ডাকসু নির্বাচন ২০২৫
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রার্থীর বিরুদ্ধে রিটকারী ছাত্রীকে গণধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই আরেক শিক্ষার্থী। আলী হুসেন নামের ওই শিক্ষার্থী সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ সেশনে অধ্যয়নরত। এ ছাড়া তিনি শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
হুমকির বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচন তৈরি হলে এক ভিডিও বার্তায় ক্ষমাও চেয়েছেন আলী হুসেন। এমনকি ওই নারী শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগতভাবে মেসেজ (বার্তা) দিয়েও ক্ষমা চেয়েছেন বলে স্ট্রিমকে জানান তিনি।
এদিকে, গণধর্ষণের হুমকির পরপরই অনলাইনে আলী হুসেনের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া একটি পুরোনো পোস্টের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়। সেই স্ক্রিনশটে দেখা যায়, পোস্টের নিচে একজনের প্রশ্নের জবাবে তিনি নিজেকে ছাত্রশিবির সমর্থক দাবি করছেন। মূলত স্ক্রিনশটটি ভাইরালের পরই হুমকির বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয় এবং শিবিরের দিকে আঙুল তোলা হয়। শুধু তাই নয়, খোদ ডাকসু নির্বাচনের বিভিন্ন প্যানেলের বেশ কয়েকজন প্রার্থীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়—এই হুমকির পেছনে ছাত্রশিবির জড়িত।
যদিও কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, আলী হুসেনের সঙ্গে তাদের সংগঠনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
হুমকিদাতাকে শিবির নেতা বলছে ছাত্রদল
রিটকারীকে গণধর্ষণের হুমকিদাতাকে শিবির নেতা দাবি করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। গতকাল সোমবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদল দাবি করে, শিবিরের নেতাকর্মী দ্বারা সারা দেশে নারী শিক্ষার্থীরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে আজ (মঙ্গলবার) দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির সভাপতির প্রার্থিতার বিরুদ্ধে রিট আবেদনকারী নারী শিক্ষার্থীকে শিবির নেতা কর্তৃক প্রকাশ্যে গণধর্ষণের হুমকি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল নেত্রীদের হেনস্তা এবং শিবিরের নেতাকর্মীদের দ্বারা সারাদেশে নারী শিক্ষার্থীদের লক্ষ করে অব্যাহত সাইবার বুলিংয়ের প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।’
সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ অবশ্য ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রদল। মিছিল শেষে ছাত্রদলের ভিপিপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘গত কয়দিন আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে একজন বোনের ছবি ফোনে জুম করে তোলা হচ্ছিল। যখন তাঁকে ধাওয়া করা হলো, তখন সে শিবিরের যে অনুষ্ঠান চলছিল সেদিন টিএসসিতে, ওখানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। পরবর্তীতে তাকে যখন ধরা হলো, তখন সে নিজের নাম বলল ছয়টা, তাঁর আইডি ছিল চারটা, পেজ ছিল দুটা, সবগুলোই ফেক (নকল)। এই হচ্ছে পরিস্থিতি।’
শিবিরের বিরুদ্ধে নারী নিপীড়নের অভিযোগ কাদেরের
ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে নারী নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের নেতৃবৃন্দও। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত এই প্যানেল থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আব্দুল কাদের।
আজ (মঙ্গলবার) এক সংবাদ সম্মেলনে কাদের অভিযোগ করেন, নিজ মতাদর্শের বাইরে সব নারীকে হেনস্তা করা যৌক্তিক মনে করে ছাত্রশিবির।
তিনি বলেন, ‘তারা (ছাত্রশিবির) মনে করতেছে, তার মতাদর্শের বাইরে গেলে তাঁকে লাথি দেওয়া জায়েজ, তাঁর জুম ভিডিও করা জায়েজ, তাঁকে যে কোনোভাবে হেনস্তা করা জায়েজ। যারা করবে, তাদেরকে আবার ফুলের মালা দিয়ে শুভেচ্ছাও দেবে।’
কাদের আরও বলেন, ‘৫ আগস্ট ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে আত্মস্বীকৃত রাজাকারদের নরমালাইজ করার চেষ্টা করেছে। কিছু নারী শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদী নারী কণ্ঠস্বর—তাঁরা সেখানে প্রতিবাদ করেছে। আমরা বিপরীতে কী দেখেছি? শিবিরের একজন নেতা এসে ওই নারীদের জুম করে ভিডিও করতেছেন। তার মানে, তাঁর মনোভবের জায়গাটা হচ্ছে—যে নারী তার মতাদর্শের বাইরে গিয়ে প্রতিবাদ করবে, সে নারী না। সে নারীকে যতভাবে হেনস্তা করা যায়—ততভাবে হেনস্তা করবে।’
