জাকসু নির্বাচন নিয়ে মুখোমুখি
৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বদ্যিালয় শিক্ষার্থী সংসদের (জাকসু) নির্বাচন আজ। এর প্রাক্কালে এ নির্বাচনের গুরুত্ব ও সার্বিক পরিস্থিতিসহ প্রশাসনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে স্ট্রিম-এর সঙ্গে কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক, কথাসাহিত্যিক রায়হান রাইন
স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম : তেত্রিশ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর শিক্ষার্থী সংসদের (জাকসু) নির্বাচন। নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন?
রায়হান রাইন : এই নির্বাচন কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল? যদি এতটা গুরুত্বপূর্ণই হয়ে থাকে, তাহলে কেন তেত্রিশ বছর এটা হতে পারল না? শিক্ষার্থীদের একটা নির্বাচিত সংসদ থাকলে কী পরিবর্তন ঘটতে পারে? এসবই আপাপত ভাবনার বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, সেখানে ছাত্র সংসদ বা শিক্ষার্থী সংসদ আসলে কী ভূমিকা রাখতে পারে? উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কাজ—শিক্ষা ও গবেষণা—তা যদি ঠিকঠাক মতো হয়, সেক্ষেত্রে আলাদ করে শিক্ষার্থী সংসদের কাজটা কী? কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যাঁরা চালান, তাঁরা আসল কাজটাই হয়তো ভুলে যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার প্রধান লক্ষ্য হয়, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিযোগ, কনস্ট্রাকশন কাজ, ঠিকাদার ডিল করা ইত্যাদির কর্তৃত্ব পাওয়া। একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের একটা সহযোগী শক্তি হয়ে ওঠা। অন্যপক্ষে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের কাজ হয়, কর্তৃত্ববাদী সরকারের অগ্রবর্তী বাহিনী হিসেবে কাজ করে নির্মাণ কাজগুলো থেকে কমিশন হাতানো এবং নিয়োগ বাণিজ্যে মধ্যস্থতা করা। বিগত আমলে আমরা দেখেছি, ছাত্র সংগঠনগুলো শুধু যে নিয়োগে ভূমিকা রাখছে তাই না, বরং তাদের কাউকে কাউকে শিক্ষক হিসেবেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে একটি নির্বাচিত সংসদের গুরুত্ব বেড়ে যায়। আমরা ভাবছি, নির্বাচিত সংসদ ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস, বৈষম্য ও নিপীড়ন দূর করতে ভূমিকা রাখবে। তেত্রিশ বছর জাকসু নির্বাচন হয়নি। নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন এবং প্রশাসনের দৌরাত্ম কমে যেতে পারে, এই ভয় হয়তো কাজ করেছে। অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন একটা উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ, ক্ষমতাসীন দলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সুবিধাবাদের যে মিথোজীবিতা গড়ে তুলেছিলেন, সেটা তারা ভাঙতে চাননি।
না। নির্বাচনে যে কঠোর আচরণবিধি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, এতে করে ‘উৎসব মুখর’ পরিবেশ তৈরি হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। প্রার্থীরা কোনো সভা-সমাবেশ করতে পারছে না, নির্বাচনী বিতর্কের কোনো আয়োজন নেই। কিছু শিক্ষার্থীকে হ্যান্ডবিল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা ছাড়া কোনো উৎসব আড়ম্বর চোখে পড়ছে না।
রায়হান রাইন, অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ
স্ট্রিম : ছাত্রাবস্থায় আপনি জাকসু নির্বাচন দেখেছিলেন।এবার নির্বাচনটি দেখবেন শিক্ষক হিসেবে।দুই সময়ের মধ্যে কী ধরনের মিল-অমিল দেখতে পাচ্ছেন?
