রাজধানী ঢাকার অদূরে আমিন বাজার এলাকা। গত চার মাস গ্যাস নেই সাভার উপজেলার এই ইউনিয়নে। গ্যাস না থাকায় লক্ষাধিক মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত জুন মাস থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিন বাজার এলাকার আন্ডারপাসের নিচে গ্যাস সরবরাহ লাইনে লিকেজ হয়। সে লিকেজ কয়েক দফা ঠিক করা হয়। কয়েক দফায় বন্ধ করা হয় গ্যাসসংযোগও। তখন থেকেই ভোগান্তি শুরু। সর্বশেষ গত আগস্ট মাসের শুরুতে লিক হওয়া গ্যাস থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ওই এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি কর্তৃপক্ষ।
আজ সোমবার (২৪ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা গেছে, আমিন বাজার ইউনিয়নের গ্রামের সংখ্যা ১৯টি। মোট মৌজা তিনটি। এর মধ্যে বড় বড়দেশী ও বেগুনবাড়ী মৌজাতে গ্যাস নেই। লাকড়ি ও সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করে রান্না করতে হচ্ছে। তবে, অনেকে রান্না কমিয়েছেন। এদিকে, সরবরাহ লাইন ভিন্ন হওয়ার আমিন বাজারের সালেপুর মৌজাতে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক দেখা গেছে।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, গ্যাস না থাকায় নানা ভোগান্তি তাঁদের খরচ বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। দ্রুত পাইপলাইন ঠিক করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
গত আগস্ট মাসের শুরুতে লিক হওয়া গ্যাস থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সংগৃহীত ছবিআমিন বাজারের বড়দেশী এলাকার বাসিন্দা ফুলমতী খাতুন স্ট্রিমকে বলেন, ‘গত চার মাস গ্যাস নেই। লাইন ঠিক করবে শুনতেছি, কিন্তু ঠিক করার কোনো নাম নেই। গ্যাস না থাকায় লাকড়ি দিয়ে রান্না করতেছি।’
পশ্চিম বড়দেশী এলাকার আরেক বাসিন্দা নাছিমা খাতুন। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় আলাদা করে গ্যাস বিল দিতে হয় না। বাসা ভাড়ার সঙ্গে বাড়িওয়ালা বিল নিয়ে নেন। গ্যাস নেই এই কারণে বড়িওয়ালা ৫০০ টাকা ভাড়া কমাইছে। কিন্ত একটা সিলিন্ডার কিনতে খরচ হয় দেড় হাজার টাকা। এতে প্রতি মাসে হাজার টাকার বেশি ভর্তুকি দিতেছি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হিজলা গ্রামের এক গৃহিণী স্ট্রিমকে বলেন, ‘আগে দুইবেলা রান্না করতাম। মাঝেমধ্যে তিনবেলাও রান্না করা হতো। এখন সিলিন্ডার ব্যবহার করি। আমাদের আট সদস্যের পরিবার। একটা সিলিন্ডার দিয়ে এক মাস যায় না। সিলিন্ডারের যা দাম, পোষায়ে ওঠা কঠিন।’
আমিন বাজারের বড়দেশী এলাকয় ব্যবসা করেন আল আমিন। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘গত জুন মাস থেকে এই এলাকার গ্যাস লাইনে লিক দেখা দেয়। বিভিন্ন জায়গায় লিক হওয়া গ্যাসের বুদ বুদ দেখা যেত। তখন এই লাইন ঠিক হয়। কাজের জন্য জুন-জুলাই মাসেও গ্যাসসংযোগ বন্ধ ছিল।’
আল আমিন আরও বলেন, ‘একদিন খবর পাই, আমিন বাজার আন্ডারপাসের নিচে লিক হওয়া জায়গায় আগুন ধরে গেছে। পরে গিয়ে দেখি, ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আগুন নেভাচ্ছে। তারপর থেকেই গ্যাস বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই যে বন্ধ হলো, এখনো গ্যাস আসার নাম নাই।’
গত চার মাস গ্যাস নেই আমিন বাজারে। ছবি: আশরাফুল আলমএ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আমিন বাজার ইউনিয়ানের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দীন ফালান স্ট্রিমকে বলেন, ‘কয়েক মাস ধরেই গ্যাস নাই। গ্যাসসংযোগ যেন আবার চালু হয়, সে জন্য তিতাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। তিতাস গ্যাসের হেড অফিসেও গেছি অনেকবার। অভিযোগ জানিয়ে এসেছি। তারা জানিয়েছে, ট্রেন্ডার হয়ে গেলেই কাজ শুরু হবে। খুব দ্রুত টেন্ডার হবে বলেও তারা আশ্বস্ত করেছেন।’
এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির মেট্রো ঢাকা বিক্রয় বিভাগ-৬-এর উপমহাব্যবস্থাপক মো. নাসিমুল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, ‘গ্যাস লিকেজের কারণে আমিন বাজারের সংযোগ বন্ধ রয়েছে। যতটুকু জানি, খুব দ্রুত টেন্ডার হয়ে যাবে। টেন্ডার হলে আমরা কাজ শুরু করব।’
নাসিমুল ইসলাম আরও বলেন, ‘শুরু করতে পারলে কিছুদিনের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে পাইপলাইনের কাজটা শেষ করে আবার সংযোগ দেওয়া যাবে।’
কবে নাগাত টেন্ডার হতে পারে জানতে চাইলে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশনের টেন্ডারিং এন্ড এনলিস্টমেন্ট বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক সুরঞ্জিত কুমার দে স্ট্রিমকে বলেন, ‘আজ টেন্ডার প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এখনো কোনো উপযুক্ত টেন্ডারার পাওয়া যায়নি। টেন্ডারার পাওয়া গেলে কাজটা শুরু হবে।’