শিবিরের বিরুদ্ধে তোপ দাগলো প্রতিরোধ পর্ষদও
গতকাল সোমবার রাতে প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেলের ভিপিপ্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমিও হুমকির ঘটনায় শিবির জড়িত বলে অভিযোগ করেন। ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ছাত্রশিবিরকে উদ্দেশ করে ইমি বলেন, ‘হলে হলে ফরহাদদের (ঢাবি ছাত্রশিবির সভাপতি) যে “ছোট ছোট টিম” আছে, তারা কি এইসবের জন্যই অ্যাসাইন্ড (নিয়োজিত) নাকি? ছেলেটা আমার ডিপার্টমেন্টের জেনে আমি ঘেন্নায় কুঁকড়ে গেলাম জাস্ট। মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে, নারীর প্রশ্নে কার কী অবস্থান তার সবকিছুই দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। ঢাবির ভবিষ্যৎ কেমন হবে সেই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদেরকেই নিতে হবে।’
আলী হুসেনের শাস্তি দাবি শিক্ষক নেটওয়ার্কের
এদিকে, হুমকিদাতা আলী হুসেনের শাস্তি দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক নেটওয়ার্ক। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনটি।
শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে তাহমিনা খানম বলেন, ‘হাইকোর্টে একজন প্রার্থীর রিটের বিষয়কে কেন্দ্র করে, সেই নারী প্রার্থীকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থী ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে গণধর্ষণের হুমকি দিয়েছে বলে জানা গেছে। হুমকিদাতা আলী হুসেনকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।’
অভিযোগের ব্যাপারে শিবির কি বলছে
তবে আলী হুসেনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ছাত্রশিবির। সংগঠনটির ঢাবি শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘যারা এই ঘটনার সঙ্গে শিবিরকে জড়িয়ে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ছাড়া আলী হুসেনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সোমবার এস এম ফরহাদ প্রক্টর বরাবর লিখিত আবেদন করেন।
আর আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে মধুর ক্যান্টিনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে ফরহাদ বলেন, ‘একটা পক্ষ তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের বহিপ্রকাশের জন্য তাঁকে (আলী হুসেন) শিবির বানিয়ে প্রচার চালিয়েছে।’
ফরহাদ দাবি করেন, ৫ আগস্টের পর থেকে গত মাসের এক তারিখ পর্যন্ত ছাত্রদলের হাতে ৩০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘যারা (ছাত্রদল) এরকম অব্যাহতভাবে ধর্ষণের কেইসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার, শিক্ষার্থীরা যাদেরকে ভয় পায়, এইসব ঘটনা যখন সামনে আসে, এগুলো কেমনে চাপা দিবে? আর কোনো ইস্যু না পেয়ে সেই ইস্যু (আলী হুসেন ইস্যু) সামনে নিয়ে আসার মত রাজনীতি করছে (ছাত্রদল)।’
এসময় তিনি ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের অনেক নারী প্রার্থীকে সাইবার বুলিং করা হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেন।
এদিকে, ছাত্রদলের অভিযোগের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। সেখানে ছাত্রদলের অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে বলা হয়, হুমকি দেওয়া ব্যক্তি ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িত নয়।
শিবির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আলী হুসেন কি বলছেন
স্ট্রিমের কাছে আলী হুসেন দাবি করেছেন, ছাত্রশিবিরের সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে তিনি ছাত্রশিবিরের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন—সেটি স্বীকার করেছেন। সঙ্গে এও বলেছেন, ‘শিবির সমর্থন করা, আর শিবির করা এক জিনিস নয়।’
শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘শিবিরের সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার সাথে যারা থাকে, যারা জহু (জহুরুল হক হলে) হলে থাকে, এটা তাদের হয়তো জিজ্ঞেস করলে বরং ভালো, যেহেতু আমি বললে ওইটা কতটুকু বাস্তবতা থাকবে, বা কতটুকু সত্যতা থাকবে—সেটা একটা প্রশ্ন থেকে যায়। অন্যদের থেকে জিজ্ঞেস করলে পাবেন। শিবিরের সাথে সম্পর্ক নেই। এটা শিবিরও বলতেছে, আমিও বলি। ওদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’
আর হুমকির ব্যাপারে স্ট্রিমকে আলী হুসেন বলেন, ‘আমি হঠাৎ মোবাইলে একটু ফেসবুকে ঢুকছি। ঢুকে দেখি সবাই পোস্ট দিসে ঐসব নিয়ে যে ডাকসু শেষ হয়ে গেছে। ওই আবেগে আমি পোস্টটা দিয়ে দিছি গালি দিয়ে। পরে আমি ডিলিটও দিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এর মাঝেই ভাইরাল হয়ে এই অবস্থা।’
ঘটনা তদন্তে ঢাবির ২ কমিটি
এদিকে, হুমকি দেওয়ার ঘটনায় আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাবি প্রশাসন। এর একটি প্রক্টর কার্যালয় থেকে এবং অপরটি ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন কমিশন থেকে গঠন করা হয়েছে।
প্রক্টর কার্যালয়ের কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ মাহবুব কায়সারকে। এছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন আরও দুই সহকারী প্রক্টর—শেহরীন আমিন ভূইয়া ও রেজাউল করিম সোহাগ। এ কমিটিকে দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
একই ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করেছে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন কমিশন। আজ (মঙ্গলবার) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী মোস্তাক গাউসুল হককে আহ্বায়ক এবং সহকারী প্রক্টর জাহাঙ্গীর আলমকে সদস্য করে এই কমিটি গঠিত হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রার্থীর বিরুদ্ধে রিটকারী ছাত্রীকে গণধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই আরেক শিক্ষার্থী। আলী হুসেন নামের ওই শিক্ষার্থী সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ সেশনে অধ্যয়নরত। এ ছাড়া তিনি শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
হুমকির বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচন তৈরি হলে এক ভিডিও বার্তায় ক্ষমাও চেয়েছেন আলী হুসেন। এমনকি ওই নারী শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগতভাবে মেসেজ (বার্তা) দিয়েও ক্ষমা চেয়েছেন বলে স্ট্রিমকে জানান তিনি।
এদিকে, গণধর্ষণের হুমকির পরপরই অনলাইনে আলী হুসেনের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া একটি পুরোনো পোস্টের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়। সেই স্ক্রিনশটে দেখা যায়, পোস্টের নিচে একজনের প্রশ্নের জবাবে তিনি নিজেকে ছাত্রশিবির সমর্থক দাবি করছেন। মূলত স্ক্রিনশটটি ভাইরালের পরই হুমকির বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয় এবং শিবিরের দিকে আঙুল তোলা হয়। শুধু তাই নয়, খোদ ডাকসু নির্বাচনের বিভিন্ন প্যানেলের বেশ কয়েকজন প্রার্থীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়—এই হুমকির পেছনে ছাত্রশিবির জড়িত।
যদিও কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, আলী হুসেনের সঙ্গে তাদের সংগঠনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
হুমকিদাতাকে শিবির নেতা বলছে ছাত্রদল
রিটকারীকে গণধর্ষণের হুমকিদাতাকে শিবির নেতা দাবি করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। গতকাল সোমবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদল দাবি করে, শিবিরের নেতাকর্মী দ্বারা সারা দেশে নারী শিক্ষার্থীরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে আজ (মঙ্গলবার) দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির সভাপতির প্রার্থিতার বিরুদ্ধে রিট আবেদনকারী নারী শিক্ষার্থীকে শিবির নেতা কর্তৃক প্রকাশ্যে গণধর্ষণের হুমকি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল নেত্রীদের হেনস্তা এবং শিবিরের নেতাকর্মীদের দ্বারা সারাদেশে নারী শিক্ষার্থীদের লক্ষ করে অব্যাহত সাইবার বুলিংয়ের প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।’
সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ অবশ্য ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রদল। মিছিল শেষে ছাত্রদলের ভিপিপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘গত কয়দিন আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে একজন বোনের ছবি ফোনে জুম করে তোলা হচ্ছিল। যখন তাঁকে ধাওয়া করা হলো, তখন সে শিবিরের যে অনুষ্ঠান চলছিল সেদিন টিএসসিতে, ওখানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। পরবর্তীতে তাকে যখন ধরা হলো, তখন সে নিজের নাম বলল ছয়টা, তাঁর আইডি ছিল চারটা, পেজ ছিল দুটা, সবগুলোই ফেক (নকল)। এই হচ্ছে পরিস্থিতি।’
শিবিরের বিরুদ্ধে নারী নিপীড়নের অভিযোগ কাদেরের
ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে নারী নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের নেতৃবৃন্দও। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত এই প্যানেল থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আব্দুল কাদের।
আজ (মঙ্গলবার) এক সংবাদ সম্মেলনে কাদের অভিযোগ করেন, নিজ মতাদর্শের বাইরে সব নারীকে হেনস্তা করা যৌক্তিক মনে করে ছাত্রশিবির।
তিনি বলেন, ‘তারা (ছাত্রশিবির) মনে করতেছে, তার মতাদর্শের বাইরে গেলে তাঁকে লাথি দেওয়া জায়েজ, তাঁর জুম ভিডিও করা জায়েজ, তাঁকে যে কোনোভাবে হেনস্তা করা জায়েজ। যারা করবে, তাদেরকে আবার ফুলের মালা দিয়ে শুভেচ্ছাও দেবে।’
কাদের আরও বলেন, ‘৫ আগস্ট ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে আত্মস্বীকৃত রাজাকারদের নরমালাইজ করার চেষ্টা করেছে। কিছু নারী শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদী নারী কণ্ঠস্বর—তাঁরা সেখানে প্রতিবাদ করেছে। আমরা বিপরীতে কী দেখেছি? শিবিরের একজন নেতা এসে ওই নারীদের জুম করে ভিডিও করতেছেন। তার মানে, তাঁর মনোভবের জায়গাটা হচ্ছে—যে নারী তার মতাদর্শের বাইরে গিয়ে প্রতিবাদ করবে, সে নারী না। সে নারীকে যতভাবে হেনস্তা করা যায়—ততভাবে হেনস্তা করবে।’
শিবিরের বিরুদ্ধে তোপ দাগলো প্রতিরোধ পর্ষদও
গতকাল সোমবার রাতে প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেলের ভিপিপ্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমিও হুমকির ঘটনায় শিবির জড়িত বলে অভিযোগ করেন। ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ছাত্রশিবিরকে উদ্দেশ করে ইমি বলেন, ‘হলে হলে ফরহাদদের (ঢাবি ছাত্রশিবির সভাপতি) যে “ছোট ছোট টিম” আছে, তারা কি এইসবের জন্যই অ্যাসাইন্ড (নিয়োজিত) নাকি? ছেলেটা আমার ডিপার্টমেন্টের জেনে আমি ঘেন্নায় কুঁকড়ে গেলাম জাস্ট। মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে, নারীর প্রশ্নে কার কী অবস্থান তার সবকিছুই দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। ঢাবির ভবিষ্যৎ কেমন হবে সেই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদেরকেই নিতে হবে।’
আলী হুসেনের শাস্তি দাবি শিক্ষক নেটওয়ার্কের
এদিকে, হুমকিদাতা আলী হুসেনের শাস্তি দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক নেটওয়ার্ক। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনটি।
শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে তাহমিনা খানম বলেন, ‘হাইকোর্টে একজন প্রার্থীর রিটের বিষয়কে কেন্দ্র করে, সেই নারী প্রার্থীকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থী ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে গণধর্ষণের হুমকি দিয়েছে বলে জানা গেছে। হুমকিদাতা আলী হুসেনকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।’
অভিযোগের ব্যাপারে শিবির কি বলছে
তবে আলী হুসেনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ছাত্রশিবির। সংগঠনটির ঢাবি শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘যারা এই ঘটনার সঙ্গে শিবিরকে জড়িয়ে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ছাড়া আলী হুসেনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সোমবার এস এম ফরহাদ প্রক্টর বরাবর লিখিত আবেদন করেন।
আর আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে মধুর ক্যান্টিনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে ফরহাদ বলেন, ‘একটা পক্ষ তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের বহিপ্রকাশের জন্য তাঁকে (আলী হুসেন) শিবির বানিয়ে প্রচার চালিয়েছে।’
