রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি থাকলে দেশে আবারও ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ পাস না হলে ২০২৯ সালে নির্বাচন হবে’—এমন বক্তব্য একটি ‘ফ্যাসিবাদী আওয়াজ’, যা দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে বিপদে ফেলতে পারে।
আজ মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের উচিত সবাই মিলে একটি জায়গায় আসা, যাতে একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে। এতে জুলাই সনদের আইনীকরণ হবে এবং জনগণ যাঁদের ভোট দেবে, তাঁরা সরকার গঠন করবে। কিন্তু আগেভাগেই এ নিয়ে এত হইচই হচ্ছে যে এতে ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান ঘটতে পারে। গণতান্ত্রিক শক্তি সজাগ না হলে জাতির ভাগ্য ভালো হবে না।’
সাবেক ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ যেখানে জন্ম নেয়, সেখানে গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তচিন্তার কোনো জায়গা থাকে না। শেখ হাসিনা সেই ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন, যেখানে ক্যাম্পাসগুলোতে কোনো রাজনৈতিক সহাবস্থান ছিল না। গত ১৫ বছর ছাত্রদলকে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে।’
রিজভী আরও অভিযোগ করেন, ‘১৪০০ শিশু, কিশোর ও তরুণকে হত্যা করে শেখ হাসিনা এখন নাশকতা করার জন্য ভারত থেকে অডিও বার্তা পাঠাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের টাকার অভাব নেই। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, ফ্লাইওভার, এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকা রয়েছে। তারা সব টাকা নিয়ে পালাতে পারেনি, কিছু টাকা দেশে রয়ে গেছে। সেই টাকাগুলো খরচ করে দেশে নাশকতার পরিকল্পনা করছে তারা।’
৭ নভেম্বরের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘জনগণ সিপাহিদের সঙ্গে মিশে একটি জনস্রোত তৈরি করেছিল। বাহাত্তরের পর থেকে আত্মপরিচয়ের সংকট তৈরি করছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি সবাইকে “বাঙালি” পরিচয়ে একীভূত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের পাহাড়ি, সমতল, নদী, উপত্যকা—এই বৈচিত্র্যময় পরিচয় কোথায় হারিয়ে যেত? জিয়াউর রহমান সেই সংকট নিরসন করে “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ” প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে তা মুছে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীরা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে দেশের সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করেছিল। অথচ জিয়াউর রহমানের সময়ে মানুষ তার মতপ্রকাশ ও রাজনীতি করার স্বাধীনতা ফিরে পায়। এটাই ৭ নভেম্বরের প্রকৃত তাৎপর্য ও কৃতিত্ব।’
জিয়াউর রহমানের অবদান স্মরণ করে রিজভী বলেন, ‘রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে জিয়াউর রহমান শিক্ষা, কৃষি, পররাষ্ট্রসহ বিভিন্ন খাতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। তাঁর সময়ের আগে দেশে মাত্র ২০ শতাংশ মানুষের অক্ষরজ্ঞান ছিল, যা তিনি অল্প সময়ের মধ্যে ৪০ শতাংশে উন্নীত করেন। তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশকে তিনি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে রূপ দেন।’
আলোচনা সভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহীর সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক, জিয়া পরিষদের সভাপতি, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতিসহ বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।