আতাউর রহমান রাইহান
জুলাই সনদ প্রক্রিয়ার বাইরে রয়েছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত অন্তত ৩০টি রাজনৈতিক দল। জুলাই সনদের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের যোগাযোগ, সংলাপ বা মতামত নেওয়া হয়নি তাদের থেকে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় আন্দোলনে অংশ নেওয়া কয়েকটি রাজনৈতিক দলও এই প্রক্রিয়ার বাইরে ছিল বলে জানা গেছে। তবে, ফ্যাসিবাদের সহযোগীদের এই প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন কেউ কেউ। সবমিলিয়ে, যে ঐকমত্যের জন্য জুলাই সনদ করা হয়েছে, তা সফল হবে না বলে মনে করেন অনেক রাজনীতিবিদ।
অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই উদ্যোগে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত না করায় দেশ সংঘাত ও দ্বন্দ্বের দিকে চলে যাবে বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় প্রচুর অনিবন্ধিত শক্তিকে ডাকা হয়েছে। বৈধ অনেককে ডাকা হয়নি। এটা অগণতান্ত্রিক ও বৈষম্যমূলক। অবশ্যই এটা ঐক্যের প্রতীকও না। ফলে এটা ঐক্যের দিকে না গিয়ে বরং সংঘাত ও দ্বন্দ্বের দিকে যাচ্ছে। অনেক দিন পর্যন্ত এই সংঘাত চলবে।’
সংঘাতমুক্ত একটি নতুন ধারার রাজনীতি চেয়েছিলাম—মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আমি মনে করি, ঐকমত্য কমিশন ও সরকার একটা জটিলতা সৃষ্টি করেছে, নিজেরাও জটিলতায় পড়েছে। এ থেকে আশু উত্তরণে পদক্ষেপ নিতে দেখছি না।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘আমরা মনে করি, সবাইকে ডেকে সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি জুলাই সনদ করলে সেটি টেকসই হতো, দেশের স্বার্থরক্ষা হতো, দেশে স্থিতিশীলতা আসত এবং দেশে নতুন গণতন্ত্রের উদ্ভব ঘটত। এখন যেটা করা হচ্ছে, সেটি একটি চাপিয়ে দেওয়া সংস্কার হবে।’
এসব কারণে জুলাই সনদের প্রতি অনেকের শ্রদ্ধা থাকবে না, অংশগ্রহণ থাকবে না এবং মালিকানা থাকবে না বলে মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব। তিনি বলেন, মালিকানা না থাকলে জুলাই সনদকে রক্ষার তাগিদও অনেকে অনুভব করবে না।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী অভিযোগ করে বলেন, ‘ত্রিশটি নিবন্ধিত দলকে জুলাই সনদে ডাকা হয়নি। কেন ডাকা হয়নি, সেটা আমরা জানি না। এ বিষয়ে সরকার ও ঐকমত্য কমিশন কিছুটা তাদের শপথভঙ্গের কাজ করেছে বলে আমি মনে করি।’
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘কী বা কোন বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে দাওয়াত দেননি, সেইটা আমাদেরকে কেউই বলেননি। কিন্তু বিষয়টিকে দুঃখজনক ও আংশিকভাবে বৈষম্যমূলক মনে করি। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরাও অবদান রাখার অধিকার ও দক্ষতা রাখি বলে আমি মনে করি। আমি ও আমাদের পার্টি অবশ্যই চলমান সংস্কারগুলোকে স্বাগত জানাচ্ছি।’
বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির (বিএমজেপি) সভাপতি সুকৃতি কুমার মণ্ডল বলেন, ‘রাষ্ট্র মনে করেছে, আমাদের দরকার নেই—তাই ডাকা হয়নি। এখন আমাদের কিছু করার নেই। আমরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করি। এটাই সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক দল। অথচ আমাদের ডাকা হয়নি।’
সুকৃতি কুমার মণ্ডল আরও বলেন, ‘যেসব দলকে জুলাই সনদ অনুষ্ঠানে ডাকা হয়েছে, তাদের সবাই তো আর গুরুত্বপূর্ণ নয়। আবার দেশের সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব করা সত্ত্বেও আমাদের ডাকা জরুরি মনে করেনি তারা। তাহলে এখানে কীসের ঐকমত্য? কোনো ঐকমত্য নেই, সব ভুয়া। আমি তো ফ্যাসিস্ট না, হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে ছিলাম।’
ঐকমত্য কমিশনে বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লবের মতামত নেওয়া হয়নি জানিয়েছেন দলের মহাসচিব শেখ রায়হান রাহবার। তিনি বলেন, ‘আমাদের চেয়ারম্যান ইমাম হায়াত দেশ ও জনগণের কল্যাণে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে সুস্পষ্ট কথা বলার কারণে বিরাগভাজন হয়েছেন। জুলাই সনদ বিষয়ে আমাদের দলের সুস্পষ্ট অবস্থান ছিল। তবে শুধু সনদ দিয়ে তো রাষ্ট্র চলে না, আনুষঙ্গিক অনেক বিষয় জড়িত। মতামত দেওয়ার সুযোগ পেলে অবশ্যই আমরা কথা বলতাম।’
এখানে ঐকমত্যের কথা বলা হলেও নিজেদের মতের বাইরে কাউকে নেওয়া হচ্ছে না—এমন অভিযোগ করে শেখ রায়হান বলেন, ‘অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনলেও আবার আগের অবস্থায় চলে যাচ্ছে। অনেক দলের নিবন্ধন নেই, সদস্যও নেই, অথচ তাদের ডাকা হচ্ছে। আমাদের ডাকা হচ্ছে না, এটা হাস্যকর।’
