leadT1ad

জুলাই আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি

তদন্তের মধ্যেই মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে যুবলীগ নেতা রনি

যুবলীগ নেতা বাপ্পি চৌধুরী রনি সব সম্পদের হিসাব চেয়ে রাজশাহী জেলাপ্রশাসনকে চিঠি দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। চিঠি দেওয়ার মাত্র দুই দিন পর ৪ আগস্ট উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান রনি। ১২ আগস্ট সন্ধ্যায় কারগার থেকে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন তিনি।

স্ট্রিম সংবাদদাতারাজশাহী
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০০: ০৮
আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০০: ০৯
রাজশাহীর আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী। স্ট্রিম ছবি

রাজশাহীতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় মিছিলে প্রকাশ্যে গুলি চালানো যুবলীগ নেতা বাপ্পি চৌধুরী রনির (৩৬) ব্যাপারে তদন্ত করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। চলতি আগস্টের শুরুতেই তাঁর সব সম্পদের হিসাব চেয়ে জেলা প্রশাসককে চিঠিও দিয়েছে সংস্থাটি। এর দুদিন পরই উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে ‘নীরবেই’ বেরিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন এই যুবলীগ নেতা।

এদিকে বিষয়টি জানাজানির পর তোলপাড় শুরু হয়েছে রাজশাহীতে। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাজশাহীর আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি, নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যসহ অন্যরা। আদালতের কর্মকর্তা, কারা কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রনির মুক্তির বিষয়টি গোপন রাখার অভিযোগ করেছেন তাঁরা। বাপ্পি চৌধুরী রনি নগরের পুলিশ লাইন ভেড়িপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। গত বছরের ৫ আগস্ট নগরের আলুপট্টি এলাকায় ছাত্র-জনতার মিছিলে অন্যদের সঙ্গে তাঁকেও প্রকাশ্যে গুলি চালাতে দেখা যায়। সেদিন ওই এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান দুই আন্দোলনকারী। সেই সময় ধারণ করা ভিডিওতে রনিকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে গুলি করতে দেখা গেছে।

বাপ্পি চৌধুরী রনি। স্ট্রিম ছবি
বাপ্পি চৌধুরী রনি। স্ট্রিম ছবি

পরে তা ছড়িয়ে পড়লে তাঁকের গ্রেপ্তারে চাপ বাড়ে। এদিকে গত বছরের ১২ নভেম্বর ঢাকার একটি বাসা থেকে রনিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পর দিন তাঁকে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে দুটি হত্যাসহ তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হলে তাঁকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) তথ্য মতে, যুবলীগ নেতা রনির বিরুদ্ধে দুটি হত্যাসহ মোট চারটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২০০৯ সালে করা একটি মামলায় আগে থেকেই জামিনে ছিলেন তিনি।

এদিকে ১১ জনের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য চেয়ে চলতি বছরের ২ আগস্ট রাজশাহীর জেলা প্রশাসককে একটি চিঠি দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার উপপরিচালক (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) ও তদন্তকারী কর্মকর্তা রুহুল আমিন। ওই তালিকায় ৭ নম্বরে রয়েছে যুবলীগ নেতা রনির নাম। এতে রনির সব সম্পদের হিসাব জরুরি ভিত্তিতে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়। সেই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় রনির বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত আছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।

তবে তদন্ত কর্মকর্তার চিঠি দেওয়ার মাত্র দুই দিন পর ৪ আগস্ট উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান রনি। বিচারাধীন তিনটি মামলা থেকে একে জামিন পান তিনি। পরে ১২ আগস্ট তাঁর মুক্তির আদেশ রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার পৌঁছানোর পর সন্ধ্যায় ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। এর পরই তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

আন্দোলনকারীরা যে অভিযোগ

রনির মুক্তির প্রতিবাদে মঙ্গলবার আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে জুলাই রেভ্যুলুশনারি অ্যালায়েন্স নামে একটি সংগঠনের রাজশাহী জেলা শাখার ব্যানারে। এতে বক্তব্য দেন সংগঠনের জেলার আহ্বায়ক রাকিব হোসেন, সদস্যসচিব তামিম মো. তারিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর মাহাতাবসহ অন্যরা।

এতে অংশ নেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা জানান, ৫ আগস্ট নগরের আলুপট্টি এলাকায় জহিরুল হক রুবেলের (৪১) নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অন্তত এক ডজন নেতা-কর্মী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালান। দুই হাতে পিস্তল নিয়ে শিক্ষার্থীদের গুলি চালানো রুবেলের ছবি পরে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়। সেদিন রুবেলের সঙ্গে পিস্তল নিয়ে গুলি চালান যুবলীগ নেতা রনি। তিনি স্থানীয়দের কাছে রুবেলের সশস্ত্র ক্যাডার হিসেবেও পরিচিত।

বিক্ষুব্ধরা অভিযোগ করেন, দাগি আসামির জামিন হলে গোয়েন্দা সংস্থার নজরে রাখার কথা, কিন্তু রনির ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হয়েছে। আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী, কারা কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা কর্মকর্তারা বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন। রনিকে আবার গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, দেশের স্বার্থে তাঁরা বৈষম্যবিরাধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আন্দোলনে প্রকাশ্যে গুলি চালানো যুবলীগ নেতা রনি মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে যাওয়ায় তাঁরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। তাঁদের দাবি, রনির মুক্তি দিয়ে প্রশাসন আন্দোলনকারীদের ঝুঁকিতে ফেলেছে। এখন তাঁদের ওপর কোনো ধরনের হামলা হলে, এর সব দায় রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।

কী বলছে প্রশাসন

যুবলীগ নেতা বাপ্পি চৌধুরী রনি শেষ তিন মামলায় একে একে জামিন হয়েছে ঢাকায় উচ্চ আদালত থেকে। তবে সেই কাগজ কবে রাজশাহী কারাগারে পৌঁছেছে, তা জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ৪ আগস্ট জামিন পেয়েছেন তিনি। পরে ১২ আগস্ট তাঁকে মুক্তির আদেশ পৌঁছে কারাগারে।

জানতে চাইলে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহ আলম খান বলেন, ‘আদালত থেকে জামিনের কাগজপত্র এলে আমরা কাউকে আটকে রাখার ক্ষমতা রাখি না। জামিন পেয়ে তিনি চলে গেছেন।’

রনির মুক্তিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তার বিষয় জানতে চাইলে আরএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) গাজিউর রহমান বলেন, ‘রনি জামিনে বেরিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

নগর পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, ‘রনি কীভাবে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় পুলিশের কারও অবহেলা প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে কারাগার থেকে মুক্তির পর আত্মগোপনে থাকার বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা স্ট্রিম অফিস থেকে যুবলীগ নেতা বাপ্পি চৌধুরী রনির ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বরে কল করে বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে হোয়াটসঅ্যাপে একই নম্বর চালু পাওয়া যায়। এতে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে একটা মেসেজ পাঠানো হলেও এর উত্তর দেননি।

Ad 300x250

সম্পর্কিত