বিক্ষোভকারীরা সংসদে হামলা চালায়, বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশজুড়ে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েন করা হয়। কাঠমান্ডুর এই দৃশ্য অনেককেই গত বছর বাংলাদেশে এবং ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার অস্থির পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।
স্ট্রিম ডেস্ক
সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় দেশ হিসেবে নেপালে সহিংস অভ্যুত্থানে সরকার পতনের ঘটনা ঘটল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সরকারবিরোধী এই বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। পরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন।
বিক্ষোভকারীরা সংসদে হামলা চালায়, বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশজুড়ে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েন করা হয়। কাঠমান্ডুর এই দৃশ্য অনেককেই গত বছর বাংলাদেশে এবং ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার অস্থির পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। অন্যদিকে কাঠমান্ডুর সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক, কৌশলগত ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগের কারণে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
নেপালের সঙ্গে ভারতের পাঁচ রাজ্য—উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, সিকিম, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের ১৭ শ ৫০ কিলোমিটারেরও বেশি (১ হাজার ৮০ মাইল) দীর্ঘ একটি উন্মুক্ত সীমান্ত রয়েছে।
দিল্লি সীমান্তের ওপারের নেপালের ঘটনাপ্রবাহের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ‘নেপালের সহিংসতা হৃদয়বিদারক। অনেক তরুণ প্রাণ হারিয়েছে দেখে আমি মর্মাহত।’
নেপালের স্থিতিশীলতা, শান্তি ও সমৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে মোদি দেশটির জনগণকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানান।
নেপালের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য ওই দিনই মন্ত্রিসভার জরুরি নিরাপত্তা বৈঠক ডাকেন মোদি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাকসে অভ্যুত্থানের ফলে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হওয়ার ঘটনায় ভারত যেমন অপ্রস্তুত ছিল, তেমনই নেপালের ঘটনাতেও দিল্লি অবাক হয়েছে। অলির দিল্লি সফরের মাত্র এক সপ্তাহ আগে তার পদত্যাগের ঘটনাটি ঘটে। দেশটির যেকোনো অস্থিতিশীলতা কৌশলগত অবস্থানের কারণে ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ।
নেপাল-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) অশোক মেহতা বিবিসিকে বলেন, চীনের ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড (পশ্চিমাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড) নেপালের সীমানার সরাসরি ওপারে অবস্থান করছে। ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমিতে যাওয়ার পথও সরাসরি নেপালের মধ্য দিয়ে বিস্তৃত।
এই অস্থিরতা ভারতে বসবাসকারী বিপুলসংখ্যক নেপালি প্রবাসীর ওপরেও প্রভাব ফেলবে। আনুমানিক ৩৫ লক্ষ নেপালি ভারতে কাজ করে বা বসবাস করে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রকৃতসংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
নেপাল মূলত একটি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং সীমান্তের দুই পারের বাসিন্দাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মানুষ ভিসা বা পাসপোর্ট ছাড়াই যাতায়াত করে। ১৯৫০ সালের একটি চুক্তি অনুসারে নেপালিরা ভারতে কোনো বাধা ছাড়াই কাজ করতে পারে। এই অঞ্চলে ভুটান ছাড়া আর কোনো দেশের সঙ্গে ভারতের এমন চুক্তি নেই। এ ছাড়াও, কয়েক দশকের পুরোনো একটি বিশেষ চুক্তির আওতায় নেপালের প্রায় ৩২ হাজার গুর্খা সৈন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কাজ করছেন।
দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) অধ্যাপক সঙ্গীতা থাপলিয়াল বলেন, ‘যেহেতু সীমান্তটি উন্মুক্ত, তাই দুই দেশের মানুষের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। উভয় পক্ষের পরিবারগুলো একে অপরের সঙ্গে প্রতিদিন যোগাযোগ করে।’
নেপালে হিন্দুধর্মের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থানও রয়েছে। যেমন হিমালয় অঞ্চলের পাহাড়ে অবস্থিত মুক্তিনাথ মন্দির। প্রতিবছর ভারতের হাজারো তীর্থযাত্রী এই মন্দির দর্শনে যান।
এদিকে কাঠমান্ডু ভারতীয় রপ্তানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, বিশেষ করে তেল ও খাদ্যের জন্য। ভারত-নেপাল বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন ডলার।
বুধবার কাঠমান্ডুতে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতকে অত্যন্ত সতর্কভাবে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হবে। কারণ, বিক্ষোভকারীদের মধ্যে দেশের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধেই ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। অলির নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (সিপিএন-ইউএমএল), শের বাহাদুর দেউবার নেপালি কংগ্রেস ও পুষ্প কমল দাহালের (প্রচণ্ড নামে পরিচিত) নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওবাদী কেন্দ্র)—এই তিনটি দলের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখেছে ভারত।
হিমালয়কন্যা নেপালের কৌশলগত অবস্থানের কারণে ভারত ও চীন উভয়ই দেশটির ওপর প্রভাব বিস্তারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ফলে এই দুই এশীয় পরাশক্তির বিরুদ্ধে নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে।
অলির জায়গায় বিক্ষোভকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য কোন ধরনের প্রশাসন আসবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। অধ্যাপক থাপলিয়াল বলেন, যেহেতু নতুন সরকারের গঠন বা নেতৃত্ব অনিশ্চিত, তাই ‘ভারত সতর্ক থাকবে’। তারা নেপালে বাংলাদেশের মতো আরেকটি পরিস্থিতি চায় না।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দিল্লির সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্কে টানাপোড়েন রয়েছে।
নেপাল ও ভারতের মধ্যেও বিভিন্ন সময়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। এখন সেই বিষয়গুলো আরও সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।
২০১৯ সালে ভারতের একটি মানচিত্রে চীনের সীমান্তের কাছাকাছি বিতর্কিত অঞ্চলকে নিজেদের এলাকা বলে প্রকাশ করা হয়। কাঠমান্ডুর দাবি, ওই অঞ্চলটি তাদের।
পরে নেপাল যখন সেই বিতর্কিত এলাকাগুলো অন্তর্ভুক্ত করে নিজস্ব মানচিত্র প্রকাশ করে, তখন এই কূটনৈতিক বিরোধ আরও বৃদ্ধি পায়।
সম্প্রতি, ভারত ও চীন নেপালের দাবি করা একটি সীমান্ত এলাকায় পুনরায় বাণিজ্য শুরু করতে সম্মত হয়েছে। গত মাসে চীন সফরের সময় অলি চীনা নেতৃত্বের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেন ও লিপুলেখ পাসকে বাণিজ্য পথ হিসেবে ব্যবহারের বিরোধিতা করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো মতপার্থক্য দূর করতে ভারতকে নতুন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর ক্ষুব্ধ তরুণ নেপালিদের সঙ্গেও আলোচনা করতে হবে।
অধ্যাপক থাপলিয়াল বলেন, ‘নেপালের মধ্যে তরুণদের জন্য সুযোগ কম। ভারতের উচিত নেপালি শিক্ষার্থীদের জন্য ফেলোশিপ বাড়ানো ও আরও চাকরির সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা।’
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) নিষ্ক্রিয় থাকায় ভারতের জন্য তার প্রতিবেশী দেশগুলোর রাজনৈতিক পরিবর্তন ও অস্থিতিশীলতা মোকাবিলা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। নেপালে এমন এক সময়ে সংকট তীব্রতর হয়েছে, যখন পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তলানিতে, বাংলাদেশের সঙ্গে টানাপোড়েন ও মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চলছে।
অশোক মেহতা যুক্তি দেন, ‘বৃহৎ শক্তি হওয়ার আকাঙ্ক্ষার কারণে ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর থেকে নজর সরিয়ে নিয়েছে। যদিও ভারতকে মনের ইচ্ছা পূরণের তাগিদেই প্রতিবেশী দেশগুলোকে নিরাপদ ও স্থিতিশীল রাখতে হবে।’
বিবিসি থেকে অনুবাদ তুফায়েল আহমেদ
সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় দেশ হিসেবে নেপালে সহিংস অভ্যুত্থানে সরকার পতনের ঘটনা ঘটল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সরকারবিরোধী এই বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। পরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন।
বিক্ষোভকারীরা সংসদে হামলা চালায়, বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশজুড়ে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েন করা হয়। কাঠমান্ডুর এই দৃশ্য অনেককেই গত বছর বাংলাদেশে এবং ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার অস্থির পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। অন্যদিকে কাঠমান্ডুর সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক, কৌশলগত ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগের কারণে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
নেপালের সঙ্গে ভারতের পাঁচ রাজ্য—উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, সিকিম, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের ১৭ শ ৫০ কিলোমিটারেরও বেশি (১ হাজার ৮০ মাইল) দীর্ঘ একটি উন্মুক্ত সীমান্ত রয়েছে।
দিল্লি সীমান্তের ওপারের নেপালের ঘটনাপ্রবাহের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ‘নেপালের সহিংসতা হৃদয়বিদারক। অনেক তরুণ প্রাণ হারিয়েছে দেখে আমি মর্মাহত।’
নেপালের স্থিতিশীলতা, শান্তি ও সমৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে মোদি দেশটির জনগণকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানান।
নেপালের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য ওই দিনই মন্ত্রিসভার জরুরি নিরাপত্তা বৈঠক ডাকেন মোদি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাকসে অভ্যুত্থানের ফলে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হওয়ার ঘটনায় ভারত যেমন অপ্রস্তুত ছিল, তেমনই নেপালের ঘটনাতেও দিল্লি অবাক হয়েছে। অলির দিল্লি সফরের মাত্র এক সপ্তাহ আগে তার পদত্যাগের ঘটনাটি ঘটে। দেশটির যেকোনো অস্থিতিশীলতা কৌশলগত অবস্থানের কারণে ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ।
নেপাল-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) অশোক মেহতা বিবিসিকে বলেন, চীনের ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড (পশ্চিমাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড) নেপালের সীমানার সরাসরি ওপারে অবস্থান করছে। ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমিতে যাওয়ার পথও সরাসরি নেপালের মধ্য দিয়ে বিস্তৃত।
এই অস্থিরতা ভারতে বসবাসকারী বিপুলসংখ্যক নেপালি প্রবাসীর ওপরেও প্রভাব ফেলবে। আনুমানিক ৩৫ লক্ষ নেপালি ভারতে কাজ করে বা বসবাস করে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রকৃতসংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
নেপাল মূলত একটি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং সীমান্তের দুই পারের বাসিন্দাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মানুষ ভিসা বা পাসপোর্ট ছাড়াই যাতায়াত করে। ১৯৫০ সালের একটি চুক্তি অনুসারে নেপালিরা ভারতে কোনো বাধা ছাড়াই কাজ করতে পারে। এই অঞ্চলে ভুটান ছাড়া আর কোনো দেশের সঙ্গে ভারতের এমন চুক্তি নেই। এ ছাড়াও, কয়েক দশকের পুরোনো একটি বিশেষ চুক্তির আওতায় নেপালের প্রায় ৩২ হাজার গুর্খা সৈন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কাজ করছেন।
দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) অধ্যাপক সঙ্গীতা থাপলিয়াল বলেন, ‘যেহেতু সীমান্তটি উন্মুক্ত, তাই দুই দেশের মানুষের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। উভয় পক্ষের পরিবারগুলো একে অপরের সঙ্গে প্রতিদিন যোগাযোগ করে।’
নেপালে হিন্দুধর্মের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থানও রয়েছে। যেমন হিমালয় অঞ্চলের পাহাড়ে অবস্থিত মুক্তিনাথ মন্দির। প্রতিবছর ভারতের হাজারো তীর্থযাত্রী এই মন্দির দর্শনে যান।
এদিকে কাঠমান্ডু ভারতীয় রপ্তানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, বিশেষ করে তেল ও খাদ্যের জন্য। ভারত-নেপাল বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন ডলার।
