leadT1ad

সেপ্টেম্বরে ডাকসু, জাকসু ও রাকসু নির্বাচন

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন কীভাবে হয়, গুরুত্ব কোথায়

স্ট্রিম ডেস্কঢাকা
প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০: ৪৫
বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলন সবসময় জাতীয় রাজনীতি ও সমাজ পরিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। স্ট্রিম গ্রাফিক

এ মাসের মধ্যেই দেশের তিনটি শীর্ষ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। আর আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন।

এই নির্বাচনগুলো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহ্য এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রেক্ষিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলন সবসময় জাতীয় রাজনীতি ও সমাজ পরিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।

ডাকসুকে বাংলাদেশের ‘দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ’ বলা হয়। এর নির্বাচন অনেকটা জাতীয় নির্বাচনের পূর্বাভাস হিসেবে কাজ করে। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। ডাকসু, জাকসু এবং রাকসু নির্বাচনকে জাতীয় নির্বাচনের একটি ‘রিহার্সাল’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্বাচন কীভাবে হয় এবং নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর এসব নির্বাচনে কোনও সংশ্লিষ্টতা থাকে কিনা এমন নানা বিষয়েই মানুষের জানার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এই লেখায় আমরা জেনে নেবো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আদ্যোপান্ত।

ডাকসুকে বাংলাদেশের ‘দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ’ বলা হয়। এর নির্বাচন অনেকটা জাতীয় নির্বাচনের পূর্বাভাস হিসেবে কাজ করে। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। ডাকসু, জাকসু এবং রাকসু নির্বাচনকে জাতীয় নির্বাচনের একটি ‘রিহার্সাল’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩ এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচন

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ প্রণীত বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ চারটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জারি করা হয়। বাকি তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো— রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এই অধ্যাদেশ ছিল ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের ফলস্বরূপ প্রণীত একটি আইন। এটি ১৯৬১ সালের স্বৈরাচারী আইয়ুব খান সরকারের অধ্যাদেশকে বাতিল করে বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালন ব্যবস্থা এবং স্বায়ত্তশাসনের একটি নতুন নীতিমালা দেয়। এর মধ্য দিয়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালনায় এক নতুন যুগ শুরু হয়।

এই অধ্যাদেশ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন, শিক্ষা কার্যক্রম, প্রশাসনিক কাঠামো এবং ছাত্র প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ছাত্রদের অধিকার সুরক্ষার জন্য একটি কাঠামো প্রদান করে। এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন।

অধ্যাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) কথা উল্লেখ রয়েছে, যা ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় শিক্ষানীতি বিতর্কে তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই নয়, এটি রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও ছাত্র সংসদ গঠনের ভিত্তি রচনা করে।

ডাকসু নির্বাচন ২০২৫

ডাকসুর গঠনতন্ত্রে উল্লেখ আছে যে, প্রতি বছর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ছাত্ররা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে ডাকসুর কাঠামো এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। তবে, ১৯৯০-র পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি, প্রধানত ক্ষমতাসীন দলের বিরোধী ছাত্র সংগঠনের জয়ের আশঙ্কা এবং প্রশাসনিক অনীহার কারণে। এই সময়ে ক্যাম্পাসে সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

২০১৯ সালে ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নুরুল হক নুর ইতিহাস গড়ে সহ-সভাপতি (ভিপি) হন। বাকি পদগুলোতে ছাত্রলীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হন।

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর আরেকটি ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যা ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর প্রথম বৃহৎ ছাত্র নির্বাচন। এটি গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

২০১৯ সালে ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নুরুল হক নুর ইতিহাস গড়ে সহ-সভাপতি (ভিপি) হন। বাকি পদগুলোতে ছাত্রলীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হন।

ডাকসু নির্বাচন কীভাবে অনুষ্ঠিত হয়

ডাকসু নির্বাচন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে। যেকোনো নিয়মিত শিক্ষার্থী, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওনা পরিশোধ করেছেন, নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। তবে একজন প্রার্থী একাধিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না। নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রধান ধাপগুলো নিচে দেওয়া হলো-

নির্বাচনের ঘোষণা ও তফসিল: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। এতে ভোটের তারিখ, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা, প্রচারণার সময় এবং ফলাফল ঘোষণার সময় উল্লেখ থাকে।

নির্বাচন পরিচালনার জন্য কমিটি গঠন: ডাকসু নির্বাচনের প্রধান দায়িত্বে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তিনি নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি নির্বাচন কমিটি গঠন করে দেন। এর নেতৃত্বে থাকেন একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বা প্রশাসনিক কর্মকর্তা)। আরও থাকেন প্রধান রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসাররা, প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার। এই কমিটি নির্বাচন প্রক্রিয়া তদারকি, ভোট গ্রহণ, এবং ফল ঘোষণার দায়িত্ব পালন করে।

মনোনয়নপত্র জমা ও যাচাই: প্রার্থীরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেন। ডাকসু নির্বাচনে সাধারণত ২৫-২৮টি পদ থাকে (এবার ২৮টি)। এর মধ্যে সভাপতি (প্রেসিডেন্ট), সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) এবং বিভিন্ন সম্পাদক পদ অন্তর্ভুক্ত। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর বৈধ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়।

ডাকসু নির্বাচনের প্রধান দায়িত্বে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তিনি নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি নির্বাচন কমিটি গঠন করে দেন। এর নেতৃত্বে থাকেন একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বা প্রশাসনিক কর্মকর্তা)।

প্রচারণা: প্রার্থীরা নির্ধারিত সময়ে ক্যাম্পাসে প্রচারণা চালান। এই প্রচারণা পোস্টার, ব্যানার, সভা, এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি সংলাপের মাধ্যমে হয়। প্রার্থীরা পোস্টার, লিফলেট, পথসভা এবং হল ভিজিটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। প্রচারণার সময় নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলতে হয়।

ভোট গ্রহণ: ভোট গ্রহণ সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোটার হিসেবে অংশ নিতে পারেন। ভোট গ্রহণ গোপন ব্যালটের মাধ্যমে হয়। ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিটি তদারকি করে।

ফলাফল ঘোষণা: সাধারণত যেদিন ভোটগ্রহণ করা হয় সেদিনই ভোট গণনার পর নির্বাচন কমিটি ফলাফল ঘোষণা করে। জয়ী প্রার্থীরা ডাকসুর নেতৃত্ব গ্রহণ করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেটে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।

অভিযোগ নিষ্পত্তি: নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ ফলাফল প্রকাশের ৩ দিনের মধ্যে সভাপতির কাছে জমা দিতে হয়। অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য ডিন, প্রক্টর, এবং প্রভোস্ট সমন্বয়ে গঠিত আপিল কমিটি ১৪ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হয়।

জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে কি

জাতীয় নির্বাচন বা এর আয়োজক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ডাকসু নির্বাচনের কোনো সরাসরি সংশ্লিষ্টতা নেই। ডাকসু নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব গঠনতন্ত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রক্রিয়া, যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিটির তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এর সরাসরি সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে পরোক্ষভাবে ভোটার তালিকা, নিরাপত্তা এবং জাতীয় নির্বাচনের পূর্বাভাস হিসেবে এর প্রভাব থাকতে পারে। যেমন—

নির্বাচনী অনিয়ম বা অভিযোগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নির্বাচন কমিটি তদন্ত করে। তবে, গুরুতর ক্ষেত্রে (যেমন, ২০১৯ সালের নির্বাচনে অভিযোগ) আদালতের হস্তক্ষেপ ঘটতে পারে। তবে জাতীয় নির্বাচন কমিশন এই প্রক্রিয়ায় সরাসরি জড়িত থাকে না।

ভোটার তালিকা প্রস্তুতি: ডাকসু নির্বাচনের ভোটার তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়। এটি জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে ছাত্রদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবহার করে তাদের ভোটার পরিচয় যাচাই করা হতে পারে, যা জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেসের সঙ্গে পরোক্ষভাবে যুক্ত।

নির্বাচনী পরিবেশ ও নিরাপত্তা: ডাকসু নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিতে পারে। এই ক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের মতো সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় থাকতে পারে, তবে এটি সরাসরি নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নয়।

জাতীয় নির্বাচনের পূর্বাভাস: ডাকসু নির্বাচনকে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের একটি পূর্বাভাস হিসেবে দেখা হয়। ফলে, জাতীয় নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচনের ফলাফল এবং প্রক্রিয়ার দিকে পরোক্ষভাবে নজর রাখতে পারে। তবে, এটি তাদের সরাসরি দায়িত্বের অংশ নয়।

অভিযোগ ও আইনি বিষয়: নির্বাচনী অনিয়ম বা অভিযোগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নির্বাচন কমিটি তদন্ত করে। তবে, গুরুতর ক্ষেত্রে (যেমন, ২০১৯ সালের নির্বাচনে অভিযোগ) আদালতের হস্তক্ষেপ ঘটতে পারে। তবে জাতীয় নির্বাচন কমিশন এই প্রক্রিয়ায় সরাসরি জড়িত থাকে না।

জাকসুর ক্ষেত্রেও ডাকসুর মতো ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী একই কাঠামো এবং প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।

জাকসু নির্বাচন ২০২৫

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন দীর্ঘ ৩৩ বছর পর (সর্বশেষ ১৯৯২ সালে হয়েছিল) অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচন উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। জাকসুর ক্ষেত্রেও ডাকসুর মতো ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী একই কাঠামো এবং প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।

রাকসু নির্বাচন ২০২৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনও ৩৬ বছর পর হচ্ছে। রাকসুর পুনরুজ্জীবনও বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এ নির্বাচন শিক্ষার্থীদের অধিকার এবং ক্যাম্পাসের সমস্যা সমাধানে নতুন পথ খুলে দেবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। রাকসুর বেলায়ও ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী একই কাঠামো এবং প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।

ডাকসু, জাকসু ও রাকসু নির্বাচনের গুরুত্ব

বাংলাদেশের ইতিহাসে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুধু ক্যাম্পাস-ভিত্তিক কার্যক্রম নয় বরং জাতীয় রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম— সব ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দিয়েছে। তাই ডাকসু, জাকসু ও রাকসু নির্বাচন কেবল ছাত্র রাজনীতির ধারাবাহিকতাই নয় বরং জাতীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেও বিবেচিত হয়।

বাংলাদেশের ইতিহাসে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুধু ক্যাম্পাস-ভিত্তিক কার্যক্রম নয় বরং জাতীয় রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৯০ সালের এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ডাকসু নেতারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। একইভাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিল। ডাকসু ও জাকসু উভয় সংসদই স্বৈরশাসকের পতনে নেতৃত্ব দিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় মাইলফলক স্থাপন করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখে, যা এই নির্বাচনের তাৎপর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ছাত্র সংসদের জাতীয় ভূমিকা: ছাত্র সংসদ কেবল ক্যাম্পাসের সমস্যার সমাধান করে না; বরং শিক্ষা সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়েও কাজ করতে পারে। ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের মতো উন্নত দেশগুলোতে ছাত্র সংসদ শিক্ষানীতি, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং আধুনিক প্রযুক্তি (যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) নিয়ে সক্রিয় থাকে। বাংলাদেশেও এমন ছাত্র নেতৃত্বের প্রয়োজন রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

দীর্ঘ বিরতির পর নির্বাচন: ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনের পর ছয় বছর, জাকসুর ১৯৯২ সালের পর ৩৩ বছর এবং রাকসুর ১৯৮৯ সালের পর ৩৬ বছর কোনো নির্বাচন হয়নি। এই দীর্ঘ বিরতি ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করেছে। ২০২৫ সালের নির্বাচনগুলো সেই শূন্যতা পূরণ করে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি করবে।

এই নির্বাচনগুলো তরুণ নেতৃত্বের উত্থান ঘটাবে, যারা ভবিষ্যতে জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অতীতের মতো শিক্ষার্থীরা শুধু আন্দোলনেই নয় বরং শিক্ষা, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে কার্যকর অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশা: অতীতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব স্পষ্ট ছিল। বিশেষত ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের আধিপত্য এ নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তবে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীরা দলীয় প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। সেই দাবি পূরণ হলে নির্বাচনগুলো জাতীয় গণতান্ত্রিক রূপান্তরের একটি পরীক্ষা হয়ে উঠবে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা: এই নির্বাচনগুলো তরুণ নেতৃত্বের উত্থান ঘটাবে, যারা ভবিষ্যতে জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অতীতের মতো শিক্ষার্থীরা শুধু আন্দোলনেই নয় বরং শিক্ষা, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে কার্যকর অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

ডাকসু, জাকসু ও রাকসু নির্বাচন বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে এবং ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ খুলে দেবে। একইসঙ্গে এটি জাতীয় গণতন্ত্রের পূর্বাভাস, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং প্রান্তিক কণ্ঠকে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ সৃষ্টি করবে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে তরুণ নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন দেশের সচেতন মহল।

Ad 300x250

শঙ্কায় পাহাড়িয়ারা, পাশে অনেকে

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে বিএনপি: বিপ্লব নয়, নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থার প্রবর্তন ক্যু হিসেবে গণ্য হবে

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন কীভাবে হয়, গুরুত্ব কোথায়

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণপরিষদ গঠনের প্রস্তাব দিল এনসিপি

ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল: সব নির্যাতন সহ্য করে আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম

সম্পর্কিত