leadT1ad

‘চোখ উপড়ে ফেলা বিড়ালের’ পর এবার ধানমন্ডি লেকে মিলল মৃত বিড়াল

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

লেকের পানি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে মৃত বিড়ালটিকে। ছবি: জান্নাতুল ফেরদাউস মন্দিরা

পরপর চারটি চোখহীন বিড়ালের পর ধানমন্ডি লেকের একই জায়গা থেকে এবার একটি মৃত বিড়াল উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকারীদের দাবি, ভারী কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করে বিড়ালটিকে ‘খুব কষ্ট দিয়ে’ মারা হয়েছে। এর পেছনে সাইকোপ্যাথ কোনো ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলেও ধারণা করছেন তাঁরা।

গত শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ধানমন্ডির ১২/এ রোডের মসজিদুদ তাকওয়ার পাশের লেকে বিড়ালটিকে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়। ভাসতে থাকা বিড়ালটিকে উদ্ধার করেছেন ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভর (ইউডা) কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে একজন তামিম আনজু।

ইউডা ক্যাম্পাস ধানমন্ডি লেকের পাশে হওয়ায় লেকেই আড্ডা দেন তামিম আনজুসহ তাঁর বন্ধুরা। মসজিদুদ তাকওয়ার পাশে তাঁরা ছবি আঁকেন, গান করেন। বিড়ালটিও ওই এলাকায় থাকতো। মৃত বিড়ালটির সঙ্গে তাঁদের সখ্যতা ছিল বলে জানান তামিম।

যোগাযোগ করা হলে তামিম আনজু স্ট্রিমকে বলেন, ‘সন্ধ্যা ৭টার দিকে লেকের পানি আমরা একটা বিড়াল ভেসে থাকতে দেখি। কাছে গিয়ে বিড়ালটাকে উল্টানোর পরে দেখি, ওর ডান পা ভাঙা। আর চোয়ালটা দেখে মনে হইছে, কেউ বাড়ি মেরে থেঁতলে দিয়েছে। মুখের মাংস সরে গেছে। শরীরেও আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। কিন্তু ওকে দেখে অসুস্থ্য বা এক্সিডেন্টে মারা গেছে বলে মনে হয়নি।’

আনজু আরও বলেন, ‘এই বিড়ালটা তাকওয়া মসজিদেরই বিড়াল। এদিকে ওরে আমরা প্রতিদিন দেখতাম। বিড়ালটার সুঠাম দেহের ছিল। ওরে আমরা খাওয়াতাম, আদর করতাম। এই এলাকার মানুষ ইভেন কুকুরগুলোর লগেও বিড়ালটা খুব ফ্রেন্ডলি ছিল। কুকুরগুলোর লগে বইসা থাকতো, ঘুরতো, খেলা করতো।’

তামিম আনজুর বন্ধু জান্নাতুল ফেরদাউস মন্দিরা। বিড়ালটিকে ভাসতে দেখেছেন ইউডার এই শিক্ষার্থীও। মন্দিরা স্ট্রিমকে বলেন, ‘চোখহীন চারটা বিড়াল উদ্ধারের পর কয়েকটি গণমাধ্যম এই এলাকা নিয়ে রিপোর্ট করেছিল। কয়েকদিন আগের একটা ভিডিও রিপোর্টে এই বিড়ালটাকে সুস্থ্য দেখা গেছে। আজ দেখি ও মরে পানিতে ভাসতেছে।’

নিজের সন্দেহ প্রকাশ করে মন্দিরা বলেন, ‘বিড়ালটাকে মেরে থেঁতলে দেওয়া হয়েছে। ওর সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন। এর আগেও এই এলাকায় চারটা বিড়ালের চোখ তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাও ওই একই চক্রের হতে পারে। এর পেছনে কোনো সাইকোপ্যাথের হাত থাকতে পারে।’

তামিম, মন্দিরাদের সঙ্গে ছিলেন আকাশ। স্ট্রিমকে আকাশ বলেন, ‘বিড়ালটাকে আমরা উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখি। পরে একটা কাঠি দিয়ে ঘুরিয়ে দেখি, পা ভাঙা। বাম পাশটা একদম ক্ষত-বিক্ষত। বিশেষ করে মাথা আর মুখের দিকটা বেশি ক্ষত-বিক্ষত।’

আকাশ আরও বলেন, ‘আমরা এই এলাকায় ছবি আঁকি। এই বিড়ালটাকে আমরা চিনি। এর আগে চোখ তুল ফেলা দুইটা বিড়ালকেও চিনতাম। এই অঞ্চলটাতেই কেউ একজন আছে, যার বিড়ালের ক্ষতি করে ভালো লাগে।’

বিড়ালটার সুঠাম দেহের ছিল বলে জানিয়েছে উদ্ধারকারীরা। ছবি: জান্নাতুল ফেরদাউস মন্দিরা
বিড়ালটার সুঠাম দেহের ছিল বলে জানিয়েছে উদ্ধারকারীরা। ছবি: জান্নাতুল ফেরদাউস মন্দিরা

এ ব্যাপারে জানতে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈন্যু মারমাকে বারবার কল করা হলেও তিনি রিসিভি করেননি।

এর আগে গত ৩০ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ধানমন্ডি লেক থেকে পর পর চারটি চোখহীন বিড়াল উদ্ধার করা হয়। সে ঘটনায় ধানমন্ডি থাকায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। তখন ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈন্যু মারমা স্ট্রিমকে বলেন, ‘অভিযোগকারীদের আশ্বস্ত করেছি, আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। বিড়াল বা যে কোনো পশুর চোখ উপড়ে ফেলা একটা দণ্ডনীয় অপরাধ। কাজেই এটা আমরা বের করার চেষ্টা করছি। বিশেষত লেক-কেন্দ্রিক যেসব জায়গায় সিসি ক্যামেরাগুলো আছে, সেগুলো আমরা অ্যানালাইসিস করছি, খুঁজছি। অপরাধীকে পেলে অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত