দৈনিক ভোরের কাগজের অনলাইন এডিটর মিজানুর রহমান সোহেলকে তার বাড্ডার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। প্রায় সাড়ে ১০ ঘণ্টা ডিবি হেফাজতে থাকার পর আজ বুধবার (১৯ নভেম্বর) সকালে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহেল নিজেই তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন।
সকালে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘বিনা অপরাধে প্রায় সাড়ে ১০ ঘণ্টা ডিবি হেফাজতে থাকার পর তারা আমাকে সসম্মানে মাত্র বাসায় পৌঁছে দিয়েছে। গত রাত ১২টার দিকে ডিবি প্রধান আমার সঙ্গে কথা বলবেন, এই অজুহাতে পাঁচ-ছয় জন ডিবি সদস্য জোর করে আমাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়।’
মিজানুর রহমানকে তুলে নেওয়ার পর ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছিলেন অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের। তিনি তাঁর পোস্টে জানান, ডিএমপির ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে মিজানুর রহমান সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে ডিবি কার্যালয় আনা হয়েছে বলেও জুলকারনাইন সায়েরকে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এদিকে অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘মিজানুরকে রাতে একটি বিষয়ে কথা বলার জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল। তারপর রাতেই তাঁকে তাঁর বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়।’
ডিএমপির ডিবি প্রধানের এই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান সোহেল স্ট্রিমকে বলেন, ‘রাতে যেটা হয়েছে, ডিএমপির ডিবি প্রধানের অধীনস্ত যে ডিসি রয়েছেন, তাকে বলেছেন ছেড়ে দেওয়ার জন্য। তবে তিনি ফাইনাল কনফার্মেশনের জন্য পরে আবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে ফোন করেছিলেন। আমাকে বসিয়ে রেখেই তিনি যোগাযোগ করছিলেন। কিন্তু এত রাতে তিনি তাঁকে (শফিকুল ইসলাম) রিচ করতে পারেননি। পরে আমাকে বললেন যে, যেহেতু এই ফর্মালিটি আমি করতে পারছি না, উনি যদি অর্ডার না দেন আমি ছাড়তে পারি না। সেজন্য উনি ছাড়তে ছাড়তে অনেক দেরি করে ফেলেছেন।’
সকালে তাঁকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সোহেল বলেন, ‘যখন তারা আমাকে ছাড়বেন, তাঁদের বলেছিলাম যে আমি একাই বাসায় চলে যাই। কিন্তু তারা বললেন যে বাসায় দিয়ে যাবেন। সবমিলিয়ে আমি সাড়ে ১০ ঘণ্টা বাসার বাইরে ছিলাম।’
বাসায় ফেরার পর ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে মিজানুর রহমান সোহেল অভিযোগ করেন, ‘ডিবিতে নিয়ে আসামির খাতায় আমার নাম লেখা হয়। জুতা-বেল্ট খুলে রেখে গারদে আসামিদের সঙ্গে আমাকে রাখা হয়। কিন্তু কেন আমাকে আটক করা হলো? তা আমি যেমন জানতাম না, তেমনি যারা আমাকে তুলে এনেছিলেন বা ডিবির উর্দ্ধতন কর্মকর্তারাও কিছু বলতে পারেননি। দীর্ঘ সময় পর বুঝতে পারলাম, সরকারের একজন উপদেষ্টার ইশারায় মাত্র ৯ জন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীকে মনোপলি ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়ার জন্যই আমাকে আটক করা হয়েছিল। আমার সঙ্গে (ব্যবসায়ীদের) সংগঠনের সেক্রেটারি আবু সাঈদ পিয়াসকেও আটক করা হয়। তিনি এখনও ডিবি কার্যালয়ে আছেন।’
সোহেল জানান, আজ (বুধবার) ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার (এনইআইআর) নিয়ে ডিআরইউতে মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের (এমবিসিবি) প্রেস কনফারেন্স করার কথা ছিল। আমি সেখানে ছিলাম মিডিয়া পরামর্শক। সেই প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করাই তাদের প্রধান টার্গেট ছিল। কিন্তু তাদের জন্য আফসোস, যে উদ্দেশ্যে তারা প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করতে চাইল সেটা দেশের সবাই জেনে গেল।
দেশের মুক্ত বাণিজ্য নীতির সঙ্গে ‘এনইআইআর স্পষ্টতই সাংঘর্ষিক’ অভিযোগ করে সোহেল আরও লিখেছেন, ‘প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে দেশে প্রতিযোগিতা কমিশনও রয়েছে। অথচ মাত্র ৯ জন ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিতে সারাদেশে ২৫ হাজার মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীকে পথে বসানোর গভীর চক্রান্ত চলছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রামের সাধারণ মানুষ, প্রবাসীসহ অনেকেই বিপদে পড়বেন। একটা চেইন ভেঙ্গে পড়বে। অনেক ব্যবসায়ী পথে বসে যাবে। জেনে রাখা ভালো, এই ৯ জনের একজন ওই উপদেষ্টার স্কুল-বন্ধু।’
সোহেল প্রশ্ন রেখে লেখেন, ‘একটা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বললে সরকার কেন ভয় পায়? শুধুমাত্র প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করতেই কি আমাকে গভীর রাতে জোর করে তুলে নিতে হলো? যারা মুখে ‘বাকস্বাধীনতা’র বুলি আওড়ান, তারাই কি আমাকে বাকরুদ্ধ করতে এই আয়োজন করলেন? মগের মুল্লুকে এই কি তবে বাকস্বাধীনতার বাস্তব চিত্র?’