leadT1ad

জুলাই ব্যর্থ হয়েছে তার নিজের কাছে: ফারুক ওয়াসিফ

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৫, ২২: ০২
আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২৫, ২২: ০৪
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: বৈষম্যহীন ও পরিকল্পিত বাংলাদেশ গড়বার প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক সংলাপ। স্ট্রিম ছবি

‘জুলাই নিজের কাছে ব্যর্থ হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। তিনি বলেছেন, ‘জুলাইয়ের রাজনৈতিক নেতৃত্ব নানাভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য যার অংশীদারত্ব বেশি তাকে দায় বেশি নিতে হবে।’

বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) আয়োজিত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: বৈষম্যহীন ও পরিকল্পিত বাংলাদেশ গড়বার প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক ‘জুলাই সংলাপ’-এ তিনি এসব কথা বলেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘১৫ বছরে বাংলাদেশে রাজনীতি, প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতি ধ্বংস করা হয়েছে। আমরা যে শাসনব্যবস্থার মধ্যে ছিলাম—এটিকে দানব বা ফ্যাসিবাদ শব্দের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায় না।’

তিনি বলেন, ‘২০১১ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হলো, তখনই বুঝা উচিত ছিল যে এই সরকার আর নির্বাচন দেবে না। কিন্তু আমাদের সুশীল, প্রগতিশীল, উন্নত এবং মানবিক মানুষেরা চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দেননি। বিডিআর গণহত্যা ঘটালো, কাশিমপুর কারাগার বানিয়ে গর্ব করলো—এর মধ্যে যে হুংকার আছে সেটি আমরা বুঝিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এমন একটি রেজিম এ দেশে তৈরি হচ্ছিল, তবে যত সময় গেছে তাদের প্রতি কোলাবোরেশন কমেনি, বরং বেড়েছে। দেশে যারা ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবাদী ছিল, তারা ২০১৮ সালে নির্বাচনে এসে বুকলেটে সই করে বলেছে—কেন আমরা শেখ হাসিনাকে চাই। সম্প্রতি আবুল বারাকাতকে যখন ধরা হলো ব্যাংক লুট করার কারণে, উনি অর্থনীতি সমিতি নামে একটি মর্যাদাবান প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছেন, তার বিরুদ্ধে ১২১ জন প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আমরা তাঁদের অনেকের সঙ্গে এমন সভা-সমাবেশে তাঁদের পাশে বসব। তাহলে অভ্যুত্থানটা কোথায় হলো?’

ফারুক ওয়াসিফ এ-ও বলেন, ‘একটা মোহ ভঙ্গ হওয়ার প্রজন্ম তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিতে সামান্য বিকাশের মধ্যে মধ্যবিত্তের বিস্তার ঘটেছিল। আমাদের অগোচরে, সুশীলদের বাইরে আরেকটা জেনারেশন গড়ে উঠেছে। তারা মাদরাসা থেকে আসা, মফস্বলের, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বা নিউ আরবানের তরুণ গোষ্ঠী।’

অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জুনায়েদ ইসলাম জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা তুলে ধরেন তিনি।

বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খানের সভাপতিত্বে জুলাই সংলাপে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ছাড়াও পরিকল্পনাবিদ, সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণির-পেশার মানুষ এবং সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

আদিল মাহমুদ খান বলেন, ‘অত্যন্ত রক্ত দেওয়া জুলাই! এটি নিয়ে অনেক ক্রিটিসিজম থাকবে, কী পেয়েছি কী পায়নি। তবে জুলাই অনিবার্য ছিল। এটি ছাড়া বাংলাদেশ আজকের বাংলাদেশ হতো না।’

এ সময় জুলাই আন্দোলনে শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়ের মা ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক শামসি আরা জামান জানান, ১৯ জুলাই শহিদ প্রিয়র মৃত্যুর পরদিন থেকেই পরিবারকে মিথ্যা মামলা, হুমকি ও বাসায় হামলার মাধ্যমে হয়রানির শিকার হতে হয়। পরবর্তীতে এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে পরিবার ঢাকার নিউমার্কেট থানা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম রাব্বানী জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদের ওপর গণহত্যা বন্ধ করতে তিনি একজন শিক্ষক হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছেন।

বুয়েটের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী বলেন, ‘মানুষের মনস্তত্ত্ব ও জমিন বিগত সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায় এবং তার ফলশ্রুতিতেই জুলাই আন্দোলন হয়েছে। আমাদের দেশে অনেক গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে কিন্তু রাজনৈতিক গণ-অভ্যুত্থান হয়নি। যার ফলে, দেশে অনার্জিত আয়ের ফলে সৃষ্ট বৈষম্য উচ্ছেদ করা যায়নি।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত