leadT1ad

কেউ কাজ করছিলেন ১৫ বছর কেউ চলতি মাস থেকেই, সবার খোঁজে মর্গে ভিড়

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
ঢামেক মর্গের সামনে স্বামীর খোঁজে অপেক্ষা করছেন নাসিমা ইসলাম৷ স্ট্রিম ছবি

মিরপুরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পোশাক কারখানাটিতে কাজ করতেন নাজমুল ইসলাম। এই কারখানার মালিকের সঙ্গে তিনি ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী। গতকালের অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন নাজমুল। তাঁর লাশ খুঁজতে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে বসে আছেন তাঁর স্ত্রী নাসিমা ইসলাম৷

আজ বুধবার (১৫ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে নাসিমা ইসলাম কাঁদতে কাঁদতে স্ট্রিমকে বলেন, ‘যে কারখানায় আগুন লাগছে, সেই কারখানার মালিকের লগে আমার স্বামী পনেরো বছর যাবৎ কাজ করে৷ কোনোদিন কোনো সমস্যা হয় নাই৷ গতকাল সে মারা গেলো, তাও আগুনে পুইড়া৷’

অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে স্বামীর খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াচ্ছেন জানিয়ে নাসিমা বলেন, ‘লাশটা পাইলে তাও নিজেরে বুঝ দিতে পারতাম। গত রাত থেকে আমি বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াইতেছি কিন্তু আমার স্বামীর লাশটা পাচ্ছি না।’

ঢামেক মর্গের সামনে দেখা মিলল নাসিমার মতো আরও একজন স্বজনের। তাঁর নাম আবুল দেওয়ান। শরিয়তপুর থেকে এসেছেন বোন বোন মুক্তা বেগমের খোঁজে। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘মুক্তা আমার ছোট বোন। গতকাল সন্ধ্যার সময় খবর পাই, যেখানে মুক্তা কাজ করে, সেখানে আগুন লেগেছে। তারে পাওয়া যাচ্ছে না। সঙ্গে সঙ্গে আমি ঢাকায় চলে আসি।’

আবুল দেওয়ান আরও বলেন, ‘গত রাত থেকে আমি এখানে এসে বসে আছি। কিন্তু এখনও বোনের কোনো খোঁজ পাই নাই।’

একই জায়গায় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মোজাম্মেল ইসলামের সঙ্গে৷ তিনি সাভার থেকে ঢামেকে এসেছেন ভাতিজা খালিদ হাসানের খোঁজে৷

মোজাম্মেল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমার ভাতিজা ওই কারখানায় এইচআর এডমিনের কাজ করতো৷ গতকাল যখন আগুনের খবর পাই, তখন আমি কচুক্ষেত ক্যান্টমেন্টে৷ আমি সাথে সাথে তাঁর খোঁজ নেই৷ কিন্তু পাই নাই৷’

ঢামেক মর্গের সামনে মেয়ে মৌসুমির খোঁজে দাঁড়িয়ে আছেন বাবা আবদুল মান্নান। স্ট্রিম ছবি
ঢামেক মর্গের সামনে মেয়ে মৌসুমির খোঁজে দাঁড়িয়ে আছেন বাবা আবদুল মান্নান। স্ট্রিম ছবি

মোজাম্মেল আরও বলেন, ‘গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত খালিদকে খুঁজছি আমরা৷ তবে কোনো তথ্য পাচ্ছি না৷ ছেলেটা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে, কিছু বুঝতে পারছি না৷’

এক তারিখে কাজে যোগ দিয়ে ১৪ তারিখে মারা গেলেন মৌসুমি

লালমনিরহাটের মেয়ে মৌসুমী আক্তার৷ বাবা রিকশা চালান৷ এসএসসি পাশ করার পর উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি না হয়ে কাজে যুক্ত হোন৷ পরিবারের হাল ধরতে চেয়েছিলেন মৌসুমী৷

আজ বুধবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে ঢামেক মর্গের সামনে এসব বলছিলেন মৌসুমির বাবা আবদুল মান্নান৷

আবদুল মান্নান স্ট্রিমকে বলেন, ‘মায়াটাকে বললাম, পড়াশোনা কর৷ আই-এ ভর্তি হ৷ আমি রিকশা চালাই আর যাই করি, তোরে আমি পড়ামু৷ কিন্তু ও বলে, তোমার এত কষ্ট করতে হবে না বাবা৷ আমি কাজ করব৷ পরিবারটা তো আমারও৷’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মান্নান আরও বলেন, ‘আমার লগে জিদ করে মেয়েটা কাজে গেল চলতি মাসের এক তারিখে৷ চৌদ্দদিন না যাইতেই সে মারা গেলো৷ এই দুঃখ আমি কই রাখব৷’

এখনো মৌসুমীর লাশ পাননি আবদুল মান্নান৷ তিনি বলেন, ‘আগুনের খবর যখন পাই, তখন আমি মিরপুর ১০ নাম্বারে রিকশা চালাইতেছি৷ খবর পায়াই গেলাম তার কারখানার দিকে৷ সেই যে দুপুর থেকে খোঁজা শুরু করলাম, আজকে একদিন হয়া গেল৷ এখনও মায়াটারে পাইলাম না৷’

মান্নান আরও বলেন, ‘গত রাতে আমি মর্গের সব লাশ দেখেছি৷ কিন্তু লাশ শনাক্ত করতে পারি নাই৷ এখন মর্গ আর গার্মেন্টেসে দোড়াইতেছি, কিন্তু কেউ বলতেছে না, আমারা মায়াটা কই৷’

Ad 300x250

সম্পর্কিত