leadT1ad

টাইমের প্রচ্ছদে নিজের ছবি নিয়ে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা
ঘটনাটি ঘিরে অসংখ্য মিম ও ব্যঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত।

যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিন মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর ২০২৫ সালের) একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা প্রকাশ করে। এতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে ইসরায়েল-হামাস শান্তিচুক্তিকে ‘একটি কৌশলগত সাফল্য’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। তবে ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদচিত্রটি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। যদিও লেখাটি ছিল তার কূটনৈতিক সফলতার প্রশংসায় ভরা, তিনি মূলত ছবির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

প্রচ্ছদে দেওয়া ট্রাম্পের ছবিটি নিচের দিক থেকে তোলা হয়েছে। ছবির পেছনে ছিল উজ্জ্বল সূর্যের আলো, যা তার মুখ ও মাথার অংশ ছায়ার আড়ালে ফেলে দেয়। এতে তাঁর পরিচিত চুলের ছাঁট অদৃশ্য হয়ে যায়। মাথার ওপরে একটি ঝাপসা আলো যেন একটি ছোট মুকুটের মতো দেখা যায়।

ছবিটি মূলত শক্তি ও রাজকীয়তার ভাব প্রকাশ করতে প্রতীকীভাবে তোলা হলেও, ট্রাম্প তা ব্যঙ্গ হিসেবে নিয়েছেন। তিনি ছবিটিকে আখ্যা দেন ‘সবচেয়ে বাজে প্রচ্ছদ’ হিসেবে। সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে তিনি লেখেন, ‘ওরা আমার চুল ‘গায়েব’ করে দিয়েছে, আর মাথার ওপর এমন কিছু রেখেছে, যা ছোট্ট একটা মুকুটের মতো দেখতে।’

ম্যাগাজিনটি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্পের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। তিনি মনে করেন, ছবিটি তাঁর চেহারা ও ভাবমূর্তিকে অসম্মান করেছে। অনেক সংবাদমাধ্যম ছবিটি নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য ও মিম তৈরি করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা আবারও দেখায়, ট্রাম্পের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত চেহারার উপস্থাপন অনেক সময় নীতিগত অর্জনের চেয়েও বড় হয়ে ওঠে। যদিও লেখাটি তাঁর কূটনৈতিক সফলতার স্বীকৃতি দেয়, তবু তাঁর দৃষ্টিতে ছবিটিতে অপমানের ছাপ পড়েছে।

টাইম ম্যাগাজিন এখনো এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি। তবে ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, ছবিটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে নয়, বরং একটি ‘নাটকীয় ও আইকনিক’ প্রতীকী উপস্থাপনা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। তবে ট্রাম্পের দৃষ্টিতে এমন প্রতীকীকরণ প্রায়ই অপমান হিসেবেই প্রতিভাত হয়।

১৪ অক্টোবর সকালে ট্রুথ স্যোশালে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন। তিনি টাইম ম্যাগাজিনের লেখা নিয়ে তেমন কিছু বলেননি। বরং তাঁর পুরো মনোযোগ ছিল প্রচ্ছদ ছবির উপর।

তিনি লিখেন, ‘টাইম ম্যাগাজিন আমার সম্পর্কে তুলনামূলকভাবে একটি ভালো লেখা প্রকাশ করেছে, কিন্তু ছবিটি হয়ত ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ছবি। ওরা আমার চুল ‘অদৃশ্য’ করে দিয়েছে, আর মাথার ওপর ভাসমান একটি ছোট মুকুটের মতো কিছু রেখেছে। ভয়ানক ছবি— আবার করতে হবে!’

ফক্স নিউজ জানায়, ট্রাম্প মূলত অভিযোগ করেছেন যে, ছবিটিতে তাঁর চুল ‘হারিয়ে’ গেছে। ফলে তাঁর মাথায় ছোট একটি মুকুটের মতো আলো দেখা যাচ্ছে।

এ ধরনের প্রতিক্রিয়া ট্রাম্পের জন্য নতুন নয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই নিজের ছবি ও মিডিয়ায় সেসব উপস্থাপন নিয়ে অতিমাত্রায় সচেতন। অতীতে ‘ভুয়া কভার’ বা অস্বস্তিকর ছবি নিয়ে অনেকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

নিউ ইয়র্ক পোস্ট জানায়, ট্রাম্প টাইম ম্যাগাজিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রচ্ছদে ব্যবহৃত ‘সবচেয়ে খারাপ ছবি’ বলে অভিযোগ করেছেন। যদিও লেখাটি ছিল তাঁর শান্তিচুক্তির প্রশংসায় ভরা।

জিমি কিমেল লাইভসহ অনেক লেট-নাইট টক শোতে এ নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করা হয়। এবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজ টুনাইট অনুষ্ঠানেও ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া প্রচারিত হয়, যেখানে তিনি ছবি বদলের দাবি জানান।

ট্রাম্পের চুল নিয়ে সংবেদনশীলতা নতুন নয়। ছবি: সংগৃহীত।
ট্রাম্পের চুল নিয়ে সংবেদনশীলতা নতুন নয়। ছবি: সংগৃহীত।

ব্যক্তিগত আবেগের আড়ালে শান্তিচুক্তি

ছবিটির বিতর্ক আসলে একটি বৃহৎ অর্জনকে আড়াল করে দেয়। এই চুক্তির মাধ্যমে গাজায় দুই বছর ধরে চলা সহিংসতার অবসান হয়। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়।

পলিটিকো ইইউ জানায়, টাইম এই চুক্তিকে ট্রাম্পের ‘বিজয়’ হিসেবে উল্লেখ করলেও প্রেসিডেন্ট ছবিটি নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন।

চুল নিয়ে ট্রাম্পের সংবেদনশীলতা নতুন নয়। বিভিন্ন লেখায়ও তাঁর চুলের ছাঁট ও পরিচর্যা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। রোলিং স্টোন পত্রিকাতেও এ নিয়ে বিশ্লেষণ ছাপা হয়েছে।

এই ঘটনাটি তাঁর পুরোনো অভ্যাসেরই অংশ। তিনি একদিকে গর্ব করেন যে তাঁর ছবি টাইম ম্যাগাজিনে ১১ বার ছাপা হয়েছে। অন্যদিকে, তিনি ‘ভুয়া সংবাদ’ বলে অভিযোগ করেন, যখন ছবিগুলো তাঁর পছন্দমতো হয় না।

ঘটনাটি ঘিরে অসংখ্য মিম ও ব্যঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে। জিমি কিমেলের রিল ১৩ হাজার লাইক পায়। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা একে ‘মিডিয়ার নাটক’ বলে গুরুত্বহীন করে দেখান।

ট্রাম্পের সমর্থকরা #DoOverTIME হ্যাশট্যাগে প্রচারণা চালান। তাঁদের দাবি, এটি অভিজাত মহলের ষড়যন্ত্র।

সমালোচকরা শান্তিচুক্তির প্রশংসা করলেও, ট্রাম্পের চুল নিয়ে ক্ষোভে বিরক্তি প্রকাশ করেন।

এই ঘটনায় উল্লেখযোগ্য কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তবে ঘটনাটিতে টাইম-এর অনলাইন ভিউ ৩০০ শতাংশ বেড়ে যায়।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া ঝাখারোভা টেলিগ্রামে টাইম-এর প্রচ্ছদ নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি লেখেন, ছবির নির্বাচন ছিল ‘বিস্ময়কর’—যা ‘শুধু অসুস্থ মানুষ বা বিকৃত মনের লোকেরাই করতে পারে।’ এই প্রতিক্রিয়া আলাস্কা বৈঠকের পর ক্রেমলিনের যুক্তরাষ্ট্র-ঘনিষ্ঠ অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যদিও ইউক্রেন-সংক্রান্ত উত্তেজনা এখনো বজায় রয়েছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত