leadT1ad

রংপুরের গঙ্গাচড়া ও নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ

অনেকে খোলা আকাশের নিচে, ক্ষণিকের ঝড়ে লন্ডভন্ড সহস্রাধিক ঘরবাড়ি

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ও নোহালী ইউনিয়নে রোববার সকালে হঠাৎ ঝড়ে তছনছ হয়ে গেছে সাত শতাধিক ঘরবাড়ি। একইভাবে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নে ঝড়ের তাণ্ডবে পাঁচ শতাধিক কাঁচাপাকা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
রংপুর ও নীলফামারী
কিশোরগঞ্জে ঝড়ে বিদ্ধস্ত ঘরবাড়ি। স্ট্রিম ছবি

‘মোর ঘর উড়ি গেইচে, খেতের ফসল ডুবি গেইচে, এ্যালা হামরা কোনঠে যামো বাহে!’ এই আর্তি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেরার আলমবিদিতর ও নোহালী ইউনিয়নের অনেক বাসিন্দার। টানা বৃষ্টির মধ্যেই আজ রোববার (১০ অক্টোবর) সকালে হঠাৎ স্বল্পস্থায়ী ঝড়ে তছনছ হয়ে গেছে দুই ইউনিয়নের সাত শতাধিক ঘরবাড়ি। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আগাম আমন ধানের। উড়ে গেছে টিনশেড ঘর, ভেঙে পড়েছে ইটের দেয়াল। আহত হয়েছে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ।

একইভাবে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নে ঝড়ের তাণ্ডবে শতাধিক কাঁচাপাকা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। রোববার সকাল আটটার দিকে শুরু হওয়া ঝড়ে উপড়ে পড়েছে সহস্রাধিক গাছপালা। ভেঙে পড়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে অন্তত আটটি গরু মারা গেছে। ঝড়ে আহত হয়েছেন প্রায় ৪০ জন। তাঁদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং গুলসান আরা (৫০) নামে নারীকে রংপুর মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গঙ্গাচড়ায় ঝড়ে ঘরবাড়ির সঙ্গে ভেঙে পড়েছে অনেক গাছ। স্ট্রিম ছবি
গঙ্গাচড়ায় ঝড়ে ঘরবাড়ির সঙ্গে ভেঙে পড়েছে অনেক গাছ। স্ট্রিম ছবি

‘এখন কোটে থাকং মুই’

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা থেকে জানা যায়, সকাল আটটার কিছু পরেই বৃষ্টির সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। বাতাসের তীব্রতা এতটাই ছিল যে অনেক টিনশেড ঘর উড়ে যায়, উপরে পড়ে গাছপালা।

গঙ্গচড়ার আলমবিদিতর ইউনিয়নের কুতুব হাজীরহাটের বাসিন্দা নাজমুল আমিন (৩৫) বলেন, ‘আমার পাকা ঘরটা মুহূর্তেই ভেঙে পড়ল। টিনগুলো উড়ে গেল দূরে। আমার ছেলে মাফি তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র, তাঁর মাথা ফেটে গেছে, পা ভেঙেছে। এখন সে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি।’

নোহালীর সরদারপাড়ার ফনি বেওয়া (৪০) বলেন, ‘বাপের দুইটা ঘর ছিল, দুইটায় উড়ি গেইছে। এখন কোটে থাকং মুই (কোথায় থাকব আমি)?’

গঙ্গাচড়ায় উদ্ধার তৎপরতা

নোহালী ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ আলী জানান, ইউনিয়নে প্রায় ৪০০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজন শিশুও রয়েছে। তিনি দ্রুত উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

আলমবিদিতর ইউপির প্রশাসক ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আফতাবুজ্জামান চয়ন বলেন, তাঁর ইউনিয়নে অন্তত ৩০০টি ঘর আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কিশোরগঞ্জে ঝড়ে রক্ষা পায়নি আধাপাকা ঘরও। স্ট্রিম ছবি
কিশোরগঞ্জে ঝড়ে রক্ষা পায়নি আধাপাকা ঘরও। স্ট্রিম ছবি

