথাও প্রকাশ্যে গুলি বা গ্রেনেড ছোড়া হয়।
গত তিন দশকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর চালানো একাধিক হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাগুলোর বিচারিক প্রক্রিয়া এক জটিল ও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে নিম্ন আদালতে শতাধিক ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও উচ্চ আদালতের রায়ে সেই চিত্র বহুলাংশে পাল্টে গেছে।
এসব হামলার ঘটনায় নিহত হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ, আহত হয়েছেন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মীরা।
আলাদা করে দেখা যাক এই ঘটনাগুলোর পটভূমি, হামলার ধরণ এবং পরবর্তী বিচারপ্রক্রিয়া।
এরশাদ শাসনামলে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে আট-দলীয় জোটের এক জনসভা হওয়ার কথা ছিল। সভায় যোগ দেওয়ার পথে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের কাছে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে ২৪ জন নিহত হন।
এ ঘটনায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের তৎকালীন কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদার বিরুদ্ধে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে একটি হত্যা মামলা করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের একটি আদালত ২৪ জনকে হত্যার মামলায় পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ (ভারপ্রাপ্ত) ইসমাইল হোসেন এ রায় দেন।
১৯৮৯: ধানমন্ডি বাসভবনে হামলা
১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট দুইজন সশস্ত্র ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তাঁর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে হামলা চালায়।
পরে শেখ হাসিনার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেন।
১৯৯৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০০৯ সালের ৫ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
২০১৪ সালে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। বর্তমানে মামলাটি ঢাকা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
১৯৯১: গ্রিন রোডে হামলা
১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চতুর্থ জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনের সময় শেখ হাসিনা ঢাকার ধানমন্ডির গ্রিন রোডে একটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে তাঁর ওপর গুলি চালানো হয়। গুলি তাঁর গাড়িতে লাগলেও তিনি প্রাণে রক্ষা পান।
এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলেও ৩৪ বছরেও এর নিষ্পত্তি হয়নি। মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে।
১৯৯৪: ঈশ্বরদী রেল হামলা
১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে শেখ হাসিনা যে রেলকোচে ছিলেন সেটিকে লক্ষ্য করে একাধিকবার গুলি চালানো হয়। তবে শেখ হাসিনা অক্ষত থাকেন।
ঘটনার পর ঈশ্বরদী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৯ সালের ৩ জুলাই পাবনার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৩–এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক ও অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. রুস্তম আলী ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন ও আরও ১৩ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। রায় ঘোষণার পর মৃত্যুদণ্ডের রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে পাঠানো হয় এবং আসামিরা খালাসের জন্য আপিল করেন।
পরে ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ওই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯জনসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছে হাইকোর্ট।
১৯৯৫: রাসেল স্কয়ার জনসভায় হামলা
১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর ঢাকার শেখ রাসেল স্কয়ারে এক জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় শেখ হাসিনার ওপর হামলা চালানো হয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দ্রুত তাঁকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন। এ নিয়ে দায়ের করা মামলার এখনো যুক্তিতর্ক চলছে।
১৯৯৬: বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে হামলা
১৯৯৬ সালের ৭ মার্চ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এক জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন। একটি মাইক্রোবাস থেকে তাঁর দিকে গুলি চালানো হয় এবং বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এই হামলায় অন্তত ২০ জন আহত হন। মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে।
২০০০: কোটালিপাড়ায় ৭৬ কেজি বোমা
২০০০ সালের ২০ জুলাই শেখ হাসিনার একটি জনসভা হওয়ার কথা ছিল গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার একটি কলেজ মাঠে। জনসভার দুই দিন আগে সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞেরা মাঠের পাশে থেকে একটি ৭৬ কেজি ও একটি ৪০ কেজি ওজনের বোমা উদ্ধার করেন। হত্যাচেষ্টা নিয়ে দায়ের হওয়া দুটি মামলায় ২০২১ সালের ২৩ মার্চ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
২০০১: রূপসা বোমা ষড়যন্ত্র
২০০১ সালের ৩০ মে খুলনায় রূপসা সেতু ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ওই অনুষ্ঠানস্থলে পুঁতে রাখা বোমা গোয়েন্দারা উদ্ধার করেন। এ বিষয়ে একটি মামলা এখনো চলমান আছে।
২০০১: সিলেটে হামলার আগে বিস্ফোরণ
২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা নির্বাচনি জনসভা করতে সিলেটে গেলে সেখানে বোমা পুঁতে রেখে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল হুজি। কিন্তু হামলার আগেই জনসভাস্থলের অদূরে বোমা বিস্ফোরণে জঙ্গিদের দুই সদস্য নিহত হলে ওই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
ওই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া হুজির আধ্যাত্মিক নেতা মাওলানা আবু সাইদ ওরফে আবু জাফর ২০০৬ সালের ৫ অক্টোবর সিলেট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দেন। তাতে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার কথা স্বীকার করেন তিনি।
এ মামলার বিচার কার্যক্রম এখনো চলমান।
২০০২: নওগাঁ হামলা
২০০২ সালের ৪ মার্চ নওগাঁর বিএমসি মহিলা কলেজের সামনে শেখ হাসিনার গাড়িবহরের ওপর হামলা হয়।
এ ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগ তখন বিএনপির যুব সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদলকে দায়ী করে মামলা দায়ের করে। তবে এখনো তদন্তে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
২০০২: সাতক্ষীরা হামলা
২০০২ সালের ৩০ আগস্ট শেখ হাসিনা খুলনা সফরের সময় কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরের ওপর গুলি ও বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৭০-৭৫ জনের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরার আদালতে মামলা করেন। মামলার বিচার শেষে গত বছর আদালত ২০২১ সালে সাবেক সংসদসদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবীবসহ ৪ জনকে যাবজ্জীবন, ৪৪ জন ৭ বছর ও সাড়ে ৩ বছর করে কারাদণ্ড দেন।
ওই মামলায় এই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিব ১০ বছরের কারাদণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন। ওই সাজার রায়ের বিরুদ্ধে করা এক আবেদনের (ক্রিমিনাল রিভিশন) শুনানি শেষে বিচারপতি মোহাম্মদ আলী ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
২০০৪: বরিশাল হামলা
২০০৪ সালের ২ এপ্রিল বরিশালের গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে গুলি চালানো হয়। এ ঘটনায় ২০০৯ সালের ১৯ জুলাই বরিশাল আদালতে একটি মামলা হয়। মামলাটি এখনো চলামান রয়েছে।
২০০৪: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা
২০০৪ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। ওই হামলায় ২৪ জন নিহত এবং ৩০০ জনের বেশি আহত হন। শেখ হাসিনা অল্পের জন্য হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যান, তবে তাঁর শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার এ ঘটনায় তখন মামলা হয়েছিল মতিঝিল থানায়। মামলার তদন্ত নিয়ে তখন নানা বিতর্ক উঠেছিল। ২০০৭ সালে এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলার তদন্ত নতুনভাবে শুরু করে সিআইডি। সংস্থাটি ২২ জনকে আসামি করে পরের বছর আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ–সংক্রান্ত মামলা দুটির (হত্যা ও বিস্ফোরক) আরও তদন্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। তাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জনকে আসামি করা হয়।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ মামলার রায় দেন। তাতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
রায়ের সময় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৩ জন পলাতক ছিলেন।
গত বছর হাইকোর্ট ওই রায় বাতিল করে দেন। এরপর হাইকোর্টে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল, জেল আপিল ও বিবিধ আবেদনের ওপর শুনানি হয়। পরে গত বছরের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। তাতে বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজার রায় বাতিল করা হয়। ফলে মামলা থেকে সবাই খালাস পান।
গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। চলতি বছরের ১ জুন লিভ টু আপিল (বিস্ফোরক মামলায়) মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) থেকে রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপনের মধ্যে দিয়ে চলতি বছরের ১৭ জুলাই আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ৩১ জুলাই, ১৯ আগস্ট ও গতকাল বুধবার (২০ আগস্ট) শুনানি হয়। শুনানি ছিল আজও। আজকের শুনানি শেষে জানানো হয়েছে, আগামী ৪ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করবেন আপিল বিভাগ।
ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের এক মাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার মধ্যে দায়িত্ব নেওয়া নবনির্বাচিত কমিটিগুলোর এই সময়ের কর্মকাণ্ডে প্রশংসিত উদ্যোগের পাশাপাশি সমালোচিত ও বিতর্কিত কিছু ঘটনাও ঘটেছে।
৩ ঘণ্টা আগেরাজধানীর মিরপুর রূপনগরে কেমিক্যাল গোডাউন ও পোশাক কারখানায় লাগা আগুনে নিহত ১৬ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। রোববার (১৯ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে মরদেহ হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়।
৩ ঘণ্টা আগেবেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সিটি ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে। সাভারের বিরুলিয়ায় ৪০ বিঘা জমিতে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস। ৫ হাজার ৭৫৯ শিক্ষার্থী ও ২০৮ শিক্ষকের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩ সালে কোনো গবেষণাই হয়নি।
১২ ঘণ্টা আগেরফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন। ওই বাসাটিই ছিল তাঁর টিউশনের বাসা। এখনো মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমরা তদন্ত করছি।’
১৫ ঘণ্টা আগে