আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও)-এর ২০ ধারা সংশোধনের প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটি বলছে, জোটবদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী জোটের প্রতীকে ভোট করার সুযোগ রাখতে হবে।
রোববার (২৬ অক্টোবর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ সাংবাদিকদের এ কথা জানান। বৈঠকে ইসির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জকরিয়াও উপস্থিত ছিলেন।
ইসমাইল জবিউল্লাহ বলেন, ‘ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জোটবদ্ধভাবে অংশ নিয়ে নিজেদের বা জোটের অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচন করেছে। এটি তাদের গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার। এতদিন এ প্রক্রিয়ায় কোনো জটিলতা বা সমস্যা হয়নি।’
তিনি জানান, দীর্ঘদিনের প্রচলিত এ প্রক্রিয়া পরিবর্তনের দাবি কখনো ওঠেনি। বিএনপি বরং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের আলোচনায় মতামত দেওয়ার সময় স্পষ্টভাবে জানিয়েছিল যে, আরপিওর ২০ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাবের সঙ্গে দলটি একমত নয়। ‘সেই অবস্থান যথাসময়ে ঐকমত্য কমিশন ও সরকারকে জানানো হয়েছিল,’ বলেন তিনি।
বিএনপি নেতা আরও জানান, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের উপদেষ্টা স্তরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপিকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, এ ধারায় কোনো পরিবর্তন আনা হবে না। ‘কিন্তু হঠাৎ করেই সংবাদপত্রে দেখা গেল, প্রস্তাব করা হয়েছে—জোট করলেও সবাইকে নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে। এই সংশোধন বিএনপির কাছে গ্রহণযোগ্য নয়,’ যোগ করেন ইসমাইল জবিউল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘জোট গঠনের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে নির্বাচনে জয়ী হওয়া। তাই জোটবদ্ধ দলগুলোর নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দ চাওয়ার অধিকার থাকা উচিত। এতদিন এভাবেই নির্বাচন হয়েছে, এতে কোনো সমস্যা হয়নি। এখন হঠাৎ এ প্রক্রিয়া বদলের প্রয়োজনীয়তা আমরা দেখি না।’
বিএনপি নেতা ইসমাইল জবিউল্লাহ জানান, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের উপদেষ্টা স্তরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপিকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, এ ধারায় কোনো পরিবর্তন আনা হবে না। ‘কিন্তু হঠাৎ করেই সংবাদপত্রে দেখা গেল, প্রস্তাব করা হয়েছে—জোট করলেও সবাইকে নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে। এই সংশোধন বিএনপির কাছে গ্রহণযোগ্য নয়,’ যোগ করেন ইসমাইল জবিউল্লাহ।
বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক পরামর্শ না করেই এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া অনভিপ্রেত ও অগণতান্ত্রিক। ‘এতে রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে,’ বলেন তিনি।
ইসমাইল জবিউল্লাহ আরও বলেন, ‘জোটবদ্ধভাবে রাজনীতি করা বা নির্বাচনে অংশ নেওয়া আরপিও অনুযায়ী বৈধ অধিকার। সেই অধিকার অনুযায়ী কোনো দল চাইলে জোটের অন্য দলের প্রতীকেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। সেই অধিকার হরণ করা অগণতান্ত্রিক।’
বিএনপি নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে, আরপিওর ২০ অনুচ্ছেদের পূর্বের বিধান বহাল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে। দলটির পক্ষ থেকে একই ধরনের চিঠি সরকারের আইন উপদেষ্টার কাছেও পাঠানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের সঙ্গে আইন উপদেষ্টা মহোদয়ের একটা ‘জেন্টলম্যানস অ্যাগ্রিমেন্টের’ কথা উনি বলেছেন। সেটা আমি আজকেও বলেছি। সেই মর্মে আজকেও আবার এই কথাটা উনাকে জানিয়ে রিকোয়েস্ট করা হচ্ছে। তো যেটা অ্যাগ্রিমেন্ট হয়েছে আমরা আশা করছি সেই ‘জেন্টলম্যানস অ্যাগ্রিমেন্ট’ অনুসারে কাজ হবে। সেজন্য ওইটা নিয়ে আর নতুন করে কোন কথা বলা প্রয়োজন ছিল না বলে আমরা মনে করছি।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক রাজনৈতিক দল নিজের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার রাখে। তবে জোটবদ্ধ হলে তারা নিজের প্রতীক বা জোটের অন্য কোনো দলের প্রতীক বেছে নেওয়ার সুযোগও থাকা উচিত। অতীতেও এভাবেই নির্বাচন হয়েছে, এখন সেটি পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।’
গণপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধন) আইন ২০২৩-এর ২০ ধারায় বলা হয়েছে— (১) যদি কোনো নির্বাচনি এলাকার জন্য একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকেন, তাহা হইলে রিটার্নিং অফিসার—
[(ক) কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনীত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ক্ষেত্রে, কমিশন কর্তৃক এই আদেশ বা বিধিমালার অধীন উক্ত দলের জন্য সংরক্ষিত প্রতীক বরাদ্দ করিবেন [:]
তবে শর্ত থাকে যে, অনুচ্ছেদ ১১ এর দফা (১) এর অধীন প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হইবার পর তিন দিনের মধ্যে কমিশনের নিকট এতদুদ্দেশ্যে দাখিলকৃত কোনো দরখাস্ত অনুযায়ী দুই বা ততোধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কর্তৃক যৌথভাবে মনোনীত প্রার্থীকে কমিশন কর্তৃক উক্ত দলগুলির জন্য সংরক্ষিত প্রতীকসমূহের মধ্য হইতে দলগুলি কর্তৃক সম্মত একটি প্রতীক বরাদ্দ করিতে পারিবেন।]