খেলাফত আন্দোলনকে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ডাকা হয়নি জানিয়ে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। কিন্তু জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আমাদের ডাকা হয়নি। কোন কারণে আমাদের ডাকা হয়নি, সেটা আজ পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।’
ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে জুলাই সনদ অনুষ্ঠানে ডাকা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়লেও বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তৃণমূল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মেজর (অব.) ডা. শেখ হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘তারা জাতীয় ঐকমত্যের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এটার সংযোজন–বিয়োজন হবে। সময় সবকিছু ঠিক করে দেয়। হয়তো তারা শুরু করেছে। ভবিষ্যতে আমরাও এটির সঙ্গে একমত থাকতে পারি। রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই।’
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে যারা বিজয়ী হয়েছেন, তারাই কেবল জুলাই সনদ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।
তিনি বলেন, আগেও এমনটি ঘটেছে। ১৯৭১ সালে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, যাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেই দেশ স্বাধীন হয়, স্বাধীনতার পরে তাদের বাদ দিয়েই ১৯৭২ সালের গণপরিষদ ও বাহাত্তরের সংবিধান তৈরি হয়েছে।
বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরেও একটি সনদ তৈরি হয়েছিল, যদিও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। কাজেই যারা পরাজিত শক্তি, তাদের তো সনদে স্বাক্ষরের প্রশ্ন আসে না। যারা ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল, যে দল বা সরকার ও তাদের সহযোগীরা—সঙ্গত কারণেই ফ্যাসিবাদবিরোধী আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তারা যুক্ত ছিল না, বরং তারা বিরুদ্ধেই ছিল। যে কারণে তারা এই সংস্কার প্রক্রিয়ার আলোচনায় অংশ করেনি বা তাদের ডাকা হয়নি।
বাসদ সম্পাদক আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশ ছাড়া। তাদের মন্ত্রী, এমপি এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের অনেকেই পলাতক। ১৪ দলসহ তাদের অন্যান্য সহযোগী সংগঠন আছে, তাদেরও প্রকাশ্য কোনো কর্মতৎপরতা নেই। তাদের সেই নৈতিক সাহসও নেই।’
বজলুর রশীদ বলেন, গত ১৫ বছরে যে দুঃশাসন চলেছে, গুম–খুন–হত্যা ও নির্যাতন হয়েছে; এমনকি জুলাই হত্যাকাণ্ড নিয়েও এসব দলের কোনো অনুশোচনা নেই। ভুল স্বীকার নেই, জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনাও নেই। এসব কারণেই জুলাই প্রক্রিয়ার সঙ্গে তারা যুক্ত ছিল না। যারা বিজয়ী শক্তি তারাই এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে। এই প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা নেই।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ওইসব দলের (জুলাই হত্যায় জড়িত) কিছু সমর্থক তো আছেই। দেশের নাগরিক হিসেবে তারা আছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হলে তাদের জাতির কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হবে। যারা গুরুতর অপরাধ করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় একটা রিকনসিলিয়েশন হয়।
জুলাই সনদ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকলেও তাতে দ্বিমত দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক বিষয়ে একমত, অনেক বিষয়ে ভিন্নমত দিয়েছি, ঘোরতর দ্বিমতও দিয়েছি। কিন্তু মূল বিষয় যেগুলো আছে, যেমন স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস সঠিকভাবে বর্ণনা করা, রাষ্ট্রের চার মূলনীতি বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা বলেছিলাম। এমন কিছু বিবেচনায় নিয়ে আমরাও জুলাই সনদে সই করা থেকে বিরত থাকছি।’
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অনেকগুলো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আমন্ত্রণ পায়নি—এটি কীভাবে দেখতে চান, জানতে চাইলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, সংস্কার প্রস্তাব থেকে ঐকমত্য কমিশন গঠিত হওয়ার পর থেকে যে প্রক্রিয়ায় এগোনো হয়েছে, সেই বিবেচনায় এই প্রশ্নটি কতটা প্রাসঙ্গিক, তা বলতে পারব না। সব মত–পথের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য তারা কাজ করেছে। আমরা সেখানে কখনো বলিনি—ওরা বাদ পড়েছে।