ফরহাদ দাবি করেন, ৫ আগস্টের পর থেকে গত মাসের এক তারিখ পর্যন্ত ছাত্রদলের হাতে ৩০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘যারা (ছাত্রদল) এরকম অব্যাহতভাবে ধর্ষণের কেইসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার, শিক্ষার্থীরা যাদেরকে ভয় পায়, এইসব ঘটনা যখন সামনে আসে, এগুলো কেমনে চাপা দিবে? আর কোনো ইস্যু না পেয়ে সেই ইস্যু (আলী হুসেন ইস্যু) সামনে নিয়ে আসার মত রাজনীতি করছে (ছাত্রদল)।’
এসময় তিনি ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের অনেক নারী প্রার্থীকে সাইবার বুলিং করা হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেন।
এদিকে, ছাত্রদলের অভিযোগের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। সেখানে ছাত্রদলের অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে বলা হয়, হুমকি দেওয়া ব্যক্তি ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িত নয়।
শিবির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আলী হুসেন কি বলছেন
স্ট্রিমের কাছে আলী হুসেন দাবি করেছেন, ছাত্রশিবিরের সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে তিনি ছাত্রশিবিরের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন—সেটি স্বীকার করেছেন। সঙ্গে এও বলেছেন, ‘শিবির সমর্থন করা, আর শিবির করা এক জিনিস নয়।’
শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘শিবিরের সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার সাথে যারা থাকে, যারা জহু (জহুরুল হক হলে) হলে থাকে, এটা তাদের হয়তো জিজ্ঞেস করলে বরং ভালো, যেহেতু আমি বললে ওইটা কতটুকু বাস্তবতা থাকবে, বা কতটুকু সত্যতা থাকবে—সেটা একটা প্রশ্ন থেকে যায়। অন্যদের থেকে জিজ্ঞেস করলে পাবেন। শিবিরের সাথে সম্পর্ক নেই। এটা শিবিরও বলতেছে, আমিও বলি। ওদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’
আর হুমকির ব্যাপারে স্ট্রিমকে আলী হুসেন বলেন, ‘আমি হঠাৎ মোবাইলে একটু ফেসবুকে ঢুকছি। ঢুকে দেখি সবাই পোস্ট দিসে ঐসব নিয়ে যে ডাকসু শেষ হয়ে গেছে। ওই আবেগে আমি পোস্টটা দিয়ে দিছি গালি দিয়ে। পরে আমি ডিলিটও দিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এর মাঝেই ভাইরাল হয়ে এই অবস্থা।’
ঘটনা তদন্তে ঢাবির ২ কমিটি
এদিকে, হুমকি দেওয়ার ঘটনায় আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাবি প্রশাসন। এর একটি প্রক্টর কার্যালয় থেকে এবং অপরটি ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন কমিশন থেকে গঠন করা হয়েছে।
প্রক্টর কার্যালয়ের কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ মাহবুব কায়সারকে। এছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন আরও দুই সহকারী প্রক্টর—শেহরীন আমিন ভূইয়া ও রেজাউল করিম সোহাগ। এ কমিটিকে দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
একই ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করেছে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন কমিশন। আজ (মঙ্গলবার) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী মোস্তাক গাউসুল হককে আহ্বায়ক এবং সহকারী প্রক্টর জাহাঙ্গীর আলমকে সদস্য করে এই কমিটি গঠিত হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঠেকাতে গণভবনে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান...
৬ ঘণ্টা আগেপ্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে দিতে চায় না, তারা যত রকমভাবে পারে বাধা দেবে। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে, নির্বাচন বানচাল করার, এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে, যাতে নির্বাচন না হয়। এগুলোর কিছু কিছু লক্ষণ এখন দেখা যাচ্ছে। সামন...
৭ ঘণ্টা আগেহিউম্যান রাইটস ডিউ ডিলিডেন্স বিষয়ে সংবাদকর্মীদের সক্ষমতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ লেবার স্টাডিজ (বিলস) ।
৭ ঘণ্টা আগেপ্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়ে সাত রাজনৈতিক দল ও হেফাজতে ইসলাম নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা মনে করছে, এই পরিস্থিতি আগামী নির্বাচনের পরিবেশকে অনিশ্চিত করে তুলছে।
৭ ঘণ্টা আগে