২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর যে প্রভাব ফেলেছে, তা নিয়ে নতুন একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাকস্বাধীনতা ও নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা বৈশ্বিক সংগঠন ক্লুনি ফাউন্ডেশন ফর জাস্টিসের ‘ট্রায়ালওয়াচ’। সংস্থাটি বাংলাদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) সঙ্গে যৌথভাবে এই গবেষণা করেছে। প্রতিবেদনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ (ডিএসএ) থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতাকে ভবিষ্যত বাংলাদেশের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ট্রায়ালওয়াচের সিনিয়র লিগ্যাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার মানেকা খান্না। প্রতিবেদনে ৩৯৬ জন সাংবাদিক-সংশ্লিষ্ট ২২২টি মামলার বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কীভাবে সাংবাদিকতা ও সমালোচনাকে শাস্তিযোগ্য করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। গবেষণায় আইনটির প্রয়োগ ও এর প্রভাব সম্পর্কে সরাসরি জানতে ৩০ জন সাংবাদিকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলা হয়, ২০১৮ সালে ডিএসএ প্রণয়ন করা হয় বহুল সমালোচিত ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইন প্রতিস্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে। কিন্তু আইসিটি আইনের অনেক সমস্যাজনক ধারাই ডিএসএ এবং এর পরবর্তী ২০২৩ সালের সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টে (সিএসএ) অপরিবর্তিতভাবে রয়ে গেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতাসীনরা ডিএসএ-কে সাংবাদিকদের হয়রানি ও ভয় দেখানোর হাতিয়ারে পরিণত করেছিল। বিশেষত রাজনীতিবিদ (২২২টির মধ্যে ৭৩টি মামলা) ও অন্য প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ব্যক্তিগত প্রতিশোধ বা ক্ষমতার অপব্যবহারের উদ্দেশ্যে আইনটি ব্যবহার করেছেন। অনেক সাংবাদিককে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগকারী ঘটনার প্রকৃত ভুক্তভোগী হোক বা না হোক, এ আইনটি যে কাউকে অভিযোগ করার সুযোগ দিয়েছিল। ফলে একই ব্যক্তিকে একই ঘটনার জন্য একাধিক মামলারও শিকার হতে হয়েছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা একটি মামলার উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, পুলিশের দুর্নীতির বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মামলা না করলেও শাসক দলের একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সেই গণমাধ্যমকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই সাংবাদিক জানান, জিজ্ঞাসাবাদের সময় পাঁচ থেকে ছয়জন কর্মকর্তা তাকে আক্রমণাত্মকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন, বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার অভিযোগও করেছেন ওই সাংবাদিক। তিনি জানান, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রধান বিষয় ছিল তিনি ‘সরকারবিরোধী’ মনোভাব পোষণ করেন কিনা।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ট্রায়ালওয়াচের সিনিয়র লিগ্যাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার মানেকা খান্না বলেন, আইসিটি আইনকে প্রতিস্থাপন করে ডিএসএ তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু সেই আইনটি আইসিটি’র মতই বৃহৎ ও অস্পষ্ট ধারাগুলো সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশকে অপরাধে পরিণত করেছে। আইনটি ভিত্তিহীন মামলার বিরুদ্ধে কার্যকর সুরক্ষা দেয়নি এবং পুলিশের হাতে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার ও ডিভাইস জব্দ করার প্রায় সীমাহীন ক্ষমতা তুলে দিয়েছে।