leadT1ad

কী আছে ‘জুলাই ঘোষণাপত্রে’

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১৭: ৪২
আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ২২: ২৯
জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছেড়ে পালানোর প্রথম বর্ষপূর্তির দিনে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

আ মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় আয়োজিত ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠানস্থলে প্রধান উপদেষ্টা যোগ দেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বিএনপির মহসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা ছিলেন।

বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ শুরু করেন মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

মঞ্চে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ার, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর এবং সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।

জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের প্রাক্কালে প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যান্যরা। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের প্রাক্কালে প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যান্যরা। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

এ ছাড়া মঞ্চের সামনে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সুধী সমাজের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত রয়েছেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছেড়ে পালানোর প্রথম বর্ষপূর্তির দিনে পঠিত এ ঘোষণাপত্রে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়াদের আইনি সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

যা আছে ‘জুলাই ঘোষণাপত্রে’

ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ের সুদীর্ঘকালের ধারাবাহিকতায় এই ভূখণ্ডের মানুষ দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। বাংলাদেশের আপামর জনগণ দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই ভূখণ্ডে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বিবৃত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রনয়ন পদ্ধতি, এর কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের ফলে স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা ক্ষুণ্ণ করেছিল।

এতে বলা হয়, স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে বাকশালের নামে সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করে এবং মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে, যার প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে একদলীয় বাকশাল পদ্ধতির পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়। আশির দশকে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় বছর ছাত্র-জনতার অবিরাম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং ১৯৯১ সালে পুনরায় সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।

জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

‘দেশি-বিদেশি চক্রান্তে সরকার পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় এক-এগারোর ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদের পথ সুগম করা হয়। গত দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক এবং গণবিরোধী শাসনব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে এবং একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অতি উগ্র বাসনা চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে সংবিধানের অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক পরিবর্তন করা হয় এবং যার ফলে একদলীয় একচ্ছত্র ক্ষমতা ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, গুম-খুন, আইন-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সব রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে।’

ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, হাসিনা সরকারের আমলে তারই নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত পতিত দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং এর পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও জলবায়ুকে বিপন্ন করে। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণ গত প্রায় ১৬ বছর ধরে নিরন্তর গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করে জেল-জুলুম, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশে বিদেশি রাষ্ট্রের অন্যায় প্রভুত্ব, শোষণ ও খবরদারিত্বের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে বহিঃশক্তির তাবেদার আওয়ামী লীগ সরকার নিষ্ঠুর শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে দমন করে। অবৈধভাবে ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন) এ দেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে। আওয়ামী লীগ আমলে ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, শিক্ষার্থী ও তরুণদের নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয় এবং সরকারি চাকরিতে একচেটিয়া দলীয় নিয়োগ ও কোটাভিত্তিক বৈষম্যের কারণে ছাত্র, চাকরিপ্রত্যাশী ও নাগরিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের জন্ম হয়। বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ওপর চরম নিপীড়নের ফলে দীর্ঘদিন ধরে জনরোষের সৃষ্টি হয় এবং জনগণ সকল বৈধ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই চালিয়ে যায়। সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থার বিলোপ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক ব্যাপক দমন-পীড়ন, বর্বর অত্যাচার ও মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ড চালানো হয়, যার ফলে সারা দেশে দল-মত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতার উত্তাল গণবিক্ষোভ গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ণনা দিয়ে ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে অদম্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দল, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষ যোগদান করে এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদী বাহিনী রাজপথে নারী-শিশুসহ প্রায় এক হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে, অগণিত মানুষ পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব বরণ করে এবং আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যগণ জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন প্রদান করে। অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের পতন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জনগণ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে, পরবর্তী সময়ে ৫ আগস্ট ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ পরিচালনা করে এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনরত সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র-জনতা তথা সর্বস্তরের সকল শ্রেণী, পেশার আপামর জনসাধারণের তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলায় গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ রাজনৈতিক ও আইনি উভয় দিক থেকে যুক্তিসঙ্গত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বলেও ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, জনগণের দাবি অনুযায়ী এরপর অবৈধ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামতের আলোকে সাংবিধানিকভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করা হয়। বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের ফ্যাসিবাদবিরোধী তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়।