নিজের অবস্থান ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন বা অগ্রযাত্রার সূচনা হয়েছে, সেটার ভিত্তি হিসেবে ধরতে চাই জুলাই সনদকে। জুলাই সনদ আমাদের প্রত্যাশার জায়গায় পৌঁছেছে বলে আমরা মনে করি না। জুলাই সনদকে ধারণ করেই আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হতে চাই। পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখেই এত আয়োজন ও আলোচনা। ভিন্নমত সত্ত্বেও যে আমরা বসতে পেরেছি, এটা রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। রাষ্ট্রগঠনের প্রক্রিয়া একদিনে বা এক ঘোষণায় হয়ে যায় না।
এই রাজনীতিবিদ আরও বলেন, এটা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়ার পথ। আমরা মনে করি, এই অর্জনটিকে ধারণ করে জাতির আকাঙ্ক্ষা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। আমরা জুলাই সনদে সই করব।
জাকের পার্টির সাবেক মহাসচিব ও বর্তমান স্থায়ী কমিটির সদস্য এজাজুর রসুল বলেন, ‘আমরা যাব, জুলাই সনদে সই করব।’
অনেকগুলো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এই সনদ সই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পায়নি—এতে জাতীয় ঐকমত্যে বাধা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সফল ঐকমত্য হবে না। তবে আমরা যেহেতু বৈঠকে গিয়েছি, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনেক কথাবার্তা হয়েছে অনেক দিন ধরে। যাই হোক, তারা ন্যূনতম একটা ঐকমত্যে পৌঁছেছে, যেটা খারাপ না। কাজেই জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠানে যেতে অসুবিধা দেখি না। যেটুকু হয়েছে, সেটুকু কম কী! সামনের দিকে আরও সংস্কার হতে পারে।’
উল্লেখ্য, বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫২টি। এর মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। জুলাই সনদ ইস্যুতে ঐকমত্য কমিশনের কয়েক ধাপের সংলাপে অন্তত ৩৩টি দল ও সমমনা জোট অংশ নেয়। এর মধ্যে মাত্র ২১টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত।
ঐকমত্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, আমজনতার দল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, গণঅধিকার পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জাকের পার্টি, জাতীয় গণফ্রন্ট, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল–জেএসডি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল–বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল–বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি–সিপিবি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল–বাসদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি–বিএসপি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল–মার্কসবাদী, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি–এলডিপি ও ১২ দলীয় জোট জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ও জুলাই সনদ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২১টি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত।
জুলাই সনদের সার্বিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, ‘এটা তো জাতীয় ঐকমত্য হয়নি। জাতীয় ঐকমত্য তখনই বলব, যখন দেখব পুরো জাতি যুক্ত আছে। এখানে তো পুরো জাতি যুক্ত নেই। আওয়ামী লীগ অন্যায় করেছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু তাদের ভোটাররা তো অন্যায় করেনি। কাজেই, জুলাই সনদের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য হয়নি।’
জুলাই সনদ প্রক্রিয়ার বাইরে রয়েছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত অন্তত ৩০টি রাজনৈতিক দল। জুলাই সনদের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের যোগাযোগ, সংলাপ বা মতামত নেওয়া হয়নি তাদের থেকে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় আন্দোলনে অংশ নেওয়া কয়েকটি রাজনৈতিক দলও এই প্রক্রিয়ার বাইরে ছিল বলে জানা গেছে। তবে, ফ্যাসিবাদের সহযোগীদের এই প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন কেউ কেউ। সবমিলিয়ে, যে ঐকমত্যের জন্য জুলাই সনদ করা হয়েছে, তা সফল হবে না বলে মনে করেন অনেক রাজনীতিবিদ।
অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই উদ্যোগে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত না করায় দেশ সংঘাত ও দ্বন্দ্বের দিকে চলে যাবে বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় প্রচুর অনিবন্ধিত শক্তিকে ডাকা হয়েছে। বৈধ অনেককে ডাকা হয়নি। এটা অগণতান্ত্রিক ও বৈষম্যমূলক। অবশ্যই এটা ঐক্যের প্রতীকও না। ফলে এটা ঐক্যের দিকে না গিয়ে বরং সংঘাত ও দ্বন্দ্বের দিকে যাচ্ছে। অনেক দিন পর্যন্ত এই সংঘাত চলবে।’
সংঘাতমুক্ত একটি নতুন ধারার রাজনীতি চেয়েছিলাম—মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আমি মনে করি, ঐকমত্য কমিশন ও সরকার একটা জটিলতা সৃষ্টি করেছে, নিজেরাও জটিলতায় পড়েছে। এ থেকে আশু উত্তরণে পদক্ষেপ নিতে দেখছি না।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘আমরা মনে করি, সবাইকে ডেকে সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি জুলাই সনদ করলে সেটি টেকসই হতো, দেশের স্বার্থরক্ষা হতো, দেশে স্থিতিশীলতা আসত এবং দেশে নতুন গণতন্ত্রের উদ্ভব ঘটত। এখন যেটা করা হচ্ছে, সেটি একটি চাপিয়ে দেওয়া সংস্কার হবে।’
এসব কারণে জুলাই সনদের প্রতি অনেকের শ্রদ্ধা থাকবে না, অংশগ্রহণ থাকবে না এবং মালিকানা থাকবে না বলে মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব। তিনি বলেন, মালিকানা না থাকলে জুলাই সনদকে রক্ষার তাগিদও অনেকে অনুভব করবে না।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী অভিযোগ করে বলেন, ‘ত্রিশটি নিবন্ধিত দলকে জুলাই সনদে ডাকা হয়নি। কেন ডাকা হয়নি, সেটা আমরা জানি না। এ বিষয়ে সরকার ও ঐকমত্য কমিশন কিছুটা তাদের শপথভঙ্গের কাজ করেছে বলে আমি মনে করি।’
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘কী বা কোন বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে দাওয়াত দেননি, সেইটা আমাদেরকে কেউই বলেননি। কিন্তু বিষয়টিকে দুঃখজনক ও আংশিকভাবে বৈষম্যমূলক মনে করি। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরাও অবদান রাখার অধিকার ও দক্ষতা রাখি বলে আমি মনে করি। আমি ও আমাদের পার্টি অবশ্যই চলমান সংস্কারগুলোকে স্বাগত জানাচ্ছি।’
বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির (বিএমজেপি) সভাপতি সুকৃতি কুমার মণ্ডল বলেন, ‘রাষ্ট্র মনে করেছে, আমাদের দরকার নেই—তাই ডাকা হয়নি। এখন আমাদের কিছু করার নেই। আমরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করি। এটাই সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক দল। অথচ আমাদের ডাকা হয়নি।’
সুকৃতি কুমার মণ্ডল আরও বলেন, ‘যেসব দলকে জুলাই সনদ অনুষ্ঠানে ডাকা হয়েছে, তাদের সবাই তো আর গুরুত্বপূর্ণ নয়। আবার দেশের সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব করা সত্ত্বেও আমাদের ডাকা জরুরি মনে করেনি তারা। তাহলে এখানে কীসের ঐকমত্য? কোনো ঐকমত্য নেই, সব ভুয়া। আমি তো ফ্যাসিস্ট না, হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে ছিলাম।’
ঐকমত্য কমিশনে বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লবের মতামত নেওয়া হয়নি জানিয়েছেন দলের মহাসচিব শেখ রায়হান রাহবার। তিনি বলেন, ‘আমাদের চেয়ারম্যান ইমাম হায়াত দেশ ও জনগণের কল্যাণে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে সুস্পষ্ট কথা বলার কারণে বিরাগভাজন হয়েছেন। জুলাই সনদ বিষয়ে আমাদের দলের সুস্পষ্ট অবস্থান ছিল। তবে শুধু সনদ দিয়ে তো রাষ্ট্র চলে না, আনুষঙ্গিক অনেক বিষয় জড়িত। মতামত দেওয়ার সুযোগ পেলে অবশ্যই আমরা কথা বলতাম।’
এখানে ঐকমত্যের কথা বলা হলেও নিজেদের মতের বাইরে কাউকে নেওয়া হচ্ছে না—এমন অভিযোগ করে শেখ রায়হান বলেন, ‘অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনলেও আবার আগের অবস্থায় চলে যাচ্ছে। অনেক দলের নিবন্ধন নেই, সদস্যও নেই, অথচ তাদের ডাকা হচ্ছে। আমাদের ডাকা হচ্ছে না, এটা হাস্যকর।’
খেলাফত আন্দোলনকে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ডাকা হয়নি জানিয়ে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। কিন্তু জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আমাদের ডাকা হয়নি। কোন কারণে আমাদের ডাকা হয়নি, সেটা আজ পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।’
ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে জুলাই সনদ অনুষ্ঠানে ডাকা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়লেও বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তৃণমূল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মেজর (অব.) ডা. শেখ হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘তারা জাতীয় ঐকমত্যের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এটার সংযোজন–বিয়োজন হবে। সময় সবকিছু ঠিক করে দেয়। হয়তো তারা শুরু করেছে। ভবিষ্যতে আমরাও এটির সঙ্গে একমত থাকতে পারি। রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই।’
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে যারা বিজয়ী হয়েছেন, তারাই কেবল জুলাই সনদ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।
তিনি বলেন, আগেও এমনটি ঘটেছে। ১৯৭১ সালে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, যাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেই দেশ স্বাধীন হয়, স্বাধীনতার পরে তাদের বাদ দিয়েই ১৯৭২ সালের গণপরিষদ ও বাহাত্তরের সংবিধান তৈরি হয়েছে।
বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরেও একটি সনদ তৈরি হয়েছিল, যদিও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। কাজেই যারা পরাজিত শক্তি, তাদের তো সনদে স্বাক্ষরের প্রশ্ন আসে না। যারা ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল, যে দল বা সরকার ও তাদের সহযোগীরা—সঙ্গত কারণেই ফ্যাসিবাদবিরোধী আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তারা যুক্ত ছিল না, বরং তারা বিরুদ্ধেই ছিল। যে কারণে তারা এই সংস্কার প্রক্রিয়ার আলোচনায় অংশ করেনি বা তাদের ডাকা হয়নি।
বাসদ সম্পাদক আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশ ছাড়া। তাদের মন্ত্রী, এমপি এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের অনেকেই পলাতক। ১৪ দলসহ তাদের অন্যান্য সহযোগী সংগঠন আছে, তাদেরও প্রকাশ্য কোনো কর্মতৎপরতা নেই। তাদের সেই নৈতিক সাহসও নেই।’
বজলুর রশীদ বলেন, গত ১৫ বছরে যে দুঃশাসন চলেছে, গুম–খুন–হত্যা ও নির্যাতন হয়েছে; এমনকি জুলাই হত্যাকাণ্ড নিয়েও এসব দলের কোনো অনুশোচনা নেই। ভুল স্বীকার নেই, জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনাও নেই। এসব কারণেই জুলাই প্রক্রিয়ার সঙ্গে তারা যুক্ত ছিল না। যারা বিজয়ী শক্তি তারাই এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে। এই প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা নেই।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ওইসব দলের (জুলাই হত্যায় জড়িত) কিছু সমর্থক তো আছেই। দেশের নাগরিক হিসেবে তারা আছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হলে তাদের জাতির কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হবে। যারা গুরুতর অপরাধ করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় একটা রিকনসিলিয়েশন হয়।
জুলাই সনদ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকলেও তাতে দ্বিমত দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক বিষয়ে একমত, অনেক বিষয়ে ভিন্নমত দিয়েছি, ঘোরতর দ্বিমতও দিয়েছি। কিন্তু মূল বিষয় যেগুলো আছে, যেমন স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস সঠিকভাবে বর্ণনা করা, রাষ্ট্রের চার মূলনীতি বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা বলেছিলাম। এমন কিছু বিবেচনায় নিয়ে আমরাও জুলাই সনদে সই করা থেকে বিরত থাকছি।’
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অনেকগুলো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আমন্ত্রণ পায়নি—এটি কীভাবে দেখতে চান, জানতে চাইলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, সংস্কার প্রস্তাব থেকে ঐকমত্য কমিশন গঠিত হওয়ার পর থেকে যে প্রক্রিয়ায় এগোনো হয়েছে, সেই বিবেচনায় এই প্রশ্নটি কতটা প্রাসঙ্গিক, তা বলতে পারব না। সব মত–পথের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য তারা কাজ করেছে। আমরা সেখানে কখনো বলিনি—ওরা বাদ পড়েছে।
নিজের অবস্থান ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন বা অগ্রযাত্রার সূচনা হয়েছে, সেটার ভিত্তি হিসেবে ধরতে চাই জুলাই সনদকে। জুলাই সনদ আমাদের প্রত্যাশার জায়গায় পৌঁছেছে বলে আমরা মনে করি না। জুলাই সনদকে ধারণ করেই আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হতে চাই। পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখেই এত আয়োজন ও আলোচনা। ভিন্নমত সত্ত্বেও যে আমরা বসতে পেরেছি, এটা রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। রাষ্ট্রগঠনের প্রক্রিয়া একদিনে বা এক ঘোষণায় হয়ে যায় না।
