ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ‘কম্বাইন্ড ডিগ্রি’ বাস্তবায়নের দাবিতে উপাচার্যসহ ২২৭ শিক্ষককে অবরুদ্ধ করেছেন ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। আবার একই দিনে তিন দফা দাবিতে কৃষি ব্লকেড (এগ্রি ব্লকেড) কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীরা। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই গ্রুপের আন্দোলনে দিনভর ক্যাম্পাসে চলেছে উত্তেজনা।

আজ রোববার দুপুরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে উপাচার্যসহ ২২৭ শিক্ষককে অবরুদ্ধ করেন ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এসময় তাঁরা শিক্ষকদের ভেতরে রেখেই মিলনায়তনের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন।

এর আগে সকাল ১১টায় একই মিলনায়তনে একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক শুরু হয়। সকাল ৯টা থেকেই দুই অনুষদের শিক্ষার্থীরা মিলনায়তনের আশপাশে জড়ো হতে থাকেন। তাদের মূল দাবি ছিল—‘এক পেশায় এক ডিগ্রি, কম্বাইন্ড ডিগ্রি।’ দুপুর দেড়টার দিকে বৈঠকে প্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত না আসায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। পরে তাঁরা মিলনায়তনে উপস্থিত শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখেন।

পরে অবশ্য একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয়—বিএসসি ইন অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি, ডক্টর অফ ভেটেরিনারি মেডিসিন এবং দুই অনুষদের সমন্বিত কম্বাইন্ড ডিগ্রি—এই তিনটি ডিগ্রি বহাল থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে শিক্ষার্থীরা তিনটি ডিগ্রি মানতে নারাজ। তারা শুধু কম্বাইন্ড ডিগ্রিকে একক ডিগ্রি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। বাকৃবির পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী আতিক জানান, তাঁরা বারবার ‘এক পেশায় এক ডিগ্রি চাই’ দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু একাডেমিক কাউন্সিল তিনটি আলাদা ডিগ্রি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে তাঁদের আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে।

আতিক আশঙ্কা করছেন, একক ডিগ্রি হিসেবে কম্বাইন্ড ডিগ্রি স্বীকৃতি না পেলে পেশাগত জীবনে বিভ্রান্তি তৈরি হবে। তাই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষকেরা অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন।

তিন দফা দাবি কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীদের

ময়মনসিংহে রেলপথ অবরোধ করে কৃষি ব্লকেড (এগ্রি ব্লকেড) কর্মসূচি পালন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীরা। কৃষিবিদ ঐক্য পরিষদের ব্যানারে তিন দফা দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।

আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় কৃষি অনুষদ ছাত্র সমিতির সামনে থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রেললাইনে অবস্থান নেন তাঁরা। এতে ঢাকাগামী হাওর এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে যায়। পরে যাত্রীদের দুর্ভোগ ও রোগীদের অনুরোধে এক ঘণ্টা পর ট্রেনটি ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীরা রেললাইনে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যান।

পরে দুপুর ১টার দিকে নেত্রকোনাগামী মহুয়া কমিউটার ট্রেনও আটকে দেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।

পরে আগামী মঙ্গলবার কৃষি উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাস পেলে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবি হচ্ছে-

১. কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ও অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ১০ম গ্রেডের পদ (উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা/উপ-সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা/সমমান) কেবল কৃষিবিদদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।

২. নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়ে ৯ম গ্রেডে পদোন্নতির কোনো সুযোগ রাখা যাবে না।

৩. কৃষি বা কৃষি-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি না থাকলে নামের সঙ্গে ‘কৃষিবিদ’ পদবি ব্যবহার করা যাবে না— এ বিষয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।