রায়হান রাইন : ছাত্রাবস্থায় আমরা জাকসু পাইনি। ফলে তুলনা করে দেখা যাচ্ছে না। তবে প্রত্যাশার তুলনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ নির্বাচন নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি না। নির্বাচনে যে কঠোর আচরণবিধি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, এতে করে ‘উৎসব মুখর’ পরিবেশ তৈরি হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। প্রার্থীরা কোনো সভা-সমাবেশ করতে পারছে না, নির্বাচনী বিতর্কের কোনো আয়োজন নেই। কিছু শিক্ষার্থীকে হ্যান্ডবিল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা ছাড়া কোনো উৎসব আড়ম্বর চোখে পড়ছে না। আমরা দেখেছি, সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের সহ-সভাপতি প্রার্থী অমর্ত্য রায়কে তাঁর প্রার্থিতা ফেরত পেতে আদালত পর্যন্ত যেতে হয়েছে। নির্বাচনের মাত্র চারদিন আগে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। এটা করা হয়েছে অত্যন্ত অন্যায্য কায়দায়। উচ্চ আদালত তাঁর প্রার্থিতা ফিরিয়ে দিতে বললেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভুয়া অজুহাত দেখিয়ে চেম্বার আদালতে গেছে। এটা প্রত্যাশা করা যায়নি। অভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার অন্যায় কাজগুলো ক্রমাগতভাবে বাড়িয়ে চলেছে।
সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের সহ-সভাপতি প্রার্থী অমর্ত্য রায়কে তাঁর প্রার্থিতা ফেরত পেতে আদালত পর্যন্ত যেতে হয়েছে। নির্বাচনের মাত্র চারদিন আগে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। এটা করা হয়েছে অত্যন্ত অন্যায্য কায়দায়। উচ্চ আদালত তাঁর প্রার্থিতা ফিরিয়ে দিতে বললেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভুয়া অজুহাত দেখিয়ে চেম্বার আদালতে গেছে। এটা প্রত্যাশা করা যায়নি।
স্ট্রিম : জাকসু নির্বাচন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
রায়হান রাইন : তিয়াত্তরের সংবিধি অনুয়ায়ী সিনেটেও পাঁচজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি থাকার কথা। কিন্তু জাকসু না থাকায় দীর্ঘদিন এই প্রতিনিধিত্ব নেই। জাকসু নির্বাচন হলে এটা সম্ভব হবে। জাকসুর মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ছাত্রদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চার একটা ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। তাঁরা দায়িত্বশীল হতে শিখবে। রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়া ভূমিকা রাখবে। আশা করা যায়, নির্বাচিত হল-সংসদ ও কেন্দ্রীয় সংসদ থাকলে হলগুলোতে র্যাগিং নিপীড়নের অপসংস্কৃতি আর ফিরে আসবে না।
স্ট্রিম: শিক্ষার্থী সংসদ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো গুণগত পরিবর্তন আনতে পারবে বলে মনে করেন?
রায়হান রাইন : বড় রকমের কোনো বদল না-ও ঘটতে পারে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পরের পরিস্থিতি দেখলেই বোঝা যায়। আর গুণগত পরিবর্তন আসলেও সেটা যে সবদিক থেকে ভালো কিছু হবে, এমনটাও আশা করা যায় না। অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে দেশে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের যে উত্থান ঘটছে, তার প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে এবং শিক্ষার্থী সংসদগুলোতে অতি-দক্ষিণপন্থীদের বিজয় ক্যাম্পাসে ধর্মীয় উগ্রবাদ বাড়তে পারে।
স্ট্রিম : জাতীয় রাজনীতিতে জাকসু-ডাকসু নেতৃত্ব কী ভূমিকা রাখতে পারে?
রায়হান রাইন: শুধু জাকসু-ডাকসু যে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি রাতারাতি বদলে দেবে, এটা আশা করা যায় না। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচনের গণতান্ত্রিক চর্চা নিয়মিত হতে থাকলে নতুন নেতৃত্ব তৈরির একটা ক্ষেত্র তৈরি হবে। আর এ প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই হয়তো কখনো জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত পথ দেখাতে পারে।
স্ট্রিম : অনেকে মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দলভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি জাতীয় পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য কোনো নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে পারেনি। তাই জাতীয় রাজনীতিতে দলভিত্তিক ছাত্ররাজনীতির কোনো প্রভাব নেই। এ বিষয়ে আপনার কী মত?
রায়হান রাইন: দলভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি সমস্যা হয়ে উঠেছে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির কারণে। জাতীয় দলগুলোর মতো একই রকম ক্ষমতার চর্চাই তারা করেছে। আমরা দেখেছি, ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে ছাত্রসংগঠনগুলো তাদের লাঠিয়াল, হাতুড়ি কিংবা হেলমেট বাহিনী হিসেবে কাজ করেছে। এই চর্চা আমাদের জন্য ভালো কিছু কখনোই বয়ে আনবে না।
অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে দেশে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের যে উত্থান ঘটছে, তার প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে এবং শিক্ষার্থী সংসদগুলোতে অতি-দক্ষিণপন্থীদের বিজয় ক্যাম্পাসে ধর্মীয় উগ্রবাদ বাড়তে পারে।
স্ট্রিম : গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে ছাত্ররা কি সঠিক ভূমিকা পালন করতে পেরেছে?
রায়হান রাইন : সব ছাত্রই এক রকমের ছাত্র না। কিছু ছাত্রের মধ্যে বিগত রেজিমের জায়গা দখলের প্রবণতা আছে। আবার কিছু ছাত্র সংগঠনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে গুণগত পরিবর্তন এবং সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাও আছে। বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারে তাদের প্রস্তাবনাও হাজির করেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে সেগুলো বাস্তবায়নের তেমন কোনো আগ্রহ চোখে পড়েনি। আবার কিছু ছাত্র সংগঠনের মধ্যে জুলাইয়ের একমাত্র কর্তা হয়ে ওঠার বাসনা দেখা গেছে। এই দাবি নিয়ে তারা প্রশাসনকে করায়ত্ত করে তাদের কর্তৃত্ব জাহিরের চেষ্টাও করেছে। অভ্যুত্থানের পর নানা ক্ষেত্রে সংস্কার কমিশন হলেও শিক্ষা সংস্কারে কোনো কমিশন গঠিত হয়নি। কমিশনগুলো যে খসড়া সংস্কার প্রস্তাব হাজির করেছে, তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে ভূমিকা রাখার ব্যাপারে ছাত্রদের জন্য কোনো সুযোগই রাখা হয়নি।
স্ট্রিম : তেত্রিশ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর শিক্ষার্থী সংসদের (জাকসু) নির্বাচন। নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন?
রায়হান রাইন : এই নির্বাচন কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল? যদি এতটা গুরুত্বপূর্ণই হয়ে থাকে, তাহলে কেন তেত্রিশ বছর এটা হতে পারল না? শিক্ষার্থীদের একটা নির্বাচিত সংসদ থাকলে কী পরিবর্তন ঘটতে পারে? এসবই আপাপত ভাবনার বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, সেখানে ছাত্র সংসদ বা শিক্ষার্থী সংসদ আসলে কী ভূমিকা রাখতে পারে? উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কাজ—শিক্ষা ও গবেষণা—তা যদি ঠিকঠাক মতো হয়, সেক্ষেত্রে আলাদ করে শিক্ষার্থী সংসদের কাজটা কী? কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যাঁরা চালান, তাঁরা আসল কাজটাই হয়তো ভুলে যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার প্রধান লক্ষ্য হয়, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিযোগ, কনস্ট্রাকশন কাজ, ঠিকাদার ডিল করা ইত্যাদির কর্তৃত্ব পাওয়া। একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের একটা সহযোগী শক্তি হয়ে ওঠা। অন্যপক্ষে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের কাজ হয়, কর্তৃত্ববাদী সরকারের অগ্রবর্তী বাহিনী হিসেবে কাজ করে নির্মাণ কাজগুলো থেকে কমিশন হাতানো এবং নিয়োগ বাণিজ্যে মধ্যস্থতা করা। বিগত আমলে আমরা দেখেছি, ছাত্র সংগঠনগুলো শুধু যে নিয়োগে ভূমিকা রাখছে তাই না, বরং তাদের কাউকে কাউকে শিক্ষক হিসেবেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে একটি নির্বাচিত সংসদের গুরুত্ব বেড়ে যায়। আমরা ভাবছি, নির্বাচিত সংসদ ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস, বৈষম্য ও নিপীড়ন দূর করতে ভূমিকা রাখবে। তেত্রিশ বছর জাকসু নির্বাচন হয়নি। নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন এবং প্রশাসনের দৌরাত্ম কমে যেতে পারে, এই ভয় হয়তো কাজ করেছে। অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন একটা উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ, ক্ষমতাসীন দলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সুবিধাবাদের যে মিথোজীবিতা গড়ে তুলেছিলেন, সেটা তারা ভাঙতে চাননি।
না। নির্বাচনে যে কঠোর আচরণবিধি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, এতে করে ‘উৎসব মুখর’ পরিবেশ তৈরি হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। প্রার্থীরা কোনো সভা-সমাবেশ করতে পারছে না, নির্বাচনী বিতর্কের কোনো আয়োজন নেই। কিছু শিক্ষার্থীকে হ্যান্ডবিল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা ছাড়া কোনো উৎসব আড়ম্বর চোখে পড়ছে না।
রায়হান রাইন, অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ
স্ট্রিম : ছাত্রাবস্থায় আপনি জাকসু নির্বাচন দেখেছিলেন।এবার নির্বাচনটি দেখবেন শিক্ষক হিসেবে।দুই সময়ের মধ্যে কী ধরনের মিল-অমিল দেখতে পাচ্ছেন?
