leadT1ad

ভূমিকম্পের তথ্য কে আগে দেয়, কতটা নির্ভুল

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৫, ২৩: ১২
সংগৃহীত ছবি

একবিংশ শতাব্দীতে তথ্য আলোর গতিতে ছুটলেও ভূকম্পন তরঙ্গের বেগ শব্দে। এই দুই গতির মধ্যবর্তী যে নগণ্য সময়ের ব্যবধান, সেখানেই লুকিয়ে থাকে হাজারো মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন। ভূমিকম্পের অন্যতম জটিল ফল্ট লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশে, কম্পন অনুভূত হওয়া মাত্র সচেতন মানুষ স্মার্টফোনে তিনটি উৎসে ঢু মারেন।

এগুলো হলো– ইউরোপের ইএমএসসি, যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসজিএস ও দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি)। এই তিন সংস্থার কার্যপদ্ধতি, দর্শন ও সক্ষমতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেউ কাজ করে ডিজিটাল নার্ভ সিস্টেমে। কেউ বিজ্ঞানের নিখুঁত বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্য দেয়। আবার কেউ রাষ্ট্রীয় আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে দেয় তাদের সিসমিক পর্যবেক্ষণ।

দুর্যোগের চরম মুহূর্তে কে সবচেয়ে দ্রুত তথ্য দেয়, কারটি কতটা নির্ভুল, তা আসছে সামনে। জানা যায়, ভূমিকম্পের সবচেয়ে দ্রুত তথ্য সরবরাহ করে প্যারিসভিত্তিক সংস্থা ইউরোপিয়ান-মেডিটেরিনিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি)। পৃথিবীকে সংস্থাটি ঘিরে রেখেছে এক অদৃশ্য ডিজিটাল স্নায়ুতন্ত্র দিয়ে, যার মূল প্রযুক্তির নাম ফ্ল্যাশসোর্সিং।

প্রথাগত সিসমোলজিতে সেন্সরের তথ্য প্রসেস করতে যেখানে সময় লাগে, সেখানে ইএমএসসি মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ করে তথ্য সরবরাহ করে। যখনই মাটি কাঁপে, মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ইন্টারনেটে সার্চ করে বা তাদের লাস্টকোয়েক অ্যাপে ঢোকে, তখনই নির্দিষ্ট এলাকা থেকে হঠাৎ হাজার হাজার মানুষের এই ডিজিটাল উপস্থিতি বা ওয়েব ট্রাফিক দেখে তারা বুঝে যায় ভূমিকম্প হয়েছে।

ইএমএসসির অ্যালগরিদম সিসমিক ডেটা প্রসেস করার আগেই, গড়ে ২ মিনিটের কম সময়ে সতর্কবার্তা পাঠিয়ে দেয়। অ্যাপের মাধ্যমে মানুষ নিজেই সেখানে তথ্যদাতা হয়ে ওঠে, পাঠায় ক্ষয়ক্ষতির ছবি। তাদের দর্শন– যন্ত্রের আগে মানুষই সেরা সেন্সর।

তথ্যের গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভেকে (ইউএসজিএস)। ১৮৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটির কাছে গতির চেয়ে বড় হলো বিজ্ঞানের নিখুঁত বিশ্লেষণ। এদের প্রশ্ন ‘আপনি কি অনুভব করেছেন’ সেটি নয়, বরং ‘অবকাঠামোর কী ক্ষতি হয়েছে’ তা-ই মুখ্য। ইউএসজিএসের শক্তিশালী হাতিয়ার ‘শেক-ম্যাপ’ ও ‘পেজার’ প্রযুক্তি।

শেক-ম্যাপ ভূমিকম্পের পর কোনো এলাকায় মাটির গঠন ভেদে কতটা শক্তিশালী কাঁপন অনুভূত হয়েছে, তা মানচিত্রে দেখায়। আর ‘পেজার’ একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা, যা ভূমিকম্পে সম্ভাব্য প্রাণহানি, আহত ও অর্থনৈতিক ক্ষতির প্রাথমিক অনুমান দেয়। এটি সবুজ থেকে লাল রঙের কোডের মাধ্যমে সতর্কতা দেখায়। লাল সংকেত মানে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি বা ভয়াবহ বিপর্যয়। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা, জাতিসংঘ ও প্রকৌশলীরা উদ্ধারকাজের পরিকল্পনার জন্য এই সংস্থার প্রতিবেদনের ওপর নির্ভরশীল।

এই দুই বৈশ্বিক মহীরুহের মাঝে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি)। এটি কোনো এনজিও বা বিদেশি গবেষণা সংস্থা নয় বরং সরকারি প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৪ সালে চট্টগ্রামে স্থাপিত প্রথম মানমন্দির থেকে শুরু করে বর্তমানে ঢাকা (আগারগাঁও), সিলেট, রংপুর ও গাজীপুরের সিসমিক অবজারভেটরি নিয়ে গঠিত তাদের নেটওয়ার্ক আগের চেয়ে আধুনিক হয়েছে।

অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল সিস্টেমে রূপান্তর এবং রাডার ইন্টিগ্রেশনও করেছে বিএমডি। দেশকে তিনটি সিসমিক জোনে ভাগ করে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড তৈরিতে সহায়তা করে সরকারি সংস্থাটি।

Ad 300x250

সম্পর্কিত