বাংলাদেশের জনগণ সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিদ্যমান সংবিধান ও সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে বলেও ঘোষণাপত্রে উল্লেখ আছে।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ বিগত ১৬ বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম কালে এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সকল ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচারের দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে। বাংলাদেশের জনগণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করে শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে প্রয়োজনীয় সকল আইনি সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।

‘বাংলাদেশের জনগণ যুক্তিসঙ্গত সময়ে আয়োজিতব্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রতিশ্রুত প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে। বাংলাদেশের জনগণ এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছে যে একটি পরিবেশ ও জলবায়ু সহিষ্ণু অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন কৌশলের মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের অধিকার সংরক্ষিত হবে।’

ঘোষণাপত্রে এ-ও বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে। ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হলো।

মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে উৎসবের আমেজ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের বর্ষপূর্তি এবং জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ উপলক্ষে দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সরকার। এ উপলক্ষে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বেলা ১২টা ১০ মিনিটে দিনব্যাপী এই আয়োজনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সংসদ ভবনের বাইরে সড়কে স্থাপিত মঞ্চে চলছে বিভিন্ন ব্যান্ড দল ও শিল্পীর সংগীত।

মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে উৎসবের আমেজ। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে উৎসবের আমেজ। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

এদিন সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করে নানাবয়সী মানুষ। বেলা গড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সমাগমও বাড়ে। তাঁদের কেউ হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে, আবার কেউ যোগ দিয়েছেন মাথায় লালসবুজ কাপড় বেঁধে।

অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশে বেশ কয়েকটি ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি বসানো হয়েছে সাউন্ড বক্স।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র‍্যাব, আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। রয়েছেন ফায়ার সার্ভিস সদস্য ও বিএনসিসির স্বেচ্ছাসেবকরাও। র‍্যাব ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণকক্ষ বসানো হয়েছে।

রাষ্ট্রীয়ভাবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, শিল্পকলা একাডেমি ও সংসদ সচিবালয় মিলে যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

অনুষ্ঠানে ইতিমধ্যে সাইমুম শিল্পগোষ্ঠী, কলরব শিল্পগোষ্ঠী, শিল্পী নাহিদ, তাশফির, চিটাগং হিপহপ হুড, র‍্যাপার সেজান ও ব্যান্ডদল শূন্য সংগীত পরিবেশন করেছে।

এ ছাড়া কণ্ঠশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ শায়ান, ইথুন বাবু ও মৌসুমী, ব্যান্ডদল সোলস ও ওয়ারফেইজের পরিবেশনার কথা রয়েছে।

বিকেলে আসরের নামাজের বিরতি দিয়ে ৫টায় জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় 'স্পেশাল ড্রোন ড্রামা' এবং ৮টায় ব্যান্ডদল আর্টসেলের কনসার্ট করার কথা রয়েছে।

ঘোষণাপত্রের প্রেক্ষাপট

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত বিষয় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। অভ্যুত্থানের পরপরই বিষয়টি করা না হলেও বছরের শেষ দিকে এসে বিষয়টি নিয়ে জোরালো হতে দেখা যায় অভ্যুত্থানের নেতাদের। এক পর্যায়ে ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করারও ঘোষণা আসে অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে। সংগঠনের নেতারা ঘোষণাপত্রে দুটি মৌলিক বিষয়ের উল্লেখ করেন। তারা জানান, ঘোষণাপত্রে ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ‘মুজিববাদী সংবিধান’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর ‘কবর’ রচনা করা এবং ‘নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে’ বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করার কথা থাকবে।

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। তবে শেষ পর্যন্ত সরকার এ বিষয়ে দায়িত্ব নিলে সরে আসেন উদ্যোক্তারা। পরে চলতি বছরের শুরুর দিকে ঘোষণাপত্র নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকের শেষে পরবর্তী কর্মপন্থা হিসেবে গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলসহ সব অংশীজনের কাছ থেকে অভিমত চায় সরকার।

অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি সামনে রেখে সম্প্রতি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে জুলাই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া পাঠায় অন্তর্বর্তী সরকার। ঘোষণাপত্রের খসড়ায় ২৬টি দফা রয়েছে। প্রথম ২১ দফায় মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত