leadT1ad

আদালতের শাস্তি এড়াতেই কি ‘গোপনে’ থাইল্যান্ড ছাড়লেন থাকসিন

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১: ৩১
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২: ৫০
থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা। ছবি: এক্স থেকে নেওয়া

থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা ‘গোপনে’ দেশ ছেড়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তিনি ব্যক্তিগত বিমানে দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

থাকসিন এমন এক সময়ে দেশ থেকে পালালেন, যখন তাঁর সামনে অপেক্ষা করছে আদালতের একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়। আইনজীবীদের আশঙ্কা, ওই রায়ে আদালত থাকসিনকে কারাগারে পাঠাতে পারেন।

এ ছাড়া আজ শুক্রবার থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোট। এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন তাঁর মেয়ে পিউ থাই দলের বহিষ্কৃত নেতা চাইকাসেম নিটিসিরি।

থাকসিনের হঠাৎ দেশত্যাগ নিয়ে থাইল্যান্ডজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও জল্পনা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ব্যাংককের দন মুয়াং বিমানবন্দরে তাঁকে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ কিছু সময় জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর জানা যায়, তিনি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন।

তবে পরে দেখা যায়, তাঁর ব্যক্তিগত বিমান সিঙ্গাপুর না গিয়ে আকাশে কয়েকবার চক্কর কাটার পর পশ্চিম দিকে মোড় নেয় এবং শেষ পর্যন্ত দুবাইয়ের দিকে রওনা হয়।

থাইল্যান্ডের পুলিশ জানিয়েছে, থাকসিনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তাঁকে আটকানো হয়নি।

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই লিখছেন, তিনি আদৌ ফিরে আসবেন কি না, সন্দেহ রয়েছে। আগামী সপ্তাহে আদালতের রায় তাঁর পক্ষে না এলে, তিনি হয়তো আর দেশেই ফিরবেন না।

উল্লেখ্য, থাকসিন সনাওয়াত্রা ২০০৬ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশ ছাড়েন এবং প্রায় ১৫ বছর দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে ছিলেন। ২০২৩ সালে একটি রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে তিনি দেশে ফেরেন এবং স্বল্প সময়ের জন্য কারাভোগ করার পর ‘স্বাস্থ্যগত কারণে’ একটি ভিআইপি হাসপাতালে ছয় মাস কাটিয়ে প্যারোলে মুক্তি পান।

তবে তাঁর এই ‘আরামদায়ক বন্দিত্ব’ এখন আদালতের বিচারের মুখোমুখি। আদালত যদি মনে করে, তিনি যথাযথভাবে সাজা ভোগ করেননি, তবে তাঁকে আবারও কারাগারে পাঠানো হতে পারে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বার্তায় থাকসিন জানান, তাঁর আসল উদ্দেশ্য ছিল সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করানো। কিন্তু ইমিগ্রেশনে বিলম্বের কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেলেটার বিমানবন্দরে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। বিমানবন্দরটি রাত ১০টার পর বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তিনি পরিকল্পনা পরিবর্তন করে দুবাই যান। সেখানে তাঁর পুরোনো চিকিৎসক এবং কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব রয়েছেন।

থাকসিন সিনাওয়াত্রা ও তাঁর মেয়ে মেয়ে পায়ে তং তার্ন সিনাওয়াত্রা। ছবি: এক্স থেকে নেওয়া
থাকসিন সিনাওয়াত্রা ও তাঁর মেয়ে মেয়ে পায়ে তং তার্ন সিনাওয়াত্রা। ছবি: এক্স থেকে নেওয়া

থাকসিন আরও বলেন, ‘আমি আগামী সোমবারের মধ্যে দেশে ফিরব এবং মঙ্গলবার আদালতের রায় শুনতে নিজে উপস্থিত থাকব।’

এদিকে থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক অঙ্গনেও চলছে জোর গুঞ্জন। আজ শুক্রবার পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোট। রক্ষণশীল ঘরানার অনুয়াতিন চার্নভিরাকুলের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি থাকসিনের পিউ থাই দলের প্রার্থী চাইকাসেম নিটিসিরির মুখোমুখি হচ্ছেন।

থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে থাকসিন সিনাওয়াত্রার প্রত্যাবর্তন এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর আকস্মিক দেশত্যাগ, দেশটির আগামী দিনের রাজনৈতিক গতিপথে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

থাকসিনের পরিবার থেকে তিনিসহ এ পর্যন্ত ৬ জন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তাঁর মেয়ে পায়ে তং তার্ন সিনাওয়াত্রা। ২০২৩ সালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। তবে ২০২৫ সালের আগস্টে আদালতের আদেশে প্রধানমন্ত্রীর পদ হাতছাড়া হয় তাঁর।

Ad 300x250

সম্পর্কিত