রায়হান রাইন : ছাত্রাবস্থায় আমরা জাকসু পাইনি। ফলে তুলনা করে দেখা যাচ্ছে না। তবে প্রত্যাশার তুলনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ নির্বাচন নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি না। নির্বাচনে যে কঠোর আচরণবিধি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, এতে করে ‘উৎসব মুখর’ পরিবেশ তৈরি হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। প্রার্থীরা কোনো সভা-সমাবেশ করতে পারছে না, নির্বাচনী বিতর্কের কোনো আয়োজন নেই। কিছু শিক্ষার্থীকে হ্যান্ডবিল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা ছাড়া কোনো উৎসব আড়ম্বর চোখে পড়ছে না। আমরা দেখেছি, সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের সহ-সভাপতি প্রার্থী অমর্ত্য রায়কে তাঁর প্রার্থিতা ফেরত পেতে আদালত পর্যন্ত যেতে হয়েছে। নির্বাচনের মাত্র চারদিন আগে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। এটা করা হয়েছে অত্যন্ত অন্যায্য কায়দায়। উচ্চ আদালত তাঁর প্রার্থিতা ফিরিয়ে দিতে বললেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভুয়া অজুহাত দেখিয়ে চেম্বার আদালতে গেছে। এটা প্রত্যাশা করা যায়নি। অভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার অন্যায় কাজগুলো ক্রমাগতভাবে বাড়িয়ে চলেছে।
সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের সহ-সভাপতি প্রার্থী অমর্ত্য রায়কে তাঁর প্রার্থিতা ফেরত পেতে আদালত পর্যন্ত যেতে হয়েছে। নির্বাচনের মাত্র চারদিন আগে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। এটা করা হয়েছে অত্যন্ত অন্যায্য কায়দায়। উচ্চ আদালত তাঁর প্রার্থিতা ফিরিয়ে দিতে বললেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভুয়া অজুহাত দেখিয়ে চেম্বার আদালতে গেছে। এটা প্রত্যাশা করা যায়নি।
স্ট্রিম : জাকসু নির্বাচন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
রায়হান রাইন : তিয়াত্তরের সংবিধি অনুয়ায়ী সিনেটেও পাঁচজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি থাকার কথা। কিন্তু জাকসু না থাকায় দীর্ঘদিন এই প্রতিনিধিত্ব নেই। জাকসু নির্বাচন হলে এটা সম্ভব হবে। জাকসুর মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ছাত্রদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চার একটা ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। তাঁরা দায়িত্বশীল হতে শিখবে। রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়া ভূমিকা রাখবে। আশা করা যায়, নির্বাচিত হল-সংসদ ও কেন্দ্রীয় সংসদ থাকলে হলগুলোতে র্যাগিং নিপীড়নের অপসংস্কৃতি আর ফিরে আসবে না।
স্ট্রিম: শিক্ষার্থী সংসদ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো গুণগত পরিবর্তন আনতে পারবে বলে মনে করেন?
রায়হান রাইন : বড় রকমের কোনো বদল না-ও ঘটতে পারে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পরের পরিস্থিতি দেখলেই বোঝা যায়। আর গুণগত পরিবর্তন আসলেও সেটা যে সবদিক থেকে ভালো কিছু হবে, এমনটাও আশা করা যায় না। অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে দেশে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের যে উত্থান ঘটছে, তার প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে এবং শিক্ষার্থী সংসদগুলোতে অতি-দক্ষিণপন্থীদের বিজয় ক্যাম্পাসে ধর্মীয় উগ্রবাদ বাড়তে পারে।
স্ট্রিম : জাতীয় রাজনীতিতে জাকসু-ডাকসু নেতৃত্ব কী ভূমিকা রাখতে পারে?
