leadT1ad

হামলায় আহত অর্ধশত

কবর থেকে লাশ তুলে অগ্নিসংযোগ, রাজবাড়ীতে ‘নুরাল পাগলা’ নিয়ে উত্তেজনা

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের কবর ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে চলা উত্তেজনা আজ শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে।

স্ট্রিম সংবাদদাতারাজবাড়ী
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০: ৩০
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১: ১৪
গোয়ালন্দে নুরাল পাগলের লাশ কবর থেকে তুলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ছবি: সংগৃহীত

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের কবর ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে চলা উত্তেজনা আজ শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। এ সময় নুরালের কথিত ‘দরবারে’ আগুন দেওয়ার পাশাপাশি ভাঙচুর চালিয়েছে ‘বিক্ষুব্ধ জনতা’। সংঘর্ষে অন্তত অর্ধ-শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এক পর্যায়ে নুরাল পাগলের লাশ কবর থেকে তুলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে যায়, কিছু দিন আগে মৃত্যু হয় নুরাল পাগলের। এরপর তাঁকে সমতল থেকে কয়েক ফুট উচুঁতে কবর দেওয়া হয়। এসব ঘটনাকে ‘শরীয়া পরিপন্থী’ বলে অভিযোগ করে আসছিল ‘স্থানীয় জনতা’।

আজ শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে গোয়ালন্দ বাজার শহীদ ফকির মহিউদ্দিন আনসার ক্লাব চত্বরে বিক্ষোভের আয়োজন করে তাঁরা। বিক্ষোভ চলাকালে একদল উত্তজিত জনতা সেখানে লাঠি, শাবল ও হাতুড়ি নিয়ে হাজির হয়। তাঁরা মিছিল নিয়ে নুরাল পাগলের বাড়ির দিকে অগ্রসর হন। এ সময় পুলিশের দুটি পিকআপ গাড়ি ও গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে মিছিল থেকে নুরুল পাগলের ‘দরবারে’ হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে নুরাল পাগলের ভক্তদের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষ-এর ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে নুরাল পাগলের লাশ কবর থেকে উঠিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দের পদ্মার মোড় নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

ঘটনাস্থলে পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনী কাজ করছে। তবে এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ ঘটনায় অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছেন। তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে রাজবাড়ী, ফরিদপুর ফিরে গেছেন বলে জানা যায়।

হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা অশোক কুমার দাস বলেন, আহতদের শরীরে ইট-পাটকেল, লাঠির আঘাত এবং ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন রয়েছে।

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হতাহতের সংখ্যা তাঁদের ঠিক জানা নেই বলে তিনি জানান।

নিন্দা জানিয়ে সরকারের বিবৃতি

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে কবর থেকে লাশ তুলে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে অমানবিক ও ঘৃণ্য কাজ উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার গোয়ালন্দে নুরুল হক মোল্লা, যিনি নুরা পাগলা নামেও পরিচিত, তাঁর কবর অবমাননা ও মরদেহে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানায়। এই অমানবিক ও ঘৃণ্য কাজটি আমাদের মূল্যবোধ, আমাদের আইন এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক ও সভ্য সমাজের মৌলিক ভিত্তির ওপর সরাসরি আঘাত।

এই ধরনের বর্বরতা কোনো অবস্থাতেই সহ্য করা হবে না জানিয়ে এতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে এবং প্রতিটি মানুষের জীবনের পবিত্রতা, জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরেও রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এ ঘটনাকে জঘন্য অপরাধ উল্লেখ করে এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনা হবে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

ঘৃণা ও সহিংসতাকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করতে দেশের প্রতিটি নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সহিংসতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন এবং ন্যায়বিচার ও মানবতার আদর্শকে সমুন্নত রাখতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা গড়ে তুলুন।

বিষয়:

সংঘর্ষ
Ad 300x250

সম্পর্কিত