হামাসের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার পর বিশ্ববাসীর মধ্যে আশা দেখা দিয়েছে যে এবার হতো গাজায় চলমান ইসরায়েলের দুই বছরের গণহত্যা, জাতিগত নিধনযজ্ঞ এবং ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ হবে।
স্ট্রিম ডেস্ক
ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনায় হামাসের আংশিক সমর্থনের পর বিশ্বজুড়ে আশাবাদ জেগেছে। কাতারসহ গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারীরাও এতে আশা খুঁজছেন। দুই বছর ধরে চলা গণহত্যা থামার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে।
শুক্রবার রাতে হামাস জানায়, তারা বাকি বন্দিদের মুক্তি দিতে প্রস্তুত। তারা গাজার ক্ষমতাও হস্তান্তরে রাজি। তবে প্রস্তাবের অন্যান্য বিষয় নিয়ে আরও আলোচনা দরকার।
হামাসের প্রতিক্রিয়ার পর ট্রাম্প শনিবার সকারে ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করতে বলেন। তিনি হামাসকে ‘স্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত’ বলেও উল্লেখ করেন। ট্রাম্প হামাসের প্রশংসা করায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বিস্মিত হন।
পরে নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, জিম্মিদের মুক্তির প্রথম ধাপ বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী প্রস্তুত হচ্ছে। তারা আরও জানায়, যুদ্ধ শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ চলবে। তবে ইঙ্গিত দেয় যে, ইসরায়েল পরিকল্পনায় তাদের নির্ধারিত মূল নীতিগুলো থেকে সরে আসবে না।
এখনও কিছু বড় জটিলতা রয়ে গেছে। হামাস তাদের নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে কিছু বলেনি। অথচ এটি ইসরায়েলের প্রধান দাবি এবং ট্রাম্পের পরিকল্পনার অংশ।
কাতারের প্রতিক্রিয়া
গাজা নিয়ে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা উপসাগরীয় দেশ কাতার হামাসের অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনায় হামাসের সম্মতি এবং সব বন্দি মুক্তির প্রস্তুতি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি এক্স-এ লিখেছেন, ‘আমরা প্রেসিডেন্টের যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে সমর্থন করি। এটি বন্দিদের নিরাপদ ও দ্রুত মুক্তির পথ তৈরি করবে। একই সঙ্গে গাজার রক্তপাত দ্রুত বন্ধ করবে।’
মিশর
গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী মিশর আশা প্রকাশ করেছে যে এটি একটি ‘ইতিবাচক অগ্রগতি’ হবে। তারা জানিয়েছে, আরব রাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে মিলে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করবে।
তুরস্ক
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, হামাসের প্রতিক্রিয়া ‘গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি করেছে।’
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হামাসের প্রতিক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এখন জরুরি বিষয় হলো— অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি, সব বন্দি ও কয়েদির মুক্তি, জাতিসংঘের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো, বাস্তুচ্যুতি বা দখল প্রতিরোধ, এবং পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করা।
এই প্রেক্ষিতে তিনি জোর দিয়ে বলেন, গাজার ওপর সার্বভৌমত্ব ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের। পশ্চিম তীর ও গাজার মধ্যে সম্পর্ক ফিলিস্তিনি আইন ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য একটি প্রশাসনিক কমিটি ও ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বাহিনী প্রয়োজন। এর সঙ্গে আরব ও আন্তর্জাতিক সহায়তাও থাকতে হবে।
প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে)
পিআইজে জানিয়েছে, হামাসের বিবৃতি অন্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর অবস্থানও প্রকাশ করে। তারা টেলিগ্রামে সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানায়, এ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পরামর্শে তারাও দায়িত্বশীলভাবে অংশ নিয়েছে।
পাকিস্তান
পাকিস্তান হামাসের প্রতিক্রিয়াকে ‘স্বাগতযোগ্য পদক্ষেপ’ বলেছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার এক্স-এ লিখেছেন, ‘এখনই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হবে। ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ বন্ধ করতে হবে। বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবাহ চালু করতে হবে। ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় হামলা বন্ধ করতে হবে।’
শুক্রবার দার আরও বলেন, ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পাশে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর প্রস্তাবিত খসড়া থেকে ভিন্ন।
জাতিসংঘ
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস হামাসের বিবৃতিতে উৎসাহিত হয়েছেন। তার মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক জানিয়েছেন, মহাসচিব পক্ষগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে গাজার এই ভয়াবহ সংঘাতের অবসান ঘটাতে।
ভারত
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্রাম্পের ‘নেতৃত্বের প্রশংসা’ করেছেন। তিনি বলেছেন, গাজায় শান্তির প্রচেষ্টায় ‘সিদ্ধান্তমূলক অগ্রগতি’ হয়েছে। এক পোস্টে মোদি ট্রাম্পের এক্স অ্যাকাউন্টকে ট্যাগ করে লিখেছেন, ‘বন্দি মুক্তির ইঙ্গিত একটি বড় অগ্রগতি। ভারত ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তির প্রচেষ্টায় সবসময় সমর্থন দেবে।’
মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম সতর্ক সুরে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনা নিখুঁত নয়, বরং অনেক বিষয়ে আমাদের আপত্তি আছে। তবে আমাদের বর্তমান অগ্রাধিকার হলো ফিলিস্তিনি জনগণের জীবন রক্ষা করা।’
তিনি যোগ করেন, আরব ও ইসলামি দেশগুলোর সমর্থন মানে সব বিষয় মেনে নেওয়া নয়। বরং এটি রক্তপাত থামানো, উচ্ছেদ প্রতিরোধ এবং গাজার মানুষকে তাদের ভূমিতে ফেরার সুযোগ করে দেওয়ার যৌথ পদক্ষেপ।
ফ্রান্স
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ এক্স-এ লিখেছেন, ‘সব বন্দি মুক্তি ও গাজায় যুদ্ধবিরতি এখন নাগালের মধ্যে। হামাসের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন বিলম্ব ছাড়া হওয়া উচিত। এখন আমাদের শান্তির দিকে সিদ্ধান্তমূলক অগ্রগতির সুযোগ এসেছে। ফ্রান্স জাতিসংঘে তার প্রচেষ্টার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ফিলিস্তিন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারের সঙ্গে পূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার দলকে ধন্যবাদ জানাই।’
জার্মানি
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ বলেছেন, এই পরিকল্পনা হলো শান্তির ‘সেরা সুযোগ’। তিনি আরও বলেন, জার্মানি ট্রাম্পের উভয় পক্ষকে দেওয়া আহ্বানকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ জানায়।
যুক্তরাজ্য
ব্রিটেনের কিয়ার স্টারমার হামাসের গ্রহণযোগ্যতাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ বলেছেন। তিনি সব পক্ষকে বিলম্ব ছাড়াই চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
কানাডা
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি এক্স-এ লিখেছেন, ‘হামাসের ক্ষমতা ছাড়ার এবং জীবিত ও মৃত সব বন্দি মুক্তির প্রতিশ্রুতিকে কানাডা স্বাগত জানায়।’ তিনি ট্রাম্পকে তাঁর ‘গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের’ জন্য ধন্যবাদ জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘কানাডা গাজায় টেকসই, নিরবচ্ছিন্ন ও ব্যাপক মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।’ সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সঙ্গে কানাডাও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
তবে ইসরায়েল এখনও গাজাকে যুদ্ধক্ষেত্র বলছে। শনিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করেছে যে গাজার উত্তরাঞ্চল এখনও ‘যুদ্ধক্ষেত্র’। তারা বাসিন্দাদের দক্ষিণে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। অথচ ডোনাল্ড ট্রাম্প হামাসের আংশিক যুদ্ধবিরতি গ্রহণের পরপরই ইসরায়েলকে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করতে বলেন।
শনিবার এক্স-এ দেওয়া বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, ওয়াদি গাজার উত্তরের এলাকা, যার মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজা সিটিও রয়েছে, তা এখনও ‘বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে বিবেচিত। সেনারা বাসিন্দাদের রাশিদ স্ট্রিট হয়ে দক্ষিণে চলে যেতে বলেছে। তারা আরও জানায়, গাজা সিটিকে ঘিরে রাখা হয়েছে এবং সেখানে ফেরার চেষ্টা করলে তাদের প্রাণের ওপর ‘গুরুতর ঝুঁকি’ তৈরি হবে।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ইতিমধ্যেই লাখো বাস্তুচ্যুত মানুষ ভিড় জমিয়েছে। তারা গাদাগাদি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে এবং উত্তরে ফেরার আশা করছে।
কেন্দ্রীয় গাজার নুসেইরাত থেকে এক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা এই সুখবরের অপেক্ষায় ছিলাম। আশা করছিলাম হামাস গ্রহণ করবে, আর আমাদের জীবন আগের মতো সুন্দর হবে, হয়তো আরও ভালো। আমরা আরও সুখবরের অপেক্ষায় আছি, গাজা সিটিতে ফেরার অপেক্ষায় আছি।’
গাজা সিটির ধারাবাহিক বোমাবর্ষণে এলাকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ডজনখানেক মানুষ নিহত হচ্ছে। বহু বাসাবাড়ি ও স্কুল ভেঙে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ দক্ষিণে পালিয়ে যাচ্ছে অজানা পরিণতির দিকে, পথে অনেক সময় হামলার মুখে পড়ছে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় দপ্তর (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, আগস্টের মাঝামাঝি থেকে যখন ইসরায়েলি সেনারা নতুন করে গাজা সিটিতে ভয়াবহ হামলা শুরু করে, তখন থেকে চার লাখেরও বেশি মানুষ উত্তর থেকে দক্ষিণে সরে গেছে। তাদের বেশিরভাগ গেছে দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিসে।
গাজা সিটির জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি আরও বেড়ে যায় সেপ্টেম্বরের শুরুতে। তখন ইসরায়েলি সেনারা বহু বহুতল ভবন ধ্বংস করে দেয়। ৯ সেপ্টেম্বর পুরো গাজা সিটির মানুষের জন্য গণ-স্থানান্তরের নির্দেশ জারি করা হয়।
শনিবার ভোরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, চিফ অব স্টাফ বন্দি মুক্তির প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের প্রস্তুতি ‘এগিয়ে নেওয়ার’ নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও এর অর্থ সামরিক পদক্ষেপের দিক থেকে কী হবে তা স্পষ্ট নয়। ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, সেনারা শুধু প্রতিরক্ষামূলক অভিযান চালাচ্ছে।
তবে গাজার আকাশে হামলা থেমে যায়নি। শনিবার হামলার তীব্রতা কমলেও অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা
ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনায় হামাসের আংশিক সমর্থনের পর বিশ্বজুড়ে আশাবাদ জেগেছে। কাতারসহ গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারীরাও এতে আশা খুঁজছেন। দুই বছর ধরে চলা গণহত্যা থামার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে।
শুক্রবার রাতে হামাস জানায়, তারা বাকি বন্দিদের মুক্তি দিতে প্রস্তুত। তারা গাজার ক্ষমতাও হস্তান্তরে রাজি। তবে প্রস্তাবের অন্যান্য বিষয় নিয়ে আরও আলোচনা দরকার।
হামাসের প্রতিক্রিয়ার পর ট্রাম্প শনিবার সকারে ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করতে বলেন। তিনি হামাসকে ‘স্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত’ বলেও উল্লেখ করেন। ট্রাম্প হামাসের প্রশংসা করায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বিস্মিত হন।
পরে নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, জিম্মিদের মুক্তির প্রথম ধাপ বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী প্রস্তুত হচ্ছে। তারা আরও জানায়, যুদ্ধ শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ চলবে। তবে ইঙ্গিত দেয় যে, ইসরায়েল পরিকল্পনায় তাদের নির্ধারিত মূল নীতিগুলো থেকে সরে আসবে না।
এখনও কিছু বড় জটিলতা রয়ে গেছে। হামাস তাদের নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে কিছু বলেনি। অথচ এটি ইসরায়েলের প্রধান দাবি এবং ট্রাম্পের পরিকল্পনার অংশ।
কাতারের প্রতিক্রিয়া
গাজা নিয়ে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা উপসাগরীয় দেশ কাতার হামাসের অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনায় হামাসের সম্মতি এবং সব বন্দি মুক্তির প্রস্তুতি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি এক্স-এ লিখেছেন, ‘আমরা প্রেসিডেন্টের যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে সমর্থন করি। এটি বন্দিদের নিরাপদ ও দ্রুত মুক্তির পথ তৈরি করবে। একই সঙ্গে গাজার রক্তপাত দ্রুত বন্ধ করবে।’
মিশর
গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী মিশর আশা প্রকাশ করেছে যে এটি একটি ‘ইতিবাচক অগ্রগতি’ হবে। তারা জানিয়েছে, আরব রাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে মিলে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করবে।
তুরস্ক
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, হামাসের প্রতিক্রিয়া ‘গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি করেছে।’
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হামাসের প্রতিক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এখন জরুরি বিষয় হলো— অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি, সব বন্দি ও কয়েদির মুক্তি, জাতিসংঘের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো, বাস্তুচ্যুতি বা দখল প্রতিরোধ, এবং পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করা।
এই প্রেক্ষিতে তিনি জোর দিয়ে বলেন, গাজার ওপর সার্বভৌমত্ব ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের। পশ্চিম তীর ও গাজার মধ্যে সম্পর্ক ফিলিস্তিনি আইন ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য একটি প্রশাসনিক কমিটি ও ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বাহিনী প্রয়োজন। এর সঙ্গে আরব ও আন্তর্জাতিক সহায়তাও থাকতে হবে।
প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে)
পিআইজে জানিয়েছে, হামাসের বিবৃতি অন্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর অবস্থানও প্রকাশ করে। তারা টেলিগ্রামে সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানায়, এ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পরামর্শে তারাও দায়িত্বশীলভাবে অংশ নিয়েছে।
পাকিস্তান
পাকিস্তান হামাসের প্রতিক্রিয়াকে ‘স্বাগতযোগ্য পদক্ষেপ’ বলেছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার এক্স-এ লিখেছেন, ‘এখনই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হবে। ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ বন্ধ করতে হবে। বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবাহ চালু করতে হবে। ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় হামলা বন্ধ করতে হবে।’
শুক্রবার দার আরও বলেন, ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পাশে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর প্রস্তাবিত খসড়া থেকে ভিন্ন।
জাতিসংঘ
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস হামাসের বিবৃতিতে উৎসাহিত হয়েছেন। তার মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক জানিয়েছেন, মহাসচিব পক্ষগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে গাজার এই ভয়াবহ সংঘাতের অবসান ঘটাতে।
ভারত
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্রাম্পের ‘নেতৃত্বের প্রশংসা’ করেছেন। তিনি বলেছেন, গাজায় শান্তির প্রচেষ্টায় ‘সিদ্ধান্তমূলক অগ্রগতি’ হয়েছে। এক পোস্টে মোদি ট্রাম্পের এক্স অ্যাকাউন্টকে ট্যাগ করে লিখেছেন, ‘বন্দি মুক্তির ইঙ্গিত একটি বড় অগ্রগতি। ভারত ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তির প্রচেষ্টায় সবসময় সমর্থন দেবে।’
মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম সতর্ক সুরে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনা নিখুঁত নয়, বরং অনেক বিষয়ে আমাদের আপত্তি আছে। তবে আমাদের বর্তমান অগ্রাধিকার হলো ফিলিস্তিনি জনগণের জীবন রক্ষা করা।’
তিনি যোগ করেন, আরব ও ইসলামি দেশগুলোর সমর্থন মানে সব বিষয় মেনে নেওয়া নয়। বরং এটি রক্তপাত থামানো, উচ্ছেদ প্রতিরোধ এবং গাজার মানুষকে তাদের ভূমিতে ফেরার সুযোগ করে দেওয়ার যৌথ পদক্ষেপ।
ফ্রান্স
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ এক্স-এ লিখেছেন, ‘সব বন্দি মুক্তি ও গাজায় যুদ্ধবিরতি এখন নাগালের মধ্যে। হামাসের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন বিলম্ব ছাড়া হওয়া উচিত। এখন আমাদের শান্তির দিকে সিদ্ধান্তমূলক অগ্রগতির সুযোগ এসেছে। ফ্রান্স জাতিসংঘে তার প্রচেষ্টার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ফিলিস্তিন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারের সঙ্গে পূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার দলকে ধন্যবাদ জানাই।’
জার্মানি
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ বলেছেন, এই পরিকল্পনা হলো শান্তির ‘সেরা সুযোগ’। তিনি আরও বলেন, জার্মানি ট্রাম্পের উভয় পক্ষকে দেওয়া আহ্বানকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ জানায়।
যুক্তরাজ্য
ব্রিটেনের কিয়ার স্টারমার হামাসের গ্রহণযোগ্যতাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ বলেছেন। তিনি সব পক্ষকে বিলম্ব ছাড়াই চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
কানাডা
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি এক্স-এ লিখেছেন, ‘হামাসের ক্ষমতা ছাড়ার এবং জীবিত ও মৃত সব বন্দি মুক্তির প্রতিশ্রুতিকে কানাডা স্বাগত জানায়।’ তিনি ট্রাম্পকে তাঁর ‘গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের’ জন্য ধন্যবাদ জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘কানাডা গাজায় টেকসই, নিরবচ্ছিন্ন ও ব্যাপক মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।’ সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সঙ্গে কানাডাও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
তবে ইসরায়েল এখনও গাজাকে যুদ্ধক্ষেত্র বলছে। শনিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করেছে যে গাজার উত্তরাঞ্চল এখনও ‘যুদ্ধক্ষেত্র’। তারা বাসিন্দাদের দক্ষিণে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। অথচ ডোনাল্ড ট্রাম্প হামাসের আংশিক যুদ্ধবিরতি গ্রহণের পরপরই ইসরায়েলকে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করতে বলেন।
শনিবার এক্স-এ দেওয়া বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, ওয়াদি গাজার উত্তরের এলাকা, যার মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজা সিটিও রয়েছে, তা এখনও ‘বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে বিবেচিত। সেনারা বাসিন্দাদের রাশিদ স্ট্রিট হয়ে দক্ষিণে চলে যেতে বলেছে। তারা আরও জানায়, গাজা সিটিকে ঘিরে রাখা হয়েছে এবং সেখানে ফেরার চেষ্টা করলে তাদের প্রাণের ওপর ‘গুরুতর ঝুঁকি’ তৈরি হবে।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ইতিমধ্যেই লাখো বাস্তুচ্যুত মানুষ ভিড় জমিয়েছে। তারা গাদাগাদি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে এবং উত্তরে ফেরার আশা করছে।
কেন্দ্রীয় গাজার নুসেইরাত থেকে এক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা এই সুখবরের অপেক্ষায় ছিলাম। আশা করছিলাম হামাস গ্রহণ করবে, আর আমাদের জীবন আগের মতো সুন্দর হবে, হয়তো আরও ভালো। আমরা আরও সুখবরের অপেক্ষায় আছি, গাজা সিটিতে ফেরার অপেক্ষায় আছি।’
গাজা সিটির ধারাবাহিক বোমাবর্ষণে এলাকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ডজনখানেক মানুষ নিহত হচ্ছে। বহু বাসাবাড়ি ও স্কুল ভেঙে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ দক্ষিণে পালিয়ে যাচ্ছে অজানা পরিণতির দিকে, পথে অনেক সময় হামলার মুখে পড়ছে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় দপ্তর (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, আগস্টের মাঝামাঝি থেকে যখন ইসরায়েলি সেনারা নতুন করে গাজা সিটিতে ভয়াবহ হামলা শুরু করে, তখন থেকে চার লাখেরও বেশি মানুষ উত্তর থেকে দক্ষিণে সরে গেছে। তাদের বেশিরভাগ গেছে দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিসে।
গাজা সিটির জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি আরও বেড়ে যায় সেপ্টেম্বরের শুরুতে। তখন ইসরায়েলি সেনারা বহু বহুতল ভবন ধ্বংস করে দেয়। ৯ সেপ্টেম্বর পুরো গাজা সিটির মানুষের জন্য গণ-স্থানান্তরের নির্দেশ জারি করা হয়।
শনিবার ভোরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, চিফ অব স্টাফ বন্দি মুক্তির প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের প্রস্তুতি ‘এগিয়ে নেওয়ার’ নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও এর অর্থ সামরিক পদক্ষেপের দিক থেকে কী হবে তা স্পষ্ট নয়। ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, সেনারা শুধু প্রতিরক্ষামূলক অভিযান চালাচ্ছে।
তবে গাজার আকাশে হামলা থেমে যায়নি। শনিবার হামলার তীব্রতা কমলেও অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা
ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় খুজেস্তান প্রদেশে সশস্ত্র হামলার দায়ে একটি ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’র ছয় সদস্যের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগেইসরায়েলি অবরোধ ভাঙতে গাজাগামী জাহাজ ‘কনশানস’ তার সামনে থাকা আটটি নৌযানকে ছুঁয়ে ফেলেছে। নৌযানগুলোর মধ্যে ‘কনশানস’ সবচেয়ে বড় এবং দ্রুতগতিতে চলছিল। তবে এখন কনশানসের গতি কমিয়ে ফেলা হয়েছে এবং সব নৌযান একসঙ্গে গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
৫ ঘণ্টা আগেমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের আংশিক মেনে নিয়েছে হামাস। তবে তারা বলেছে, কিছু বিষয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন। এই পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার সকালে ট্রাম্প ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজা বোমাবর্ষণ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, হামাস ‘দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত।’ অন্যদিকে ইসরায়েল জ
১১ ঘণ্টা আগেগাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার সর্বশেষ প্রস্তাবের কিছু শর্ত হামাস মেনে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরই তিনি গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান।
১৩ ঘণ্টা আগে