leadT1ad

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেবল স্লোগান নয়, আমাদের নীতি: প্রেস সচিব

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২২: ৫১
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২২: ৫৪
প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকীয়, প্রশাসনিক বা ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করেনি। বরং মিথ্যা তথ্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সম্প্রচারের মুখেও সংযম প্রদর্শন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। গত বছর থেকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার দায়ী বলে ইঙ্গিত করে নোয়াব।

আজ শুক্রবার (৮ আগস্ট) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে প্রেস সচিব শফিকুল আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে ‘রেসপন্স টু নোয়াব: সেটিং দ্য রেকর্ড স্ট্রেইট’ শিরোনামে দেওয়া একটি পোস্টে লিখেন, অন্তর্বর্তী সরকার নোয়াবের এ ইঙ্গিত ‘দৃঢ় ও দ্ব্যর্থহীনভাবে’ প্রত্যাখ্যান করে।

প্রেস সচিব আরও লিখেন, তারা (সরকার) স্বচ্ছতা, সুরক্ষা ও স্বাধীনতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একই সঙ্গে এই মৌলিক মূল্যবোধ সংরক্ষণ ও বৃদ্ধির জন্য সব অংশীজনকে একসঙ্গে কাজ করার আমন্ত্রণ জানান তারা।

তবে প্রেস সচিব বলেন, সরকার নোয়াবের সাম্প্রতিক বিবৃতিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যের সুবিধাপ্রাপ্তির অবস্থা সম্পর্কে উত্থাপিত উদ্বেগকে স্বীকার করেন।

প্রেস সচিব জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো গণমাধ্যম সংস্থার সম্পাদকীয়, পরিচালনাগত বা ব্যবসায়িক দিকগুলোতে হস্তক্ষেপ করেনি। টেলিভিশন টক শো ও কলামগুলোতে প্রায়শই এই সরকার সম্পর্কে মিথ্যা ও উসকানিমূলক দাবি প্রকাশিত হয়েছে। তবুও, আমরা সেন্সর করিনি বা প্রতিশোধও নেইনি, অভিযোগ করিনি। এমনকি উসকানি দেওয়ার পরেও লাইসেন্স স্থগিত করিনি, বরং অতীতের শাসনামলে জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া কিছু গণমাধ্যমের পুনঃপ্রকাশ বা সম্প্রচারে ফিরে আসার পথ প্রশস্ত করেছি। যা স্পষ্টতই বাকস্বাধীনতা ও মুক্ত সংবাদমাধ্যমের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।

সচিবালয় প্রবেশ প্রক্রিয়ার সংস্কার

নোয়াবের বিবৃতিতে সংশোধিত প্রবেশাধিকারব্যবস্থার সমালোচনা কেবল ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়নি, বরং ভুল তথ্যও দেওয়া হয়েছে দাবি প্রেস সচিবের। তিনি বলেন, আগের ব্যবস্থাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। যার ফলে প্রবেশাধিকারপত্রগুলো এমন ব্যক্তিদের হাতে চলে যায়, যাদের কোনো বৈধ সাংবাদিকতার কাজ নেই। তাদের মধ্যে কিছু রাজনীতিবিদ, লবিস্ট ও সুবিধাবাদী ছিল। আমরা সেই ভাঙাচোরা কাঠামো ভেঙে দিয়েছি ও একটি অস্থায়ী পাস-ব্যবস্থা দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছি, যা প্রকৃত সাংবাদিকের সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার অব্যাহত থাকা নিশ্চিত করবে।

প্রেস সচিব আরও উল্লেখ করেন, ‘এই সংস্কার প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করার জন্য নয়, বরং দুর্নীতিগ্রস্ত প্রক্রিয়ার স্থলে সততা স্থাপন করার জন্য ছিল।’

সাংবাদিকদের নিরাপত্তা

প্রেস সচিব লিখেন, যেসব সাংবাদিককে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তাঁদের অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো নির্দেশ বা চাপে নয়, বরং গণমাধ্যমগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাশের কারণেই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, তারা সাংবাদিকসহ সকল নাগরিকের শারীরিক নিরাপত্তা ও মর্যাদার প্রতি সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা একটি অগ্রাধিকার। তবে এই দায়িত্ব গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এবং সরকার ও এর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে ভাগ করা হয়েছে।

নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশের প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রেস সচিব বলেন, এই বছরের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন একটি নতুন ‘সাংবাদিক সুরক্ষা আইন’সহ সংস্কারের প্রস্তাব করেছে, যাতে আইনি সুরক্ষা বৃদ্ধি করা ও সরকার বা নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়ের কারণে সৃষ্ট সেলফ-সেন্সরশিপ কমানো যায়।

প্রেস সচিব বলেন, ‘সরকার প্রস্তাবিত আইনটি জারি করার কথা বিবেচনা করছে।’

নোয়াবের প্রতি আহ্বান

প্রেস সচিব বলেন, ‘সরকার গঠনমূলক সমালোচনার জন্য উন্মুক্ত, তবে দোষারোপ করার আগে নোয়াবের উচিত নিজস্ব সদস্যদের কর্মকাণ্ড যাচাই করা।’

প্রেস সচিব আরও বলেন, ঘটনার ত্রুটিপূর্ণ ব্যাখ্যার ভিত্তিতে করা অভিযোগগুলো সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত তো করেই না, বরং বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বাস্তব সমস্যাগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয়।

প্রেস সচিব বলেন, সংকটকালীন সময়ে তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন হিসেবে তারা গণমাধ্যম যাতে ভয় বা হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করতে পারে—তা নিশ্চিত করার জন্য নিজেদের সহযোগিতা বজায় রেখেছেন।

প্রেস সচিব বলেন, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের কাছে কেবল একটি স্লোগান নয়, বরং অবশ্যই মানতে হবে এমন একটি নীতি।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত