leadT1ad

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শহীদ সৈকতের বোনের সাক্ষ্য

স্ট্রিম প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সংগৃহীত ছবি

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকতের বোন জুলাইযোদ্ধা সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী।

আজ সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ সেবন্তী প্রসিকিউশনের ৪৯তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। এ সময় প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম উপস্থিত ছিলেন। সেবন্তী মোহাম্মদপুরের বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী।

সেবন্তী বলেন, ‘২০২৪ সালের ১৯ জুলাই শুক্রবার আমার ভাই জুম্মার নামাজ শেষে বাসা থেকে খেয়ে মোহাম্মদপুর এলাকার নুরজাহান রোডের দক্ষিণ মাথায় আন্দোলনে যায়। পৌনে ৪টার দিকে পুলিশ খুব কাছ থেকে আমার ভাই সৈকতকে গুলি করে হত্যা করে। তখন আমার বাবা আমাদের গ্রামের বাড়ি সন্দ্বীপে ছিলেন। তিনি সেখান থেকে সৈকতের মোবাইলে কয়েক বার ফোন দেন। একজন অপরিচিত ব্যক্তি সৈকতের ফোন রিসিভ করেন এবং বাবাকে জানায়, “এই ফোনটি যার তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। আমরা তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। আপনারা দ্রুত হাসপাতালে আসেন, অন্যথায় লাশও পাবেন না।“‘

সাক্ষী বলেন, ‘আমি হাসপাতালে ছুটে যাই। হাসপাতালে আমি আমার ভাইয়ের লাশসহ পাঁচটি লাশ দেখি। আমার ভাইয়ের মাথায় গুলি লেগেছিল। তার মাথায় মোটা রক্তাক্ত ব্যান্ডেজ ছিল। অপর লাশগুলোর প্রত্যেকের মাথায়, পেটে বুকে গুলির চিহ্ন দেখি। আমি যতক্ষণ হাসপাতালে ছিলাম ততক্ষণ অনবরত গুলিবিদ্ধ আন্দোলনকারীদের হাসপাতালে নিয়ে আসতে দেখি। হাসপাতালের মেঝেতে অনেক রক্ত দেখি। আমার ভাইয়ের মাথা থেকে নির্গত রক্ত একজন ব্যক্তিকে বালতি দিয়ে পানি ঢেলে ধুয়ে দিতে দেখি। ভাইয়ের লাশ দেখে আমি কান্নায় ভেঙে পড়ি। আমার মা একা বাসায় থাকায় ফুফাতো ভাইকে হাসপাতালে রেখে আমি বাসার উদ্দেশে রওনা হই। ঐ দিন রাত ৯টার দিকে হাসপাতাল থেকে আমার ফুফাতো ভাই আমার ভাই সৈকতের লাশ বুঝে নেয়। পরদিন সৈকতের জানাজা শেষে মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডে অবস্থিত জামে মসজিদ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।‘

সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী বলেন, ‘তখন আন্দোলন চলমান ছিল এবং প্রতিনিয়ত আন্দোলনকারীদের হত্যা করা হচ্ছিল। পরবর্তীতে ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী, খুনি ও অবৈধভাবে নির্বাচিত তৎকালীন সরকারপ্রধান হাসিনা জনস্রোতের মুখে পদত্যাগ করে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার কয়েক মাস পরে হাসিনার কিছু ফোন রেকর্ড শুনতে পাই। আল-জাজিরা তার একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় আল-জাজিরার সাংবাদিক তাকে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মাকসুদ কামালের সঙ্গে শেখ হাসিনার ফোনালাপ শোনান। সেই ফোনালাপে হাসিনা আন্দোলনকারীদের রাজাকার আখ্যায়িত করে বলেন, ইংল্যান্ডের স্টাইলে স্টুডেন্টদের হত্যা করা হবে। অপর ফোনালাপে মেয়র তাপসকে হাসিনা ড্রোন এবং হেলিকপ্টার ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয় করে লেথাল উইপন (মারণাস্ত্র) ব্যবহার করে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন। কথোপকথনে হাসিনা মোহাম্মদপুর এলাকার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে আমার ভাই পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন।‘

তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে হাসিনার আরেকটি ফোনালাপ শুনতে পাই। ঐ ফোনালাপে শেখ হাসিনা জানায় যে, সে স্টুডেন্টদের উপর বোম্বিং করার নির্দেশ দিয়েছে। আমার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আল-জাজিরা আমার যে সাক্ষাতকার নিয়েছিল তার কিছু অংশ একটি ডকুমেন্টারি হিসেবে নিজস্ব পেজে প্রকাশ করে।‘

সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী বলেন, ‘আমার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে খুনি হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে দায়ী করছি। এছাড়াও যারা তাদের নির্দেশ মেনে নিরস্ত্র, নিরীহ ছাত্রজনতার ওপর লেথাল উইপন ব্যবহার করে নিহত ও আহত করেছে তাদের দায়ী করছি এবং তাদের বিচার ও ফাঁসি দাবি করছি।‘

Ad 300x250

সম্পর্কিত