leadT1ad

নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সাইবার বুলিং: আবিদুল ইসলাম খান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান। আসন্ন এই নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজের অভিজ্ঞতা, অঙ্গীকার ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে স্ট্রিমের সঙ্গে কথা বলেছেন আবিদুল ইসলাম খান।

মো. ইসতিয়াক
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০: ৩৩
ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান। স্ট্রিম গ্রাফিক

স্ট্রিম: ডাকসু নির্বাচনে আপনার প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী?
আবিদুল ইসলাম খান: এই নির্বাচনে আমার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সাইবার বুলিং। রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে একটি গোষ্ঠী প্রতিনিয়ত অনলাইনে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট পরিপক্ব। তারা এসব মিথ্যা প্রচারণা উপেক্ষা করে সঠিকভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এসব ভুয়া প্রচারণা থেকে দূরে রাখা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

স্ট্রিম: ডাকসু নির্বাচন হঠাৎ স্থগিত হওয়ার পর আপনাকে ভিন্ন ভূমিকায় দেখা গেছে। সে অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন?
আবিদুল ইসলাম খান: হ্যাঁ, ওইদিন আমি ভিসি চত্বরে প্রচারণা চালাচ্ছিলাম। হঠাৎ যমুনা টিভির এক সাংবাদিক আমাকে ফোন দিয়ে জানালেন, ডাকসু নির্বাচন স্থগিত হয়ে গেছে। বিষয়টা আমি সহজভাবে নিতে পারিনি। দ্রুত আমার প্যানেলকে ডেকে বৈঠক করি। রিটটা হয়েছিল একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে, তাই এর রায়ও তার পক্ষে-বিপক্ষে আসা উচিত ছিল। কিন্তু এখানে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আটকে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল।

আমার মনে হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার জন্য এটা একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। ওই মুহূর্তে আমার মধ্যে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময়কার দৃঢ়তা ফিরে এসেছিল। আমি তখনই বলেছিলাম, নির্বাচন যথাসময়ে যথাযথভাবে হতে হবে। কারণ ডাকসুর নির্বাচন বন্ধ হলে জাতীয় নির্বাচনের ওপরও প্রভাব পড়তে পারত।

স্ট্রিম: আপনার মতে, এই ষড়যন্ত্রের পেছনে কোনো গোষ্ঠীর প্রভাব আছে কি?
আবিদুল ইসলাম খান: আমার মনে হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ছিল একজন নিরপেক্ষ আইনজীবী নিয়োগ করা। কিন্তু যিনি নিযুক্ত হয়েছেন, তিনি একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শ বহন করেন। ফলে আমাদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে যে, এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছে।

স্ট্রিম: ডাকসু নির্বাচনে জয়ী হলে আপনার প্রথম কাজ ও অগ্রাধিকারসমূহ কী হবে?
আবিদুল ইসলাম খান: প্রথমত, ক্যাম্পাসজুড়ে নতুন ক্যান্টিন স্থাপন ও খাবারের মানোন্নয়ন করা। বিশেষ করে কার্জন হল, মোতাহার ও মোকাররম ভবনে দ্রুত ক্যান্টিন চালু করতে চাই। খাবারের মানোন্নয়নে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করব।

দ্বিতীয়ত, ক্যাম্পাস নিরাপত্তা জোরদার করা। বহিরাগত ও ভবঘুরেমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তোলার জন্য আমরা পুরো এলাকা রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করব, যেখানে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ থাকবে।

তৃতীয়ত, অন-ক্যাম্পাস জবের সুযোগ তৈরি করা। শিক্ষার্থীরা টিউশনির উপর নির্ভরশীল হয়ে সমস্যায় পড়ে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও রেজিস্ট্রার ভবনের পার্ট-টাইম চাকরিগুলোতে শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পাশাপাশি, বছরে দুই থেকে তিনবার জব ফেয়ার আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা চাকরি ও ইন্টার্নশিপের সুযোগ পান।

স্ট্রিম: ডাকসুকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মাঝে যে আমেজ বয়ে যাচ্ছে, এই আমেজকে কীভাবে দেখছেন?
আবিদুল ইসলাম খান: ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন ছিল কারচুপিপূর্ণ, পরিকল্পিত নির্বাচন। আমি তখন সদস্য প্রার্থী ছিলাম, কিন্তু নিজের ভোটও দিতে পারিনি। এবার দীর্ঘ ৩৪ বছর পর একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা আমাদের ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছেন, ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। মনে হচ্ছে, অবশেষে একটি জবাবদিহিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে।

স্ট্রিম: ডাকসুকে ঘিরে প্রার্থীদের অনেকেই সাইবার বুলিং এর শিকার হচ্ছেন। যা কিনা অন্যতম বড় সমস্যা। বিশেষ করে মেয়েরা ভুক্তভোগী। এ বিষয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
আবিদুল ইসলাম খান: ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি, নারী শিক্ষার্থীরা নিয়মিত সাইবার বুলিং ও নৈতিক পুলিশিংয়ের শিকার হচ্ছেন। ওড়না পরিধান নিয়ে মন্তব্য, ক্যাম্পাসে ছবি তোলা, এমনকি ধর্ষণের হুমকির মতো ভয়ঙ্কর ঘটনাও ঘটেছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতার কারণে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। ডাকসু জিতে আমরা একটি সেল গঠন করব, যেখানে নারী নিপীড়ন সংক্রান্ত অভিযোগ ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হবে। নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়তে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করব। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সবাই যাতে সমানভাবে ক্যাম্পাসে চলাফেরা করতে পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

স্ট্রিম: ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য ক্যাম্পাসকে কতটা নিরাপদ করতে চান?
আবিদুল ইসলাম খান: আমাদের লক্ষ্য হলো একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক ক্যাম্পাস তৈরি করা। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা মুসলিম—সব শিক্ষার্থী সমান অধিকার ভোগ করবে। এখানে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। আমরা বিশ্বাস করি, সবার আগে আমরা বাংলাদেশি। এই ধারণাকে আমরা ক্যাম্পাসজুড়ে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

স্ট্রিম: মনে করা হচ্ছে, এবারের ভোটে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে ছাত্রী ও জগন্নাথ হলের ভোট। এই ভোট ব্যাংক আকৃষ্ট করতে আপনাদের বিশেষ কোনো কৌশল আছে কি?
আবিদুল ইসলাম খান: আমি এখন পর্যন্ত অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, জগন্নাথ হল ও ছাত্রীদের হলে আমাদের পক্ষে একচেটিয়া সমর্থন আছে। এই সমর্থনের ভিত্তি আমাদের দীর্ঘ সংগ্রাম, সততা, নিষ্ঠা এবং দুঃশাসনকে মোকাবিলা করার মানসিকতা। জগন্নাথ হল ও ছাত্রীদের হলের ভোটের সমীকরণ নিঃসন্দেহে নির্বাচনের ফলাফল ঘোরানোর জন্য ভূমিকা রাখবে। ছাত্রীদের হলগুলোতে আমাদের প্রতিনিধিরা যাচ্ছেন। সাধারণ ছাত্রীরা তাঁদের খুব আগ্রহের সঙ্গে গ্রহণ করছেন। ছাত্রী হলে আমাদের পরিচিতি সভার আয়োজন চলছে। এ ছাড়া জগন্নাথ হলের প্রতিটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। সেখানেও অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি।

Ad 300x250

সম্পর্কিত