জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ চার আসামির বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) শেষ হয়েছে। একইসঙ্গে এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর সদস্য ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদের নেতৃত্বে দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্য হলেন, জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। এদিন আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর মীজানুল ইসলাম।
এ মামলায় মাহবুব উল আলম হানিফ ছাড়া অন্য তিন আসামি হলেন, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা।
শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিষয়ে প্রসিকিউটর মীজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আজ ট্রাইব্যুনালে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আদালতে প্রসিকিউশন বলেছে, এই চারজন ব্যক্তি বাংলাদেশের একজন প্রবল প্রতাপশালী ও অত্যন্ত ক্ষমতাধর ব্যক্তির ছত্রচ্ছায়ায় থেকে মানুষকে মানুষ মনে করেননি। তারা মানুষের অধিকার ও জীবনের তোয়াক্কা না করে, বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নেওয়ার সব ধরনের প্রক্রিয়া চালিয়েছেন। শুধু নিজেদের স্বার্থ রক্ষা ও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য তারা এ কাজ করেছেন।
অভিযোগের স্বপক্ষে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য-প্রমাণের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রসিকিউটর জানান, এই মামলায় মোট ৩৮ জন সাক্ষী রয়েছেন। এর মধ্যে শহীদ পরিবারের সদস্য আটজন, প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী আটজন, আহত সাক্ষী আটজন, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী আটজন, পুলিশ সদস্য একজন, সাংবাদিক একজন, জব্দ তালিকার সাক্ষী দুজন, বিশেষজ্ঞ সাক্ষী দুজন এবং বিশেষ তদন্তকারী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা একজন করে রয়েছেন। সাক্ষীদের পাশাপাশি অডিও-ভিডিও ক্লিপস, বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট এবং ফরেন্সিক রিপোর্টসহ অন্যান্য দালিলিক প্রমাণ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হবে।
পরবর্তী দিন ধার্যের কারণ ব্যাখ্যা করে মীজানুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনালে আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনা এবং রংপুরের আবু সাঈদের মামলার মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া আগামী ৩০ নভেম্বর আরেকটি মামলার ওপেনিং স্টেটমেন্ট রয়েছে। এসব বিবেচনায় আগামী সপ্তাহে সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন না করে তার পরের সপ্তাহে অর্থাৎ ৮ ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।
এর আগে গত ২ নভেম্বর এই চার আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, উসকানিমূলক বক্তব্য, ষড়যন্ত্র ও কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যা।
তারও আগে গত ৫ অক্টোবর প্রসিকিউশন আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। ৬ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল-২ অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্টের আন্দোলন চলাকালে কুষ্টিয়ায় গুলিতে ছয়জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার তদন্ত শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন জমা দেয়, যার ভিত্তিতে এখন বিচার প্রক্রিয়া চলছে।