এদিকে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছে প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ শুরু হয়েছে। আহতদের সুচিকিৎসা এবং ঘরবাড়ি পুনর্গঠনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কিশোরগঞ্জে অনেকে খোলা আকাশের নিচে

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে ভারী বৃষ্টির সময় উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের মাঝাপাড়া, বানিয়াপাড়া, হাজীপাড়া, উত্তরপাড়া, পোদ্দারপাড়া, জিকরুল মেম্বারের পাড়া, বাবুপাড়া, চেয়ারম্যানের পাড়া, বৈরাগীপাড়া, মুন্সিপাড়া, কালিরথানসহ বেশ কয়েকটি পাড়া ঝড়ের কবলে পড়ে। অসংখ্য গাছ, ঘর, বৈদ্যুতিক খুঁটি সড়কের ওপরে পরে থাকায় কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস কর্মী দুর্গত এলাকায় ঢুকতে বেগ পেতে হয়।

নীলফামারীর কিশারগঞ্জে ঝড়ে ৮টি গরু মারা যাওয়াসহ অনেক গবাদিপশু আহত হয়েছে। আহত পশুদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের একটি দল কাজ করছে। ঝড়ে উপজেলার প্রায় ১০ হেক্টর জমির ধান ও কলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া তার ছিড়ে যাওয়াসহ বিদ্যুৎব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দ্রুত সংযোগের ব্যবস্থা না করলে হাজারো গ্রাহককে অন্ধকারে রাত কাটাতে হবে।

গাড়াগ্রাম ইউপির এক সদস্য মোফাজ্জল বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডেই ২ শতাধিক ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। ব্যাপক গাছ উপড়ে পড়েছে। খোলা আকাশের নিচে অনেকে আছে। চেয়ারম্যানপাড়ায় ওয়াল ভেঙে ফরহাদের ৩টি গরু মারা যাওয়াসহ প্রায় ৮টি গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।’

গাড়াগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মো. জোনাব আলী জানান, ইউনিয়নের ৫টি ওয়ার্ডেও অন্তত ১২টি পাড়ায় ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি নিরূপন ও উদ্ধার কাজ চলছে। খোলা আকাশের নিচে অনেকে বসবাস করছে।’

গঙ্গাচড়ায় ঝড়ে ভেঙে পড়েছে আধাপাকা ঘর। স্ট্রিম ছবি
গঙ্গাচড়ায় ঝড়ে ভেঙে পড়েছে আধাপাকা ঘর। স্ট্রিম ছবি

বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধার তৎপরতায়

কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন লিডার মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তার উপর পড়ে থাকা গাছ অপসারণ করা যাচ্ছে না। তারা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যসহ কাঠুরিয়াদের সাহায্য নিচ্ছে।

কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম জানান, ঝড়ে ৩ হেক্টর জমির কলা, ২ হেক্টরের সবজি ও ৫ হেক্টর ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রচণ্ড ঝড়ে ছিড়ে যাওয়া তার মেরামতসহ ভেঙে পড়া বিদ্যুৎ সঞ্চালনাব্যবস্থা দাঁড় করাতে কাজ চলছে বলে জানান পল্লী বিদ্যুৎ অফিস কিশোরগঞ্জের এজিএম রোমান ইসলাম। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নীলরতন দেব জানান, আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি চিকিৎসা দল পাঠানো হয়েছে ঝড় দুর্গত এলাকায়।

ক্ষয়-ক্ষতির তথ্য জানিয়ে কিশোরগঞ্জের ইউএনও প্রীতম সাহা জানান, ঝড়ের খবর পেয়ে সেখানে কয়েকটি মেডিকেল টিম, প্রাণিসম্পদ ও কৃষি বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস টিম পাঠানো হয়েছে। উদ্ধারকাজসহ ক্ষতি নিরুপণে কাজ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত