আগামী ১৩ নভেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সদ্য চূড়ান্ত ও গেজেট প্রকাশিত আচরণবিধি হাতে পাওয়ার পর কমিশন এখন সংলাপ আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ।
আজ মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমরা আচরণবিধির গেজেট পেয়েছি। ১৩ নভেম্বর থেকে সংলাপ বা মতবিনিময় শুরু করার পরিকল্পনা আছে। এখন সেই বিষয়েই কাজ শুরু করছি। কাদের ডাকা হবে, কীভাবে আলোচনা হবে, তা নির্ধারণ করছি। আমরা আশা করছি, রাজনৈতিক দলগুলো ইতিবাচক সাড়া দেবে।’
সচিব জানান, সংলাপে মূলত আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) ও আচরণবিধির পরিবর্তনগুলো এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলের সহযোগিতার বিষয়গুলো আলোচনায় আসবে।
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব মতামত ও প্রস্তাবও আমরা শুনব। আমরা চাই এই মাসের মধ্যেই সংলাপ, পর্যবেক্ষক নিবন্ধনসহ সব কার্যক্রম এগিয়ে নিতে ‘
ইসি সচিব জানান, প্রথম সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে আগামী বৃহস্পতিবার ইসি ভবনের ৫২০ নম্বর অডিটোরিয়াম বা কনফারেন্স রুমে। সাংবাদিকদের জন্য বাইরে বসে লাইভ পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থাও থাকবে। ‘আগামী পরশু থেকে আমরা শুরু করছি। কাদেরকে ডাকা হবে তা এখনো নির্ধারণ করিনি। নিবন্ধিত দলগুলো নিয়েই সংলাপ করব’—বলেন তিনি।
রাজনৈতিক দলগুলোর অনাস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, সংলাপে সবাই ইতিবাচকভাবে অংশ নেবেন। আমরা শুরু থেকেই বলেছি, সংলাপ ও মতবিনিময় আমাদের কাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে পারস্পরিক আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’
তবে প্রথম দিনে কোন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু হবে, সেই তথ্য দেননি এই নির্বাচন কর্মকর্তা।
তবে ইসি সুত্র বলছে, নির্বাচিত দিনে দুই বেলায় একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসবে কমিশন।
আচরণবিধিতে নিষিদ্ধ পোষ্টার, প্রার্থী ও দল উভয়কেই অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে হবে
গত ১০ নভেম্বর রাতে গেজেট হওয়া সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের জন্য আচরণবিধিতে কিছু মৌলিক পরিবর্তন এসেছে। প্রধানত তিনটি বিষয়ে পরিবর্তন হয়েছে—পোস্টার নিষিদ্ধ করা হয়েছে, প্লাস্টিকজাত কোনো উপকরণ ব্যবহার করা যাবে না, প্রার্থী ও দল উভয়কেই আচরণবিধি মেনে চলার অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে হবে’।
তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক পোস্টার করা যাবে না। তবে ফেস্টুন ও লিফলেট করা যাবে—তার নির্দিষ্ট আকার-আকৃতি আচরণবিধিতে নির্ধারণ করা আছে। এছাড়া ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড ব্যবহার করা যাবে।’
এছাড়া প্রার্থী ও দল উভয়ের লিখিত অঙ্গীকারের বিষয়টি এবার প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছে। ‘যদি কোনো প্রার্থী রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তবে প্রার্থী ও দল উভয়েই এই অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করবেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তিনি এককভাবে দেবেন’—বলেন আখতার আহমেদ।
ইসি সচিব জানান, আচরণবিধির আলোকে নির্বাচনী সভায় একসঙ্গে তিনটির বেশি মাইক্রোফোন বা এমপ্লিফায়ার ব্যবহার করা যাবে না।
আদালতের রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পরে বাগেরহাটের আসন নিয়ে সিদ্ধান্ত
বাগেরহাট জেলার একটি আসনসংক্রান্ত রায়ের বিষয়ে সচিব জানান, গতকাল আদালত বাগেরহাটের একটি নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে রায় দিয়েছেন। আগে সেখানে চারটি আসন ছিল, পরে নির্বাচন কমিশন সেটি তিনটি নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করেছিল। আদালত এখন সেই তিনটি সিদ্ধান্ত বাতিল করে চারটি আসন পুনর্বহাল করেছেন।
এই আদেশ মেনে নেওয়া হবে কি না বা আপিল করা হবে কি না, সে ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত কমিশন নেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো সার্টিফায়েড কপি পাইনি। সেটি পাওয়ার পর কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে—আমরা আপিল করব কি না, নাকি রায়টি মেনে নেব। আদালতের পর্যবেক্ষণ না জানা পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা সমীচীন নয়।’
সীমানার জটিলতার কারণে নির্বাচনে প্রভাব পড়বে কি না এবং সংবিধানের আর্টিকেলে ১১৯ এ যে ক্ষমতা ইসিকে দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ উঠলো কি না, জানতে চাইলে তিনি বাগেরহাটের উদাহরণ টেনে বলেন, সার্টিফায়েড কপি না পাওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না। কেন না, অবজারভেশনগুলো বুঝতে হবে।
নির্বাচনী সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে বর্তমানে প্রায় ৩০টির মতো মামলা আদালতে পেন্ডিং আছে বলে জানান সচিব। ‘সঠিক সংখ্যা এখন বলতে পারছি না, তবে গতকালই দুটো নতুন নোটিশ পেয়েছি। ধারণা করছি প্রায় ৩০টির মতো মামলা চলমান আছে।’
গণভোট বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পায়নি ইসি
গণভোট আয়োজন বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বা সচিবালয় পর্যায়ে এখন পর্যন্ত গণভোট সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা বা আলোচনা পাইনি। অতএব আমাদের অবস্থান আগের মতোই। এই বিষয়ে কোনো কার্যক্রম চলছে না।’
এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ইসি ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে আলোচনার অগ্রগতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে একাধিক মিটিং করেছি। ওই মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নিজেদের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নভেম্বরের শেষ দিকে আমরা আবার স্টক-টেকিং মিটিং করব—অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য।’