দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন
একের পর এক খবরের বন্যায় মানুষ যেন ক্রমেই ডুবে যাচ্ছে। যুদ্ধ, দুর্যোগ, রাজনীতি ও ভুয়া তথ্যের লাগাতার আপডেটে অনেকেই বলছেন— আর নয়। সাম্প্রতিক গবেষণা দেখাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে বাড়ছে সংবাদ এড়িয়ে চলার প্রবণতা। কারণ হিসেবে উঠে আসছে উদ্বেগ, বিষণ্ণতা ও গণমাধ্যমের প্রতি আস্থাহীনতার কথা।
স্ট্রিম ডেস্ক
এক সময় মানুষ খবরের জন্য অপেক্ষা করত, আর এখন খবরই যেন মানুষকে খুঁজে নেয় তার দোরগোড়ায়। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন খবর অনেক বেশি সহজলভ্য। তবে অনেকের কাছে ঠিক এই কারণেই খবর একধরনের সমস্যায় পরিণত হয়েছে। তথ্যের বন্যা আর লাগাতার আপডেটের ভিড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অনেক মানুষ ক্রমেই সংবাদ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
খবর থেকে সরে যাওয়ার কারণগুলোও ভিন্ন ভিন্ন—কারো কাছে এর কারণ খবরের অতিমাত্রা, কারো কাছে নেতিবাচক খবরের মানসিক চাপ। আবার কারো কাছে গণমাধ্যমের প্রতি আস্থাহীনতা। মানসিক স্বাস্থ্যের অনলাইন ফোরামগুলোতে মানুষ আলোচনা করছে কীভাবে সংবাদ থেকে দূরে থাকা যায়। কেউ কেউ সীমা বেঁধে দিচ্ছেন, কেউ আবার পুরোপুরি সংবাদ দেখা ও পড়া বাদ দিচ্ছেন।
প্রায় আট বছর আগে সংবাদ দেখা ছেড়ে দেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা রাজ্যের মারডেট বার। তাঁর ভাষ্যমতে, ‘যখন নিয়মিত সংবাদ দেখতাম, তখন আমার হাতে নিয়ন্ত্রণ নেই এমন সব ঘটনার খবর দেখার জন্য রাতের পর রাত জেগে থাকতাম। এখন যেহেতু আমি সংবাদ দেখি না, তাই আর উদ্বেগ অনুভব করি না। ভয়ের অনুভূতিও হয় না।’
মারডেট বার একা নন। বিশ্বের অনেক মানুষ একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের জুন মাসে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়টার্স ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব জার্নালিজমের এক বার্ষিক জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সংবাদ এড়িয়ে চলার প্রবণতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।
প্রায় ৫০টি দেশে চালানো ওই জরিপে দেখা গেছে, ৪০ শতাংশ মানুষ প্রায়ই ইচ্ছাকৃতভাবে সংবাদ এড়িয়ে যান। ২০১৭ সালে এর হার ছিল মাত্র ২৯ শতাংশ।
পশ্চিমা আধুনিক দুনিয়ায় এই হার আরও বেশি– যুক্তরাষ্ট্রে ৪২ শতাংশ ও যুক্তরাজ্যে ৪৬ শতাংশ। সংবাদ এড়িয়ে চলার প্রধান কারণ হিসেবে উত্তরদাতারা জানিয়েছেন, সংবাদ তাদের মুড বা মানসিক অবস্থাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। অনেকে বলেছেন, অতিরিক্ত খবর তাদের ক্লান্ত করে তোলে, যুদ্ধ ও সংঘাতের খবরের আধিক্য তাদের হতাশ করে; তাছাড়া এমন অনেক তথ্য তাঁরা পান যেগুলোতে তাঁদের কিছুই করার থাকে না।
ব্রিটিশ মার্কেটিং প্রফেশনাল (পেশাজীবী) জুলিয়ান বারেট বলেন, করোনা মহামারির সময় নেতিবাচক আপডেটের আসক্ত হয়ে পড়ছিলেন তিনি। তাই একপ্রকার জোর করেই সংবাদ দেখা ও পড়া থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করেন। এখন তিনি মোবাইল থেকে বেশিরভাগ সংবাদ-সম্পর্কিত অ্যাপ মুছে ফেলেছেন ও টিভির ব্রেকিং নিউজও এড়িয়ে চলেন।
গত বছর জুলিয়ান বারেট ব্লগসাইট রেডিটে ‘আর/নিউজঅ্যাভোয়িডেন্স’ (r/newsavoidance) নামের একটি ছোট কমিউনিটি খোলেন, যেখানে তাঁরা সংবাদ এড়িয়ে চলার সুবিধা-অসুবিধা, কৌশল ও উপায় নিয়ে আলোচনা করে থাকেন।
অন্যরা ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করছেন। কেউ বলেন সপ্তাহে একবার খবর দেখেন যাতে আপডেট থাকা যায়; কিন্তু একদম খবরের সাগরে হাবুডুবু খেতে না হয়। আবার কেউ বহু বছর ধরে মুড খারাপ হওয়া ও গণমাধ্যমের প্রতি অনাস্থার কারণে খবর পুরোপুরি এড়িয়ে চলেছেন। মেরিল্যান্ডের এক ব্যক্তি জানান, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিভিন্ন ঘটনার খবর দেখে তিনি ‘ক্ষুব্ধ’ হয়ে পড়েন। এ ধরনের মানসিক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার থেকে বাঁচতে তিনি খবর দেখার ক্ষেত্রে একটি সীমানা নির্ধারণ করেন।
গবেষণা বলছে, টেলিভিশন ও সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন খবরে অতিরিক্ত এক্সপোজার, বিশেষত দুঃখজনক বা মর্মান্তিক ঘটনার কাভারেজ মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
গত কয়েক দশক ধরে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান, চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক রক্সানে কোহেন সিলভার এসব বিষয়ে গবেষণা করছেন। তাঁর গবেষণার কেন্দ্র রয়েছে নাইন/ইলেভেন থেকে শুরু করে কোভিড-১৯ মহামারি, জলবায়ুজনিত বিপর্যয় ও গণগুলিবর্ষণের (ম্যাস শুটিং) ঘটনার সংবাদ দেখা ও পড়ার প্রভাব। কোহেন সিলভার মতে, ‘যত বেশি সংবাদ দেখা হয়, মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা তত বেশি বাড়ে। উদ্বেগ বাড়ে, বিষণ্ণতা বাড়ে, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস বাড়ে, তীব্র মানসিক চাপের লক্ষণ দেখা দেয়।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোহেন সিলভার লক্ষ করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিভাজন বড় মানসিক চাপের কারণে পরিণত হয়েছে। আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশনের স্ট্রেস ইন আমেরিকা জরিপেও শীর্ষে ছিল রাজনৈতিক উদ্বেগ। এরপর ছিল অর্থনীতি ও ভুয়া খবরের প্রসার।
কোহেন সিলভার আরও বলেন, স্মার্টফোন ও সামাজিক মাধ্যমের কারণে মানুষ সারাক্ষণ সংবাদের নাগালে থাকছে। বিশেষত গ্রাফিক ছবি বা ভিডিও দেখা মানসিক যন্ত্রণার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। বর্তমান সময়ে দুঃখজনক বা সহিংস ঘটনার ভয়াবহ ছবি সাংবাদিকতার নিয়ন্ত্রণ অতিক্রম করে সামাজিক মাধ্যমে অবাধে ছড়িয়ে পড়ছে।
অনলাইনে ক্রমেই বাড়ছে ‘স্বাস্থ্যকর’ উপায়ে সংবাদ গ্রহণের উপদেশ। বেশিরভাগই পরামর্শ দিচ্ছেন ‘গার্ডরেল’ বা সীমানা তৈরি করতে, যাতে মানুষ নিজের সুবিধামতো সময়ে সংবাদ পেতে পারে, ক্রমাগত খবরের বন্যায় ভেসে না যায়। এর মধ্যে রয়েছে নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যম থেকে নিউজলেটার বা সারসংক্ষেপ পড়া, নিউজ অ্যালার্ট বন্ধ করা ও সামাজিক মাধ্যমে সীমিত থাকা।
কোহেন সিলভার বলেন, ‘বারবার মোবাইল বা কম্পিউটার স্ক্রল করে একটার পর একটা খবর পড়ার ‘‘ডুমস্ক্রলিং’’ অভ্যাস না করেও মানুষ তথ্যপূর্ণ থাকতে পারে।’
নিজের গবেষণার অভিজ্ঞতা বাস্তব জীবনে কাজে লাগান সিলভার। তিনি অনলাইনে সংবাদ পড়েন, কিন্তু ভিডিও, টেলিভিশন বা সামাজিক মাধ্যম এড়িয়ে চলেন। সিলভার কোহেন জানান, ‘এ ধরনের ছবি বা ভিডিও দেখার মধ্যে আমি কোনো মানসিক বা শারীরিক সুফল দেখি না। তাই যদি কোনো খবর পড়ার সময় তাতে ভিডিও থাকেও, আমি সেটি চালাই না।’
কোহেন সিলভার পরামর্শ দেন সারাক্ষণ সংবাদ না পড়ে বরং সময় ধরে সংবাদ পড়তে। কারণ এতে মানুষ অন্তত নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে কতটা সংবাদ সে গ্রহণ করছে।
মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের পরিচালক বেনজামিন টফ তাঁর বই ‘এভোয়েডিং দ্য নিউজ’-এ এই প্রবণতা বিশ্লেষণ করেছেন। বেনজামিন এ প্রবণতাকে পুরোপুরি সংবাদ এড়িয়ে যাওয়া ও কেবল সীমিত সংবাদ পড়া—এই দুই ভাগে ভাগ করেন। বেনজামিনের মতে, দ্বিতীয় প্রবণতাটি স্বাস্থ্যকর।
বেনজামিন আরও বলেন, ‘আমরা এমন এক জগতে বাস করি যেখানে ২৪ ঘণ্টা সংবাদ পাওয়া যায়। কিন্তু এর মানে এই নয় যে সবসময় সংবাদ গ্রহণ করা উচিত।’
তবে বেনজামিন এই উদ্বেগও প্রকাশ করেন যে, সংবাদ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্নতা মানুষকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও নিজের অধিকার আদায় থেকে আরও দূরে ঠেলে দেয়।
বেনজামিনের মতে, ‘আপনি যত বেশি সংবাদ থেকে বিচ্ছিন্ন হন, ততই কোনো ঘটনার তাৎপর্য বোঝা কঠিন হয়ে যায়।’
গবেষণায় দেখা গেছে, ধারাবাহিকভাবে সংবাদ এড়িয়ে চলা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় তরুণ, নারী ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে।
বেনজামিন টফ বলেন, ‘আমরা যদি বিশ্বাস করি যে সবাইকে সমানভাবে সবকিছুতে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত, হোক তা ভোট দেওয়া বা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সোচ্চার হওয়া—সেক্ষেত্রে সংবাদ থেকে বিচ্ছিন্নতা অবশ্যই একটি বড় সমস্যা।’
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন। অনুবাদ করেছেন তুফায়েল আহমদ।
এক সময় মানুষ খবরের জন্য অপেক্ষা করত, আর এখন খবরই যেন মানুষকে খুঁজে নেয় তার দোরগোড়ায়। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন খবর অনেক বেশি সহজলভ্য। তবে অনেকের কাছে ঠিক এই কারণেই খবর একধরনের সমস্যায় পরিণত হয়েছে। তথ্যের বন্যা আর লাগাতার আপডেটের ভিড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অনেক মানুষ ক্রমেই সংবাদ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
খবর থেকে সরে যাওয়ার কারণগুলোও ভিন্ন ভিন্ন—কারো কাছে এর কারণ খবরের অতিমাত্রা, কারো কাছে নেতিবাচক খবরের মানসিক চাপ। আবার কারো কাছে গণমাধ্যমের প্রতি আস্থাহীনতা। মানসিক স্বাস্থ্যের অনলাইন ফোরামগুলোতে মানুষ আলোচনা করছে কীভাবে সংবাদ থেকে দূরে থাকা যায়। কেউ কেউ সীমা বেঁধে দিচ্ছেন, কেউ আবার পুরোপুরি সংবাদ দেখা ও পড়া বাদ দিচ্ছেন।
প্রায় আট বছর আগে সংবাদ দেখা ছেড়ে দেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা রাজ্যের মারডেট বার। তাঁর ভাষ্যমতে, ‘যখন নিয়মিত সংবাদ দেখতাম, তখন আমার হাতে নিয়ন্ত্রণ নেই এমন সব ঘটনার খবর দেখার জন্য রাতের পর রাত জেগে থাকতাম। এখন যেহেতু আমি সংবাদ দেখি না, তাই আর উদ্বেগ অনুভব করি না। ভয়ের অনুভূতিও হয় না।’
মারডেট বার একা নন। বিশ্বের অনেক মানুষ একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের জুন মাসে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়টার্স ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব জার্নালিজমের এক বার্ষিক জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সংবাদ এড়িয়ে চলার প্রবণতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।
প্রায় ৫০টি দেশে চালানো ওই জরিপে দেখা গেছে, ৪০ শতাংশ মানুষ প্রায়ই ইচ্ছাকৃতভাবে সংবাদ এড়িয়ে যান। ২০১৭ সালে এর হার ছিল মাত্র ২৯ শতাংশ।
পশ্চিমা আধুনিক দুনিয়ায় এই হার আরও বেশি– যুক্তরাষ্ট্রে ৪২ শতাংশ ও যুক্তরাজ্যে ৪৬ শতাংশ। সংবাদ এড়িয়ে চলার প্রধান কারণ হিসেবে উত্তরদাতারা জানিয়েছেন, সংবাদ তাদের মুড বা মানসিক অবস্থাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। অনেকে বলেছেন, অতিরিক্ত খবর তাদের ক্লান্ত করে তোলে, যুদ্ধ ও সংঘাতের খবরের আধিক্য তাদের হতাশ করে; তাছাড়া এমন অনেক তথ্য তাঁরা পান যেগুলোতে তাঁদের কিছুই করার থাকে না।
ব্রিটিশ মার্কেটিং প্রফেশনাল (পেশাজীবী) জুলিয়ান বারেট বলেন, করোনা মহামারির সময় নেতিবাচক আপডেটের আসক্ত হয়ে পড়ছিলেন তিনি। তাই একপ্রকার জোর করেই সংবাদ দেখা ও পড়া থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করেন। এখন তিনি মোবাইল থেকে বেশিরভাগ সংবাদ-সম্পর্কিত অ্যাপ মুছে ফেলেছেন ও টিভির ব্রেকিং নিউজও এড়িয়ে চলেন।
গত বছর জুলিয়ান বারেট ব্লগসাইট রেডিটে ‘আর/নিউজঅ্যাভোয়িডেন্স’ (r/newsavoidance) নামের একটি ছোট কমিউনিটি খোলেন, যেখানে তাঁরা সংবাদ এড়িয়ে চলার সুবিধা-অসুবিধা, কৌশল ও উপায় নিয়ে আলোচনা করে থাকেন।
অন্যরা ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করছেন। কেউ বলেন সপ্তাহে একবার খবর দেখেন যাতে আপডেট থাকা যায়; কিন্তু একদম খবরের সাগরে হাবুডুবু খেতে না হয়। আবার কেউ বহু বছর ধরে মুড খারাপ হওয়া ও গণমাধ্যমের প্রতি অনাস্থার কারণে খবর পুরোপুরি এড়িয়ে চলেছেন। মেরিল্যান্ডের এক ব্যক্তি জানান, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিভিন্ন ঘটনার খবর দেখে তিনি ‘ক্ষুব্ধ’ হয়ে পড়েন। এ ধরনের মানসিক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার থেকে বাঁচতে তিনি খবর দেখার ক্ষেত্রে একটি সীমানা নির্ধারণ করেন।
গবেষণা বলছে, টেলিভিশন ও সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন খবরে অতিরিক্ত এক্সপোজার, বিশেষত দুঃখজনক বা মর্মান্তিক ঘটনার কাভারেজ মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
গত কয়েক দশক ধরে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান, চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক রক্সানে কোহেন সিলভার এসব বিষয়ে গবেষণা করছেন। তাঁর গবেষণার কেন্দ্র রয়েছে নাইন/ইলেভেন থেকে শুরু করে কোভিড-১৯ মহামারি, জলবায়ুজনিত বিপর্যয় ও গণগুলিবর্ষণের (ম্যাস শুটিং) ঘটনার সংবাদ দেখা ও পড়ার প্রভাব। কোহেন সিলভার মতে, ‘যত বেশি সংবাদ দেখা হয়, মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা তত বেশি বাড়ে। উদ্বেগ বাড়ে, বিষণ্ণতা বাড়ে, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস বাড়ে, তীব্র মানসিক চাপের লক্ষণ দেখা দেয়।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোহেন সিলভার লক্ষ করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিভাজন বড় মানসিক চাপের কারণে পরিণত হয়েছে। আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশনের স্ট্রেস ইন আমেরিকা জরিপেও শীর্ষে ছিল রাজনৈতিক উদ্বেগ। এরপর ছিল অর্থনীতি ও ভুয়া খবরের প্রসার।
কোহেন সিলভার আরও বলেন, স্মার্টফোন ও সামাজিক মাধ্যমের কারণে মানুষ সারাক্ষণ সংবাদের নাগালে থাকছে। বিশেষত গ্রাফিক ছবি বা ভিডিও দেখা মানসিক যন্ত্রণার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। বর্তমান সময়ে দুঃখজনক বা সহিংস ঘটনার ভয়াবহ ছবি সাংবাদিকতার নিয়ন্ত্রণ অতিক্রম করে সামাজিক মাধ্যমে অবাধে ছড়িয়ে পড়ছে।
অনলাইনে ক্রমেই বাড়ছে ‘স্বাস্থ্যকর’ উপায়ে সংবাদ গ্রহণের উপদেশ। বেশিরভাগই পরামর্শ দিচ্ছেন ‘গার্ডরেল’ বা সীমানা তৈরি করতে, যাতে মানুষ নিজের সুবিধামতো সময়ে সংবাদ পেতে পারে, ক্রমাগত খবরের বন্যায় ভেসে না যায়। এর মধ্যে রয়েছে নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যম থেকে নিউজলেটার বা সারসংক্ষেপ পড়া, নিউজ অ্যালার্ট বন্ধ করা ও সামাজিক মাধ্যমে সীমিত থাকা।