রায়হান রাইন: শুধু জাকসু-ডাকসু যে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি রাতারাতি বদলে দেবে, এটা আশা করা যায় না। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচনের গণতান্ত্রিক চর্চা নিয়মিত হতে থাকলে নতুন নেতৃত্ব তৈরির একটা ক্ষেত্র তৈরি হবে। আর এ প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই হয়তো কখনো জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত পথ দেখাতে পারে।
স্ট্রিম : অনেকে মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দলভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি জাতীয় পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য কোনো নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে পারেনি। তাই জাতীয় রাজনীতিতে দলভিত্তিক ছাত্ররাজনীতির কোনো প্রভাব নেই। এ বিষয়ে আপনার কী মত?
রায়হান রাইন: দলভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি সমস্যা হয়ে উঠেছে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির কারণে। জাতীয় দলগুলোর মতো একই রকম ক্ষমতার চর্চাই তারা করেছে। আমরা দেখেছি, ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে ছাত্রসংগঠনগুলো তাদের লাঠিয়াল, হাতুড়ি কিংবা হেলমেট বাহিনী হিসেবে কাজ করেছে। এই চর্চা আমাদের জন্য ভালো কিছু কখনোই বয়ে আনবে না।
অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে দেশে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের যে উত্থান ঘটছে, তার প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে এবং শিক্ষার্থী সংসদগুলোতে অতি-দক্ষিণপন্থীদের বিজয় ক্যাম্পাসে ধর্মীয় উগ্রবাদ বাড়তে পারে।
স্ট্রিম : গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে ছাত্ররা কি সঠিক ভূমিকা পালন করতে পেরেছে?
রায়হান রাইন : সব ছাত্রই এক রকমের ছাত্র না। কিছু ছাত্রের মধ্যে বিগত রেজিমের জায়গা দখলের প্রবণতা আছে। আবার কিছু ছাত্র সংগঠনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে গুণগত পরিবর্তন এবং সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাও আছে। বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারে তাদের প্রস্তাবনাও হাজির করেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে সেগুলো বাস্তবায়নের তেমন কোনো আগ্রহ চোখে পড়েনি। আবার কিছু ছাত্র সংগঠনের মধ্যে জুলাইয়ের একমাত্র কর্তা হয়ে ওঠার বাসনা দেখা গেছে। এই দাবি নিয়ে তারা প্রশাসনকে করায়ত্ত করে তাদের কর্তৃত্ব জাহিরের চেষ্টাও করেছে। অভ্যুত্থানের পর নানা ক্ষেত্রে সংস্কার কমিশন হলেও শিক্ষা সংস্কারে কোনো কমিশন গঠিত হয়নি। কমিশনগুলো যে খসড়া সংস্কার প্রস্তাব হাজির করেছে, তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে ভূমিকা রাখার ব্যাপারে ছাত্রদের জন্য কোনো সুযোগই রাখা হয়নি।
এই নির্বাচনে আমার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সাইবার বুলিং। রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে একটি গোষ্ঠী প্রতিনিয়ত অনলাইনে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
৫ দিন আগেএ ঘটনায় সরকারের প্রতিক্রিয়াও তাই সীমিত। তারা কেবল ‘তীব্র নিন্দা’ জানিয়েছে। অনেকেই সরকারের এ প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেছেন। কারণ, সরকারে থেকেও এমন দায়সারা প্রতিক্রিয়া দিলে তা একধরনের অসংগত অবস্থানই প্রকাশ করে।
১১ দিন আগেআজ দেশের সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। দেশের প্রকৌশলের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন নিয়ে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী লাজিম আল মুত্তাকিনের সঙ্গে কথা বলেছে স্ট্রিম।
১৪ দিন আগেআট বছর পেরিয়ে গেলেও রোহিঙ্গা সংকটের কার্যকর কোনও সমাধান হয়নি। ভবিষ্যতও অনিশ্চিত। এই সংকট এখন কার্যত ‘স্থবির অবস্থায়’ রয়েছে। কারণ সমাধান শুধু বাংলাদেশ–মিয়ানমারের উপর নির্ভর করছে না। বরং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সক্রিয় ভূমিকাও জরুরি।
১৬ দিন আগে