বুধবার কাঠমান্ডুতে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতকে অত্যন্ত সতর্কভাবে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হবে। কারণ, বিক্ষোভকারীদের মধ্যে দেশের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধেই ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। অলির নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (সিপিএন-ইউএমএল), শের বাহাদুর দেউবার নেপালি কংগ্রেস ও পুষ্প কমল দাহালের (প্রচণ্ড নামে পরিচিত) নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওবাদী কেন্দ্র)—এই তিনটি দলের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখেছে ভারত।
হিমালয়কন্যা নেপালের কৌশলগত অবস্থানের কারণে ভারত ও চীন উভয়ই দেশটির ওপর প্রভাব বিস্তারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ফলে এই দুই এশীয় পরাশক্তির বিরুদ্ধে নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে।
অলির জায়গায় বিক্ষোভকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য কোন ধরনের প্রশাসন আসবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। অধ্যাপক থাপলিয়াল বলেন, যেহেতু নতুন সরকারের গঠন বা নেতৃত্ব অনিশ্চিত, তাই ‘ভারত সতর্ক থাকবে’। তারা নেপালে বাংলাদেশের মতো আরেকটি পরিস্থিতি চায় না।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দিল্লির সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্কে টানাপোড়েন রয়েছে।
নেপাল ও ভারতের মধ্যেও বিভিন্ন সময়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। এখন সেই বিষয়গুলো আরও সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।
২০১৯ সালে ভারতের একটি মানচিত্রে চীনের সীমান্তের কাছাকাছি বিতর্কিত অঞ্চলকে নিজেদের এলাকা বলে প্রকাশ করা হয়। কাঠমান্ডুর দাবি, ওই অঞ্চলটি তাদের।
পরে নেপাল যখন সেই বিতর্কিত এলাকাগুলো অন্তর্ভুক্ত করে নিজস্ব মানচিত্র প্রকাশ করে, তখন এই কূটনৈতিক বিরোধ আরও বৃদ্ধি পায়।
সম্প্রতি, ভারত ও চীন নেপালের দাবি করা একটি সীমান্ত এলাকায় পুনরায় বাণিজ্য শুরু করতে সম্মত হয়েছে। গত মাসে চীন সফরের সময় অলি চীনা নেতৃত্বের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেন ও লিপুলেখ পাসকে বাণিজ্য পথ হিসেবে ব্যবহারের বিরোধিতা করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো মতপার্থক্য দূর করতে ভারতকে নতুন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর ক্ষুব্ধ তরুণ নেপালিদের সঙ্গেও আলোচনা করতে হবে।
অধ্যাপক থাপলিয়াল বলেন, ‘নেপালের মধ্যে তরুণদের জন্য সুযোগ কম। ভারতের উচিত নেপালি শিক্ষার্থীদের জন্য ফেলোশিপ বাড়ানো ও আরও চাকরির সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা।’
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) নিষ্ক্রিয় থাকায় ভারতের জন্য তার প্রতিবেশী দেশগুলোর রাজনৈতিক পরিবর্তন ও অস্থিতিশীলতা মোকাবিলা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। নেপালে এমন এক সময়ে সংকট তীব্রতর হয়েছে, যখন পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তলানিতে, বাংলাদেশের সঙ্গে টানাপোড়েন ও মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চলছে।
অশোক মেহতা যুক্তি দেন, ‘বৃহৎ শক্তি হওয়ার আকাঙ্ক্ষার কারণে ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর থেকে নজর সরিয়ে নিয়েছে। যদিও ভারতকে মনের ইচ্ছা পূরণের তাগিদেই প্রতিবেশী দেশগুলোকে নিরাপদ ও স্থিতিশীল রাখতে হবে।’
বিবিসি থেকে অনুবাদ তুফায়েল আহমেদ
নেপালে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে বাংলাদেশি একটি পরিবার হামলা ও লুটপাটের শিকার হয়েছে। এছাড়া বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে বাংলাদেশি এক তরুণী ও তার সঙ্গীও হামলার শিকার হয়েছেন।
১১ ঘণ্টা আগেনেপালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশিলা কারকিকে সমর্থন জানিয়েছেন রাজধানী কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন শাহ।
১৪ ঘণ্টা আগেগভর্নর এই হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক বলেছেন। কর্তপক্ষ বলছে, ঘটনার প্রায় ৮ ঘণ্টা পর, স্থানীয় বুধবার রাত পর্যন্ত সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করা যায়নি।
১৬ ঘণ্টা আগেঅবশেষে জানা গেল নেপালের জেন-জি বিক্ষোভের জেরে পদত্যাগ করা কে পি শর্মা অলির অবস্থান। জেন-জিদের উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে অলি জানিয়েছেন, তিনি এখন কাঠমান্ডু উপত্যকার উত্তরে অবস্থিত শিবপুরীতে সামরিক নিরাপত্তায় আছেন।
১৭ ঘণ্টা আগে