leadT1ad

নেপালে হামলার শিকার বাংলাদেশি পরিবার

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ২৫
নেপালের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করছে সেনাবাহিনী। ছবি: সংগৃহীত

নেপালে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে বাংলাদেশি একটি পরিবার হামলা ও লুটপাটের শিকার হয়েছে। এছাড়া বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে বাংলাদেশি এক তরুণী ও তার সঙ্গীও হামলার শিকার হয়েছেন।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডুতে এমন ঘটনা ঘটে। আজ বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) নেপালস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, ‘হায়াত রিজেন্সি’ নামের একটি পাঁচ-তারকা হোটেলে ভাঙচুরের সময় ওই পরিবারটি আক্রান্ত হন। তাদের পরবর্তীতে রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে আশ্রয় দেওয়া হয়।

কূটনৈতিক সূত্র বলেছে, এখন পর্যন্ত নেপাল থেকে ৩০ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জনকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এবং আরও ২০ জনকে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে উদ্ধারকৃতরা বাংলাদেশ বিমানের যাত্রী ছিলেন। তাদের উদ্ধার করার পর বাংলাদেশ বিমানের নির্ধারিত হোটেলে রাখা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীরা একটি পাঁচ-তারকা হোটেলে আগুন ধরিয়ে ভাঙচুর চালায়। সেখানে একটি বাংলাদেশি পরিবারের তিন সদস্য অবস্থান করছিলেন। কর্মকর্তারা জানান, তাদের জিনিসপত্র লুটপাট হয়েছে এবং তারা হামলার শিকার হয়েছেন।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বিক্ষোভকারীরা হোটেলে ঢুকে পড়ার সময় ওই বাংলাদেশি পরিবার পাসপোর্ট লুকানোর চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা তাদের মারধর করে এবং জিনিসপত্র কেড়ে নেয়। পরে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং থাকার জন্য অন্য একটি হোটেলের ব্যবস্থা করা হয়। তবে পরিবারটি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে সেখানে থাকতে অস্বীকার করেন। পরে তাঁদের দূতাবাসে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে পুনরায় চিকিৎসা শেষে রাষ্ট্রদূতের বাসায় রাখা হয়।

এছাড়া বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে লাভলি নামের এক তরুণী ও তার সঙ্গীও আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের বহনকারী গাড়ি বাধা মুখে পড়ে। চালক গাড়ি চালানোর চেষ্টা করলে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। তারা বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গেছেন। তাদের দুজনকে উদ্ধার করে দূতাবাসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আজ বিকেল ৪টায় তারা বাংলাদেশের ফ্লাইট ধরার কথা রয়েছে।

দেশের পথে জাতীয় ফুটবল দল

অন্যদিকে, নেপালে অবস্থান করা বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দল দেশে ফেরার পথে রওনা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সদস্যদের বহনকারী বিমানটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা। এর আগে আইএসপিআর এক খুদে বার্তায় বিমানটি বেলা ৩টার দিকে পৌঁছানো কথা জানিয়েছিল।

এর আগে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ৩৬ সদস্য এবং ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) থেকে শিক্ষা সফরে যাওয়া ৫১ জনের একটি প্রতিনিধি দল নেপালে আটকা পড়েছে। তারা কাঠমান্ডুতে অবস্থান করছিলেন।

পোস্টে আরও জানানো হয়, আটকা পড়াদের সব কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে এবং তারা আগামী ১২ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরার কথা ছিল।

বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘যতক্ষণ না পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, ততক্ষণ আমরা কিছুই করতে পারি না। ঢাকা ও কাঠমান্ডুর মধ্যে বিমান চলাচল স্বাভাবিক হলেই তাঁদের ফিরে আসা সম্ভব হবে।’

নেপালে থাকা বাংলাদেশিদের ভারতের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা আছে কি না এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘তা সম্ভব নয়, কারণ তাঁদের কাছে ভারতীয় ভিসা নেই। তবে কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাস সেখানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশিরা সেখানে লক্ষ্যবস্তু হননি। নেপালের জনগণের আমাদের প্রতি কোনো ক্ষোভ বা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নেই। তারা হোটেলে তাদের রাজনৈতিক নেতাদের খুঁজতে গিয়েছিল। যখন তারা দেখল বাংলাদেশিরা হোটেলে আছে, তখনো তাদের কোনো ক্ষতি করেনি।’

টালমাটাল নেপাল

দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে সহিংস বিক্ষোভে সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান কে হবেন, তা নির্ধারণে আজ ‘জেন জি’ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সেনাবাহিনী আলোচনায় বসেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রাজা রাম বাসনেত বলেছেন, প্রাথমিক আলোচনা চলমান আছে এবং আজও চলবে। আমরা ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।

প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির পদত্যাগের কারণে নেতৃত্বশূন্য নেপালে আপাতত সেনাবাহিনীই অস্থির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।

অলির সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপ বন্ধ করার পর তরুণরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া ও সরকারের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামে।

রয়টার্স জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাজধানী কাঠমান্ডুর জনশূন্য রাস্তাগুলোতে সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। নেপালের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সহিংস প্রতিবাদে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩০ জনে দাঁড়িয়েছে এবং আহত হয়েছেন আরও ১০৩৩ জন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত