রাজধানীতে কিলোমিটারে বাসের ভাড়া ২ টাকা ৪৫ পয়সা। সর্বনিম্ন ১০ টাকা। অথচ সরকারি এ নিয়মই মানে না রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সংস্থাটি হাতিরঝিলে চক্রাকার বাসে ভাড়ার নামে যাত্রীদের গলা কাটছে।
মোট সাড়ে সাত কিলোমিটার দূরত্বে চক্রাকার বাসে ভাড়া ৪০ টাকা, গড়ে যা প্রায় সাড়ে ৫ টাকা। অবাক বিষয়, যত কম দূরত্বে চলাচল, তত বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে যাত্রীদের। চক্রাকার বাসে উঠলেই গুণতে হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। এটিই এখানে সর্বনিম্ন ভাড়া। অথচ সরকারি নিয়মের চেয়ে যা ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি।
যাত্রীদের অভিযোগ, হাতিরঝিলে সরকারের ‘দ্বৈতশাসন’ চলছে। না হলে পুরো ঢাকা শহরের বিপরীত ভাড়া কীভাবে সম্ভব? তারা নতুন বাংলাদেশে ভাড়ার এ বৈষম্য নিরসনের দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমরাও অবগত। বলা ছিল, বাস অপারেটরের সঙ্গে আলোচনা করে ভাড়া ঠিক হবে। এখন কেন বেশি নিচ্ছে, তা আমিও জানি না। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, হাতিরঝিলেও সরকার নির্ধারিত ভাড়া থাকা উচিত।’
কারা ভাড়া ঠিক করে
হাতিরঝিলে চক্রাকার বাস সার্ভিস পরিচালনায় রয়েছে এইচআর ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি। তবে গলা কাটা ভাড়ার দায় তারা চাপিয়েছে রাজউকের ঘাড়ে। এইচআর ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির নির্বাহী সোহাগ রানা স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমরা শুধু বাস পরিচালনা করি। যে ভাড়া নিই, তা রাজউকের ঠিক করে দেওয়া। আমাদের কর্মীরা কারও কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেন না।’
হাতিরঝিলের চক্রাকার বাস সার্ভিস। স্ট্রিম ছবিএ ব্যাপারে রাজউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) মুজাফফর উদ্দিন বলেন, ‘চক্রাকার বাসের ভাড়া রাজউক ঠিক করে, এটি সত্য। আমাদের একটি মূল্যায়ন কমিটি রয়েছে, সেখান থেকে ভাড়া পাস হয়ে আসে। ক্ষেত্র বিশেষে বোর্ডে যায়। ভাড়া নির্ধারণের সময় একটি বৈঠক হয়। বৈঠকেই ভাড়ার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।’
আধা কিলোমিটারেও ২০ টাকা
মহানগর থেকে মধুবাগ স্টপেজের দূরত্ব এক কিলোমিটারেরও কম। আবার এফডিসি স্টপেজ থেকে বউবাজারের দূরত্ব আধা কিলোমিটারের কম। অথচ দুটি স্টপেজ থেকে উঠলেই ২০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে সম্প্রতি বাসেই ক্ষোভ দেখালেন মহানগরের এক যাত্রী। পরে নাম প্রকাশ না করে তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র দেখালে পাঁচ টাকা কম নেয়। কিন্তু আমার আপত্তি অন্যখানে। সামান্য দূরত্বের এ রাস্তায় ২০ টাকা ভাড়া কীভাবে নিতে পারে? এটি দিনেদুপুরে ডাকাতি।’
রামপুরা থেকে মহানগর যাবেন আশরাফুল ইসলাম। টিকিট কেটে বাসের জন্য অপেক্ষায় আছেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী আশরাফুল স্ট্রিমকে বলেন, ‘মহানগর যাব, এক কিলোমিটারের মতো রাস্তা। ভাড়া দিতে হচ্ছে ২০ টাকা। আবার একই অর্থে শুটিং ক্লাব পর্যন্ত যাতায়াত করা যাচ্ছে। চক্রাকারে নিয়ম হয়ে গেছে, যত কম রাস্তা, তত বেশি ভাড়া। দিনের পর দিন এভাবেই চলছে। খুবই বিরক্ত লাগে।’
মানছে না সরকারি ভাড়া
চক্রাকার বাসের সাড়ে সাত কিলোমিটার সড়কে স্টপেজ আটটি। এগুলো হলো– এফডিসি, বউবাজার, হ্যাপি হোমস, শ্যুটিং ক্লাব, বাড্ডা, রামপুরা, মহানগর ও মধুবাগ। এসব স্টপেজের দূরত্ব এক কিলোমিটার; কোনো ক্ষেত্রে আধা কিলোমিটার কিংবা তারও কম।
চক্রাকার বাসের ভাড়া তালিকায় পুরো এলাকা চক্কর দিতে গুণতে হয় ৪০ টাকা। মধুবাগ থেকে এফডিসি ও শ্যুটিং ক্লাব থেকে বাড্ডা/রামপুরা ছাড়া একটি স্টপেজ থেকে আরেকটি পর্যন্ত ভাড়া ২০ টাকা করে। অথচ রাজধানীতে ডিজেলচালিত বাসে সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। প্রতি কিলোমিটারে দুই টাকা ৪৫ পয়সা।
এফডিসি মোড় থেকে বউবাজারের ভাড়া ২০ টাকা। আবার এফডিসি মোড় থেকে হ্যাপি হোমস বা শ্যুটিং ক্লাবের ভাড়াও একই। একইভাবে এফডিসি মোড় থেকে বাড্ডার ভাড়া ২৫ টাকা; আবার রামপুরা, মহানগর ও মধুবাগের ভাড়াও ২৫ টাকা।
ভাড়া বিশ্লেষণে দেখা যায়, হাতিরঝিলে যারা তুলনামূলক বেশি দূরত্বে যাতায়াত করছেন, তাদের ক্ষেত্রে ভাড়ার হার কিছুটা কম পড়ছে। কিন্তু রীতিমতো পকেট কাটা হচ্ছে স্বল্পপথের যাত্রীদের।