কোহেন সিলভার বলেন, ‘বারবার মোবাইল বা কম্পিউটার স্ক্রল করে একটার পর একটা খবর পড়ার ‘‘ডুমস্ক্রলিং’’ অভ্যাস না করেও মানুষ তথ্যপূর্ণ থাকতে পারে।’
নিজের গবেষণার অভিজ্ঞতা বাস্তব জীবনে কাজে লাগান সিলভার। তিনি অনলাইনে সংবাদ পড়েন, কিন্তু ভিডিও, টেলিভিশন বা সামাজিক মাধ্যম এড়িয়ে চলেন। সিলভার কোহেন জানান, ‘এ ধরনের ছবি বা ভিডিও দেখার মধ্যে আমি কোনো মানসিক বা শারীরিক সুফল দেখি না। তাই যদি কোনো খবর পড়ার সময় তাতে ভিডিও থাকেও, আমি সেটি চালাই না।’
কোহেন সিলভার পরামর্শ দেন সারাক্ষণ সংবাদ না পড়ে বরং সময় ধরে সংবাদ পড়তে। কারণ এতে মানুষ অন্তত নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে কতটা সংবাদ সে গ্রহণ করছে।
মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের পরিচালক বেনজামিন টফ তাঁর বই ‘এভোয়েডিং দ্য নিউজ’-এ এই প্রবণতা বিশ্লেষণ করেছেন। বেনজামিন এ প্রবণতাকে পুরোপুরি সংবাদ এড়িয়ে যাওয়া ও কেবল সীমিত সংবাদ পড়া—এই দুই ভাগে ভাগ করেন। বেনজামিনের মতে, দ্বিতীয় প্রবণতাটি স্বাস্থ্যকর।
বেনজামিন আরও বলেন, ‘আমরা এমন এক জগতে বাস করি যেখানে ২৪ ঘণ্টা সংবাদ পাওয়া যায়। কিন্তু এর মানে এই নয় যে সবসময় সংবাদ গ্রহণ করা উচিত।’
তবে বেনজামিন এই উদ্বেগও প্রকাশ করেন যে, সংবাদ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্নতা মানুষকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও নিজের অধিকার আদায় থেকে আরও দূরে ঠেলে দেয়।
বেনজামিনের মতে, ‘আপনি যত বেশি সংবাদ থেকে বিচ্ছিন্ন হন, ততই কোনো ঘটনার তাৎপর্য বোঝা কঠিন হয়ে যায়।’
গবেষণায় দেখা গেছে, ধারাবাহিকভাবে সংবাদ এড়িয়ে চলা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় তরুণ, নারী ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে।
বেনজামিন টফ বলেন, ‘আমরা যদি বিশ্বাস করি যে সবাইকে সমানভাবে সবকিছুতে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত, হোক তা ভোট দেওয়া বা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সোচ্চার হওয়া—সেক্ষেত্রে সংবাদ থেকে বিচ্ছিন্নতা অবশ্যই একটি বড় সমস্যা।’
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন। অনুবাদ করেছেন তুফায়েল আহমদ।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদ বিভাগের ৪১তম সভায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালার খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
১২ মিনিট আগেশ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় টানা দুই দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে খুলেছে নীলফামারীর ইপিজেড। উদ্ভুত পরিস্থিতি ও সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষ মামলা করবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া এভারগ্রিনের ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের পুর্নবহাল করা হবে।
৩১ মিনিট আগেঢাকায় সফররত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে পররাষ্ট্র সচিবের দফতরেই এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১ ঘণ্টা আগেনির্বাচন কমিশনার (ইসি) আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেছেন, ‘নির্বাচনে কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। ভুল হতে পারে, তবে কোনো অন্যায় বরদাস্ত করা হবে না।’ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, ‘একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভোটের জন্য সাংবাদিকদের সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন।’
১ ঘণ্টা আগে