এই রাজনীতিবিদ আরও বলেন, এটা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়ার পথ। আমরা মনে করি, এই অর্জনটিকে ধারণ করে জাতির আকাঙ্ক্ষা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। আমরা জুলাই সনদে সই করব।
জাকের পার্টির সাবেক মহাসচিব ও বর্তমান স্থায়ী কমিটির সদস্য এজাজুর রসুল বলেন, ‘আমরা যাব, জুলাই সনদে সই করব।’
অনেকগুলো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এই সনদ সই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পায়নি—এতে জাতীয় ঐকমত্যে বাধা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সফল ঐকমত্য হবে না। তবে আমরা যেহেতু বৈঠকে গিয়েছি, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনেক কথাবার্তা হয়েছে অনেক দিন ধরে। যাই হোক, তারা ন্যূনতম একটা ঐকমত্যে পৌঁছেছে, যেটা খারাপ না। কাজেই জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠানে যেতে অসুবিধা দেখি না। যেটুকু হয়েছে, সেটুকু কম কী! সামনের দিকে আরও সংস্কার হতে পারে।’
উল্লেখ্য, বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫২টি। এর মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। জুলাই সনদ ইস্যুতে ঐকমত্য কমিশনের কয়েক ধাপের সংলাপে অন্তত ৩৩টি দল ও সমমনা জোট অংশ নেয়। এর মধ্যে মাত্র ২১টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত।
ঐকমত্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, আমজনতার দল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, গণঅধিকার পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জাকের পার্টি, জাতীয় গণফ্রন্ট, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল–জেএসডি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল–বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল–বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি–সিপিবি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল–বাসদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি–বিএসপি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল–মার্কসবাদী, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি–এলডিপি ও ১২ দলীয় জোট জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ও জুলাই সনদ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২১টি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত।
জুলাই সনদের সার্বিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, ‘এটা তো জাতীয় ঐকমত্য হয়নি। জাতীয় ঐকমত্য তখনই বলব, যখন দেখব পুরো জাতি যুক্ত আছে। এখানে তো পুরো জাতি যুক্ত নেই। আওয়ামী লীগ অন্যায় করেছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু তাদের ভোটাররা তো অন্যায় করেনি। কাজেই, জুলাই সনদের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য হয়নি।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য একাধিকবার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কেউ এই নির্দেশনা অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২ ঘণ্টা আগে২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকে একটি ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ হিসেবে উল্লেখ করে সনদে বলা হয়েছে, এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ও মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগেজুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে পরিবর্তন এসেছে তা ওই গণঅভ্যুত্থানের ফলে সম্ভব হয়েছে। জুলাই সনদকে গণঅভুত্থানের দ্বিতীয় অংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আজকে যে কাজটা করলাম, এখানে স্বাক্ষর করলাম সবাই মিলে। সেটা দিয়ে বাংলাদেশের পরিবর্তন হবে।
১৫ ঘণ্টা আগেজুলাই জাতীয় সনদ হাতে না পাওয়া এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র (প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্টস) থাকা না থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে সনদে স্বাক্ষর করেনি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন দল গণফোরাম। তবে অনিশ্চয়তা দূর হওয়ায় দলটি পরে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে বলে নিশ্চিত করেছে।
১৬ ঘণ্টা আগে