অবৈধ উপায়ে অর্জিত ১ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফত, তাঁর স্ত্রী, ছেলে ও এক সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশান থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা দায়ের করা হয়। মামলার অন্য আসামিরা হলেন—নাফিজ সরাফতের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদ, ছেলে রাহীব সাফওয়ান সারাফাত চৌধুরী ও সহযোগী হাসান তাহের ইমাম।
সিআইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে যে, ২০০৮ সালে সহযোগী হাসান তাহের ইমামকে নিয়ে ‘রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট’ নামের একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির লাইসেন্স নেন নাফিজ সরাফত। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে ১৩টি মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আসামিরা এই ফান্ডগুলো নিয়মবহির্ভূতভাবে ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। ফান্ডের অর্থ বিনিয়োগ করেই তাঁরা তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) শেয়ার কেনেন এবং পরবর্তীতে নাফিজ সরাফত ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হন। এছাড়া কৌশলে স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদকে সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক পদে বসান তিনি।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, মিউচুয়াল ফান্ডের টাকায় ‘মাল্টি সিকিউরিটিজ’ নামের একটি ব্রোকারেজ হাউস কেনা হয়। পরে সেটির ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে ফান্ডের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়া পদ্মা ব্যাংকের টাকা দিয়ে ‘স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি’ নামের ফান্ডের মাধ্যমেও জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। জালিয়াতির ব্যাপ্তি এতটাই বিস্তৃত ছিল যে, রাজউকের প্লট হাতিয়ে নেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে বিদেশে অর্থ পাচারের পথ সুগম করা হয়েছিল।
সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নাফিজ সরাফত ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৭৮টি হিসাব পরিচালিত হয়েছে। এসব হিসাবে প্রায় ১ হাজার ৮০৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা জমা এবং ১ হাজার ৮০৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা উত্তোলনের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বর্তমানে নাফিজ, তার স্ত্রী ও ছেলের নামে চালু ২১টি হিসাবে মাত্র ২৯ লাখ ২১ হাজার টাকা স্থিতি রয়েছে, যা সন্দেহজনক লেনদেনের ইঙ্গিত দেয় বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
পাচার করা অর্থের গন্তব্য সম্পর্কে সিআইডি জানায়, নাফিজ সরাফত ও তার স্ত্রীর মালিকানায় কানাডা ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে নিবন্ধিত কোম্পানি রয়েছে। সিঙ্গাপুরে আঞ্জুমান আরা শহীদের নামে একটি কোম্পানির ১৫টি যৌথ হিসাবের সন্ধান মিলেছে। এছাড়া তাদের ছেলে রাহীব সাফওয়ানের নামে কানাডা ও সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন ব্যাংকে ৭৬টি হিসাব এবং দুবাইতে নাফিজ সরাফতের একটি ফ্ল্যাট ও একটি ভিলা থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর আগে গত জুলাই মাসে পদ্মা ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ ও গুলশানের প্লট হস্তান্তরের মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগে নাফিজ সরাফতের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর তার ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব ও সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেন আদালত।