জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি (কপি) পেয়েছেন আইনজীবীরা।
আজ বুধবার (২৬ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তারেক আবদুল্লাহ পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পাওয়ার কথা স্ট্রিমকে জানিয়েছেন। ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হবে।
গত ১৭ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ দুই অভিযোগের একটিতে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ড; অন্যটিতে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। একই সঙ্গে তাদের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া একই মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
রায়ের সংক্ষিপ্ত আদেশ ঘোষণার ৯ দিনের মাথায় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলো। দণ্ডিত সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি হাতে পেয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। ট্রাইব্যুনাল রায়ে উল্লেখ করেছেন, প্রতিটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। তবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় এই পাঁচটি অভিযোগকে দুটি প্রধান অভিযোগে রূপান্তর করা হয় এবং প্রতিটির অধীনে তিনটি করে সুনির্দিষ্ট অপরাধ বা কাউন্ট বিবেচনায় নিয়ে রায় দেওয়া হয়।
প্রথম অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা ও রাজাকারের নাতি-পুতি বলে সম্বোধন করেন। এই বক্তব্যের জেরে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য মাসুদ কামালের সঙ্গে কথোপকথনের ভিত্তিতে রংপুরে আবু সাঈদকে হত্যা করা হয়।
এই অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি বা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায় প্রমাণিত হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল পর্যবেক্ষণে বলেছেন, তিনি অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছেন। এই অপরাধে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে ‘ইমপ্রিসনমেন্ট টিল ন্যাচারাল ডেথ’ বা স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত কারাদণ্ড দিয়েছেন।
দ্বিতীয় প্রধান অভিযোগে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগের কাউন্টগুলোতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর সপক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথন আমলে নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ৫ আগস্ট রাজধানীর চাঁনখারপুলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে ছয়জনকে হত্যা, আশুলিয়ায় জীবিত একজনসহ মোট ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা এই অভিযোগের অন্তর্ভুক্ত। এই অপরাধগুলো সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।